Skip to content

 

গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? গরু, মহিষ ও ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত, গরু, মহিষ ও ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

আমাদের জীবনে গবাদি প্রাণির গুরুত্ব অপরিসীম। পৃথিবীতে বহু ধরনের প্রাণি রয়েছে। আমাদের দেশের গৃহপালিত প্রাণির মধ্যে গরু, ছাগল, মহিষ, ভেড়া ও ঘোড়া বিশেষ ভাবে পরিচিত। বর্তমান যুগে কৃষি, শিল্প এবং খাদ্য উৎপাদন ছাড়াও বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন ও আত্মকর্মসংস্থানে গৃহপালিত প্রাণির অবদান রয়েছে।

এ পাঠ শেষে আপনি- গরুর বাসস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। মহিষের বাসস্থান সম্পর্কে জানতে পারবেন। ছাগলের বাসস্থান সম্পর্কে পারবেন।

(১) গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? গরুর ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

গরুর বাসস্থানকে সাধারণত গোশালা বা গোয়াল ঘর বলে যা গরুকে ঝড়-বৃষ্টি, রোদ, অতিরিক্ত ঠান্ডা, গরম এবং অন্যান্য প্রাকৃতিক বিরূপ পরিবেশ থেকে রক্ষা করে।

বাড়ির কাছাকাছি একটি উঁচু জায়গায় গোশালা নির্মাণ করা উচিৎ। এর ফলে দুর্গন্ধ ও গরুর মলমূত্র পাশাপাশি বসবাসকারী কোন মানুষের সমস্যার সৃষ্টি করবে না।

গরুর আদর্শ গোশালার স্থান নির্বাচনের ক্ষেত্রে যথাযথ নর্দমা ও পয়ঃপ্রনালীর ব্যবস্থা, লোকালয় থেকে দূরে, উত্তর-দক্ষিণমুখী ঘর এবং চারণভূমির সুবিধার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দেয়া প্রয়োজন। 

ক) গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত?

  • গোশালাটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তাতে সহজেই প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।
  • গোশালা শুষ্ক ও উচু জায়গায় তৈরি করতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে।
  • ঘরের মেঝে পাকা ও ইট বিছানো হলে ভালো হয়।
  • মেঝের পিছনের দিকে একটু ঢালু রাখতে হবে যাতে গোবর ও মূত্র খুব সহজেই নালায় চলে যেতে পারে।
  • গোশালা যেন সহজেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায় এবং পানি নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকে।
  • গোশালার চারিদিকে ঝোপজঙ্গল থাকা ঠিক নয়।
  • বিশ্রাম করার জন্য গোশালায় প্রয়োজনীয় জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • গোশালা এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তা গরুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়।
  • গোশালায় একই সাথে খাদ্য পরিবেশন, মলমূত্র নিষ্কাশন, আরাম-আয়েস, যত্ন ও পরিচর্যার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
See also  গরু-ছাগলের গায়ে পোকা বা বহিঃপরজীবী জনিত রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ

খ) গরুর ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

দু’টি উপায়ে গরু পালন করা হয়, যেমন- ১। চারণভূমিতে গরু চরানোর মাধ্যমে ও ২। গোশালায় বেঁধে রেখে খাদ্য পরিবেশন মাধ্যমে। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এ পদ্ধতিগুলোর কোনোটিই বৈজ্ঞানিকভাবে বিকাশ লাভ করেনি। এদেশে গরু পালনের পদ্ধতি হিসেবে গোশালা বা গোয়াল ঘর ব্যাপকভাবে প্রচলিত।

  • গোশালার উচ্চতা ৯-১০ ফুট বা ২.৭৫-৩.০ মিটার হতে হবে।
  • খাদ্য সরবরাহের জন্য চাড়ি এবং পানির পাত্র থাকতে হবে।
  • প্রতিটি চাড়ি ও পানির পাত্রের পরিমাপ যথাক্রমে ৩ ফুট ৪ ফুট এবং ১ ফুট ২ ফুট হওয়া উচিত।
  • প্রতিটি গরুর জন্য আড়পাতা থাকতে হবে যাতে করে গরু বেঁধে রাখা যায়।
  • খাবারের চাড়ি পাকা কনক্রিট ও আড়পাতা মসৃণ লোহার রড বা বাঁশ দিয়ে তৈরি করা করতে হবে।
  • মেঝে কোনক্রমেই পিচ্ছিল হওয়া চলবে না।
  • প্রতিটি গরুর জন্য ৫ বর্গ মিটার জায়গাই যথেষ্ট।

(২) মহিষের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? মহিষের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

মহিষ পালনের জন্য স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন। পারিবারিকভাবে মহিষ পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থান বা ঘরের ওপর তেমন গুরুত্ব দেয়া হয় না। তবে খামারভিত্তিতে একসঙ্গে অনেক মহিষ পালন করতে হলে ঘর তৈরির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ক) মহিষের ঘর নির্মাণের জন্য বিবেচ্য বিষয়

  • ঘর স্বাস্থ্যসম্মত ও আরামপ্রদ হবে।
  • ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের ব্যবস্থা থাকবে।
  • মেঝে মজবুত হবে তবে তাতে পিচ্ছিল ভাব থাকবে না।
  • উপযুক্ত নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকবে।

খ) মহিষের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

  • মহিষের ঘর গরুর ঘর তৈরির মতোই। তবে ঘর তৈরিতে মজবুত অথচ দামে কম এরূপ জিনিসপত্র ব্যবহার করা উচিত।
  • একমাস বয়সি একটি মহিষেল বাছুরের জন্য ১.০ মিটার ১.৫ মিটার জায়গার প্রয়োজন হয়।
  • গ্রামাঞ্চলে বকনা মহিষ অন্যান্য মহিষের সঙ্গে একই ঘরে বা গোয়ালে রাখা হয়। তবে সাধারণত প্রতিটি অগর্ভবতী বকনা মহিষের জন্য ৫-৬ বর্গ মিটার উদোম/ছাদবিহীন স্থান; ১.০-১.৫ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৪০-৫০ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।
  • প্রতিটি গর্ভবতী বকনার জন্য ৮-১০ বর্গ মিটার উদোম/ছাদবিহীন স্থান; ৩-৪ বর্গ মিটার ছাদযুক্ত স্থান ও ৫০-৭৫ সে.মি. দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট চাড়ি প্রয়োজন।
  • অনুরূপভাবে একটি পূর্ণবয়স্ক ষাঁড় মহিষের জন্য ১০-১২ বর্গ মিটার আয়তনবিশিষ্ট ছাদযুক্ত ঘরের প্রয়োজন। 
See also  গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগি পালন এবং তাদের কিছু কমন রোগব্যাধির পরিচিতি

(৩) ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

অন্যান্য প্রাণীদের মতো ছাগলেরও রাত্রি যাপন, নিরাপত্তা, ঝড়বৃষ্টি, ঠান্ডা, রোদ ইত্যাদির কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বাসস্থানের প্রয়োজন রয়েছে। তবে, এদেশের গ্রামাঞ্চলে পারিবারিক পর্যায়ে ছাগল পালনের ক্ষেত্রে বাসস্থানের জন্য তেমন কোনো আলাদা ব্যবস্থা দেখা যায় না। গোয়াল ঘর বা গোশালায় গরু মহিষের পাশাপাশি, ঘরের বারান্দা, রান্নাঘর প্রভৃতি স্থানে ছাগলের থাকার ব্যবস্থা করা হয়। 

ক) ছাগলের ঘর নির্মাণের জন্য বিবেচ্য বিষয়

  • শুষ্ক পরিবেশ ও আবহাওয়ায় ঘর তৈরি করতে হবে।
  • ঘরটি এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন তাতে সহজেই প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে।
  • ঘর কোনোক্রমেই স্যাঁতস্যাঁতে হওয়া চলবে না।
  • ঘরটি মজবুত ও আরামদায়ক হওয়া চাই।
  • ঘর যেন সহজেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা যায় এবং পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকে।

খ) ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি

ছাগল পালনের জন্য বিভিন্নভাবে ঘর তৈরি করা যায়। যেমন- ১। ভূমির উপর স্থাপিত ঘর ও ২। খুঁটির উপর স্থাপিত ঘর।

  • ভূমির উপর স্থাপিত ঘরে গ্রামের সাধারণ গৃহস্থরা ছাগল পালন করে থাকেন। এই ধরনের ঘরের মেঝে কাঁচা অর্থাৎ মাটি দিয়ে, আধা পাকা অর্থাৎ শুধু ইট বিছিয়ে অথবা সিমেন্ট দিয়ে পাকা করে তৈরি করা যায়।
  • খুঁটির উপর স্থাপিত ঘর সাধারণত মাটি থেকে ৩.৩-৪.৯ ফুট (১.০-১.৫ মিটার) উচ্চতায় খুঁটির উপর তৈরি করা হয়। এ ধরনের ঘর ছাগলকে মাটির স্যাঁতস্যাঁতে ভাব, বন্যার পানি, নালা-নর্দমা থেকে চোয়ানো পানি প্রভৃতি থেকে রক্ষা করে।
  • ছাগলের ঘরের মেঝে বাঁশ, কাঠ ইত্যাদি দিয়ে মাঁচার মতো করে তৈরি করা হয়।
  • দু’ধরনের ঘরই একচালা, দোচালা বা চৌচালা হতে পারে এবং ছাগলের সংখ্যার ওপর নির্ভর করে তা ছোট বা বড় হতে পারে।
  • ছাগলের বয়স এবং আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এদের জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। একটি পূর্ণ প্রাপ্ত বয়স্ক ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল পালনের জন্য ২.৫ ফুট ১৪.৭৫ ফুট ১৫.৭৫ ফুট জায়গার প্রয়োজন হয়। প্রতিটি পাঠার জন্য খোপের মাপ হলো ৭.৯ ফুট ৫.৯ ফুট।
  • গর্ভবতী ছাগলের জন্য আলাদা প্রসূতি কক্ষের ব্যবস্থা থাকা উচিত।
See also  গরু পালন পদ্ধতি, পরিচর্যা, গোয়ালঘর, খাদ্য, রোগ পরিচিতি ও ব্যবস্থাপনা

উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গরু, মহিষ ও ছাগলের বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত ও গরু, মহিষ ও ছাগলের ঘর নির্মাণ পদ্ধতি সম্পর্কে জানলাম।

গরু, ছাগল এবং অন্যান্য গবাদিপ্রাণির ন্যায় মহিষেরও স্বাস্থ্যসম্মত বাসস্থানের প্রয়োজন। মহিষের ঘর গরুর অনুরূপ ভাবেই তৈরি করা হয়। গরুর চেয়ে মহিষের শরীর গরম বেশি থাকে তাই মহিষকে দিনের মধ্যে কয়েকবার গোসল করালে তার শরীর এবং স্বাস্থ্য ভাল থাকে। এছাড়া, মহিষের জন্য আলাদা জায়গা নির্বাচন করে তার গোসলের ব্যবস্থা করা উচিত।

[সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page