Skip to content

ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়

ছাগলের বৈশিষ্ট্য, ছাগলের জাত চেনার উপায়

ছাগল গৃহপালিত প্রাণি। বাংলাদেশের আবহাওয়ায় ছাগল পালন বেশ লাভজনক। গ্রামে-গঞ্জে প্রায় ৬০% পরিবার ছাগল পালন করে থাকে। ছাগলের বৈশিষ্ট্য উপকারি বৈশিষ্ট্যগুলোর কারণে ছাগলকে গরিবের গাভী বলা হয়। এরা ছোট প্রাণি বলে দাম কম, তাই অল্প খরচে পালন করা যায়। তাছাড়া মূলধন বিনিয়োগ কম। এরা ছোবড়া ও নিকৃষ্ট মানের খাদ্য গ্রহণ করে পুষ্টিসাধন করে থাকে।

যার গাভী কেনার ও পালনের সামর্থ  নেই সে অল্প পুঁজিতে দুটি ছাগল কিনে অধিক লাভবান হতে পারে। ছাগলের জাত চেনার উপায়গুলো জেনে উন্নত জাতের ছাগল পালন করার মাধ্যমে যে বেকার সেও ছাগল পালন করে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। গাভী থেকে একটি বাছুর পেতে এক বছরের বেশি সময় লাগে। কিন্তু ছাগল ছমাসে একই সঙ্গে কমপক্ষে দুটি বাচ্চা দেয়। এ হিসেবে দুটি ছাগল থেকে বছরান্তে ন্যূনতম আটটি বাচ্চা পাওয়া সম্ভব।

ছাগলের লালন-পালন খরচ অনেক কম। ছাগলের মাংস ও চামড়া দুুই ই উৎকৃষ্ট। শুধু চামড়া রপ্তানি থেকে বছরে আয় হয় কোটি কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা। আমাদের বাংলাদেশে বর্তমানে ২৫.১২ মিলিয়ন ছাগল আছে। (এআইএস, ২০১৩)।

এ পাঠ শেষে আপনি- পৃথিবীর বিভিন্ন জাতের ছাগলের ভাগগুলো সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে ছাগলের শ্রেণিবিন্যাস করতে পারবেন। কয়েকটি বিখ্যাত জাতের ছাগলের নাম, উৎপত্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন। বিশ্বের ও বাংলাদেশের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ জাতের ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায় শিখতে পারবেন।

(১) ছাগলের জাতের শ্রেণীবিভাগ

ছাগলের জাতকে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে শ্রেণীবিভাগ করা যায়। যেমন-

  1. উৎপত্তি অনুসারে শ্রেণীবিভাগ
  2. দেহের আকৃতিভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
  3. উৎপাদনভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
  4. জন্মগত ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
  5. শিংয়ের গঠনের ভিত্তিতে শ্রেণীবিভাগ
See also  রাম ছাগলের বৈশিষ্ট্য বা যমুনাপাড়ি ছাগল চেনার উপায় কি?

ক) উৎপত্তি অনুসারে ছাগলের জাতের শ্রেণিবিভাগ 

  1. দেশি জাতের ছাগল
  2. বিদেশি জাতের ছাগল

খ) দেহের আকৃতিভিত্তিক ছাগলের জাতের শ্রেণীবিভাগ

ছাগলের স্কন্ধ পর্যন্ত উচ্চতার ভিত্তিতে ছাগলের জাতকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. বড় জাতের ছাগল: যেমন- অ্যাংগোরা, বিটল, যমুনাপাড়ি ইত্যাদি।
  2. ছোট জাতের ছাগল: যেমন কিলিস, ফিজি ইত্যাদি।
  3. বামন জাতের ছাগল: যেমন- সুদান, ব্ল্যাক বেঙ্গল ইত্যাদি।

