Skip to content

 

গাভী গরুর বাসস্থান

গাভী গরুর বাসস্থান

গরুর বাসস্থান একদিকে যেমন পশুকে নিরাপত্তা ও আরাম দেয়, তেমনি এদের থেকে দুধ ও মাংস উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। গরুর বাসস্থান পশুদের ঝড়-বৃষ্টি ও রোগ-ব্যাধির হাত থেকে রক্ষা করে। এ পোষ্টটিতে গৃহপালিত গাভী গরুর বাসস্থান সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।

এ পাঠটি শেষ অবধি অধ্যয়ন করলে আপনি- গরু আবাস্থল কি, গরুর আবাস্কাথলকে বলে, গরুর আবাস্থল বলতে কি বুঝায়, গোশালা কি, গোশালা কাকে বলে, তা জানতে পারবেন। গরুর আবাস্থল তৈরি করা হয় কেন, তা বুঝতে পারবেন। গাভী গরুর বাসস্থান কোথায় নির্মাণ করা উচিত, গাভীর আবাসনের জন্য স্থান নির্বাচন করতে পারবেন। গাভী গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত, একটি ভালো গোশালা নির্মাণের শর্তগুলো মেনে একটি আদর্শ গরুর বাসস্থান তৈরি করতে পারবেন। একটি গরুর জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন ও গরুর খাবার পাত্রের মাপ সম্পর্কে ধারণা পাবেন।

(১) গরুর বাসস্থান বা আবাসস্থল তৈরির উদ্দেশ্য

গরু আবাস্থল কি/কাকে বলে/বলতে কি বুঝায়: গৃহপালিত পশু অর্থাৎ গবাদিপশুর সুস্থ্যভাবে বেঁচে থাকা এবং তার থেকে অধিক পরিমাণে মাংস, দুধ ও শক্তি উৎপাদনের জন্য অধিকতর আরামদায়ক পরিবেশে পশুকে আশ্রয় দান করাকে গৃহপালিত পশুর আবাস্থল বলে।

গোশালা কি/কাকে বলে: গবাদিপশুর থাকা, খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য যে আরামদায়ক ঘর তৈরি করা হয় তাই গোশালা।

গোশালার অনেক সুবিধা রয়েছে। গেশালায় একক বা দলগতভাবে গবাদিপশু পালন করলে ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয় ও উৎপাদন খরচ কমে যায়। তবে গোশালায় গবাদিপশুকে সবসময় আবদ্ধ না রেখে মাঝে মধ্যে গোচারণের জন্য অর্থাৎ মুক্তভাবে ঘাস খাওয়ানোর জন্য বাইরে নিয়ে গেলে এদের স্বাস্থ্য ভালো থাকে।

See also  হাঁস-মুরগির ঘর বানানো বা তৈরির নিয়ম

গরুর আবাস্থল তৈরি করা হয় কেন: গরুর বাসস্থান বা আবাস্থল তৈরির বিভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। যেমন-

  • গবাদিপশুকে আশ্রয় ও বিশ্রাম দেয়া।
  • এদের জন্য আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
  • বৈরি বা খারাপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা।
  • কীটপতঙ্গ ও বন্যপ্রাণীর আক্রমণ থেকে রক্ষা করা।
  • গর্ভবর্তী, প্রসূতি ও বাছুরের সঠিক পরিচর্চা করা।
  • গবাদিপশু থেকে অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদন করা।
  • গবাদিপশুকে চোর-ডাকাতের হাত থেকে রক্ষা করা।
  • খাদ্য ও পানি সরবরাহ সঠিক ও সহজ করা।
  • নিবিড়ভাবে গবাদিপশুর যত্ন নেওয়া।
  • দক্ষতার সঙ্গে দুধ দোহন করা।
  • সময়মতো রোগব্যাধির চিকিৎসা করা।
  • সহজে গোশালা পরিষ্কার করা।
  • গবাদিপশুর রোগপ্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
  • গোবর ও অন্যান্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা।
  • গবাদিপশুকে শান্ত রাখা।
  • গবাদিপশুর উৎপাদন খরচ কমানো।

(২) গাভী গরুর বাসস্থান কোথায় নির্মাণ করা উচিত?

গবাদিপশুর, যেমন- দুগ্ধবতী গাভী গরুর বাসস্থানের জন্য স্থান নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সঠিক স্থান নির্বাচনের ওপর খামারের লাভ-লোকসান অনেকাংশে নির্ভর করে। গাভীর সংখ্যা ও মূলধনের ওপর নির্ভর করে এদের আবাসন।

কাজেই গাভী গরুর বাসস্থান এমন জায়গায় তৈরি করতে হবে, যেখানে নিম্নলিখিত সুবিধাগুলো বিদ্যমান থাকে। যথা-

  • গরুর বাসস্থানের স্থানটি উঁচু, শুষ্ক ও বন্যামুক্ত হতে হবে।
  • বাজার, মহাসড়ক ও লোকালয় থেকে কিছুটা দূরে হওয়া ভালো।
  • গোশালা উত্তর-দক্ষিণমুখী হওয়া ভালো।
  • যাতায়াত ব্যবস্থা ভালো হতে হবে।
  • বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সুবিধা থাকতে হবে।
  • গোশালা বা খামার এলাকার পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভালো থাকতে হবে।
  • গোশালায় যেন সূর্যের আলো পড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  • দুধ, মাংস ও খামারজাত দ্রব্য বাজারজাত করার সুবিধা থাকতে হবে।
  • গোশালার চারপাশ সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
  • গাভীর জন্য সুষম খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের সুবিধার বিষয়টি মাথায় রাখতে হবে।
  • ভবিষ্যতে খামার বড় করার সুযোগ থাকতে হবে।

(৩) গাভী গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত?

