Skip to content

 

ট্রিটিক্যালি চাষ পদ্ধতি

ট্রিটিক্যালি চাষ পদ্ধতি

ডুরাম গম (Triticum turgidum L.) ও ঘাস জাতীয় রাই (Secale cereale L.) এর কৃত্রিম সংকরায়ণ ও নানাবিধ বৈজ্ঞানিক কলাকৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে সৃষ্ট একটি নতুন ফসলের নাম ট্রিটিক্যালি। একে মনুষ্য সৃষ্ট ফসল (Man-made crop) বলা হয়।

ট্রিটিক্যালি দুটি ভিন্ন জেনাস (Genus) এর সংমিশ্রণে সৃষ্ট হওয়ার কারণে অধিক ফলনশীল, খরা সহিষ্ণু ও প্রতিকূল আবহাওয়া সহনশীল।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের গম গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক বাছাইকৃত দ্বৈত ট্রিটিক্যালির লাইন ২০০৮ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ‘বারি ট্রিটিক্যালি-১’ ও ‘বারি ট্রিটিক্যালি-২’ নামে অনুমোদিত হয়েছে।

(১) ট্রিটিক্যালির জাত ও বৈশিষ্ট্য

ক) বারি ট্রিটিক্যালি-১

বারি ট্রিটিক্যালি-১
বারি ট্রিটিক্যালি-১
  • ‘বারি ট্রিটিক্যালি-১’ একটি উচ্চ ফলনশীল দ্বৈত ট্রিটিক্যালির জাত।
  • এ জাতের গাছের উচ্চতা মাঝারী (১০০-১১০ সেমি) এবং গাছের রং গাঢ় সবুজ।
  • জাতটি খুবই আগাম, ঘাস না কাটলে ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১০৬-১১২ গমের ক্ষেতে ব্লাস্টের প্রাথমিক লক্ষণ (বামে) এবং পুরো ক্ষেত আক্রান্ত লক্ষণ (ডানে) ব্লাস্টে আক্রান্ত শীষ (বামে) এবং আক্রান্ত স্থানে কালো দাগ (ডানে) দিন সময় লাগে। তবে বোনার ৪০ দিন পর একবার ঘাস কাটলে পাকার জন্য ৯-১২ দিন সময় বেশি লাগে।
  • দানার রং সাদা, চকচকে ও আকার বড়, হাজার দানার ওজন ৪৫-৫০ গ্রাম।
  • জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী।
  • উপযুক্ত পরিবেশে বপন করে বোনার ৪০ দিন পর একবার ঘাস কেটে হেক্টরপ্রতি ১০-১১ টন কাঁচা ঘাস এবং হেক্টরপ্রতি ৪২০০-৪৫০০ কেজি দানা পাওয়া যায়।

খ) বারি ট্রিটিক্যালি-২

বারি ট্রিটিক্যালি-২
বারি ট্রিটিক্যালি-২
  • ‘বারি ট্রিটিক্যালি-২’ একটি উচ্চ ফলনশীল দ্বৈত ট্রিটিক্যালির জাত।
  • এ জাতের গাছের উচ্চতা মাঝারী (১০০-১১০ সেমি) এবং গাছের রং হালকা সবুজ।
  • জাতটি খুবই আগাম, ঘাস না কাটলে ফসল বোনা থেকে পাকা পর্যন্ত ১১০-১১৬ দিন সময় লাগে। তবে বোনার ৪০ দিন পর একবার ঘাস কাটলে পাকার সময় ১০-১২ দিন বেশি লাগে।
  • দানার রং লাল, চকচকে ও আকার মাঝারী এবং হাজার দানার ওজন ৩৮-৪২ গ্রাম।
  • জাতটি পাতার দাগ রোগ সহনশীল এবং মরিচা রোগ প্রতিরোধী।
  • উপযুক্ত পরিবেেেশ বপন করে বোনার ৪০ দিন পর একবার ঘাস কেটে হেক্টরপ্রতি ১০-১২ টন কাঁচা ঘাস এবং হেক্টরপ্রতি ৪৩০০-৪৬০০ কেজি দানা পাওয়া যায়।

(২) ট্রিটিক্যালি চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

ট্রিটিক্যালি গমের মতই একটি ফসল। তাই এর চাষাবাদ পদ্ধতি প্রায় গম ফসলের মতই।

গমের মত জমি তৈরি করে শেষ চাষের পূর্বে একরপ্রতি ৬০ কেজি ইউরিয়া, ৬০ কেজি টিএসপি, ৩০ কেজি পটাশ ও ৪৫ কেজি জিপসাম সার দিয়ে অগ্রহায়ণ মাসের প্রথম থেকে তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত দ্বৈত ট্রিটিক্যালি বোনা যায়।

গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৮০ ভাগ ও তার বেশি হলে একরপ্রতি ৬০ কেজি বীজ ব্যবহার করতে হবে। গজানোর ক্ষমতা ৮০ ভাগের নিচে হলে প্রতি ১ ভাগ কম গজানোর জন্য একরপ্রতি ১ কেজি করে বেশি বীজ বপন করতে হবে। গজানোর ক্ষমতা শতকরা ৬০ ভাগের কম হলে ঐ বীজ ব্যবহার করা উচিত নয়।

গমের মতই সকল আন্তঃপরিচর্যা যেমন- ১ম সেচের পরপরই ‘জো’ আসলে আগাছা দমন করতে হয়। বোনার ১৭-২১ দিনে হালকাভাবে প্রথম সেচ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

ট্রিটিক্যালি ফসল বোনা থেকে ৩৫-৩৬ দিন বয়সে গোড়া থেকে ১ ইি রেখে কেটে নিলে একরপ্রতি ১২০-১৫০ মণ কাঁচা ট্রিটিক্যালি ঘাস পাওয়া যায়।

কাঁচা ঘাস সরাসরি গবাদি পশুকে খাওয়ানো যাবে কিংবা শুকনো খড়ের সাথে মিশিয়ে খাওয়ানো যাবে। অতিরিক্ত ঘাস রোদে শুকিয়ে ‘হে’ তৈরি করে কিংবা ‘সাইলেজ’ তৈরি করে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করে গবাদি পশুকে খাওয়ানো যায়।

ট্রিটিক্যালি ঘাস কাটার পর জমিতে হালকা সেচ দিয়ে একরপ্রতি ৩০ কেজি ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করতে হয়। এরপর শীষ বের হলে আর একটি সেচ দিলেই ট্রিটিক্যালি থেকে একরে ৩০-৪০ মণ গমের মত দানা পাওয়া যায়।

ট্রিটিক্যালি ক্ষেতে ইঁদুরের আক্রমণ হলে ফাঁদ পেতে কিংবা বিষটোপ (জিংক ফসফাইড বা ল্যানিরেট) দিয়ে দমন করতে হবে।

দানার জন্য ট্রিটিক্যালি কাটার উপযুক্ত হলে, রৌদ্রজ্জ্বল দিনে সকালে কাটা উত্তম।

কাটার পর ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে দুপুরে মাড়াই যন্ত্রের সাহায্যে ট্রিটিক্যালি মাড়াই করা উত্তম।

ট্রিটিক্যালির দানা গমের দানার মতই। তাই এর ব্যবহার ও সংরক্ষণ পদ্ধতি গমের মতোই।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page