(১) ডালিয়া ফুলের জাত পরিচিতি
বারি ডালিয়া-১:
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের ফুল বিভাগ কর্তৃক দেশের বিভিন্ন অঞ্চল, নার্সারি ও পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ হতে জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ২০০৯ সালে ‘বারি ডালিয়া-১’ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। জাতটি বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদ উপযোগী।
- এটি একটি কন্দজাতীয় ফুল। পট প্লান্ট হিসেবে ব্যবহার বেশি তবে কাট-ফ্লাওয়ার হিসেবেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
- গাঢ় লাল এবং সাদা মিশ্রণের ফুল এ জাতটির বৈশিষ্ট্য।
- গাছ প্রতি ফুলের সংখ্যা প্রায় ১৪-১৫ টি।
- পটে ফুলের স্থায়ীত্ব ৮-৯ দিন থাকে।
(২) ডালিয়া ফুলের চাষ পদ্ধতি
জলবায়ু ও মাটি:
ডালিয়া চাষের জন্য ঊর্বর ও নিষ্কাশন সুবিধাযুক্ত জমি প্রয়োজন। অবশ্যই প্রচুর সূর্যালোক থাকতে হবে।
বাংলাদেশে শীতকালই এ ফুল চাষের উত্তম সময়। মাটির pH মান ৬.০-৬.৫ ও আবহাওয়া ঠান্ডা হলে ভাল।
চারা তৈরি:
জুলাই-আগস্ট মাসে কন্দমূল বা কাটিং থেকে চারা তৈরির উপযুক্ত সময়।
চারা রোপণ:
কন্দমূল বা কাটিং থেকে উৎপন্ন চারা ২০-২৫ দিন পর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে রোপণের উপযোগী হয়।
শাখা ভাঙ্গা:
কান্ডের আগার অংশ কেটে ফেলাকে শাখা ভাঙ্গা বা পিনচিং বলে। সাধারণত ৩-৬টি শাখা রেখে দিলে গাছটি ঝোপালো হয় এবং অধিক ফুল পাওয়া যায়।
কুঁড়ি অপসারণ:
অনাকাঙ্খিত অপরিপক্ক ফুলের কুঁড়ি অপসারণ কার্যক্রমকে কুঁড়ি অপসারণ বলা হয়। মুকুট কুঁড়িগুলিকে রেখে অবশিষ্ট কুঁড়িগুলি ছিড়ে দিলে বড় আকারের ফুল পাওয়া যায়।
ঠেকা দেয়া:
ডালিয়ার ফুল শাখার তুলনায় বড় ও ভারী হয় বলে কাঠি দিয়ে ঠেকা দিতে হয়।
মাঠে বা জমিতে সার প্রয়োগ:
জমি তৈরির পর হেক্টরপ্রতি ১০ টন পচা গোবর সার, ২৬০ কেজি টিএসপি এবং ১০০ কেজি এমওপি সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। চারা/কন্দ রোপণের ১ মাস পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির জন্য ১৬০ কেজি ইউরিয়া এবং ১০০ কেজি পটাশ সার উপরি প্রয়োগ করা উচিত।
ফুলের কুড়ি আসার পর পরই একই নিয়মে ১৬০ কেজি ইউরিয়া সার আবার উপরি প্রয়োগ করা উচিত।
পটে বা টবে সার প্রয়োগ:
পটে জন্মানোর জন্য ২ ভাগ মাটি, ২ ভাগ গোবর সার, ১ ভাগ পাতা পচা সার ও ১ ভাগ হাড়ের গুঁড়ার সাথে ৫ গ্রাম টিএসপি, ৫ গ্রাম মিউরেট অব পটাশ এর মিশ্রণ ব্যবহার করা উত্তম।
১০ গ্রাম ইউরিয়া সারের অর্ধেক কন্দ/চারা রোপণের ২৫-৩০ দিন পর গাছের দৈহিক বৃদ্ধির সময় একবার এবং বাকি অর্ধেক ফুলের কুঁড়ি আসার সময় উপরি প্রয়োগ করা উচিত।
ফুল সংগ্রহ:
সাধারণত চারা লাগানোর ৭০-৮০ দিন পর ফুল সংগ্রহ করা যায়। তবে পূর্ণ প্রস্ফুটিত অবস্থায় ফুল সংগ্রহ করা উচিত।
ফলন:
গাছ প্রতি গড়ে বছরে ১৪-১৫ টি ফুল পাওয়া যায়।
(৩) ডালিয়া চাষে রোগ ও পোকা দমন ব্যবস্থা
পাতায় দাগ পড়া:
এ রোগের আক্রমণে প্রথমে নিচের পাতায় হলদে দাগ পড়ে এবং আক্রমণের মাত্রার উপর নির্ভর করে বাদামী থেকে কালো দাগে পরিণত হয়। এ রোগ দমনে অটোস্টিন বা বেনলেট (০.১%) স্প্রে করতে হবে।
জাবপোকা:
ডালিয়ার সবচেয়ে বড় শত্রু জাবপোকা। এ পোকা গাছের পাতা, ডগা এবং ফুল থেকে রস চুষে খেয়ে গাছের ক্ষতি কর। আক্রান্ত নতুন কুঁড়ি ও পাতা কুঁকড়ে যায়।
- এ পোকা দমনে প্রাথমিক পর্যায়ে আক্রান্ত পাতা বা ফুল ছিঁড়ে ফেলে পোকাসহ ধ্বংস করা উচিত।
- হলুদ রঙের আঁঠালো ফাঁদ ব্যবহার করেও ভাল ফল পাওয়া যায়।
- সাবান গুঁড়া ৫ গ্রাম/লিটার হারে পনিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করেও এ পোকা দমন করা যেতে পারে।
- আক্রমণ বেশি হলে ডাইমেথয়েট জাতীয় কীটনাশক (পারফেকথিয়ন/সানগর/টাফগর ৪০ ইসি) ২.০ মিলি/লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
থ্রিপস:
এ পোকা খুব ছোট ও বাদামী বা কালো রঙের। এরা সাধারণত গাছের বর্ধনশীল অংগ যেমন কঁচি পাতা ও ফুলের কুঁড়ি থেকে রস শোষণ করে যার ফলে কুঁড়ি ফোঁটে না বা অংশিকভাবে ফোঁটে এবং পাতা বিবর্ণ হয়ে যায়। এরা পাতার এপিডার্মাল স্তর থেকেও রস চুষে খায়।
- এ পোকা দমনে জমিতে সাদা রঙের আঁঠালো ফাঁদ ব্যবহার করা যেতে পারে।
- এছাড়া নিম তেল ৫ মিলি + ৫ মিলি ট্রিক্স প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করলে ভাল ফল পাওয়া যায়।
- আক্রমণ বেশি হলে ফিপ্রনিল গ্রুপের কীটনাশক (অ্যারোনিল ৫০ এসসি/ফোকাস ৫০ এসসি) ১.০ মিলি/লিটার হারে পানিতে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর ২-৩ বা স্প্রে করতে হবে।
[সূত্র: বিএআরআই]