গরুর বাসস্থানকে গোশালা বলে। অবশ্য এটি গোয়াল ঘর নামেও পরিচিত। আর যারা গাভী পালন করে দুধের ব্যবসা করেন তাদের বলে গোয়ালা। কাজেই গাভী, গোশালা, দুধ ও গোয়ালার মধ্যে একটি গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

See also  গর্ভবতী গাভী চেনার উপায়

গোশালার আকার গাভীর সংখ্যার উপর নির্ভর করে। গাভীর সংখ্যা ১০-এর কম হলে এক সারিবিশিষ্ট ঘর এবং ১০ বা ততোধিক হলে দুই সারিবিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে।

গাভী পালনের জন্য গোশালা নির্মাণে নিম্নলিখিত বিষয়গুলো বিবেচনা করতে হবে। যথা-

  • গোশালা বা গোয়াল ঘরটি মজবুত ও টেকসই দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করতে হবে।
  • নির্মাণসামগ্রীগুলো সহজলভ্য ও সস্তা হওয়া চাই।
  • গোশালার মেঝে যে দ্রব্যসামগ্রী দিয়ে নির্মাণ করা হোক না কেন, তা অবশ্যই শুষ্ক হতে হবে।
  • নির্মাণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন এতে গাভীর আরাম-আয়েশ, বিশ্রাম ও ব্যায়াম করার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা থাকে।
  • গোশালাটি এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন তাতে সহজেই প্রচুর আলো-বাতাস চলাচল করতে পারে এবং তাপ ও আর্দ্রতা সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
  • গোশালা কখনোই কোনক্রমেই স্যাঁতসেঁতে হওয়া চলবে না। এতে গাভীর বিভিন্ন ধরনের পরজীবীজনিত ও জীবাণুঘটিত রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
  • এটি এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন তাতে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করতে না পারে।
  • গোশালা এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যেন গাভীর জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়।

(৪) একটি গরুর জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন? গরুর খাবার পাত্রের মাপ

চিত্র- গরুর আবাসন
চিত্র- গরুর আবাসন

গাভী গরুর বাসস্থান বা গোশালার পরিসর, গরুর খাবার পাত্রের মাপ এবং একটি গরুর জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন, তা হলো-

  • গোশালার উচ্চতা ২.৭৫-৩.০০ মিটার হওয়া ভালো। গোশালা লম্বায় ৪৫-৬০ মিটারের বেশি না হওয়াই ভালো।
  • গাভীর সংখ্যা এবং গাভীগুলো এক সারি না দু’সারিতে থাকবে তার ওপর নির্ভর করে গোশালা কতটুকু প্রশস্ত হবে তা ঠিক করতে হবে। গোশালা এক সারিবিশিষ্ট হলে এর প্রস্থ ৬ মিটার প্রশস্ত হতে পারে। আর দু’সারিবিশিষ্ট গোশালায় গাভীগুলো মুখোমুখি বা বিপরীতমুখি করে রাখা যায়। মুখোমুখি পালনের ক্ষেত্রে গোশালার প্রস্থ ১১ মিটার এবং বিপরীতমুখির ক্ষেত্রে ১০.৪ মিটার প্রশস্ত হতে পারে।
  • প্রতিটি গাভীর জন্য গোশালায় ৫ বর্গমিটার জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • খাদ্য সরবরাহের জন্য গোশালায় চাড়ি বা গামলা থাকতে হবে। প্রতিটি চাড়ির পরিসর হবে ১.০ মিটার x ১.২ মিটার। চাড়ি কনক্রিটের তৈরি হতে পারে।
  • পানি সরবরাহের জন্য পানির পাত্র থাকতে হবে যার পরিসর হবে ০.৩ মিটার × ০.৬ মিটার। পানির পাত্রও কনক্রিট দিয়ে পাকা করে তৈরি করা যায়।
  • এছাড়াও গোশালায় প্রতিটি গাভীর জন্য আড়পাতা থাকে, যেখানে গাভী বেঁধে রাখা যায়। এটি মসৃণ লোহার রড দিয়ে মজবুত করে তৈরি করা যায়। আবার বাঁশ দিয়েও তৈরি করা যেতে পারে।
See also  গাভী পালন পদ্ধতি

প্রিয় খামারি বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা গরুর বাসস্থান বা আবাসস্থল তৈরির উদ্দেশ্য, গাভী গরুর বাসস্থান কোথায় নির্মাণ করা উচিত? গাভী গরুর বাসস্থান কেমন হওয়া উচিত? একটি গরুর জন্য কতটুকু জায়গা প্রয়োজন? ও গরুর খাবার পাত্রের মাপ ইত্যাদি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

গবাদিপশুর বিশ্রাম, নিরাপত্তা এবং আরামদায়কভাবে থাকা-খাওয়ার জন্য আবাসান অতি গুরুত্বপূর্ণ। আবাসন বা বাসস্থান গোশালা নামেও পরিচিত। আবাসনের সঠিক স্থান নির্বাচনের ওপর খামারের লাভ-লোকসান অনেকাংশে নির্ভরশীল।

গাভীর সংখ্যা ও মূলধনের ওপর নির্ভর করে এদের আবাসন। গাভীর সংখ্যা ১০-এর কম হলে এক সারিবিশিষ্ট ও ১০ বা ততোধিক হলে দুই সারিবিশিষ্ট গোশালা তৈরি করতে হবে। গাভীর জন্য গোশালায় ৫ বর্গমিটার জায়গার ব্যবস্থা থাকতে হবে।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page