Skip to content

চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি/চারা রোপন ও পরিচর্যা

চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি, চারা রোপন ও পরিচর্যা

স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা ও ইহার অভ্যন্তরীন রাস্তা ঘাটের আশে পাশে এবং পতিত জমি সমূহে বিভিন্ন ধরণের বনজ, ফলদ, ঔষধি গাছসহ বাহারী গাছপালা রোপণ করা যায়।

সঠিক চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতির অনুসরণ এবং চারা রোপন ও পরিচর্যা চারার বৃদ্ধি ও নিখুঁতভাবে বেড়ে ওঠার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

নিম্নে বিভিন্ন বনজ বৃক্ষের চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতি/চারা রোপন ও পরিচর্যা সমূহ ধাপে ধাপে নিম্নে আলোচনা করা হলো।

(১) চারা গাছ লাগানোর পদ্ধতির বিভিন্ন ধাপ

বনজ বৃক্ষের চারা উৎপাদনের পর রোপণের জন্য স্থান নির্বাচন করে সঠিকভাবে চারা রোপণ এবং রোপণকৃত চারার মৃত্যুহার কমাতে হলে ও দ্রুত বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন। যেমন- স্থান নির্বাচন, সুস্থ চারা বাছাই, গর্ত খনন, গর্তে সার প্রয়োগ, চারার সহ্য ক্ষমতা বাড়ানো (Hardening), চারা রোপণ, পানি সেচ, খুটি লাগানো ও বেড়া দেওয়া, ইত্যাদি।

ক) চারা রোপণের জন্য স্থান নির্বাচন

বনজ বৃক্ষের চারা রোপণের পূর্বে বৃক্ষ প্রজাতির প্রকৃতি অনুসারে উপযুক্ত স্থান নির্বাচন করা জরুরী। উপযোগী স্থান নির্বাচনে ব্যর্থ হলে রোপিত চারার মৃত্যুহার বেড়ে গিয়ে বনায়ন কার্যক্রম সাফল্য লাভ করবে না।

চারা রোপণের সময় নিম্নলিখিত বিষয়গুলোর দিকে দৃষ্টি দেওয়া প্রয়োজন-

  1. নির্বাচিত স্থানের মাটি দো-আঁশ ও উর্বর হতে হবে।
  2. যেখানে পানি জমে না বা বন্যার পানি উঠে না এমন জায়গা বৃক্ষ রোপণের জন্য আদর্শ স্থান।
  3. চারা রোপণের জায়গা আলো বাতাস পূর্ণ ও সুনিষ্কাশিত হওয়া দরকার।
  4. বাড়ি ঘরের আশেপাশে বৃক্ষ লাগাতে চাইলে সাধারণত উত্তর পাশে বা উত্তর-পশ্চিম পাশে জায়গা নির্বাচন করা ভালো।
  5. জলাবদ্ধতা সহ্যশীল গাছপালার জন্য নীচু ও স্যাঁতেসেতে জায়গায় গাছ লাগানো যায়। যেমন-হিজল, পিটালি, জারুল, কদম, মান্দার প্রভৃতি।

খ) সুস্থ চারা নির্বাচন

বনজ বৃক্ষ একটি দীর্ঘ মেয়াদি ফসল। তাই রোপণের পূর্বে নিম্নোক্ত বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে-

  1. নির্বাচিত চারাগাছ সবল, সতেজ ও নিরোগ হতে হবে।
  2. চারা লাগানোর জায়গার অবস্থান অনুযায়ী প্রজাতি নির্বাচন করতে হবে। যেমন উচুঁ জায়গার জন্য কাঁঠাল, মেহগনি, সেগুন ইত্যাদি। জায়গা নিচু হলে জারুল, কদম, হিজল ইত্যাদি।
  3. চারা স্বাভাবিক আকৃতির ও বাড়ন্ত হতে হবে।
  4. চারার প্রধান শিকড় অক্ষত থাকতে হবে। কোনভাবেই যাতে প্রধান শিকড় কুন্ডলী পাকিয়ে না থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পলিব্যাগে উত্তোলিত চারার বয়স বেশি হলে অনেক সময় প্রধান শিকড় কুন্ডলী পাকিয়ে থাকে। এরকম হলে ঐ চারা রোপণের জন্য নির্বাচন করা উচিত হবে না।
  5. খুব বেশি বয়সের চারা নির্বাচন না করা ভালো।
See also  কোথায় কি গাছ লাগাবেন? গাছের স্থান নির্বাচন

গ) চারা লাগানোর জন্য গর্ত বা পীট তৈরী

চারা রোপণের অন্তত ১ মাস পূর্বে পীট তৈরী করা উচিত পীট তৈরীর কৌশল নিম্নরূপ-

  1. চারার প্রজাতিভেদে পীটের সাইজ ঠিক করতে হয়। বনজ বৃক্ষের জন্য ৫০ সে.মি. x ৫০ সে.মি. x ৫০ সে.মি. অর্থাৎ ৫০ সে.মি দৈর্ঘ্য, ৫০ সে.মি. প্রস্থ ও ৫০ সে.মি. গভীর গর্ত হলে চলে।
  2. পীট তৈরীর সময় উপরের উর্বর মাটি এক পাশে ও নিচের মাটি আরেক পাশে রাখতে হবে।
  3. পীটের তলদেশের মাটি হালকাভাবে কুপিয়ে নরম করে নিতে হবে।
  4. উপরের সার মাটি থেকে সব ধরনের আগাছা ও গাছপালার শিকড় বাছাই করে ফেলতে হবে।
  5. খোড়া মাটিগুলো ভালোমতো গুড়া করে রাখতে হবে।

ঘ) গর্তে সার প্রয়োগ

  1. গর্ত খননের কয়েকদিনের পর মাটি শুকিয়ে গেলে প্রত্যেক গর্তের মধ্যে গোবর/কম্পোষ্ট ১০ কেজি, ইউরিয়া ১০০-১৫০ গ্রাম, টি.এস.সি ও এম.পি ৭৫-১০০ গ্রাম করে প্রয়োগ করে রেখে দিতে হবে।
  2. গোবর সার দেওয়ার সপ্তাহ খানেক পরে অন্যান্য সার দিয়ে গর্তটি ১৫-২০ দিন রেখে দিতে হবে।
  3. চারা রোপণের আগে সব সার ভালোমতো মেশাতে হবে।
  4. মাটি খুব উর্বর হলে সার না প্রয়োগ করলেও চলে।

ঙ) চারার সহ্য ক্ষমতা বাড়ানো (Hardening)

  1. নার্সারী থেকে পলিব্যাগ উঠিয়ে আশপাশের শিকড় হালকা করে কেটে দিয়ে চারা ছায়াযুক্ত স্থানে কয়েকদিন রাখতে হবে। এতে চারা নূতন আবহাওয়ায় টিকে থাকার ক্ষমতা অর্জন করবে।
  2. চারার প্রধান মূল যাতে না কাটে সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
  3. চারার গোড়ার মাটি পলিব্যাগ ফেটে আলগা না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  4. রোগাক্রান্ত ও দূর্বল চারা বাছাই করে বাদ দিতে হবে।

চ) চারা রোপণ

চারা রোপণের সময় কিছু সর্তকতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। সেগুলো হলো-

  1. গর্তে সার প্রয়োগের ১৫-২০ দিন পর চারা রোপণ করা ভালো।
  2. পলিব্যাগে উত্তোলিত চারা রোপণের পূর্বে পলিব্যাগটি লম্বালম্বিভাবে ব্লেড দিয়ে কেটে খুলে ফেলতে হবে।
  3. পলিব্যাগ অপসারণের সময় খেয়াল রাখতে হবে যেন মাটি আলগা না হয়ে যায়।
  4. দুই হাতে ধরে চারাটি গর্তের ঠিক মাঝখানে মাটির চাকসহ বসিয়ে দিতে হবে।
  5. এরপর চারার চারাপাশে গর্তের উপরের মাটি দিয়ে শক্ত করে চেপে ভরে দিতে হবে। গর্তের নীচের মাটিগুলো উপরের দিকে দিতে হবে।
  6. সাধারণত বিকাল বেলায় চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়।
See also  গাছ কাটা, কাঠ সংগ্রহ, কাঠ পরিমাপ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

চ) চারায় পানি সেচ, খুটি ও বেড়া দেওয়া

  1. রোপণের প্রাথমিক অবস্থায় প্রয়োজন অনুযায়ী পানি দিতে হবে।
  2. চারা যাতে হেলে না পড়ে সেজন্য খুটি বেঁধে চারাটি সোজা রাখতে হবে।
  3. চারাগাছকে গরু ছাগলের হাত থেকে রক্ষার জন্য অবশ্যই বেড়া দিতে হবে।

বনজ বৃক্ষের চারা নার্সারীতে উৎপাদনপূর্বক নির্বাচিত স্থানে লাগানো হয়। আমাদের দেশে সাধারণত পলিব্যাগে চারা উৎপাদন করা হয়। এটি সহজ ও কম ব্যয় বহুল।

ফরেষ্ট নার্সারীতে ১৫ ২৫ সে.মি. বা ৬″ ১০″ সাইজের পলিব্যাগে চারা উত্তোলন করা হয়। চারা রোপণের জন্য স্থান নিবার্চন, সুস্থ চারা বাছাইকরণ, গর্ত খনন, সারপ্রয়োগ ও চারার সহ্য ক্ষমতা বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।

(২) চারা গাছ রোপন ও পরিচর্যা

ক) গাছের চারা রোপণের জন্য গর্ত খনন

প্রাসঙ্গিক তথ্য: বনজ বৃক্ষের অধিকাংশই মূল্যবান কাষ্টল গাছ। এসব গাছের সুষম বৃদ্ধি ও উন্নয়ণের জন্য চারা লাগানোর পূর্বে গর্ত খনন করতে হবে ও প্রয়োজনীয় সার মেশাতে হবে।

প্রয়োজনীয় উপকরণ: এ কাজের জন্য ১। কোদাল ২। শাবল ৩। দা ৪। কুড়াল ৫। ঝুড়ি ৬। খুটি ৭। পলিথিন ৮। জৈব ও রাসায়নিক সার। 

কাজের ধারা:

  1. প্রথমে যে স্থানে গাছের চারা লাগানো হবে সে স্থানের যাবতীয় আগাছা দিয়ে কেটে পরিষ্কার করুন।
  2. এবার চারা রোপণের জন্য নির্ধারিত স্থানে গর্তের জন্য খুটি গেড়ে চিহ্নিত করুন।
  3. তারপর ঐ নিম্নের চিত্রের অনুরূপ স্থানে ৫০ সে.মি. দৈর্ঘ্য, ৫০ সে.মি. প্রস্থ ও ৫০ সে. মি. গভীর গর্ত খনন করুন।
  4. গর্ত খননের সময় উপরের মাটি এক পাশে এবং নিচের মাটি অন্য পাশে রাখুন।
  5. গর্তের উপরের মাটি একটু শুকিয়ে ভালোভাবে গুড়া করে গর্তের নিচে দিন। এবার মাটির সাথে ১০-১৫ কেজি গোবর, ১০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০-৪০০ গ্রাম টিএসপি ও এমপি সার দিয়ে ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিন।
  6. এবার প্রতিটি গর্তে একটু পানি দিয়ে ১২-১৫ দিন পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখুন।
See also  গাছ কাটা, কাঠ সংগ্রহ, কাঠ পরিমাপ ও সংরক্ষণের পদ্ধতি

সাবধানতা:

  • সঠিক দূরত্বে গর্ত করা হচ্ছে কিনা তাহা লক্ষ্য রাখুন।
  • গর্তে প্রয়োগের সার ভালোভাবে মিশানো হয়েছে কিনা খেয়াল করুন।
  • সাবধানে গর্ত করুন যাতে আঘাতপ্রাপ্ত না হন।

খ) বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ

প্রাসঙ্গিক তথ্য: সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে চারা রোপণ করা জরুরী। সাধারণত বনজ বৃক্ষের চারা বর্গাকার বা ত্রিভুজাকার নকশা অবলম্বন করে রোপন করা হয়। সারি থেকে সারি এবং গাছ থেকে গাছের দূরুত্ব ১০-১২ মিটার হবে। 

প্রয়োজনীয় উপকরণ: ১। নির্বাচিত বৃক্ষের চারা ২। কোদাল ৩। খুটি ও রশি ৪। ঝাঁঝরি ৫। পানি।

কাজের ধারা:

  1. পূর্বে খনন কৃত গর্তে দেয়া সার ও মাটি কোদাল দ্বারা কুপিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে নিন।
  2. তারপর গর্তের মাঝখান থেকে চারার গোড়ার মাটির সমপরিমান মাটি সরিয়ে গর্ত করুন।
  3. এবার চারার পলিব্যাগটি ব্লেড বা ছুরি দিয়ে কেটে ফেলুন।
  4. এখন দুই হাত দিয়ে চারাটি সোজাভাবে গর্তে বসিয়ে দিন।
  5. চারার চার পাশে মাটি চেপে দিন যেন চারার গোড়ার মাটি পাশ্ববর্তী মাটি থেকে খানিকটা উচুঁ থাকে।
  6. এবার ঝাঝরি দিয়ে প্রয়োজনমত পানি দিন ও খুটি দিয়ে চারাটি হালকা করে বেধে দিন।

সাবধানতা:

  • চারা লাগানোর সময় পলিব্যাগ সাবধানে কাটুন যাতে চারার গোড়ার মাটি ভেঙ্গে না যায়।
  • চারা রোপণের সময় যাতে শিকড়ের ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখুন।

খ) চারা রোপণ পরবর্তী পরিচর্যা

প্রাসঙ্গিক তথ্য: বৃক্ষের চারা রোপণের পর নিয়মিত পানি, সেচ, আগাছা ও রোগবালাই দমন করতে হবে।

প্রয়োজনীয়  উপকরণ: ১। নিড়ানি ২। ঝাঁঝরি ৩। বেড়া দেবার সামগ্রী ৪। রশি ৫। বালতি ও পানি ইত্যাদি। 

কাজের ধারা:

  1. চারা লাগানোর পর পর চারার গোড়ায় পানি দিন
  2. চারা যেন গরু ছাগল বা ছোট ছোট বাচ্চারা খেলার ছলে উপড়ে না ফেলে সেজন্য বেড়া দিন।
  3. চারা বর্ষার আগে পরে দু’বার প্রয়োজনমত সার দিন।
  4. গাছ লাগানোর পর প্রথম দিকে ঘন ঘন আগাছা পরিষ্কার করে দিন।
  5. রোগ বালাইয়ের আক্রমণ হলে দমন ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।

সাবধানতা:

  • চারা লাগানোর পর চারার গোড়ায় যাতে অতিরিক্ত পানি না জমে সেদিকে লক্ষ্য রাখুন।
  • বর্ষার সময়ে নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করুন।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts