Skip to content

ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি? ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা

ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি, ছাগলের পিপিআর রোগের এবং গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা

ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গবাদি প্রাণিতে যেসব রোগ হয় তাদেরকে ভাইরাস জনিত রোগ বলে। ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গবাদি প্রাণিতে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে। ক্ষুরারোগ, গোবসন্ত, জলাতঙ্ক, পিপিআর কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ভাইরাসজনিত রোগ।

এ পাঠ শেষে আপনি- গৃহপালিত প্রাণি অর্থ্যাৎ ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি তা জানতে পারবেন। ছাগলের জনিত রোগ জলাতঙ্ক, ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা এবং ছাগলের বসন্ত রোগ সম্পর্কে জানতে পারবেন। গরুর ভাইরাস জনিত রোগ গোবসন্ত এবং গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা সম্পর্কে জানতে পারবেন।

নিম্নে ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি? ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয়ে সহজভাবে আলোচনা করা হলো-

(১) ছাগলের ভাইরাস জনিত রোগ কি কি?

ক) ছাগলের জলাতঙ্ক রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা (Rabies)

জলাতঙ্ক একটি ভাইরাসজনিত রোগ। কুকুর, বিড়াল, শৃগাল, বেজী প্রভৃতি প্রাণী এ রোগের জীবাণু বহন করে ও সাধারণত বেশি আক্রান্ত হয়। স্তন্যপায়ী সব প্রাণীরই এ রোগ হয়। মানুষেরও এ রোগ হয়। সাধারণত রোগাক্রান্ত কুকুর বা বিড়ালের কামড়ে গৃহপালিত গবাদি প্রাণি ও মানুষের এ রোগ হয়ে থাকে। আক্রান্ত প্রাণীর লালা সুস্থ প্রাণীর দেহের ক্ষতে লেগেও রোগজীবাণু সংক্রামিত হতে পারে।

রোগের কারণ: ভাইরাস।

রোগের লক্ষণ:

  1. আক্রান্ত প্রাণী বা ক্ষ্যাপা বা উত্তেজিত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করে এবং অন্য গবাদি প্রাণিকে আক্রমন করতে চেষ্টা করে।
  2. গবাদি প্রাণির চোয়ালের অবশতা দেখা দেয়, ফলে গবাদি প্রাণি গিলতে পারে না।
  3. গলার মাংসপেশীতে পক্ষাঘাত হয়, ফলে চোয়াল নিচের দিকে ঝুলে পড়ে।
  4. প্রথমে দেহের পিছনের অংশ অবশ হয়ে যায় এবং দুর্বলতার কারণে গবাদি প্রাণি হঠাৎ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। লুটিয়ে পড়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে গবাদি প্রাণি মারা যায়।
  5. মুখ দিয়ে ফেনাযুক্ত লালা ঝরে এবং ঘন ঘন প্রস্রাব করে।
  6. পা দিয়ে মাটি খুঁড়তে থাকে।
  7. পানি পিপাসা হয়, তবে পানি পান করতে পারে না। পানিকে ভয় পায়
  8. গবাদি প্রাণি ভগ্ন কন্ঠে ঘন ঘন ডাকতে থাকে।
  9. আক্রান্ত ষাঁড় অতিরিক্ত যৌনানুভুতির কারনে অন্য গবাদি প্রাণি বা কোনো কিছুর ওপর লাফিয়ে ওঠে।
  10. রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ২৪-৪৮ ঘন্টার মধ্যে অবশতার কারণে গবাদি প্রাণি হঠাৎ করে মাটিতে শুয়ে পড়ে এবং কয়েক ঘন্টার মধ্যে মারা যায়।

চিকিৎসা:

  1. রোগের লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার পর চিকিৎসা করে কোনো ফল পাওয়া যায় না।
  2. জলাতঙ্ক রোগের কোনো চিকিৎসা নেই। তবে দংশনের পরপরই ক্ষতস্থান ২০% কোমল সাবান পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে ফেললে উপকার পাওয়া যায়। এরপর ক্ষত স্থান কার্বলিক এসিড দিয়ে পুড়িয়ে দেয়া উত্তম।
  3. অ্যান্টি সিরাম কামড়ানোর ক্ষতে প্রয়োগ করল ভাইরাস নিউট্রোলাইজ হয়।
  4. দংশনের পর অনতিবিলম্বে প্রতিষেধক হিসেবে এ্যান্টির‌্যাবিস ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। গরুর জন্য দৈনিক ৩০ মিলি করে ১৪ টি ইনজেকশন দিতে হবে। অথবা ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রতিরোধ:

  1. রোগ প্রতিরোধের জন্য রাস্তার সমস্ত বেওয়ারিশ কুকুর মেরে ফেলতে হবে।
  2. পোষা সকল কুকুরকে বছরে একবার প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
  3. জনসচেতনতা বাড়াতে হবে।

খ) ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা (Pests Des Petits Ruminants)

ছাগলের পিপিআর রোগ একটি ভাইরাসজনিত রোগ। প্রায় সব বয়সের ছাগল এই রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়ে থাকে। এই রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি (৯০%)। প্রতিবছর এই রোগে আক্রান্ত হয়ে যে হারে ছাগল মারা যায় তাতে অভ্যন্তরীন আমিষের ঘাটতি হয় এবং চামড়া রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

See also  অপুষ্টিজনিত গরু-ছাগলের রোগ এবং ভিটামিনের অভাবজনিত গরু-ছাগলের রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও প্রতিকার

পিপিআর রোগটি ১৯৪০ সালে সর্বপ্রথম আফ্রিকার আইভরি কোস্টে সনাক্ত করা হয়। পরবর্তীতে রোগটি আরব পেনিনসুলাা হয়ে ১৯৮৭ সালে ভারতে ছড়িয়ে পড়ে এবং ১৯৯২ সালে আমাদের দেশে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। এ রোগের ভয়াবহতার জন্য একে গোট প্লেগ নামেও অভিহিত করা হয়। মহামারি হলেও এই রোগে শতকরা ৯০-১০০ ভাগ প্রাণী আক্রান্ত হয়ে থাকে এবং ৫০-৮০% প্রাণী মারা যায়। ছাগল পালন একটি লাভজনক পেশা বিধায় অর্থনৈতিক ক্ষতির কথা বিবেচনা করে এ রোগ প্রতিরোধ করা অপরিহার্য।

ছাগলের পিপিআর রোগের বিস্তার: ছাগলের পিপিআর রোগের কারণ এক প্রকার ভাইরাস। এ রোগটি প্রধানত বাতাসের মাধ্যমে ছড়ায়। তাছাড়া আক্রান্ত গবাদি প্রাণির সংস্পর্শ দ্বারা এবং খাবার অথবা পানির মাধ্যমে রোগ ছড়িয়ে পড়ে। মূলত এটি একটি ছোঁয়াচে রোগ।

ছাগলের পিপিআর রোগের কারণ: ভাইরাস। 

ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ:

  1. প্রথমে অল্প অল্প জ্বর হয়। চোখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।
  2. রোগ তীব্র হলে প্রচন্ড জ্বর, ডায়রিয়া এবং পরবর্তীতে নিউমোনিয়া হয়। নাক ও চোখের পাতা শ্লেষ্মা দ্বারা বন্ধ থাকে।
  3. কন্ঠনালী ও পরিপাক নালীতে প্রদাহ ও রক্তক্ষরণ ঘটে। আক্রান্ত ছাগলের অবসাদ ও ক্ষুধামন্দা হয়।
  4. মুখে ক্ষত হয় এবং মুখ থেকে অনবরত লালা ঝরা শুরু করে।
  5. শ্বাস প্রশ্বাস কষ্টকর ও দুর্গন্ধ যুক্ত হয়।
  6. তীব্র ডায়রিয়া দেখা দেয় এবং মৃত্যু ঘটে। রক্তমিশ্রিত পানির মত তরল পায়খানা হয়।
  7. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সাময়িকভাবে সম্পূর্ন ভেঙ্গে পড়ে। গর্ভবতী ছাগলের গর্ভপাত হয়।
  8. মৃত্যর পূর্বে ছাগল মাটিতে শুয়ে পড়ে।

ছাগলের পিপিআর প্রতিরোধের উপায়:

  1. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে জবাই করে পুড়িয়ে ফেলে অথবা গবাদি প্রাণির গতিবিধি নিয়ন্ত্রন করতে হবে।
  2. সুস্থ গবাদি প্রাণিকে ১ বছর অন্তর টিকা দিয়ে এ রোগ প্রতিরোধ করা যায়। বাচ্চার ৩ মাস বয়স হলে তাদেরকে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। পিপিআর টিকা ১০০ সিসি ডাইল্যুয়েন্টর সাথে টিকা গুলানোর পর প্রতি গবাদি প্রাণিকে ১ মিলি করে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।

ছাগলের পিপিআর রোগের চিকিৎসা:

ছাগল আক্রান্ত হওয়ার পর পিপিআর রোগের চিকিৎসার জন্য এ্যান্টিসিরাম এ্যান্টিবায়োটিক সমন্বিত চিকিৎসা পদ্ধতি খুবই ফলপ্রসূ হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। এ পদ্ধতিতে এন্টিসিরামের সঙ্গে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করে পিপিআর রোগাক্রান্ত ছাগলকে চিকিৎসা করা হয়। এ পদ্ধতির উদ্দেশ্য হলো-

  1. পিপিআর সৃষ্টিকারী ভাইরাসকে ধ্বংস করা এবং
  2. ভাইরাসজনিত আক্রমণের ফলে শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙ্গে পড়ার কারণে দ্বিতীয় পর্যায়ের সংক্রমনকে মোকাবেলা করা।

ছাগলের পিপিআর চিকিৎসা পদ্ধতি:

রোগের অবস্থাএ্যান্টিসিরামএ্যান্টিবায়োটিক
১। ডায়রিয়া ওনিউমোনিয়া১০ মি.লি. পরপর তিন দিন১ মি.লি. /১০ কেজি দৈহিক ওজন প্রথম ডোজ,২ দিন পর ২য় ডোজ। ডায়রিয়া বন্ধ না হওয়াপর্যন্ত ট্রিনাসিন (৫০০মি. গ্রাম) অ্যামেডিস (৪০০মি. গ্রাম) এবং ইন্টোভেট ট্যাবলেট এক সাথেমিশিয়ে দিনে দুই বার খাওয়াতে হবে। এ ছাড়াওপরিমাণমত ওরাল স্যালাইন খেতে দিতে হবে।
২। নিউমোনিয়া১০ মি.লি. পরপর তিন দিনএকই প্রকার ঔষধ ১ মি.লি./১০ কেজি দৈহিক ওজন প্রথম ডোজ, ২ দিন পর ২য় ডোজ।
৩। তীব্র জ্বর, চোখ ও নাকদিয়ে তরল নিঃসরণ১০ মি.লি. পরপর তিন দিনএকই প্রকার ঔষধ ১ মি.লি./১০ কেজি দৈহিক ওজন প্রথম ডোজ ২ দিন পর ২য় ডোজ এবং ট্রিনাসিন (৫০০ মি. গ্রাম)
৪। রোগাক্রান্ত গবাদিপ্রাণির সঙ্গে একইশেডে বসবাসরতগবাদি প্রাণি১০ মি. লি. পরপর দুই দিনএকই প্রকার ঔষধ ১ মি.লি./১০ কেজি দৈহিক ওজন প্রথম ডোজ ২ দিন পর ২য় ডোজ এবং ট্রিনাসিন (৫০০ মি. গ্রাম)

ছাগলের পিপিআর রোগ দমনে খামারীর করণীয়:

See also  গরু-ছাগলের গায়ে পোকা বা বহিঃপরজীবী জনিত রোগের লক্ষণ, চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ

পিপিআর একটি ছোঁয়াচে রোগ। এ রোগ ছাগল পালনের জন্য একটি বড় অন্তরায়। এ রোগ দমনে কৃষকের করণীয় বিষয়সমূহ হচ্ছে-

  1. ছাগলের বাসস্থান পরিস্কার ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  2. অসুস্থ ছাগলকে সুস্থ ছাগল থেকে আলাদা করে শুকনা জায়গায় রাখতে হবে।
  3. স্থানীয় গবাদি প্রাণি চিকিৎসালয়ের ডাক্তারের ব্যবস্থামত চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে হবে।
  4. সুস্থ ছাগলকে স্থানীয় গবাদি প্রাণি সম্পদ বিভাগের কর্মীদের মাধমে প্রতিষেধক টিকা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
  5. আক্রান্ত ছাগল মারা গেলে মাটিতে দুই হাত গভীর করে চুন/ডলোচুন ছিটিয়ে পুঁতে ফেলতে হবে।
  6. আক্রান্ত বা মৃৃত ছাগলের বর্জ্যও মাটিতে পুুঁতে বা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  7. আক্রান্ত ছাগল বিক্রয় ও চলাচল বন্ধ করেতে হবে।
  8. এ রোগ প্রতিরোধে নিয়মিত ছাগলের টিকা দিতে হবে।
  9. রোগের চিকিৎসায় গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শমত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

গ) ছাগলের বসন্ত রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা (Goat Pox)

ছাগলের ভাইরাস জনিত রোগ গোট পক্স বা ছাগলের বসন্ত অতি উচ্চমাত্রার তীব্র সংক্রামক রোগ। সর্বপ্রথম ১৯৩৬ সালে ভারতে এ রোগ আবিষ্কৃত হয়। বাতাসের সাহায্যে জীবাণু সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে। ব্যবহার্য জিনিসপত্র, খাদ্য, শুশ্রুষাকারীর মাধ্যমে রোগজীবাণু ছড়িয়ে রোগের সৃষ্টি করে থাকে।

রোগের কারণ: ভাইরাস।

রোগের লক্ষণ:

  1. দেহের তাপমাত্রা বেড়ে যায় (১০৫-১০৬ ডিগ্রী ফারেনহাইট)
  2. দেহের পশমহীন স্থানে যেমন- চোখ, কান, নাক, পিছনের পায়ের ভিতরের দিক, মুখের প্রান্তভাগ ও পায়ুভাগে গুটি গুটি ফোড়া হয়।
  3. জ্বর হওয়ার ২-৫ দিনের মধ্যে ত্বকের ওপর সমস্ত দেহে গুটি স্পষ্ট হয়ে ওঠে। পরে গুটি গুলো লালচে গুটিতে পরিনত হয়।
  4. ওলান ও বাঁটে বসন্তের গুটি দেখা যায়।
  5. রোগের তীব্রতার সাথে সাথে পাতলা পায়খানা।
  6. তরল ক্ষরণ হতে হতে নাকে ঘা হয়।
  7. লিম্ফ নোড (Lymph node) ফুলে যায়।

চিকিৎসা:

  1. জীবাণুর সংক্রামণ রোধে এন্টিবায়োটিক ব্যবহার করতে হবে।
  2. বসন্তের ক্ষতে ১% ক্লোরোমফেনিকল সলুশন ও টেট্রোসাইট্রিনের গুঁড়া দিনে একবার প্রয়োগ করলে ক্ষত সেরে ওঠে।
  3. রোগের প্রথম দিকে পক্স প্রতিরোধক ও এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিলে আক্রান্ত ছাগলের মৃত্যহার কমে।

বেশি পাতলা পায়খানা হলে ভাতের মাড় খাওয়াতে হবে।

রোগ প্রতিরোধ:

  1. ছাগলের প্রধান শত্রু ঠান্ডা, বিশেষ করে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করতে হবে।
  2. ছয় মাস বা তদুর্ধ্ব বয়সের ছাগল/ভেড়াকে এক বছর অন্তর গোট পক্স দিতে হবে। এ টিকা ৫০ সিসি ডাইল্যুয়েন্টের সাথে টিকা গুলানোর পর প্রতি গবাদি প্রাণিকে ১ মিলি করে চামড়ার নিচে দিতে হবে।
  3. স্বাস্থ্যসম্মত ব্যবস্থায় লালন-পালন করতে হবে।
  4. সুস্থ ছাগলকে রোগাক্রান্ত ছাগল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে।
  5. পরিস্কার বিশুদ্ধ পানি খাওয়াতে হবে।
  6. বাসি পচা খাবার পরিহার করতে হবে।
  7. রোগ দেখা দিলে আশপাশের সকল সুস্থ ছাগলকে এন্টিপক্স সিরাম ইনজেকশন দিতে হবে।

(২) গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি?

ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হয়ে গরু বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হয়ে থাকে। নিচে গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি তার বিবরণ দেয়া হলো।

ক) গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা (Foot and Mouth Disease)

ক্ষুরারোগ গবাদি প্রাণির একটি অত্যন্ত মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। দুই ক্ষুরবিশিষ্ট সকল প্রাণীই এ রোগে আক্রান্ত হয়। আমাদের দেশে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া এ রোগের শিকার। এ রোগজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতি বছর ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শ, খাদ্যদ্রব্য, লালা ও অন্যান্য ব্যবহার্য দ্রব্য এবং বাতাসের মাধ্যমে রোগজীবাণু সুস্থ প্রাণীতে সংক্রামিত হয়ে রোগের বিস্তার করে। এছাড়া মশা-মাছি কীটপতঙ্গ এ রোগের বাহক।

গরুর ক্ষুরা রোগের প্রচলিত নাম: বাতা, জ্বর, তাপা, খুুরুয়া, ক্ষুরাচল, এসোঁ, ক্ষুরপাকা ইত্যাদি।

গরুর ক্ষুরা রোগের কারণ: ভাইরাস।

গরুর ক্ষুরা রোগের লক্ষণ:

  1. প্রাথমিক অবস্থায় জ্বর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা ১০৭০ ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  2. জিহ্বা, দাঁতের মাড়ি, মুখের ভিতর এবং পায়ের ক্ষুরের মাঝখানে ফোস্কা ওঠে, পরে ফোস্ক ফেটে লাল ঘায়ের সৃষ্টি করে।
  3. মুখ দিয়ে লালা পড়ে। ঠোঁট নড়াচড়ার ফলে সাদা সাদা ফেনা বের হতে থাকে এবং চপচপ শব্দ করে।
  4. ক্ষুরের ফোস্কা ফেটে ঘা হয়, পা ফুলে যায় এবং গবাদি প্রাণি খুড়িঁয়ে হাঁটে।
  5. গাভীর ওলানে ফোস্কা হতে পারে, ফলে ওলান ফুলে ওঠে এবং দুধ কমে যায়।
  6. ছোট বাছুুরের ক্ষেত্রে হৃৎপিন্ড আক্রান্ত হয় এবং কোন লক্ষণ ছাড়াই হঠাৎ মারা যায়।
See also  গরুর বৈশিষ্ট্য: দেশি গরুর বৈশিষ্ট্য ও বিদেশি উন্নত জাতের গরুর বৈশিষ্ট্য কি কি? গরুর জাত কত প্রকার? গরুর জাত চেনার উপায়

গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি:

  1. ক্ষুরারোগ দেখা দিলে আক্রন্ত গবাদি প্রাণিগুলোকে সুস্থ গবাদি প্রাণি হতে আলাদা করে পরিস্কার ও শুকনা জায়গায় রাখতে হবে। কোন অবস্থাতেই কাদা বা পানিতে রাখা যাবে না।
  2. রোগ দেখা দেওয়ার আগে সমস্ত সুস্থ গবাদি প্রাণিকে ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে।
  3. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে কচি ঘাস ও তরল খাবার যেমন ভাতের ফেন বা জাউভাত খেতে দিতে হবে।
  4. রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে স্থানীয় গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  5. আক্রান্ত গবাদি প্রাণির মুখের এবং পায়ের ঘায়ের চিকিৎসা করতে হবে।
  6. মুখের ক্ষত ও জিহ্বা প্রত্যহ ২/৩ বার পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট (০.০১%) অথবা ফিটকারি বা এলাম (২%) দিয়ে ধুতে হবে।
  7. ৩% আইওসান সলুশন দ্বারা ক্ষতস্থান দৈনিক ৩ বার করে ৩-৫ দিন ধুয়ে দিতে হবে।
  8. আইওসান দিয়ে ধোয়ার পর বোরো গ্লিসারিন (৪%) লাগানো ভাল। অথবা মুখের ঘায়ে সোহাগার খৈ গুড়া করে মধু বা ঝোলাগুড়ের সাথে মিশিয়ে লাগানো যেতে পারে। অথবা, পায়ের ক্ষতস্থানে তুঁতে (১%) অথবা সোডিয়াম বাইকার্বনেট (২%) অথবা পটাসিয়াম পারম্যাঙ্গানেট ০.০১% সলুশন দিয়ে ধুয়ে দিতে হবে। এর পর গন্ধকের গুড়া বা সলফানিলামাইড পাউডার দিনে ২-৩ বার লাগাতে হবে। নারকেল তেল ও তারপিন তেল ৪ঃ১ অনুপাতে মিশিয়ে ঘায়ে লাগালে ক্ষতস্থানে মাছি পড়বে না।
  9. ক্ষুরা রোগের জীবাণুর জটিলতা রোধে উল্লিখিত যে কোন একটি অ্যান্টিবায়োটিক ইনজেকশন দিলে সুফল পাওয়া যায়। যথা- ১. ডিপোমাইসিন ২. অ্যালাবিপেন ১৫% ৩. এমিক্সিভেট ইনজেকশন ৪. জেন্টাসিন ৫% ইত্যাদি।

গরুর ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের উপায়:

  1. নিয়মিত সুস্থ গবাদি প্রাণিকে প্রতিষেধক টিকা প্রদানই রোগ প্রতিরোধের প্রধান উপায়। তাই ক্ষুরা রোগ প্রতিরোধের জন্য সুস্থ গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত রোগ প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে। ক্ষুরা রোগের জন্য টিকা ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে ৩ মাস এবং গরু-মহিষের ক্ষেত্রে ৬ মাস বয়স হতে প্রতি ৬ মাস অন্তর টিকা দিতে হবে।
  2. ট্রাইভ্যালেন্ট এফএমডি টিকা গরু মহিষের ক্ষেত্রে ৬ মি.লি. এবং ছাগল-ভেড়ার ক্ষেত্রে ৩ মি.লি. হারে চামড়ার নিচে প্রয়োগ করতে হবে।

সাবধানতা:

  1. যে ব্যক্তি আক্রান্ত প্রাণীর সেবাযত্ন করবে তার ব্যবহৃত কাপড় চোপড়, হাত পা এবং ব্যবহৃত অন্যান্য জিনিস
  2. অবশ্যই জীবাণুনাশক ঔষধ যেমন আইওসান/আয়োডিন দ্রবণ (৪ চা চামচ/১ লিটার পানি) দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে।
  3. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে কোন অবস্থাতেই কাদামাটি বা পানিতে রাখা যাবে না।

খ) গরুর ভাইরাস জনিত রোগ ‘গোবসন্ত’ (Rinder Pest)

গরুর ভাইরাস জনিত রোগ গোবসন্ত একটি মারাত্মক সংক্রামক রোগ। গরু ও মহিষ এ রোগে আক্রান্ত হয়। এ রোগ হলে আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে বাঁচানো যায় না। আক্রান্ত প্রাণীর সংস্পর্শ, খাদ্য, পানি, বাতাস বা শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে রোগজীবাণু সুস্থ প্রাণীতে সংক্রামিত হয়ে রোগের সৃষ্টি করে।

প্রচলিত নাম: গোমড়ক, গুটি শীতলা, গোমারী ও কলেরা ইত্যাদি। রোগের কারণ: ভাইরাস

রোগের লক্ষণ:

  1. প্রথমে জ্বর হয় এবং শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে (১০৫-১০৭ ডিগ্রি) ফারেনহাইট পর্যন্ত হতে পারে।
  2. মুখে ও খাদ্যনালিতে ঘা হয়।
  3. পায়খানা প্রথমে শক্ত হয়, পরে পাতলা হয়।
  4. মুখে দুর্গন্ধ হয় এবং গবাদি প্রাণির শ্বাসকষ্ট হয়।
  5. মুখ, নাক ও চোখ দিয়ে তরল ঝরে।
  6. দুর্গন্ধযুক্ত পাতলা পায়খানা হয়।
  7. অতিরিক্ত ডায়রিয়ায় পানিশুন্যতা দেখা যায়।
  8. গবাদি প্রাণির খাওয়া কমে যায়। দুর্বল ও অবশ হয় এবং মারা যায়।

চিকিৎসা ও রোগ প্রতিরোধ:

  1. এ রোগের কোন উপযুক্ত চিকিৎসা নেই। তবুও রোগের চিকিৎসায় গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
  2. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে এসট্রিনজেন্ট মিশ্রণ দিনে তিন বার খাওয়ানো যেতে পারে।
  3. সুস্থ গবাদি প্রাণিকে নিয়মিত প্রতিষেধক টিকা দিতে হবে।
  4. স্বাস্থ্যসম্মত লালন পালন ব্যবস্থা রোগ দমনে সহায়ক।
  5. মুখের ঘায়ের জন্য পটাশ পারম্যাঙ্গানেট মিশানো পানি দিয়ে ধুয়ে জেনসান ভায়লেট দ্রবণ লাগানো যেতে পারে।
  6. আক্রান্ত গবাদি প্রাণিকে পরিস্কার পানি ও তরল খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  7. জীবাণুর সংক্রমণ রোধে ডিপোমাইসিন, জেন্টামাইসিন, এম্পিসিলিন ২০%, রেনামাইসিন ইত্যাদি যে কোন একটি এন্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করাতে হবে।

উপরোক্ত আলোনায় আমরা ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগ কি কি? ছাগলের পিপিআর রোগের লক্ষণ ও চিকিৎসা, গরুর ক্ষুরা রোগের চিকিৎসা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অবগত হলাম।

ছাগল ও গরুর ভাইরাস জনিত রোগে মৃত্যুর হার অনেক বেশি। তাই নিয়মিত সুস্থ গবাদি প্রাণিকে প্রতিষোধক টিকা প্রদানের মাধ্যমে গবাদিপ্রাণিকে ভাইরাসজনিত রোগের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts