Skip to content

 

টমেটো চাষ পদ্ধতি

টমেটো চাষ পদ্ধতি

(১) টমেটো চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

টমেটো ভিটামিন এ, বি এবং সি সমৃদ্ধ একটি সবজি। কাঁচা ও পাকা টমেটো রান্না এবং পাকা টমেটো সালাদ হিসাবে জনপ্রিয়। তাছাড়া পাকা টমেটো প্রক্রিয়াজাত করে তৈরি সব রুচিবর্ধক। টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি। তবে বর্তমানে গ্রীষ্মেও চাষ করা যায়।

চিত্র- টমেটো গাছ
চিত্র- টমেটো গাছ
চিত্র- টমেটো
চিত্র- টমেটো

ক) টমেটোর জাত নির্বাচন: বাংলাদেশে টমেটোর অনেক অনুমোদিত জাত রয়েছে।

টমেটোর শীতকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে- বারি টমেটো-২ (রতন), বারি টমেটো-১ (লালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বিনা টমেটো-৩ এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা জাত মারগ্লোব, রুমা জিএফ, অক্সহার্ট ইত্যাদি।

টমেটোর গ্রীষ্মকালীন জাতের মধ্যে রয়েছে- বারি টমেটো-৪, বারি টমেটো-৫, বারি টমেটো-১ (দালিমা), বারি টমেটো-১০ (অনুপমা), বারি টমেটো-১১ (ঝুমকা), বারি হাইব্রিড টমেটো-৩, বারি হাইব্রিড টমেটো-৪ ইত্যাদি।

খ) টমেটো চাষের উপযুক্ত মাটি: আলো-বাতাসযুক্ত উর্বর দোলাশ মাটি টমেটো চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো। তবে উপযুক্ত পরিচর্যায় বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ সব মাটিতেই টমেটো ভালো জন্মে।

গ) টমেটোর চারা উৎপাদন পদ্ধতি: প্রতি হেক্টরে টমেটো চাষের জন্য ২০০ গ্রাম বীজ প্রয়োজন। প্রথমে ৪টি বীজতলার (৩ মিটার ১২১ মিটার) ৫০ গ্রাম করে নীজ ঘন করে বুনতে হয়। বীজ গজানোর ৮-১০ দিন পরে চারা তুলে দ্বিতীয় বীজতলায় ৪x৪ সেমি দূরে দূরে রোপণ করতে হয়। সেক্ষেত্রে ২২টি বীজতলার প্রয়োজন হয়। এতে করে সবল চারা পাওয়া যায়। শীতকালীন জাতের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

ঘ) টমেটো চাষের জন্য জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ: ৪-৫ বার চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে। মাটির প্রকৃতি ও স্থানভেসে ১ মিটার চওড়া ও ১৫-২০ সেমি উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি চওড়া সেচ নালা রাখতে হবে, যাতে পানিসেচ ও নিষ্কাশনের সুবিধা হয়।

See also  গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে ড্রিপ ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে সার এবং পানি ব্যবস্থাপনা

টমেটো চাষের জন্য সার প্রয়োগের কিছু পরিমাণ হচ্ছে-

সারের নামসারের পরিমাণ/শতক
ইউরিয়া২০-২৫ কেজি
টিএসপি১.৫-২.০ কেজি
এমওপি০.৮-১.২ কেজি
গোবর সার৩০-৫০ কেজি

শেষ চাষের আগে সম্পূর্ণ গোবর, সব টিএসপি এবং তিন ভাগের দুই ভাগ এমওপি সার ভালোভাবে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সার সমান ৩ কিস্তিতে চারা লাগানোর ১০ দিন, ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর প্রয়োগ করতে হবে। বাকি এমওপি সার দুই ভাগে ভাগ করে ২৫ দিন ও ৪০ দিন পর নিতে হবে।

ঙ) টমেটোর চারা রোপণ: চারার বয়স ৩০-৩৫ দিন হলে রোপণের উপযোগী হয়। বীজতলা থেকে চারা অত্যন্ত যত্ন সহকারে তুলতে হবে যেন চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য চারা তোলার আগে বীজতলার মাটি ভিজিয়ে নিতে হবে। বিকেলের পড়ন্ত রোদে চারা রোপণ করাই উত্তম। রোপণের পর হালকা সেচ দিতে হবে। এক মিটার চওড়া বেডে দুই সারি করে চারা লাগাতে হবে। সারি থেকে সারির দূরত্ব ৬০ সেমি এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৪০ সেমি রাখতে হবে।

চ) টমেটো চাষে আন্তঃপরিচর্যা: জমিকে নিয়মিত আগাছামুক্ত রাখতে হবে। চারা রোপণের প্রথম ৩-৪ দিন হালকা সেচ দিতে হবে। পরবর্তীকালে মাটিতে রসের অভাব হলে সেচ দিতে হবে। সেচ অথবা বৃষ্টির কারণে জমিতে অতিরিক্ত পানি জমলে তা বের করে দিতে হবে। প্রথম ফুলের গোছার ঠিক নিচের কুশিটি ছাড়া সব পার্শ্ব কুশি ছাঁটাই করতে হবে। গাছে বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকনা দিতে হবে।

ছ) চাষকৃত টমেটো সংগ্রহ: সাধারণত চারা রোপণের দুই মাস পর হতে টমেটো পাকা শুরু করে। জাতভেদে টমেটোর জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন ফল লালচে রং ধারণ করলে বোঁটা থেকে কেটে ফল সংগ্রহ করতে হয়। জাত ও মৌসুম ভেদে ফলনে পার্থক্য হয়। শীতকালে ২৫০ কেজি/শতক এবং গ্রীষ্মকালে ৮০-১০০ কেজি/শতক ফলন হয়ে থাকে।

See also  গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষ পদ্ধতি
চিত্ৰ- টমেটো সংগ্ৰহ
চিত্ৰ- টমেটো সংগ্ৰহ

(২) টমেটো চাষে রোগ ও পোকা দমন

ড্যাম্পিং অফ রোগ: ছত্রাকজনিত এ রোগে চারার গোড়ায় পানি ভেজা দাগ পড়ে ও পড়ে যায়। অনেক সময় শিকড় পড়েও চারা মারা যায়। আক্রান্ত জায়গায় রিডোমিল গোল্ড দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে।

ঢলে পড়া রোগ: ব্যাকটেরিয়াজনিত এ রোগে গাছ যেকোনো সময় চলে পড়ে ও দ্রুত মারা যায়। আক্রান্ত গাছ দেখলেই তা তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। রোগ প্রতিরোধী জাতের চাষ করতে হবে।

চিত্র- ঢলে পড়া রোগ
চিত্র- ঢলে পড়া রোগ
চিত্র- হলুদ পাতা কুঁকড়ানো রোগ
চিত্র- হলুদ পাতা কুঁকড়ানো রোগ
চিত্র- সাদা মাছি
চিত্র- সাদা মাছি

হলুদ পাতা কুঁকড়ানো রোগ: ভাইরাসজনিত এ রোগে পাতা কিনারা থেকে মধ্যশিরার দিকে গুটিয়ে যায়। পাতা খসখসে হয়ে শিরাগুলো স্বচ্ছ হলুদ হয়ে কুঁকড়িয়ে যায়। আক্রান্ত গাছের ডগায় ছোট ছোট পাতা গুচ্ছ আকার ধারণ করে। এ রোগ দমনের জন্য টমেটো ক্ষেত আগাছামুক্ত রাখতে হবে, রোগমুক্ত চারা লাগাতে হবে, আক্রান্ত গাছ তুলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে। সাদা মাছি পোকা এ রোগের দ্রুত বিস্তার ঘটায়। মাছি পোকা দমনের জন্য ৭-১০ দিন পর পর এডমায়ার নামক কীটনাশক স্প্রে করতে হবে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page