Skip to content

ধানের চাষ পদ্ধতি (১২টি ধাপ)

ধানের চাষ পদ্ধতি (১২টি ধাপ)

ধান বাংলাদেশের প্রধান দানা জাতীয় ফসল এবং প্রধান খাদ্য। বিশ্বের মোট ধান উৎপাদনের প্রায় ৯২ শতাংশ ধান এশিয়া দেশ গুলোতে উৎপন্ন হয়। 

এই পাঠটি শেষ অবধি মনোযোগের সাথে অধ্যয়ন করলে আপনি- ধান চাষের জমি নির্বাচন করতে পারবেন। ধানের উন্নত জাতের নাম বলতে পারবেন। ধানের উচ্চ ফলনশীল জাতের বৈশিষ্ট্য বলতে পারবেন। ধানের বীজ বাছাই, শোধন ও চারা তৈরির কৌশল ব্যাখ্যা শিখতে পারবেন। বীজতলার পরিচর্যা, চারা উঠানো, পরিবহন ও সংরক্ষণ সম্পর্কে জানতে পারবেন। ধানের জমি তৈরি করতে পারবেন। ধানের চারা রোপণের পদ্ধতি ও পরিচর্যা সম্পর্কে ধারণা নিতে পারবেন। ধানের বালাই আক্রমনের লক্ষণসমূহ ও প্রতিকারের উপায় সম্পর্কে অবগত পারবেন। ধান ফসলের কর্তন, মাড়াই ও সংরক্ষণ পক্রিয়া বুঝতে পারবেন।

(ধাপ-১) ধানের চাষের সময়কাল বা মৌসুম ও জলবায়ু

ধানের চাষের সময়কাল বা চাষাবাদের মৌসুম অনুযায়ী ধানের চাষ ৩ ভাগে ভাগ করা যায়- 

  1. আউশ ধান: মার্চ থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়।
  2. আমন ধান: জুন থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়।
  3. বোরো ধান: নভেম্বর থেকে মে মাস পর্যন্ত চাষ করা যায়।

ব্যাপক ও বিস্তৃত জলবায়ুতে ধান চাষ করা যায়। ধান চাষের জন্য উপযোগি তাপমাত্রা হলো ২০-২৫০ সে.। বৃষ্টিপাত কম হলে সেচ দিতে হবে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৪০% এর কম ও ৯৫% এর বেশি হলে পুষ্পায়ন ব্যাহত হয়। 

(ধাপ-২) ধানের চাষের জন্য জাত নির্বাচন ও ধানের জাত সমূহের তালিকা

বাংলাদেশে তিন জাতের ধান আছে-

  1. স্থানীয় জাত: টেপি, গিরবি, দুধসর, লতিশাইল ইত্যাদি।
  2. স্থানীয় অনুমোদিত জাত: হবিগঞ্জ, কটকতারা, পাজাম, কালিজিরা, হাসিকলমি, নাইজার শাইল, লতিশাইল, বিনাশাইল ইত্যাদি।
  3. উচ্চ ফলনশীল জাত: মুক্তা, ময়না, শাহজালাল, মঙ্গল, নিজামী ইত্যাদি।

নিচে উচ্চ ফলনশীল (উফশী) আধুনিক ধান জাতের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-

  • ধান গাছ খাটো ও শক্ত হয় এবং সহজে হেলে পড়ে না। 
  • ধান গাছের পাতা ঘন সবুজ ও পুরু থাকে।
  • পাতাগুলো এমনভাবে সাজানো থাকে যে একটি অন্যটিকে ঢেকে রাখে না। এতে আলো-বাতাস প্রতিটি পাতা সমানভাবে পায় এবং শর্করা জাতীয় খাদ্য বেশি তৈরি হয়।
  • গাছ মাটি থেকে বেশি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করতে পারে।
  • জমি থেকে উৎপাদিত ধানের ওজন ও খড়ের ওজন প্রায় সমান হয় অর্থাৎ ১ঃ১। 
  • পোকামাকড় ও রোগের আক্রমণ কম হয়।
  • পাকার সময়ও কিছু কিছু ধান সবুজ থাকে।

সাল ২০২০ অবধি, বাংলাদেশে মোট ৮১টি উফশী জাত রয়েছে যার মধ্যে ৭৫টি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট এবং ১৬টি বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনষ্টিটিউট উদ্ভাবন করেছে। 

See also  ধান চাষ পদ্ধতি: কিভাবে ধানের পরিচর্যা করতে হয়? ধানের জাত, ধানের বৈশিষ্ট্য ও ধানের উপকারিতা

নিচের তালিকাতে ধানের উচ্চ ফলনশীল (উফশী) জাতগুলির নাম, জন্মানোর মৌসুম, গড় জীবনকাল, গড় ফলন এবং চালের বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হলো-

ধানের জাতমৌসুমগড় জীবনকালগড় ফলনবৈশিষ্ট্য
বিআর ১ (চান্দিনা)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৫০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২০  দিনবোরো মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৪.০ টন/হেক্টরচাল খাটো মোটা
বিআর ২ (মালা)বোরো এবং আউশ।বোরো মৌসুমে ১৬০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২৫ দিনবোরো মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৪.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন ও সাদা
বিআর ৩ (বিপ্লব)বোরো, আউশ এবং আমনবোরো মৌসুমে ১৭০ দিন, আউশ মৌসুমে ১৩০দিন এবং আমন মৌসুমে ১৩৫ দিনবোরো মৌসুমে ৬.৫ টন/হেক্টর, আউশ মৌসুমে  ৪.০ টন/হেক্টর এবং আমন মৌসুমে ৪.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও পেট সাদা দাগ আছে
বিআর ৪ (বিশ্রাইল)আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে৫.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
বিআর ৫ (দুলাভেগ)আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে ৩.০ টন/হেক্টরচাল ছোট, গোলাকৃতি ও সুগন্ধি
বিআর ৬বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৪০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১১০ দিনবোরো মৌসুমে ৪.৫ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল লম্বা, চিকন ও সাদা
বিআর ৭ (ব্রিবালাম)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১৩০ দিনবোরো মৌসুমে ৪.৫টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল লম্বা, চিকন
বিআর ৮ (আশা)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৬০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২৫ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও পেটে দাগ আছে, শিলাবৃষ্টি প্রবন এলাকার উপযোগী
বিআর ৯ (সুফলা)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিন এবং আউস মৌসুমে ১২০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ এবং আউশ মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা, মাঝারি মোটা ও সাদা এবং শিলা বৃষ্টি প্রবণ এলাকায় উপযোগী
বিআর ১০ (প্রগতি)আমনআমন মৌসুমে ১৫০ দিনআমন মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন
বিআর ১১ (মুক্তা)আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে ৬.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা
বিআর ১২ (ময়না)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৭০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ৩০ দিনবোরো মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ১৪.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
বিআর ১৪ (গাজী)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৬০ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
বিআর ১৫ (মোহিনী)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৬৫ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২৫ দিনবোরো মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন, সাদা
বিআর ১৬ (শাহী বালাম)বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৬৫ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১৩০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টর এবং আউশ মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা চিকন, সাদা
বিআর ১৭ (হাসি)বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা
বিআর ১৮ (শাহজালাল)বোরোবোরো মৌসুমে ১৭০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা, সাদা ও হাওড় অঞ্চলে
বিআর ১৯ (মঙ্গল)বোরোবোরো মৌসুমে ১৭০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও হাওড় অঞ্চলের উপযোগী
বিআর ২০ (নিজামী)আউশআউশ মৌসুমে ১১৫ দিনআউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও স্বচ্ছ এবং সরাসরি বপন উপযোগী
বিআর ২১ (নিয়ামত)আউশআউশ মৌসুমে ১১০ দিনআউশ মৌসুমে ৩.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও স্বচ্ছ এবং সরাসরি বপন উপযোগী
বিআর ২২ (কিরণ)আমনআমন মৌসুমে ১৫০ দিনআমন মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল, খাটো, মোটা ও নাবী জাত
বিআর ২৩ (দিশারী)আমনআমন মৌসুমে ১৫০ দিনআমন মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল লম্বা, চিকন ও সাদা এবং নাবী জাত
বিআর ২৪ (রহমত)আউশআউশ মৌসুমে ১০৫ দিনআউশ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টনচাল লম্বা, চিকন ও সাদা এবং সরাসরি বপন উপযোগী
বিআর ২৫ (নয়াপাজাম)আমনআমন মৌসুমে ১৩৫ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টনচাল খাটো, মোটা ও সাদা
বিআর ২৬ (শ্রাবণী)আউশআউশ মৌসুমে ১১৫ দিনআউশ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.০ টনচাল চিকন, লম্বা ও সাদা এবং এ্যামাইলেজ কম
ব্রি ধান ২৭আউশআউশ মৌসুমে ১১৫ দিনআউশ মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.০ টনচাল মাঝারি চিকন ও মোটা এবং বরিশাল অঞ্চলের উপযোগী
ব্রি ধান ২৮বোরোবোরে মৌসুমে ১৪০ দিনবোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৬.০ টনচাল মাঝারি চিকন ও সাদা
ব্রি ধান ২৯বোরোবোরে মৌসুমে ১৬০ দিনবোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টরে৭.৫ টনচাল মাঝারি চিকন ও সাদা
ব্রি ধান ৩০আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৫.০ টনচাল মাঝারি চিকন ও সাদা
ব্রি ধান ৩১আমনআমন মৌসুমে ১৪০ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৫.০ টনচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
ব্রি ধান ৩২আমনআমন মৌসুমে ১৩০ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৫.০ টনচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
ব্রি ধান ৩৩আমনআমন মৌসুমে ১১৮ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টনচাল খাটো, মোটা, পেটে সাদা দাগ আছে
ব্রি ধান ৩৪আমনআমন মৌসুমে ১৩৫ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টনচাল খাটো, মোটা ও সুগন্ধি
ব্রি ধান ৩৫বোরোবোরে মৌসুমে ১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৫.০ টনচাল খাটো, মোটা ও বাদামি গাছফড়িং প্রতিরোধী
ব্রি ধান ৩৬বোরোবোরে মৌসুমে ১৪০ দিনবোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৫.০ টনচাল লম্বা, চিকন, ঠান্ডা এবং সহনশীল
ব্রি ধান ৩৭আমনআমন মৌসুমে ১৪০ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টনচাল মাঝাারি, চিকন ও সুগন্ধি
ব্রি ধান ৩৮আমনআমন মৌসুমে ১৪০ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৩.৫ টনচাল লম্বা, চিকন ও সুগন্ধি
ব্রি ধান ৩৯আমনআমন মৌসুমে ১২২ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টনচাল লম্বা ও চিকন
ব্রি ধান ৪০আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টনচাল মাঝাারি, মোটা ও লবণ সহনশীল
ব্রি ধান ৪১আমনআমন মৌসুমে ১৪৮ দিনআমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ৪.৫ টনচাল লম্বাটে মোটা ও লবণ সহনশীল
ব্রি ধান ৪২আউশআউশ মৌসুমে ১০০ দিনআউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝাারি, সাদা ও খরা সহনশীল
ব্রি ধান ৪৩আউশআউশ মৌসুমে ১০০ দিনআউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝাারি, সাদা ও খরা সহনশীল
ব্রি ধান ৪৪আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ দিনআমন মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল মোটা এবং উপকূলীয় অঞ্চলের উপযোগী
ব্রি ধান ৪৫বোরোবোরো মৌসুমে ১৪০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা ও সাদা
ব্রি ধান ৪৬আমনআমন মৌসুমে ১৫০ দিনআমন মৌসুমে ৪.৭ টন/হেক্টরচাল মাঝারি, নাবি জাত ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রোপণযোগ্য
ব্রি ধান ৪৭বোরোবোরো মৌসুমে ১৫২ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা, চারা অবস্থায় লবণ সহনশীলতা ১২-১৪ ডিএস/মিটার এবং বাকি জীবনকালে ৬ ডিএস/মিটার
ব্রি ধান ৪৮আউশআউশ মৌসুমে ১১০ দিনআউশ মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোট, ভাত ঝরঝরে
ব্রি ধান ৪৯আমনআমন মৌসুমে ১৩৫ দিনআমন মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন
ব্রি ধান ৫০বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা, চিকন ও সুগন্ধি
ব্রি ধান ৫১আমনআমন মৌসুমে ১৪২ দিন (জলমগ্ন না হলে) অথবা ১৫৪ দিন (১৪ দিন জলমগ্ন থাকলে)আমন মৌসুমে ৪.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন, স্বচ্ছ ও সাদা
ব্রি ধান ৫২আমনআমন মৌসুমে ১৪৫ (জলমগ্ন নাহলে) দিন অথবা ১৫৫ দিন (১৪ দিনজলমগ্ন থাকলে)আমন মৌসুমে ৪.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা
ব্রি ধান ৫৩আমনআমন মৌসুমে ১২৫ দিনআমন মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন
ব্রি ধান ৫৪আমনআমন মৌসুমে ১৩৫ দিনআমন মৌসুমে ৪.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন
ব্রি ধান ৫৫বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৪৫ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১০৫ দিনবোরো এবং আউশ মৌসুমে ৭.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা ও চিকন
ব্রি ধান ৫৬আমনআমন মৌসুমে ১১০ দিনআমন মৌসুমে ৫.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা ও সাদা
ব্রি ধান ৫৭আমনআমন মৌসুমে ১০৫ দিনআমন মৌসুমে ৪.৫ টন/হেক্টরচাল লম্বা ও সরু
ব্রি ধান ৫৮বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে ৭.২ টন/হেক্টরচাল অনেকটা ব্রি ধান ২৯-এর মতো, তবে সামান্য চিকন
ব্রি ধান ৫৯বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৩ দিনবোরো মৌসুমে ৭.১ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা এবং সাদা, ডিগ পাতা খাড়া ও গাঢ় সবুজ এবং হেলে পড়ে না
ব্রি ধান ৬০বোরোবোরো মৌসুমে ১৫১ দিনবোরো মৌসুমে ৭.৩ টন/হেক্টরচাল লম্বা ও সরু এবং সাদা
ব্রি ধান ৬১বোরোবোরো মৌসুমে ১৫০ দিনবোরো মৌসুমে ৬.৩ টন/হেক্টরচাল মাঝারি সরু, সাদা এবং লবণাক্ততা সহনশীল
ব্রি ধান ৬২আমনআমন মৌসুমে ১০০ দিনআমন মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরচাল লম্বা, সরু এবং সাদা, মধ্যম মাত্রার জিঙ্ক সমৃদ্ধ আগাম জাত
ব্রি ধান ৬৩বোরোবোরো মৌসুমে ১৫০ দিনবোরো মৌসুমে ৭.০ টন/হেক্টরচাল লম্বা ও সরু
ব্রি ধান ৬৪বোরোবোরো মৌসুমে ১৫২ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা এবেং উষ্ণ মাত্রায় জিঙ্ক সমৃদ্ধ
ব্রি ধান ৬৫আউশআউশ মৌসুমে ৯৯ দিনআউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন, সাদা, ডিগ পাতা খাড়া এবং গাছ ছোট হওয়ায় সহজে হেলে পড়ে না এবং খরা সহিষ্ণু
ব্রি ধান ৬৬আমনআমন মৌসুমে ১১৩ দিনআমন মৌসুমে ৪.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি লম্বা ও মোটা, সাদা, প্রজনন পর্যায়ে খরা সহনশীল, উচ্চমাত্রার প্রোটিন সমৃদ্ধ
ব্রি ধান ৬৭বোরোবোরো মৌসুমে ১৪৩ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ টন/হেক্টর।চাল মাঝারি চিকন, সাদা এবং সম্পূর্ণ জীবনকালে ৮ ডিএস/মিটার মাত্রার লবণাক্ততা সহনশীল
ব্রি ধান ৬৮বোরোবোরো মৌসুমে ১৪৯ দিনবোরো মৌসুমে ৭.৩ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা, সাদা, ধান পাকার সময় ডিগ পাতা সবুজ থাকে
ব্রি ধান ৬৯বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৩ দিন৭.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা, সাদা, ডিগ পাতা খাড়া, প্রশস্ত ও লম্বা এবং উপকরণ সাশ্রয়ী জাত
ব্রি হাইব্রিড ধান ১বোরোবোরো মৌসুমে ১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে ৮.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন স্বচ্ছ ও সাদা
ব্রি হাইব্রিড ধান ২বোরোবোরো মৌসুমে ১৪৫ দিনবোরো মৌসুমে ৮.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা এবং আগাম
ব্রি হাইব্রিড ধান ৩বোরোবোরো মৌসুমে ১৪৫ দিনবোরো মৌসুমে ৯.০ টন/হেক্টরচাল মাঝারি মোটা এবং আগাম
ব্রি হাইব্রিড ধান ৪আমনআমন মৌসুমে ১১৮ দিনআমন মৌসুমে ৬.৫ টন/হেক্টরচাল মাঝারি চিকন স্বচ্ছ ও সাদা
ইরাটম-২৪বোরো এবং আউশবোরো মৌসুমে ১৪০-১৪৫ দিন এবং আউশ মৌসুমে ১২৫-১৩৫ দিনবোরো মৌসুমে ৬.০ এবং আউশ মৌসুমে ৩.৫ টন/হেক্টরউচ্চ ফলনশীল, আগাম পাকে
বিনা শাইলআমনআমন মৌসুমে১৩৫-১৪০ দিনআমন মৌসুমে৪.২ টন/হেক্টরনাবী রোপন উপযোগী
বিনা ধান-৪আমনআমন মৌসুমে১৩০-১৩৫ দিনআমন মৌসুমে৪.৭ টন/হেক্টরচাল লম্বা, আগাম পাকে, চাল চিকন
বিনা ধান-৫বোরোবোরো মৌসুমে১৫০-১৫৫ দিনবোরো মৌসুমে ৭.০ টন/হেক্টরউচ্চ ফলনশীল এবং চাল মোটা
বিনা ধান-৬বোরোবোরো মৌসুমে১৬০-১৬৫ দিনবোরো মৌসুমে ৭.৫ টন/হেক্টরসর্বোচ্চ ফলনশীল এবং চাল মোটা
বিনা ধান-৭আমনআমন মৌসুমে১১৫-১২০ দিনআমন মৌসুমে৫.০ টন/হেক্টরচাল সরু ও লম্বা, মঙ্গা মোকাবিলায় কুবই কার্যকর
বিনা ধান-৮বোরো এবং আমনবোরো মৌসুমে১৩০ দিন এবং আমন মৌসুমে১৩৪ দিনবোরো মৌসুমে৪.৫ টন/হেক্টর এবং আমন মৌসুমে৪.০ টন/হেক্টরলবণাক্ত সহিষ্ণু জাত
বিনা ধান-৯আমনআমন মৌসুমে১২০-১২৫ দিনআমন মৌসুমে৩.৭৫ টন/হেক্টরসুগন্ধি, লম্বা, চিকন ও আগাম জাত
বিনা ধান- ১০, ১১,১২, ১৩, ১৪, ১৫বোরোবোরো মৌসুমে১২৫-১৩০ দিনবোরো মৌসুমে ৫.৫ টন/হেক্টরগাছ মধ্যম খাটো, চাল লম্বা ও মাঝারি, লবণ সহিষ্ণু

(ধাপ-৩) ধানের চাষের জন্য উপযোগী মাটি নির্বাচন

ধান চাষের জন্য উপযোগী মাটি কোনটি বা ধান কোন মাটিতে ভালো হয়: ধানের ফলন সব ধরনের জমিতে ভাল হয় না। মাঝারি নিচু ও নিচু জমিতে ধানের ফলন সবচেয়ে ভাল হয়। মাঝারি উঁচু জমিতেও ধান চাষ করা যায়। কিন্তু সেক্ষেত্রে পানি সেচের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হয়। এঁটেল, পলিএঁটেল ও পলি দোআঁশ মাটি ধান চাষের জন্য উপযোগী।

See also  ধান চাষের পদ্ধতি, সমস্যা ও সমাধান

(ধাপ-৪) ধানের চাষে বীজের পরিমাণ ও বীজ শোধন

চারা তৈরির জন্য প্রতি কাঠা বীজতলায় ২.৫-৩.০ কেজি বীজ বুনতে হয়। এক কাঠা বীজতলার চারা দিয়ে ২০ কাঠা জমিতে ধানের চারা রোপণ করা যায়।

ধানের বীজে যাতে রোগজীবাণু না থাকে সেজন্য ওষুধ দ্বারা শোধন করে নিতে হয়। প্রতি কেজি ধান বীজ ৩০ গ্রাম এগ্রোসান জি এন বা ২০ গ্রাম এগ্রোসান এম ৪ বা অন্য কোন অনুমোদিত মাত্রার ওষুধ দ্বারা শোধন করতে হয়।

(ধাপ-৫) ধানের চারা তৈরি

ধানের চারা তৈরির জন্য সাধারণত চার ধরনের বীজতলা তৈরি করা হয়। যথা-

  1. শুকনা বীজতলা;
  2. ভিজা বীজতলা; 
  3. ভাসমান বীজতলা; 
  4. দাপোগ বীজতলা।

উঁচু ও দো-আঁশ মাটি সম্পন্ন জমিতে শুকনা বীজতলা এবং নিচু ও এঁটেল মাটি সম্পন্ন জমিতে ভিজা বীজতলা তৈরি করা হয়। আর বন্যাকবলিত এলাকায় ভাসমান ও দাপোগ বীজতলা তৈরি করা হয়। প্রচুর আলো-বাতাস থাকে ও বৃষ্টি বা বন্যার পানিতে ডুবে যাবে না এমন জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হয়। 

এখানে শুকনা ও ভিজা বীজতলা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-

i) শুকনা বীজতলা

চিত্র- ধানের শুকনা বীজতলা
চিত্র- ধানের শুকনা বীজতলা

জমিতে ৪-৫ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে ঝুরঝুরে ও সমান করতে হবে। মাটিতে অবশ্যই রস থাকতে হবে যাতে বীজ ভালোভাবে গজাতে পারে। প্রয়োজনে সেচ দিতে হবে। এর আগে জমি থেকে আগাছা বেছে ফেলতে হবে এবং পরিমাণ মতো পচা গোবর সার বা আবর্জনা পচা সার দিতে হবে। বীজতলায় রসায়নিক সার ব্যবহার না করাই উত্তম।

হালকা বুনটের মাটি হলে ১.৫-২ টন জৈবসার দিলে ভালো হয়। 

বীজতলার মাপ:

চিত্র- একটি আদর্শ বীজতলা
চিত্র- একটি আদর্শ বীজতলা
  • বীজতলার বেডের দৈর্ঘ্য = সুবিধামত লম্বা;
  • বেডের প্রস্থ = ১০০ সে.মি;
  • জমির আইল ও বেডের মাঝখানের দূরত্ব = ২৫ সে.মি;
  • প্রতি দুই বেডের মাঝখানের দূরত্ব = ৫০ সে. মি।

এতে চারার পরিচর্যা ও অতিরিক্ত পানি নিষ্কাশন করতে সুবিধা হয়। প্রতি দুই বেডের মাঝখানের মাটি তুলে নিয়ে বেডের উপর সমান করে দিতে হয়। এতে বেড উঁচু হয়। এরপর বীজ বেডের উপর সমানভাবে ছিটিয়ে দিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়।

See also  উফশী হাইব্রিড ধানের জাত নাম/উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের জাত সমূহ

ii) ভিজা বীজতলা

চিত্র- ধানের ভেজা বীজতলা
চিত্র- ধানের ভেজা বীজতলা

এক্ষেত্রে জমিতে পানি দিয়ে ২-৩ টি চাষ ও মই দেয়ার পর ৬-৭ দিন ফেলে রাখতে হয়। এতে জমির আগাছা, খড়কুটা ইত্যাদি পচে গিয়ে সারে পরিণত হয়। এরপর আবার ২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে মাটি থকথকে কাদাময় করতে হয়। ভিজা বীজতলায় বীজ বাড়িতে গজিয়ে নিয়ে বুনা ভাল। এক্ষেত্রেও বীজতলার মাপ শুকনা বীজতলার মতোই।

iii) বীজতলার পরিচর্যা

নিয়মিত পানি সেচ দিতে হয়। আগাছা হলে তা তুলে ফেলতে হয়। রোগ ও পোকামাকাড়ের আক্রমণ দেখা দিলে উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা কৃষি কর্মকতার পরামর্শ নিয়ে তা দমনের ব্যবস্থা করতে হবে।

(ধাপ-৬) ধানের চারা উঠানো ও সংরক্ষণ

জাত ও মৌসুম ভেদে ২৫-৪৫ দিন বয়সের চারা রোপণ করা ভালো। চারা তোলার পূর্বে বীজতলাতে পানি সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে নেয়া ভালো। এতে চারা তুলতে সুবিধা হয়। চারা তোলার সময় যাতে গোড়া বা কান্ড ভেঙ্গে না যায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। চারা তোলার পর তা ছোট ছোট আঁটি আকারে বেঁধে নিতে হয়।

বীজতলা থেকে চারা তোলার পর পর মূল জমিতে লাগানো সম্ভব না হলে চারার আঁটিগুলো ছায়ার মধ্যে ছিপছিপে পানিতে রেখে দিতে হয়।

(ধাপ-৭) জমি তৈরি ও ধান চাষে সার প্রয়োগ

চিত্র- ধান চাষে সার প্রয়োগ
চিত্র- ধান চাষে সার প্রয়োগ

৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি ভালোভাবে কাদাময় ও সমান করে নিতে হয়।

ভালো ফলন পেতে চাইলে অবশ্যই জমিতে সার দিতে হবে। এছাড়া উচ্চফলনশীল ধানের জাত মাটি থেকে বেশি পরিমাণে খাদ্যোপোদান গ্রহণ করে বিধায় সার প্রয়োগ অত্যাবশ্যক।

গোবর বা আবর্জনা পচা জৈব সার জমি তৈরির সময় মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হয়। ইউরিয়া সারের এক তৃতীয়াংশসহ সকল রাসায়নিক সার যেমন- টিএসপি, এমওপি, জিপসাম, দস্তা প্রভৃতি জমিতে শেষ চাষ দেয়ার আগে প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে। ইউরিয়া সারের বাকি দুই তৃতীয়াংশের অর্ধেক সাধারণত চারা রোপনের ১৫-২০ দিন পর এবং বাকি অর্ধেক কাইচথোড় আসার ৫-৭ দিন পূর্বে ছিটিয়ে প্রয়োগ করতে হয়। এবার দেখা যাক বিঘা প্রতি সারের পরিমান কি?

জাত ও মৌসুম ভেদে বিঘা প্রতি ধান চাষে সার প্রয়োগের পরিমান বা নির্ধারিত মাত্রা রয়েছে, তা হলো-

মৌসুম ও সারের পরিমাণ ইউরিয়া (কেজি/বিঘা)টিএসপি (কেজি/বিঘা)এমপি (কেজি/বিঘা)জিপসাম (কেজি/বিঘা)দস্তা (কেজি/বিঘা)
রোপা আউশ১৮ ১১
রোপা আমন২০-২৬৭-৯১১-১৪৮-৯
বোরো২৭-৪১২-১৩২০-২২৮-১৫১.৫

জাত ও মৌসুম ছাড়া ধান চাষে সার প্রয়োগের ক্ষেত্রে আরও কিছু কিছু নীতিমালা মেনে চলতে হয়। যেমন- 

  • পাহাড়ের পাদভূমির মাটি ও লাল বেলে মাটিতে এমপি সার দেড়গুণ দিতে হয়।
  • গঙ্গাবাহিত পলিমাটি ও সেচ প্রকল্প এলাকার মাটিতে দস্তা সার বেশি পরিমাণে দিতে হয়। 
  • হাওড় এলাকার মাটিতে সার কম পরিমাণে দিতে হয়।
  • স্থানীয় জাতের ধানে সারের পরিমাণ অর্ধেক দিলেই চলে।
  • পূর্ববর্তী ফসলে প্রতিটি সার সঠিক পরিমাণে প্রয়োগ হয়ে থাকলে উপস্থিত ফসলে প্রতিটি সারের অর্ধেক পরিমাণ ব্যবহার করলেই চলে।
  • পূর্ববর্তী ফসলে দস্তা সার ব্যবহার হয়ে থাকলে পরবর্তী ২টি ফসলে আর এ সার ব্যবহারের প্রয়োজন হয় না। 
  • বেলে মাটিতে এম পি সার ২ কিস্তিতে প্রয়োগ করতে হয়।
  • কোন জমিতে সবুজ সার ফসলের চাষ হলে পরবর্তী ফসলে ইউরিয়া সার ৪০-৫০% কমিয়ে ব্যবহার করলেও চলে।

(ধাপ-৮) ধানের চারা রোপণ পদ্ধতি

চিত্র- ধানের চারা রোপণ
চিত্র- ধানের চারা রোপণ

সমান জমিতে ছিপছিপে পানি থাকা অবস্থায় চারা রোপণ করতে হয়। লম্বা রশির সাহায্যে সোজা সারি করে চারা রোপণ করা উত্তম। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ২০-২৫ সে.মি. এবং সারিতে গুছি থেকে গুছির দূরত্ব হবে ১৫-২০ সে.মি.। প্রতিটি গুছিতে ২-৩টি চারা দিতে হয়। দেরিতে রোপণ করলে চারার সংখ্যা বেশি ও ঘন করে লাগাতে হয়।

(ধাপ-৯) ধান চাষের পরিচর্যা

i) সেচ

জমি সমান হলে মুক্ত প্লাবন পদ্ধতিতে এবং ঢালু হলে আইলবদ্ধ মুক্ত প্লাবন পদ্ধতিতে পানি সেচ দিতে হয়। দেশী জাতের ধানে পানি সেচ অবশ্যই প্রয়োজন।

চারা রোপণ করার পর ৬-৭ দিন পর্যন্ত ৩-৫ সে.মি. সেচ দিতে হয়। এতে আগাছা দমন হয়। এরপর কুশি উৎপাদন পর্যায়ে ২-৩ সে.মি. এবং চারার বয়স ৫০-৬০ দিন হলে ৭-১০ সে.মি. পরিমাণ পানি সেচ দেয়া উত্তম।

থোড় আসার সময় পানি সেচ সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দানাপুষ্ট হতে শুরু করলে আর সেচ দেয়ার প্রয়োজন হয় না।

ii) আগাছা দমন

কমপক্ষে ৩ বার ধানের জমিতে আগাছা দমন করতে হয়। যথা-

  1. চারা রোপণ করার ১০-১৫ দিনের মধ্যে। 
  2. (প্রথম আগাছা দমনের পরবর্তী ১৪ দিনের মধ্যে।
  3. থোড় বের হওয়ার আগ মুহূর্তে। ধান ক্ষেতে সাধারণত, আরাইল, গইচা প্রভৃতি আগাছার উপদ্রব হয়।

iii) পোকা দমন

চিত্র- ধানের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পোকা শনাক্তকরণ
চিত্র- ধানের বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর পোকা শনাক্তকরণ

ধান ফসলে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা যায়। যেমন- সবুজ পাতা ফড়িং, মাজরা পোকা, পামরী পোকা, গান্ধী পোকা, গল মাছি, শীষ কাটা, লেদা পোকা ইত্যাদি।

জমিতে গাছের ডাল বা বাঁশের কঞ্চি  পুঁতে দিলে সেখানে পাখি বসে এবং পোকা ধরে খায়। তাছাড়া প্রতিরোধী ফসলের জাত ও বিভিন্ন দমন পদ্ধতি দ্বারা পোকা দমন করা যায়। তবে দ্রুত দর্শনের ক্ষেত্রে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়ে থাকে। নিচে একটি তালিকা দেয়া হলো।

পোকার নামকীটনাশকের নাম
গান্ধী পোকা, পামরী পোকা, গল মাছি, ছাতরা পোকা, পাতা মোড়ানো পোকা, পাতা শোষক পোকা, চুঙ্গী পোকাসুমিথিয়ন ৫০/ ম্যালাথিয়ন ৫৭/ এম এলটি৫৭/রগড় ৪০
বাদামী গাছ ফড়িংবাসুডিন ১০/ফুরাডান ৩/ ডায়াজিনন ১৪
শীষ কাটা লেদা পোকাভেপোনা ১০০

iv) রোগ দমন

ধান ফসলে বিভিন্ন রোগ হয়ে থাকে। যেমন- কান্ড পচা রোগ, টুংরো রোগ, বাদামী দাগ রোগ, উফরা রোগ, ব্লাস্ট রোগ ইত্যাদি। এসব রোগ সঠিক সময়ে দমন করতে না পারলে ফলন যথেষ্ট কমে যায়। 

বীজ শোধন, আগাছা দমন ও সুষম সার প্রয়োগে বিভিন্ন রোগ দমন হয়। এছাড়া প্রতিরোধী জাত যেমন- মালা ও গাজী জাতের ধানে বাদামী দাগ রোগ কম হয়। 

বিভিন্ন রোগনাশক যেমন- কুপ্রাভিট ৫০, হিনোসান ৫০ ইত্যাদি প্রয়োগ করে ও রোগ দমন করা যায়।

(ধাপ-১০) ধান চাষের ফসল কর্তন, মাড়াই ও সংরক্ষণ

চিত্র- ধান ফসল সংগ্রহ
চিত্র- ধান ফসল সংগ্রহ

শীষের উপরের অর্ধেক দানার শতকরা ৮০ ভাগ এবং নিচের অর্ধেক দানার শতকরা ২০ ভাগ শক্ত হলে ধান কাটার উপযুক্ত সময় হয়। তাছাড়া কিছু কিছু ধান সোনালী রং ধারণ করে এবং শীষের অগ্রভাগ হেলে পড়ে। এমতাবস্থায় ধান কেটে আঁটি বেঁধে পরিষ্কার জায়গায় নিয়ে প্যাডেল থ্রেসার বা গরু দিয়ে বা পিটিয়ে মাড়াই করতে হয়। এরপর ঝেড়ে পরিষ্কার করে ৩- ৪ বার ভালোভাবে রোদে শুকিয়ে নিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।

প্রিয় খামারি বন্ধুগণ, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ধানের চাষের সময়কাল বা মৌসুম ও জলবায়ু; ধানের চাষের জন্য জাত নির্বাচন ও ধানের জাত সমূহের তালিকা; ধানের চাষের জন্য উপযোগী মাটি নির্বাচন; ধানের চাষে বীজের পরিমাণ ও বীজ শোধন; ধানের চারা তৈরি; ধানের চারা উঠানো ও সংরক্ষণ; জমি তৈরি ও ধান চাষে সার প্রয়োগ; ধানের চারা রোপণ পদ্ধতি; ধান চাষের পরিচর্যা; ধান চাষের ফসল কর্তন, মাড়াই ও সংরক্ষণ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

ধানের জমি সঠিকভাবে নির্বাচন করে ৪-৫ টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে সমান ও কাদাময় করে নিতে হয়। বীজতলা থেকে সারি পদ্ধতিতে রোপণ করতে হয়। এরপর সঠিক পরিমাণ সার প্রয়োগ, পানি সেচ, আগাছা দমন, পোকা ও রোগ দমন করে উপযুক্ত সময়ে ধান ফসল কেটে মাড়াই ও ঝাড়াই এর পর রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হয়।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts