এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- দুধের প্রয়োজনীয়তা বলতে পারবেন। পারিবারিক দুধের গাভীর খামার পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবেন। পারিবারিক দুগ্ধ খামার ও এর গুরুত্ব অনুধাবন পারবেন। পারিবারিক দুগ্ধ খামারের প্রয়োজনীয় উপকরণের তালিকা তৈরি করতে পারবেন। দুধ দোহনের পদ্ধতি ও ধাপগুলো উল্লেখ করতে পারবেন। দুধ সংরক্ষণ পদ্ধতি, দুধ পাস্তুরিকরণ ও তার বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে করতে পারবেন।
(১) দুধের প্রয়োজনীয়তা
মানুষের দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ একটি অপরিহার্য খাদ্যোপাদান। যেখানে একজন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যাক্তির জন্য প্রতিদিন ২৫ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন সেখানে বাংলাদেশে দৈনিক আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫১ মিলিলিটার।
দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দুধের চাহিদাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে বিদেশ থেকে গুড়ো দুধ আমদানি করে এই ঘাটতির আংশিক পূরণ করা হচ্ছে। এ কারণে গত দুই দশকে মানুষের মধ্যে গাভী পালন ও দুগ্ধ খামার গড়ার বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে গ্রাম থেকে উপশহর হয়ে শহর পর্যন্ত অনেকেই পারিবারিকভাবে ছোট ছোট গাভীর খামার গড়ে দুধের ঘাটতি কমানোর চেষ্টা করছেন। কিন্তু দেশের দুধের ঘাটতি সম্পূর্ণভাবে মিটানো সম্ভব হচ্ছে না। কাজেই এ ঘাটতি কমাতে আরও অনেক নতুন খামার গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরী।
(২) পারিবারিক দুধের গাভীর খামার পরিকল্পনা
গাভীর খামার বা দুগ্ধ খামার বর্তমানে একটি লাভজনক শিল্প। ধনী ব্যক্তি ছাড়া অন্য সবার পক্ষে বড় আকারের গাভীর খামার অর্থাৎ দুগ্ধ খামার গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কিন্তু ছোট ছোট পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপন করা সেই তুলনায় অনেক সহজ।
পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপনের মাধ্যমে নিজেদের পুষ্টি চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি কিছুটা বাড়তি আয়েরও ব্যবস্থা হয়। আবার ছোট ছোট খামার গড়ার মাধ্যমে বেকারত্ব দূরীকরণ, দারিদ্র বিমোচন ও আত্মকর্মসংস্থানের পাশাপাশি দেশের বিশাল দুধের চাহিদা পূরণে অবদান রাখা যায়।
সুতরাং গ্রাম, শহরতলী বা শহর যেখানেই হোক, যাদের বাড়িতে কিছুটা বাড়তি জায়গা রয়েছে তারা ২-৫টি গাভীর পারিবারিক খামার গড়ে তুলতে পারেন। এ ধরনের খামার গড়তে খুব বেশি জায়গার প্রয়োজন হয় না। বাড়ির ভেতরে একটি আধাপাকা শেড তৈরি করেই গাভী পোষা যায়।
পারিবারিক গাভীর খামার স্থাপনে তেমন একটা ঝুঁকি নেই। অল্প পুঁজি দিয়ে খামার শুরু করা যেতে পারে। খামার দেখাশোনা করার জন্য আলাদা শ্রমিকের প্রয়োজন হয় না।
(৩) পারিবারিক দুধের গাভীর খামার স্থাপনের গুরুত্ব
পারিবারিক দুগ্ধ খামার স্থাপনের গুরুত্বসমূহ নিম্নরূপ-
- এতে পরিবারের দুধের চাহিদা মেটানো যায়।
- প্রয়োজনের অতিরিক্ত দুধ বিক্রি করে মুনাফা অর্জন করা যায়।
- দুগ্ধজাত দ্রব্য, যেমন- ঘি, দই, মিষ্টি ইত্যাদি উৎপাদন করা যায়।
- গাভীর গোবর ও চনা জৈব সার ও বায়োগ্যাস হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে।
- খামরের ষাঁড় বাছুরগুলো মোটাতাজা করে মাংসের জন্য বিক্রি করা যায়।
(৪) পারিবারিক দুধের গাভীর খামারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ
পারিবারিক দুগ্ধ খামারের জন্য জমি ও মূলধন ছাড়াও নানা রকমের উপকরণের প্রয়োজন হয়। যেমন- গাভীর বাসস্থান বা গোশালা, গোশালা নির্মাণ সামগ্রী, উন্নত জাতের গাভী, খাদ্য ও পানির পাত্র, ঘাসের জমি, পানির লাইন, ঘাস বা খড় কাটার চপিং মেশিন, খাবারের ট্রলি, দুধ দোহন ও বিতরণ সামগ্রী, দুধ ও অন্যান্য সামগ্রী পরিবহনের জন্য পিক আপ, মটর ভ্যান বা রিকসা ভ্যান, গাভীর প্রাথমিক চিকিৎসার যন্ত্রপাতি, খাদ্য, প্রয়োজনীয় ওষুধ ও টিকা, বালতি ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় সামগ্রী।
(৫) গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি
দুধ দোহন কি বা কাকে বলে: গাভী, মহিষ, ছাগল প্রভৃতি স্তন্যপায়ী গবাদি পশুর ওলান থেকে দুধ সংগ্রহের প্রক্রিয়াকে দুধ দোহন করা বলে। দুধ দোহন হাত দ্বারা বা মেশিন দ্বারা করা যেতে পারে, এবং পশুটি বর্তমানে বা সম্প্রতি গর্ভবতী হওয়া প্রয়োজন।
একই গোয়ালার সাহায্যে নির্দিষ্ট সময় ও স্থানে দুধ দোহন করলে গাভী স্থিরতাবোধ করে ও উৎপাদনের ধারাবাহিকতা বজায় থাকে।
দুধ দোহনের পদ্ধতি/নিয়ম: দু’টি পদ্ধতিতে গাভীর দুধ দোহন করা যায়। যেমন-
ক) দুধ দোহনের সনাতন পদ্ধতি
- সনাতন পদ্ধতিতে হাত দিয়ে দুধ দোহন করা হয়। পারিবারিক খামারে এই পদ্ধতিতেই দুধ দোহন করা হয়ে থাকে।
- দোহনের সময় ও ওলােেনর বাটের গোড়া বন্ধ রেখে বাটের উপর চাপ প্রয়োগ করতে হয়। এর ফলে বাটের মধ্যে জমা হওয়া দুধ বের হয়ে আসে। আবার চাপ সরিয়ে নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওলান থেকে দুধ বাটে এসে জমা হয়। সঠিকভাবে দুধ দোহনের জন্য এভাবেই প্রক্রিয়াটি বার বার চালাতে হয়।
- হাত দিয়ে দোহনের সময় গাভীর বামপাশ থেকে দোহন করতে হয়।
- দুধ দোহনের সময় প্রথমে সামনের দুই বাট একসঙ্গে ও পরে পিছনের দুই বাট একসঙ্গে দোহন করা হয়। আবার কোন কোন গোয়ালা গুণন বা পূরণ চিহ্নের (X) মতো করে সামনের একটি ও পিছনের একটি বাট একসঙ্গে অথবা যে বাটে দুধ বেশি আছে বলে মনে হয় সেগুলো আগে দোহন করে থাকে।
খ) দুধ দোহনের আধুনিক পদ্ধতি
- বড় বাণিজ্যিক খামারে যেখানে গাভীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে সেখানে একসঙ্গে অনেক গাভীর দুধ দোহনের জন্য আধুনিক পদ্ধতিতে দোহন যন্ত্রের সাহায্যে দোহন করা হয়।
- দোহনের সময় গাভীর বাটে টিট কাপ লাগিয়ে দোহন যন্ত্র চালু করা হয়। এতে সহজে ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে দুধ দোহন করা যায়।
দুধ দোহনের ধাপ দুধ দোহনের কয়েকটি ধাপ রয়েছে। এই ধাপগুলো সঠিকভাবে অনুসরণ করলে দুধ উৎপাদন বেশি হয়। ধাপগুলো নিম্নরূপ-
- দুধ দোহনের সময়: নির্দিষ্ট সময়সূচি মেনে দুধ দোহন করলে দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। প্রতিদিন ২-৩ বার দুধ দোহন করা যায়।
- গাভী প্রস্তুত করা: দুধ দোহনের পূর্বে কখনোই গাভীকে উত্তেজিত বা বিরক্ত করা যাবে না। কোন অবস্থাতেই গাভীকে মারধর করা যাবে না। দুধ দোহনের পূর্বে গাভীর ওলান ও বাট কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে পরিষ্কার করে নিতে হবে। অতঃপর পরিষ্কার তোয়ালে দিয়ে গাভীর ওলান ও বাট মুছে নিতে হবে।
- গোয়ালার প্রস্তুতি: দুধ দোহনের পূর্বে গোয়ালাকে পরিষ্কার কাপড় পড়তে হবে। গামছা বা অন্য কোন কাপড় দিয়ে মাথার চুল ঢেকে নিতে হবে। নিয়মিত দোহনকারীকে নখ কাটতে হবে। দোহনের সময় দোহনকারীর বিভিন্ন বদঅভ্যাস, যেমন- থুতু ফেলা, নাক ঝাড়া এমনকি কথা বলা বন্ধ রাখতে হবে।
- দোহনের জন্য পরিষ্কার পাত্র ব্যবহার: ওলান থেকে দুধ দোহনের সময় বালতির পরিবর্তে গম্বুজ আকৃতির ঢাকনাসহ স্বাস্থসম্মত হাতলওয়ালা বালতি ব্যবহার করা উচিত। দুধ দোহনের পর দুধের পাত্র প্রথমে গরম পানি দিয়ে ও পরে ব্রাশ দিয়ে ঘষে পরিষ্কার ঠান্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে। পরবর্তী দোহনের পূর্ব পর্যন্ত পাত্রগুলো খামারের রেক বা তাকে উপুড় করে রাখতে হবে।
- গাভীকে মশা-মাছিমুক্ত রাখা: দুধ দোহনের সময় মশা-মাছি যেন গাভীকে বিরক্ত না করে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- গাভীকে দুধ দোহনে উদ্দীপ্ত করা: বাছুরের সাহায্যে গাভীকে বাট চুষিয়ে বা গোয়ালার মাধ্যমে ওলান মর্দন বা ম্যাসাজ করে গাভীকে দুধ দোহনের জন্য উদ্দীপ্ত করতে হবে।
- দোহনের সময় গাভীকে খাওয়ানো: দুধ দোহনের সময় গাভীকে ব্যস্ত রাখতে স্বল্প পরিমাণে সবুজ ঘাস বা দানাদার খাদ্য গাভীর সামনে দিলে গাভী খাওয়াতে ব্যস্ত থাকবে। এতে দুধ দোহন সহজ হয়।
(৬) দুধ সংরক্ষণ পদ্ধাতি
দুধ সংরক্ষণ কি: নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত পচনমুক্ত রেখে দুধকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহারোপযোগী রাখার প্রক্রিয়াকে দুধ সংরক্ষণ বলে।
দুধ সংরক্ষণ করা জন্য দোহনের পরপরই দুধ ছেঁকে ঠান্ডা করতে হয়। দুধের সংরক্ষণ ব্যবস্থা তেমন একটা সহজ নয়, কারণ অতি সহজেই দুধের রাসায়নিক গঠনের পরিবর্তন ঘটে।
বাংলাদেশের সর্বত্রই সচরাচর কাঁচা অবস্থায় দুধ বিক্রি করা হয়। তবে বেশি সময় কাঁচা অবস্থায় থাকলে দুধের গুণগত মান ক্ষুন্ন হয়।
দুধ নষ্ট হওয়ার কারণ কি: সাধারণ তাপমাত্রায় বিভিন্ন জীবাণু, বিশেষ করে স্ট্রেপটোকক্কাই (Streptococci spp.) ব্যকটেরিয়া দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড উৎপন্নের মাধ্যমে দুধকে টক স্বাদযুক্ত করে ফেলে। জীবাণু সাধারণ তাপমাত্রায় দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে দুধ নষ্ট করে ফেলে।
দুধ সংরক্ষণের পদ্ধতি/নিয়ম: সচরাচর দু’ভাবে দুধ সংরক্ষণ করা হয়। যেমন-
ক) দুধ সংরক্ষণের সনাতন পদ্ধতি
সনাতন পদ্ধতিতে তাপ দিয়ে ফুটিয়ে দুধ সংরক্ষণ করা হয়। পারিবারিকভাবে এটি সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি। একবার গরম করলে দুধ সাধারণত ৪ ঘন্টা ভালো থাকে। সে কারণে ৪ ঘন্টা পর পর ২০ মিনিট দুধ গরম করলে প্রায় সব রকমের জীবাণু ধ্বংস হয়। তবে এতে দুধের পুষ্টিমান কিছুটা কমে যায়। কারণ উচ্চ তাপে কিছু ভিটামিন ও অ্যামইনো অ্যাসিড নষ্ট হয়ে যায়।
খ) দুধ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি কয়টি
আধুনিক পদ্ধতিতে তিনভাবে দুধ সংরক্ষণ করা যায়। যথা-
i) রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ
রেফ্রিজারেটরে ৪◦ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে স্বল্প সময়ের জন্য দুধ সংরক্ষণ করা যায়।
ii) ফ্রিজারে সংরক্ষণ
ফ্রিজার বা ডিপ ফ্রিজে দুধ সংরক্ষণ করা যায়। ডিপ ফ্রিজে রাখলে দুধে জীবাণুর বংশবৃদ্ধি হয় না ঠিকই কিন্তু এতে দুধের রাসায়নিক বন্ধন ভেঙ্গে যায়। ফলে দুধের গুণগত মান কিছুটা হ্রাস পায়।
iii) দুধ পাস্তুরিকরণ
দুধ কেন পাস্তুরিকরন করতে হয়: দুধ অন্যতম আদর্শ খাদ্য। এটি যেমন বাছুর ও মানুষের কাছে আদর্শ খাবার, তেমনি অণুজীবের বংশ বিস্তারের জন্যও সমানভাবে আদর্শ মাধ্যম। দোহনের পর সময়ের সাথে দুধের গুণাগুণ নষ্ট হতে শুরু করে। আর দীর্ঘক্ষণ সাধারণ তাপমাত্রায় রাখলে এক সময় দুধ সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য মূলত বিভিন্ন প্রজাতির অনুজীব বা জীবাণুই দায়ী। এই অনুজীব অতি উচ্চ তাপমাত্রায় ও নিম্ন মাত্রায় জন্মাতে ও বংশ বিস্তার করতে পারে না। কাজেই দুধকে দীর্ঘ সময়ের জন্য জীবাণুমুক্ত রাখতে নির্দিষ্ট সময় ধরে নির্দিষ্ট উচ্চ তাপমাত্রায় তাপ দেয় হয়। এতে একদিকে যেমন বিভিন্ন প্রজাতির রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু ধ্বংস হয়, অন্যদিকে তেমনি দুধে উপস্থিত কিছু অনুঘটক বা এনজাইম নিষ্ক্রিয় হয়। ফলে দুধ দীর্ঘ সময় খাবার উপযোগী থাকে।
দুধ পাস্তুরিকরন কি: দোহনের পর দুধকে একটি নির্দিষ্ট সময় ধরে একটি নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় উত্তপ্ত করাকে পাস্তুরিকরণ বলে। এতে দুধে উপস্থিত সকল রোগজীবাণু ও অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায়। এই দুধকে পাস্তুরিত দুধ বলে। এই পাস্তুরিত দুধ সঙ্গে সঙ্গেই ৪◦ সেলসিয়াস তাপমাত্রার নীচে নামিয়ে আনতে হয়।
দুধ পাস্তুরিকরন পক্রিয়া প্রথম কে ব্যবহার/আবিষ্কার করেন: লুই পাস্তুর (Louis Pasteur) নামে এক ফরাসি বিজ্ঞানী এই পদ্ধতিটি আবিষ্কার করেন বিধান তার নামানুসারের পদ্ধতিটির নাম পাস্তুরিকরণ (Pasteurization) রাখা হয়েছে।
দুধ পাস্তুরিকরন কত ডিগ্রি সেলসিয়াস: পাস্তুরিকরণের তাপমাত্রা ও সময়ের ওপর নির্ভর করে দুধ পাস্তুরিকরনকে তিনভাগে ভাগ করা হয়, যেমন-
- নিম্ন তাপ দীর্ঘ সময় পাস্তুরিকরণ: এতে দুধকে ৬২.৮◦ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ৩০ মিনিট ধরে উত্তপ্ত করা হয়।
- উচ্চ তাপ কম সময় পাস্তুরিকরণ: এতে দুধকে ৭২.২◦ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় ১৫ সেকেন্ড ধরে উত্তপ্ত করা হয়।
- অতি উচ্চ তাপ অতি কম সময় পাস্তুরিকরণ: এতে দুধকে ১৩৭.৮◦ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় মাত্র ২ সেকেন্ডের জন্য উত্তপ্ত করা হয়।
দুধ পাস্তুরিকরণের সুবিধা:
- পাস্তুরিকৃত দুধ নিরাপদ, কারণ এতে রোগ উৎপাদনকারী জীবাণু ধ্বংস হয়।
- পাস্তুরিকরণ দুধের সংরক্ষণকাল দীর্ঘায়িত করে, কারণ এই পক্রিয়ার ফলে দুধে ল্যাকটিক অ্যাসিড প্রস্তুতকারী জীবাণুর সংখ্যা কমে যায়।
- দুধের অনুঘটক নষ্ট হয়ে যায়। ফলে দুধ দীর্ঘ সময় ভালো ও খাওয়ার উপযোগী থাকে।
- দুধে উপস্থিত অধিকাংশ রোগজীবাণু ধ্বংস হয়ে যায়।
- এই প্রক্রিয়ার দুধের স্বাদ ও পুষ্টিমান ঠিক থাকে।
দুধ পাস্তুরিকরণের অসুবিধা:
- এই প্রক্রিয়াটি আদর্শ উপায়ে করতে না পারলে অতিরিক্ত আলোচ্ছলে দুধের চর্বিকণাগুলো আলাদা হয়ে যেতে পারে।
- এতে তাপ সংবেদনশীল ভিটামিন নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
- উচ্চ তাপে কিছুটা স্বাদ নষ্ট হয়ে যেতে পারে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা দুধের প্রয়োজনীয়তা; পারিবারিক দুধের গাভীর খামার পরিকল্পনা; পারিবারিক দুধের গাভীর খামার স্থাপনের গুরুত্ব; পারিবারিক দুধের গাভীর খামারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ; গাভীর দুধ দোহন পদ্ধতি; দুধ দোহন কি বা কাকে বলে? দুধ দোহনের পদ্ধতি বা নিয়ম; দুধ দোহনের সনাতন পদ্ধতি; দুধ দোহনের আধুনিক পদ্ধতি; দুধ সংরক্ষণ পদ্ধাতি; দুধ সংরক্ষণ কি? দুধ নষ্ট হওয়ার কারণ কি? দুধ সংরক্ষণের পদ্ধতি বা নিয়ম; দুধ সংরক্ষণের সনাতন পদ্ধতি; দুধ সংরক্ষণের আধুনিক পদ্ধতি কয়টি? দুধ পাস্তুরিকরন কি? দুধ পাস্তুরিকরন পক্রিয়া প্রথম কে ব্যবহার বা আবিষ্কার করেন? দুধ পাস্তুরিকরন কত ডিগ্রি সেলসিয়াস? দুধ পাস্তুরিকরণের সুবিধা; দুধ পাস্তুরিকরণের অসুবিধা; প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
দৈহিক বৃদ্ধি ও মানসিক বিকাশের জন্য দুধ অপরিহার্য খাদ্যোপাদান। প্রতিদিন প্রাপ্তবয়ষ্ক ব্যক্তির ২৫০ মিলিলিটার দুধের প্রয়োজন হলেও আমরা পাচ্ছি মাত্র ৫১ মিলিলিটার। এ ঘাটতি পূরণের জন্য বৃহৎ আকারের খামারের পাশাপাশি পারিবারিক দুগ্ধ খামার গড়ার বিকল্প নেই।
প্রতিদিন এক হাতে নির্দিষ্ট সময়ে দুধ দোহন করলে গাভী স্থিরতা বোধ করে ও ভালো উৎপাদন পাওয়া যায়। পারিবারিক খামারে হাতেই দুধ দোহন করা হয়। দেহনের পর দুধ সংরক্ষণ না করলে দুধের মধ্যে উপস্থিত বিভিন্ন জীবাণু ও অনুঘটক দুধ নষ্ট করে ফেলতে পারে। তাই দুধ সংরক্ষণ করা উচিত। ডিপ ফ্রিজে ঠান্ডায় যেমন দুধ সংরক্ষণ করা যায় তেমনি উচ্চ তাপমাত্রায় কম সময় ফুটিয়ে দুধকে পাস্তুরিত করেও সংরক্ষণ করা যায়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।