গ) উৎপাদনভিত্তিক ছাগলের জাতের শ্রেণীবিভাগ

উৎপাদনের ওপর ভিত্তি করে ছাগলের জাতকে ৫ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. মাংসল জাতের ছাগল: যেমন- ব্ল্যাক বেঙ্গল
  2. দুধের জাতের ছাগল: যেমন- যমুনাপাড়ি
  3. পশম জাতের ছাগল: যেমন- গাড্ডি, অ্যাংগোরা
  4. দ্বৈত জাত: যেমন- ব্ল্যাক বেঙ্গল
  5. চামড়া উৎপাদক জাত: যেমন- ব্ল্যাক বেঙ্গল

ঘ) জন্মগত ভিত্তিক ছাগলের জাতের শ্রেণীবিভাগ

জন্মস্থানের ওপর ভিত্তি করে ছাগলের জাতকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-

  1. এশিয়ান ছাগল: যেমন- যমুনাপারি
  2. আফ্রিকান ছাগল: যেমন- মারাডি
  3. ইউরোপিয়ান ছাগল: যেমন- সানেন
  4. ওরিয়েন্টাল ছাগল: যেমন- মালাবার

(২) ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়

ক) ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল (Black Bengal Goat)

চিত্র- ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত
চিত্র- ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের জাত

বাংলাদেশ, ভারতের আসাম ও মেঘালায়ে এ ছাগল দেখতে পাওয়া যাায়। এটি বাংলাদেশের নিজস্ব জাত। এ জাতের ছাগলের মাংস সুস্বাদু ও জনপ্রিয়। ছাগল সাধারণত কালো রঙের হয়ে থাকে, তবে সাদা ও বাদামি রঙের ছাগলও দেখা যায়।

ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  1. ছাগী বছরে দুবার এবং প্রতিবারে দুই বা ততোধিক বাচ্চা দেয়।
  2. দেহের গড়ন আঁটোসাঁটো, পা খাটো।
  3. কান ছোট, সোজা এবং কিছুটা উপরের দিকে থাকে।
  4. ছাগলের মাংস এবং চামড়া উন্নত মানের হয়।
  5. শিং ছোট ও কালো এবং ৫-১০ সেমি লম্বা হয়।
  6. শিং ওপর দিক হতে পিছনে বাঁকানো থাকে।
  7. পুরুষ ও স্ত্রী ছাগলের ওজন যথাক্রমে ২৫-৩৫ কেজি এবং ২০-৩০ কেজি।
  8. সুষম খাদ্য ও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় ০.৫-১.০ লিটার দুধ পাওয়াযায়।
  9. প্রথম বাচ্চা প্রসব করার বয়স হচ্ছে ১৩-১৪ মাস।
  10. লোম মসৃণ এবং মোলায়েম।

বাংলাদেশে যেসব বিদেশি জাতের ছাগল পাওয়া যায় তার মধ্যে রয়েছেযমুনাপাড়ি, বিটল, সানেন, টোগেনাবার্গ, অ্যালপাইন ও অ্যাংলোনোবিয়ান উল্লেখযোগ্য। বিটল জাতের ছাগল পাকিস্তান থেকে আনা হয়েছে। অ্যাংলোনোবিয়ান জাতের ছাগল ভারত, পাকিস্তানসহ অন্যান্য প্রতিবেশী দেশ থেকে আনা হয়েছে। সানেন ও অ্যালপাইন এর উৎপত্তিস্থল সুইজারল্যান্ড।

See also  ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায় বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য কি?

খ) যমুনাপাড়ি ছাগল (Jamuna pari Goat)

চিত্র- যমুনাপাড়ি ছাগলের জাত
চিত্র- যমুনাপাড়ি ছাগলের জাত

ভারতের গঙ্গা, যমুনা ও চম্বল নদীর মধ্যবর্তী এটাওয়া জেলায় এ জাতের ছাগলের আদি বাসস্থান। এরা রামছাগল নামেই বেশি পরিচিত। এটি দুধ উৎপাদনকারী জাত। আমাদের দেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় এ জাতের ছাগল দেখা যায়। এরা খোলা জায়গায় থাকতে পছন্দ করে।

