Skip to content

ঝাড় শিম চাষ পদ্ধতি

ঝাড় শিম চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম

ঝাড় শিম একটি পুষ্টিকর সবজি। এর কচি শুঁটি, অপক্ক ও পরিপক্ক বীজ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শীতকারে বাংলাদেশে সর্বত্র চাষ করা যায়। পুষ্টিকর সবজি হিসেবে ঝড় শিমের চাহিদা রয়েছে দেশব্যাপী।

ঝাড় শিম শীতপ্রধান অঞ্চলের ফসল। তবে উষ্ণপ্রধান অঞ্চলেও জন্মে।

১৬ থেকে ২৪ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রার মধ্যে গাছ ভালো জন্মে। বার্ষিক ৫০ থেকে ১৫০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ঝাড় শিম চাষের জন্য ভাল। গাছ জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। বৃষ্টি বেশি হলে ফুল ঝরে যায় ও পাতায় দাগ পড়া রোগ হয়। হালকা ছায়াযুক্ত স্থানেও ঝাড় শিম চাষ করা যায়।

প্রায় সকল ধরণের মাটিতে ঝাড় শিম গাছ ভাল হয়। তবে সুনিস্কাশিত দোআঁশ মাটিতে ঝাড় শিম গাছ ভাল জন্মে। প্রচুর জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ মাটিতে এর ফলন বৃদ্ধি পায়।

(১) ঝাড় শিমের জাত

বর্তমানে আমাদের বাংলাদেশে কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ঝাড় শিমের জাতিউন্নয়নে ও উদ্ভাবনে কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে সবজি হিসেবে খাওয়ার জন্য দুটি জাত এবং বীজ হিসেবে খাওয়ার জন্য ১টি জাত উন্নতম।

বারি ঝাড় শিম-১, বারি ঝাড় শিম-২, এবং বারি ঝাড় শিম-৩। এর মধ্যে প্রথম দুটি শিম খাওয়ার জন্য এবং তৃতীয়টি বীজ খাওয়ার জন্য।

এছাড়াও বর্তমানে পাহাড়ী এলাকায় ঝাড় শিমের বেশ কিছু স্থানীয় জাত রয়েছে।

ক) বারি ঝাড় শিম-১ (ফরাসী শিম)

‘বারি ঝাড় শিম-১’ জাতটি ১৯৯৬ সালে অনুমোদন করা হয়।

See also  কামরাঙ্গা শিম চাষ পদ্ধতি
বারি ঝাড় শিম-১ (ফরাসী শিম)
বারি ঝাড় শিম-১ (ফরাসী শিম)
  • গাছ খাটো ও ঝোপালো। শিম সবুজ, কিছুট বাঁকা। এটি লম্বায় ১০-১৩ সেমি এবং চওড়ায় ১.০-১.৫ সেমি হয়।
  • প্রতিটি শিমের ওজন ৫-৬ গ্রাম।
  • ফুল এবং বীজের রং সাদা। থোকায় থোকায় সবুজ শিম ধরে।
  • সারিতে ঘন করে গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র এ জাতটি চাষাবাদ করা যায়।
  • বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত ৪০-৪৫ দিন সময় লাগে।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ১৩-১৪ টন পর্যন্ত হয়।
  • এ জাতের গাছ খাটো তাই মাচা বা বাউনি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
  • এ জাতটি উচ্চ ফলনশীল, কিছুটা ভাইরাস রোগ প্রতিরোধী এবং দ্রুত বর্ধনশীল।

খ) বারি ঝাড় শিম-২

‘বারি ঝাড় শিম-২’ জাতটি ২০০২ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি ঝাড় শিম-২
বারি ঝাড় শিম-২
  • গাছ খাটো ও মাঝারী ধরনের ঝোপালো। শিম হালকা সবুজ, নলাকৃতির। এটি লম্বায় ১০-১২ সেমি এবং চওড়ায় ০.৭-০.৮ সেমি হয়।
  • থোকায় থোকায় সবুজ শিম ধরে। প্রতি থোকায় ২-৫টি শিম ধরে।
  • সারিতে ঘন করে গাছ লাগিয়ে চাষ করা যায়। শীত মৌসুমে বাংলাদেশের সর্বত্র এ জাতটি চাষাবাদ করা যায়।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ১২-১৫ টন পর্যন্ত হয়।
  • জাতটি রপ্তানিযোগ্য।

গ) বারি ঝাড় শিম-৩ (খাইস্যা)

‘বারি ঝাড়শিম-৩’ (খাইস্যা) জাতটি ২০১০ সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি ঝাড় শিম-৩ (খাইস্যা)
বারি ঝাড় শিম-৩ (খাইস্যা)
  • এটির পড খাওয়া হয় না, বীজ খাইস্যা হিসেবে খাওয়া হয়।
  • গাছ খাটো ও ঝোপালো। জাতটির ফুল সাদা রঙের। থোকায় থোকায় শিম ধরে। শিম সবুজ, সোজা, ১৪-১৬ সেমি লম্বা এবং ১.০-১.৩ সেমি চওড়া হয়।
  • প্রতি গাছে ৮-১০টি পড বা শিম হয়। প্রতি পডে ৫-৬টি বীজ থাকে। খাওয়ার উপযোগী ১০০ বীজের ওজন ১১০-১১৫ গ্রাম হয়।
  • বীজগুলো কালচে খয়েরী রঙের। পরিপক্ক বীজ খাইস্যা হিসেবে খাওয়া হয়। চট্টগ্রাম এবং সিলেট অঞ্চলে খাইস্যা খুবই জনপ্রিয়। আস্তে আস্তে সারা দেশেই খাইস্যা জনপ্রিয় হচ্ছে।
  • বীজ বপন থেকে ফসল উত্তোলন পর্যন্ত ৭৫-৮০ দিন সময় লাগে। উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি খাইস্যা বীজের ফলন ৪.৫-৫ টন হয়।
  • বাংলাদেশে শীতকালে দেশের প্রায় সর্বত্র এ জাত চাষযোগ্য। এ জাতের গাছ খাটো তাই মাচা বা বাউনি দেওয়ার প্রয়োজন হয় না।
See also  শিম চাষ পদ্ধতি

(২) ঝাড় শিম চাষ পদ্ধতি

ক) আবহাওয়া ও মাটি

বেলে-দোআঁশ বা দোআঁশ মাটিতে (ঢ়ঐ ৫.৪-৭.৫) ও অপেক্ষাকৃত নিম্ন তাপমাত্রায় (১০-২৫০ সে.) এ শিম ভাল জন্মে। বাংলাদেশে শীতকালে এ ফসলটি ভালভাবে উৎপাদন করা যায়। এটি দিবস নিরপেক্ষ হলেও খরা ও অতিরিক্ত বৃষ্টিপাত সহ্য করতে পারে না।

খ) বপন পদ্ধতি

  • সরাসরি জমিতে লাইন করে বীজ বুনতে হয়। ২৫-৩০ সেমি দূরত্বের সারিতে ১০-১৫ সেমি দূরে দূরে বীজ লাগাতে হয়।
  • ঝাড় শিমের বীজ বপনের আগে ২৪ ঘণ্টা ভিজিয়ে নিলে অঙ্কুররোদগম তাড়াতাড়ি হয়।
  • বীজ বোনার আগে প্রতি কেজি বীজের জন্য ৩ গ্রাম ভিটাভ্যাক্স বা প্রোভ্যাক্স ২০০ ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। তাহলে পরে রোগাক্রমণের আশঙ্কা কমে যাবে।
  • বীজ বপনের ১০ দিন পর প্রতি পিটে একটি সবল চারা রেখে বাকি দুর্বল চারা তুলে ফেলতে হবে।
  • হেক্টর প্রতি প্রায় ৫০ থেকে ৬০ কেজি ঝাড় শিমের প্রয়োজন হয়।

গ) বপনের সময়

আমাদের বাংলাদেশে নভেম্বর মাস ‘ঝাড় শিম-৩’ (খাইস্যা) বীজ বপনের জন্য সবচেয়ে উত্তম সময়। তবে সুনিষ্কাশিত জমি হলে অক্টোবর মাসে রোপণ করতে পারলে আগাম খাইস্যা শিমের দাম ভাল পাওয়া যায়।

ঘ) সারের পরিমাণ

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া২০০-২৫০ কেজি
টিএসপি২০০-২৫০ কেজি
এমওপি১৫০-১৮০ কেজি
গোবর৫০০০ কেজি

ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

জমি তৈরির সময় সমুদয় গোবর, টিএসপি, এমপি ও অর্ধেক ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়। বাকি ইউরিয়া ১৫ দিন ও ৩০ দিন পর ২ বারে উপরি প্রয়োগ করা হয়।

চ) বীজের হার

১২০-১২৫ কেজি/হেক্টর।

ছ) সেচ ও পানি নিষ্কাশন

  • ঝাড় শিম চাষ করার ক্ষেত্রে জমির মাটিতে সঠিক নিয়মে পানি সেচ দিতে হবে।
  • পাহাড়ী অঞ্চলে শিমের চাষ বৃষ্টি নির্ভর হওয়ায় সেচ দেয়ার সুযোগ কম। এজন্য অধিকাংশ চাষী ছড়া বা ঝর্নার কাছে শিমের চাষ করে।
  • ঝাড় শিমের ক্ষেতে এমন ভাবে নালা রাখা দরকার যেন অতিরিক্ত পানি বেরিয়ে যেতে পারে।
  • সেচের পানির সংকট থাকলে গাছের গোড়ার মাটির ওপর খড় বা শুকনো ঘাস বিছিয়ে মালচিং করে দেয়া যেতে পারে।
See also  কামরাঙ্গা শিম চাষ পদ্ধতি

জ) আগাছা ও নিড়ানি

মাঝে মাঝে মাটি নিড়ানি দিয়ে মাদার মাটি আলগা করে দিতে হবে। এবং গাছের গোড়ায় যদি কোনপ্রকার আগাছা জন্ম নেয় কিংবা কোনো ধরণের লতানো গাছ দেখা যায় তবে তা সাথে সাথে নির্মূল করতে হবে।

ঝ) রোগবালাই

  • বড় ধরনের কোন পোকা এবং রোগের প্রাদুর্ভাব নেই। জমিতে চারা অবস্থায় ফুটরট রোগ কোন কোন সময় দেখা যায়। বীজ বপনের পূর্বে শোধন করে এবং চারা গাছে স্প্রে করে এ রোগ দমন করা যায়।
  • ভিটাভেক্স ২০০ প্রতি কেজি বীজে ৩ গ্রাম হারে মিশিয়ে বপন করলে রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়। আবার চারা অবস্থায় রোগ দেখা দিলে অটোস্টিন প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে চারার গোড়ার মাটি ভিজিয়ে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যায়।

ট) ফলন

ঝাড় শিম
ঝাড় শিম

বীজ লাগানোর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে ফুল আসে ঝাড় শিম গাছে। ফুল ফোটার ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যেই ফল খাওয়ার উপযোগী হয়। সঠিক যত্ন ও পরিচর্যার মাধ্যেম একর প্রতি ১২ থেকে ১৫ মেট্রিক টন ঝাড়শিমের ফলন পাওয়া যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts