(১) দারুচিনি গাছের জাত ও বৈশিষ্ট্য
বারি দারুচিনি-১:
আকর্ষণীয় বাদামী রঙের সুগন্ধযুক্ত, মিষ্টি ও মধ্যম ঝাঁঝযুক্ত জাত।
এর বাকলে রয়েছে সিনামালডিহাইড, চিনামিক অ্যাসিটেট, চিনামাইল অ্যালকোহল ও আরো উদ্বায়ী তৈল যা এর সুগন্ধ, মিষ্টতা ও ঝাঁঝের জন্য দায়ী।
দারুচিনি জীবাণুনাশক, রক্ত জমাট বাধা প্রতিরোধী, এটি ব্যাথানাশক, ডায়াবেটিস এবং উচ্চ রক্তচাপ কমায়।
দারুচিনি মসলা হিসাবে, ঔষধশিল্পে, বেভারেজে, পারফিউমে, কসমেটিক্স ও সাবান প্রস্তুতিতে বহুল ব্যবহৃত হয়।
গাছের বৃদ্ধির হার ও ফলন ভাল (৭১৪ গ্রাম/গাছ, ৩৮৫কেজি/হেক্টর) ও রোগ বালাই এর আক্রমণ সহনশীল।
(২) দারুচিনি চাষ পদ্ধতি বা দারুচিনি গাছের চাষ
ক) আবহাওয়া ও মাটি
সাধারণত উষ্ণ ও অবউষ্ণ আবহাওয়া দারুচিনি চাষের জন্য উপযোগী। সুনিষ্কাশিত ঊর্বর বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভাল হয়।
পাহাড়ের ঢালে ও পাহাড়ের উপরে ভাল বায়ু চলাচল উপযোগী ও পর্যাপ্ত সুর্যালোকে এর উৎপাদন ভাল হয়।
খ) জমি তৈরি
যে জমিতে অন্য ফসল ভাল হয় না সে জমি দারুচিনি চাষের জন্য নির্বাচন করা যেতে পারে।
বাগান আকারে চাষ করতে হলে নির্বাচিত জমি ভাল করে চাষ ও মই দিয়ে সমতল এবং আগাছামুক্ত করে দিতে হবে।
পাহাড়ী এলাকা, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধার বা পুকুর পাড়ে গাছ লাগানোর ক্ষেত্রে জমিতে চাষ না দিয়ে শুধু পারিষ্কার করে নিলেই চলবে।
গ) রোপণ পদ্ধতি ও সময়
সমতল ভূমিতে দারুচিনি চারা সাধারণত বর্গাকার বা ষড়ভুজী প্রণালীতে লাগানো যেতে পারে। কিন্তু উঁচু নিচু পাহাড়ে কণ্টুর রোপণ প্রণালী অনুসরণ করতে হবে।
মে থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত চারা রোপণ করা যায়।
ঘ) মাদা তৈরি
চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পূর্বে উভয় দিকে ১.০ মিটার দূরত্বে সারিতে ৬০ সেমি দূরে দূরে ৩০×৩০×৩০ সেন্টিমিটার মাপের গর্ত করতে হবে।
প্রতি গর্তে ৫-১০ কেজি কম্পোস্ট বা পচা গোবর, ১-২ কেজি ছাই, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করে গর্তের উপরের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করতে হবে।
গর্ত ভরাট করার ১০-১৫ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।
ঙ) চারা/কলম রোপণ ও পরিচর্যা
এক বছর বয়সী সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত দারুচিনি চারা/কলম রোপণের জন্য নির্বাচন করতে হবে।
গর্তে সার প্রয়োগের ১০-১৫ দিন পর নির্বাচিত চারা/কলমটি গর্তের মাঝখানে সোজাভাবে লাগিয়ে তারপর চারদিকে মাটি দিয়ে চারার গোড়ায় মাটি সামান্য চেপে দিতে হবে।
রোপণের পরপর খুঁটি দিয়ে চারা/কলমটি খুঁটির সাথে বেঁধে দিতে হবে। অতঃপর প্রয়োজনমতো পানি ও বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
চ) গাছের সার প্রয়োগ
গাছের বৃদ্ধির সাথে সারের পরিমাণ বাড়বে। প্রতিটি গাছের জন্য ৪/৫ কেজি কম্পোস্ট বা পঁচা গোবর, ১০০ গ্রাম টিএসপি এবং ১০০ গ্রাম এমওপি ও ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার প্রয়োগ করতে হবে।
সবটুকু সার তিন ভাগ করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ ও ভাদ্র-আশ্বিন ও মাঘ-ফাল্গুন মাসে প্রয়োগ করতে হবে। প্রতিবার সার দেওয়ার পর প্রয়োজনে পানি দিতে হবে।
ছ) আগাছা দমন ও সেচ
গাছের গোড়া নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। পাহাড়ের ঢালে, বাড়ির আঙ্গিনা, রাস্তার ধার বা পুকুর পাড়ে লাগানো গাছের গোড়ায় আগাছা কেটে পরিষ্কার রাখতে হবে।
চারা রোপণের প্রথমদিকে প্রয়োজনমতো সেচ দেয়া দরকার। গাছ বড় হয়ে গেলে আর সেচের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।
জ) ডাল ছাঁটাইকরণ
চারা অবস্থায় গাছকে সুন্দর কাঠামো দেয়ার জন্য অবাঞ্ছিত ও অপ্রয়োজনীয় ডালপালা ছাঁটাই করে রাখতে হবে। ছাঁটাইয়ের মাধ্যমে গাছের মরা, রোগাক্রান্ত ও পোকামাকড় আক্রান্ত ডালপালা কেটে পরিষ্কার করতে হবে।
ঝ) ফসল সংগ্রহ ও ফলন
দারুচিনি গাছ ২ ইি (৫ সেমি) পরিমাণ মোটা (ব্যাস) বা দুই বছর বয়স হলে তা গোড়া থেকে ৬ ইি বা ১৫ সেমি উপরে কেটে বাঁকানো ছুড়ি দিয়ে ছাল আলাদা করে নিয়ে হালকা রৌদ্রে বা ওভেনে ৫০ ডিগ্রি সে. তাপে ভালভাবে শুকিয়ে সংগ্রহ করতে হয়।
দারুচিনির প্রথম অবস্থায় প্রতিবার কর্তনে হেক্টরপ্রতি ১৫০ কেজি থেকে ২০০ কেজি এবং পরবর্তীতে ৩০০-৩৫০ কেজি পর্যন্ত দারুচিনি ছাল (Quill) পাওয়া যেতে পারে।
[সূত্র: বিএআরআই]