যমুনাপাড়ি ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  1. গায়ের রঙ সাদা, কালো, হলুদ, বাদামি বা বিভিন্ন রঙের মিশ্রণযুক্ত হয়।
  2. শরীরের গঠন বেশ হালকা-পাতলা ও লম্বাকৃতির।
  3. পা লম্বাটে এবং পিছনের পায়ে লম্বা ঘন লোম থাকে।
  4. পুরুষ ছাগলের দাড়ি থাকে, স্ত্রী ছাগলের কদাচিৎ থাকে।
  5. এরা মাঠে চরে জীবনধারন করতে পছন্দ করে।
  6. পেছনের পায়ের দিকটায় লম্বাটে চুল থাকে।
  7. লেজ ছোট ও সরু এবং কান লম্বা, চ্যাপ্টা, বাঁকা ও ঝুলন্ত।
  8. শিং ছোট ও চ্যাপ্টা এবং লেজ ছোট ও পাতলা।
  9. বছরে একবার এবং ১টি করে বাচ্চা দেয়।
  10. দৈনিক ১.৫-২.০ লিটার দুধ পাওয়া যায়।
  11. পূর্ণবয়স্ক ছাগল ও ছাগীর ওজন যথাক্রমে ৬৫-৯০ কেজি এবং ৪০-৬০ কেজি।
  12. ঘাড় ও মুখমন্ডলে হালকা বাদামি বর্ণের ছোপ থাকে।
  13. ওলান বেশ বড় এবং বাটগুলো মোটা, লম্বা, সুসজ্জিত এবং সম আকারের।
  14. দুধে চর্বির পরিমাণ ৫%।

গ) সানেন ছাগল (Sannen Goat)

চিত্র- সানেন ছাগলের জাত
চিত্র- সানেন ছাগলের জাত

সানেন জাতের ছাগলের উৎপত্তি সুইজারল্যান্ডের পশ্চিমাংশে। পৃথিবীর যেকোন দেশের আবহাওয়া এবং পরিবেশ এ জাত খাপ খাইয়ে নিতে পারে।

সানেন ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  1. দেহ সাদা বা উজ্জল সাদা লোমে আবৃত।
  2. গলা, কান ও ওলানে কালো দাগ থাকে।
  3. সাধারণত শিং থাকে না থাকলেও ছোট।
  4. এদের পা ছোট, কান সোজা এবং ওলান বড়।
  5. ছাগলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে এরা সর্বোচ্চ পরিমাণে দুধ দেয়।
  6. পৃথিবীর যে কোন অঞ্চলের আবহাওয়ার সাথে এরা খাপ খাওয়াতে পারে।
  7. এরা দৈনিক ৩.০-৩.৫ লিটার দুধ দেয়।
  8. ওলান গ্রন্থি বেশ বড় হয়।
  9. দুধে চর্বির পরিমাণ ৩.৫%।
  10. পূর্ণবয়স্ক ছাগল ৬০-৭০ কেজি।
  11. কান সোজা এবং সম্মুখ মুখি।
  12. বছরের দুধ উৎপাদন ক্ষমতা কমবেশি ৯৯০ লিটার।

ঘ) বিটল ছাগল (Beetal Goat)

চিত্র- বিটল ছাগলের জাত
চিত্র- বিটল ছাগলের জাত

বিটল ভারত ও পাকিস্তানের একটি গুরুত্বপূর্ণ ছাগলের জাত। এরা দেখতে অনেকটা যমুনাপাড়ির মতো। এটি দুগ্ধ উৎপাদনকারী জাত। এ জাত আবদ্ধ ঘরে পালনের জন্য উপযোগী এবং এরা সহজেই বিভিন্ন পরিবেশে খাপ খাওয়াতে পারে। ভারতের পাঞ্জাব, শিয়ালকোট, গুরুদাসপুর পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডি ও লাহোর এবং বাংলাদেশের কোনো কোনো অঞ্চলে পালন করা হয়।

See also  ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগল চেনার উপায় বা ব্ল্যাক বেঙ্গল ছাগলের বৈশিষ্ট্য কি?

