Skip to content

 

পশুপাখির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও উক্ত প্রেক্ষাপটে অভিযোজন কলাকৌশল

পশুপাখির উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও উক্ত প্রেক্ষাপটে অভিযোজন কৌশলসমূহ

(১) বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনে পশুপাখির উপর প্রভাব

পৃথিবীর তাপমাত্রা ও মানুষ কর্তৃক পরিবেশ ধ্বংসই জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম কারণ।

আমাদের দেশ নিয়মিত বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেশে দেশে প্রতি নিয়ত আঘাত করছে। বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন- জলোচ্ছ্বাস, সামুদ্রিক ঘূর্ণিঝড়, প্রবল বায়ুপ্রবাহ, বন্যা ও খরা প্রভৃতি কারণে পশুপাখির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ফলে খামার মালিক বা কৃষকরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয় না।

এ ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা পুষিয়ে নেওয়ার জন্য দুর্যোগকালীন ও দুযোর্গ পরবর্তী সময়ে কতগুলো পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত।

বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগের বাস্তবতা মেনে নিয়েই সামুদ্রিক ঝড়, টর্নেডো, বন্যা, খরা, পাহাড়ি ঢল, অতিবৃষ্টি ইত্যাদির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ বা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে।

ইতোমধ্যে উত্তরাঞ্চলের বরেন্দ্র ভূমির শালবন, রাজশাহী অঞ্চলের পত্নীতলা ও নজীপুরের জঙ্গল সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়েছে। যার ফলে এ অঞ্চলে প্রচণ্ড খরা হয়। এসব বনাঞ্চলের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়াও উপকূলীয় বনায়ন পরিকল্পনা, পার্বত্য চট্টগ্রামের অশ্রেণিভুক্ত বনাঞ্চলের বনায়ন সম্প্রসারণ, দেশের নদ-নদী খাল উদ্ধার ও পুনঃখনন এবং ছোট বড় পাহাড় রক্ষার পরিবেশ আইন অবিলম্বে কার্যকর করতে হবে। দেশের সামাজিক বনায়ন সম্প্রসারণসহ ব্যাপকভাবে গাছ লাগাতে হবে।

এগুলো হচ্ছে দীর্ঘমেয়াদি স্থায়ী ব্যবস্থা। এসব বাস্তবায়নের পদক্ষেপ নেওয়া হলে জলবায়ুর পরিবর্তনে পরিবেশ বিপর্যয়ের হাত থেকে দেশ তথা পশুপাখি রক্ষা করা যাবে।

নিম্নে জলবায়ু পরিবর্তনে পশুপাখির সমস্যা মূল্যায়নের বিভিন্ন দিক আলোচনা করা হলো।

ক) খরাজনিত সমস্যার প্রভাব

খরায় যে সকল সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-

  • কাঁচা ঘাসের অভাব হয়।
  • পানি দূষিত হয়।
  • গবাদি পশু অপুষ্টিতে ভোগে।
  • গবাদিপশুর বিভিন্ন রোগব্যাধি দেখা দেয়।
  • মাঠ-ঘাটের ঘাস শুকিয়ে যায়।
  • পশুর বহিঃদেশের পরজীবীর উপদ্রব বৃদ্ধি পায়।
  • অধিক তাপ পশুপাখির অসহনীয় অবস্থার সৃষ্টি করে।
  • গবাদিপশুর স্বাস্থ্যের অবনতিসহ মৃত্যুর আশঙ্কা দেখা যায়।
  •  তাপপীড়নে খামারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগির মৃত্যু হয়।
See also  বিরূপ আবহাওয়া-সহিষ্ণু ফসল ও ফসলের জাত

খ) বন্যাজনিত সমস্যার প্রভাব

বন্যা পরিস্থিতিতে যে সকল সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-

  • জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়।
  • দেশের অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে যায়।
  • রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে।
  • গো-খাদ্য পাওয়া যায় না।
  • পানি দূষিত হয়।
  • পশুপাখি রক্ষণাবেক্ষণে সমস্যার সৃষ্টি হয়।
  • গবাদি পশু অপুষ্টিতে ভোগে।
  • বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও কৃমির আক্রমণ বৃদ্ধি পায়।
  • ঘাসে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়, গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়ে।
  • পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়, অনেক পশুর মৃত্যু হয়।

গ) জলোচ্ছ্বাসজনিত সমস্যার প্রভাব

জলোচ্ছ্বাসের সময় যে সকল সমস্যা দেখা যায় সেগুলো হচ্ছে-

  • জলোচ্ছ্বাসকবলিত এলাকার পানি দূষিত হয়।
  • জলোচ্ছ্বাস ও ঝড়ের ফলে বহু গবাদিপশু ও জীবজন্তু তাৎক্ষণিক মারা যায়।
  • সৎকারের অভাবে মৃত পশুপাখি পরিবেশ দূষিত করে।
  • পশু খাদ্যের অভাব দেখা দেয়।
  • জীবিত গবাদিপশু উদরাময়, পেটের পীড়া ও পেটফাঁপাসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করে।

(২) জলবায়ু পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে পশুপাখির অভিযোজন কলাকৌশল

কোনো প্রজাতি তার পরিবেশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নেওয়ার কৌশলকে অভিযোজন বলে।

মনে রাখতে হবে, পরিবেশ ও জীবের দেহের মধ্যে অভিযোজন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়ে থাকে। জীবের অভিযোজন পরিবেশের আবহাওয়া ও জলবায়ু দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। তাই অভিযোজন পরিবেশের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ ও বায়ুর উপাদান, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ঐ স্থানের উচ্চতা এবং জীবের শারীরিক গঠন ও দৈহিক অবস্থা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে। অভিযোজনের এসব উপাদান মোকাবেলা করেই জীব তার অবস্থানে টিকে থাকে। এটাই প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়ম।

কিন্তু হঠাৎ করে জলবায়ুর ব্যাপক কোনো পরিবর্তন হলে মানুষ তার বুদ্ধি দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারলেও পশুপাখি সেই পরিবেশে নিজেকে অভিযোজন করতে পারে না। কারণ পশুপাখি অসহায় ও নিরীহ প্রাণী।

কোনো অঞ্চলে জলবায়ুর পরিবর্তন ধীরে ধীরে হলে অনেক পশুপাখি পরিবেশের সাথে অভিযোজন করতে সক্ষম হয়। পরিবেশে অভিযোজনে অক্ষম অনেক প্রজাতির বিলুপ্তিও ঘটে। প্রতিকূল ও বিরূপ পরিবেশে পশুপাখির অভিযোজনের জন্য মানুষের সাহায্যের প্রয়োজন।

See also  ফসল উৎপাদনে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও উক্ত প্রেক্ষাপটে অভিযোজন কলাকৌশল

এক্ষেত্রে খরা, বন্যা ও জলোচ্ছ্বাসজনিত সমস্যা সমাধানের উপর অধিক গুরুত্ব দিতে হবে। এতে পশুপাখি অনেকাংশে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হবে।

ক) খরায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল

  1. কাঁঠাল, ইপিল-ইপিল, বাবলাসহ বিভিন্ন গাছের চাষ বৃদ্ধি করতে হবে এবং খরার সময় এসব গাছের পাতা পশুকে খাওয়াতে হবে।
  2. খরার সময় পশুকে ভাতের মাড়, তরিতরকারির উচ্ছিষ্ট অংশ, কুঁড়া, গমের ভুসি, ডালের ভুসি, খৈল, ঝোলাগুড় পর্যাপ্ত পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
  3. গবাদিপশুকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে।
  4. পশুকে কাঁচা ঘাসের সম্পূরক খাদ্য (যেমন- সবুজ অ্যালজি) খাওয়াতে হবে।
  5. খরা মৌসুম আসার পূর্বেই ঘাস দ্বারা সাইলেজ ও হে তৈরি করে রাখতে হবে। যা খরা মৌসুমে গবাদিপশুকে খাওয়ানো যাবে।
  6. গবাদিপশুকে শুল্ক খড় না খাইয়ে ইউরিয়া দ্বারা প্রক্রিয়াজাত করা খড় ও ইউরিয়া মোলাসেস ব্লক খাওয়ানো যেতে পারে।
  7. গবাদির পশুকে পর্যাপ্ত দানাদার খাদ্য খাওয়াতে হবে।
  8. পশুকে বেশি করে পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে।
  9. পশুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে।
  10. পশুর শরীর সব সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে এবং পরজীবির জন্য চিকিৎসা করাতে হবে।
  11. পশুকে ছায়াযুক্ত স্থানে রাখতে হবে এবং প্রখর রোদে নেওয়া যাবে না।
  12. গবাদিপশু অসুস্থ হলে পশু ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা করাতে হবে।

খ) বন্যাজনিত সমস্যায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল

  1. গবাদিপশুকে যথাসম্ভব উঁচু ও শুকনো জায়গায় রাখতে হবে।
  2. গবাদিপশুকে পরিষ্কার পানি খাওয়াতে হবে, বন্যার দূষিত পানি খাওয়ানো যাবে না।
  3. গবাদিপশুর মৃতদেহ গর্তে পুঁতে ফেলতে হবে।
  4. বন্যার সময় গবাদিপশুকে খাদ্য হিসাবে খড়, চালের কুঁড়া, ভুসি ও খৈল বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে।
  5. এ সময় কচুরিপানা, দলঘাস, লতাগুল্ম এমনকি কলাগাছও গবাদিপশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।
  6. কাঁচা ঘাসের বিকল্প হিসাবে হে ও সাইলেজ খাওয়ানো যেতে পারে।
  7. বন্যার পানি নেমে যাওয়ার সাথে সাথে পতিত জমিতে বিভিন্ন জাতের ঘাসের বীজ ছিটিয়ে দিতে হবে।
  8. গবাদিপশুকে সংক্রামক রোগের টিকা দিতে হবে ও কৃমিনাশক বড়ি খাওয়াতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ মোতাবেক আক্রান্ত পশুকে চিকিৎসা করাতে হবে।
See also  আবহাওয়া কাকে বলে? জলবায়ু কাকে বলে? বাংলাদেশের জলবায়ু কেমন? বাংলাদেশের জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য এবং জলবায়ুর উপাদান সমূহ ব্যাখ্যা

গ) জলোচ্ছ্বাস থেকে পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল

জলোচ্ছ্বাসজনিত সমস্যা মোকাবেলায় পশুপাখি রক্ষার কলাকৌশল উপকূলীয় এলাকায় সামুদ্রিক জলোচ্ছ্বাস একটি বিরাট প্রাকৃতিক দুর্যোগ।

বছরের যে কোনো সময় জলোচ্ছ্বাস সমুদ্র-উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনে গবাদিপশুর ব্যাপক ক্ষতিসাধন করতে পারে। আমাদের বাংলাদেশের বিস্তৃর্ণ সমুদ্র-উপকূলীয় অঞ্চল ও দ্বীপগুলো জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে।

তাই জলোচ্ছ্বাসের কবল থেকে গবাদিপশুকে রক্ষা করার জন্য নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করতে হবে-

  1. উঁচুস্থানে পশুপাখির বাসস্থানের ব্যবস্থা করা।
  2. জলোচ্ছ্বাস বা ঝড়ের সংকেত পাওয়ার সাথে সাথে গবাদিপশুকে উঁচু আশ্রয়স্থলে নিয়ে বেঁধে রাখা।
  3. জলোচ্ছ্বাসের পর মৃত পশুকে মাটির নিচে চাপা দেওয়া।
  4. এ সময় পশুর জন্য ভাতের মাড় ও জাউ, শুকনো খড় এবং দানাদার খাদ্যের ব্যবস্থা করা।
  5. গবাদিপশুকে দানাদার খাদ্য যেমন- ভুসি, কুঁড়া, খৈল ও প্রয়োজনমতো লবণ খাওয়ানো।
  6. গবাদিপশুকে কাঁচা ঘাসের পরিবর্তে বিভিন্ন গাছ-পাতা খাওয়ানো।
  7. জলোচ্ছ্বাস কবলিত এলাকায় টিম গঠন করে পশুচিকিৎসার ব্যবস্থা করা গবাদিপশুকে নিয়মিত সংক্রামক রোগের টিকা দেওয়া।
  8. গবাদিপশু যাতে পচা দূষিত পানি খেয়ে রোগাক্রান্ত হতে না পারে সেদিকে লক্ষ রাখা ইত্যাদি।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page