বিটল ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  1. গায়ের রং প্রধানত লাল, তবে লালের মধ্যে সাদা দাগ দেখা যায়।
  2. আকারে বড় হয়, তবে যমুনাপাড়ির চেয়ে কিছুটা ছোট।
  3. পা লম্বা হয়, কান লম্বা এবং ঝুলানো থাকে।
  4. ছাগল বছরে একবার এবং ১ জোড়া বাচ্চা দেয়।
  5. এরা দুধ বেশি দেয়। একটি ছাগী হতে দৈনিক ৩-৪ লিটার পর্যন্ত দুধ পাওয়া যায়।
  6. পুরুষ ছাগলের দাড়ি থাকে কিন্তু ছাগীর দাড়ি নেই।
  7. এরা ২০-২২ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়।
  8. পূর্ণবয়স্ক ছাগল ও ছাগীর ওজন যথাক্রমে ৬৫ কেজি ৪৫ কেজি।
  9. এদের নাক বাাঁকা এবং শিং পেছনের দিকে বাঁকানো।

ঙ) কাশ্মীরি ছাগল (Kashmiri Goat)

চিত্র- কাশ্মীরি ছাগলের জাত
চিত্র- কাশ্মীরি ছাগলের জাত

ভারতের কাশ্মীর এদের আদি বাসস্থান। এরা বেশ বড় ও কষ্টসহিষ্ণ হয়।

কাশ্মীরি ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  • গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পার না।
  • গায়ের রঙ সাধারণত সাদা, তবে ধূসর ও বাদামি বর্ণের ছাগল দেখা য়ায়।
  • শিং লম্বা এবং পেছনের দিকে বাঁকানো। কান ছোট, খাড়া, ফানেলের মতো।
  • দেহ মোলায়েম সিল্কজাতীয় লোমে আচ্ছাদিত থাকে। এ লোমের নিচে ছাই রঙের পশমিনা থাকে। এ পশমিনা মোটা কম্বল ও শাল তৈরির কাজে লাগে।
  • এরা ২২ মাস বয়সে প্রথম বাচ্চা দেয়।

চ) অ্যাংগোরা ছাগল (Angora Goat)

চিত্র- অ্যাংগোরা ছাগলের জাত
চিত্র- অ্যাংগোরা ছাগলের জাত

এদের আদি বাসস্থান তুরস্ক।

অ্যাংগোরা ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায়:

  1. এদের লোম বেশ বড়, প্রায় ১৩-২৫ সেমি লম্বা ও উজ্জ্বল।
  2. দুধ উৎপাদন কম, গড়ে দৈনিক ৪০০মিলি।
  3. দুধে চর্বিও পরিমাণ ৫.৭%।
  4. এরা প্রতিবারে ১টি বাচ্চা দেয়।
  5. এদেরকে লোমের জন্য প্রধানত পালন করা হয়।

উপরো আলোচনার মাধ্যমে ছাগলের বৈশিষ্ট্য/ছাগলের জাত চেনার উপায় জানলাম ও শিখলাম।

পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন জাতের ছাগল রয়েছে। আকারআকৃতি, আচরণ ও বৈচিত্রে এদের মধ্যে ভিন্নতা রয়েছে। সানেন, টোগেনবার্গ, অ্যাংলো নুবিয়ান, আলপাইন, বিটল, যমুনাপারি, বেঙ্গল, মারডি, মা-টু প্রভৃতি জাত বিশেষভাবে পরিচিতি লাভ করেছে। এরা ভিন্ন ভিন্ন গুণের অধিকারী। যেমন- এদের মধ্যে কোনোটি দুধ উৎপাদন, কোনোটি প্রজনন ক্ষমতায়, কোনোটি মাংস উৎপাদন আবার কেউবা চামড়া উৎপাদনের জন্য বিখ্যাত।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts