Skip to content

 

পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায়? বাংলাদেশের চাষযোগ্য মাছ

পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায়, বাংলাদেশের চাষযোগ্য মাছ

আমরা প্রতিদিন কোনো না কোনো মাছ খেয়ে থাকি। মাছ আমাদের খুবই প্রিয় খাদ্য। মাছ বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রাকৃতিক সম্পদ। বাংলাদেশে প্রাপ্ত মাছগুলোর মধ্যে সব মাছ আবার পুকুরে চাষ করা যায় না বা হয় না। এখানে আমরা পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায় এবং বাংলাদেশের চাষযোগ্য মাছগুলোর পরিচিয় সংক্ষেপে জেনে নিব।

(১) বাংলাদেশে পুকুরে চাষযোগ্য মাছের পরিচিতি

আমাদের বাংলাদেশের নদী, নালা, খাল, বিল, পুকুর, দিঘির স্বাদু পানিতে প্রাকৃতিকভাবে অনেক মাছ পাওয়া যায়। যেমন: রুই, কাতলা, মৃগেল, শিং, পুটি, খলিশা, কই, চিতল, বোয়াল, চিংড়ি প্রভৃতি।

অন্যদিকে আমাদের দেশের লোনা পানির বিশাল বঙ্গোপসাগরেও আছে অনেক ধরনের মাছ। যেমন: ইলিশ, রূপচাঁদা, লইট্যা, কোরাল, ইত্যাদি।

কিন্তু আমাদের দেশের মাছ উৎপাদনের পরিমাণ মানুষের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। দেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে মাছের চাহিদা দিন দিন আরও বাড়ছে। আর তাই বেশি করে মাছ চাষের মাধ্যমে এ চাহিদা মেটানো সম্ভব।

উদাহ্বরণস্বরূপ, কয়েকটি বাংলাদেশের কয়েকটি স্বাদু পানির মাছ হলো- রুই, কাতলা, খলিসা, মিাগুর, শোল, কৈ, চিংড়ি, বোয়াল, চিতল ইত্যাদি। বাংলাদেশের কয়েকটি লোনা পানির মাছ হলো- ইুলশ, রূপচাঁদা, ভেটকি, ছুরি ইত্যাদি।

চিত্র- বাংলাদেশের কয়েকটি স্বাদু পানির মাছ
চিত্র- বাংলাদেশের কয়েকটি স্বাদু পানির মাছ
চিত্র- বাংলাদেশের কয়েকটি লোনা পানির মাছ
চিত্র- বাংলাদেশের কয়েকটি লোনা পানির মাছ

মাছ মেরুদণ্ডী প্রাণী। এরা ফুলকার সাহায্যে শ্বাস নেয় এবং লেজ ও পাখনার সাহায্যে চলাফেরা করে। মাছের দেহ মোটা এবং মাথা ও লেজের দিক সরু। তাই এরা সহজে ও দ্রুত পানিতে চলাফেরা করতে পারে। চিংড়ি একটি অমেরুদণ্ডী প্রাণী। চিংড়ি পানিতে বাস করে ও খেতে সুস্বাদু।

বাংলাদেশে প্রাপ্ত মাছগুলোর মধ্যে সব মাছ আবার পুকুরে চাষ করা যায় না বা হয় না।

তাহলে পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায়?

দেশি চাষযোগ্য মাছের মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, গলদা ও বাগদা চিংড়ি উল্লেখযোগ্য।

See also  মাছ চাষে পুকুরের বৈশিষ্ট্য, পানির গুণাগুণ, প্রকারভেদ, বিভিন্ন স্তর ও বসবাসকারী অন্যন্য জীব

দেশি মাছ ছাড়াও চাষের উদ্দেশ্যে কিছু বিদেশি মাছও আমাদের দেশে আনা হয়েছে। এসব মাছ এককভাবে বা আমাদের দেশি চাষযোগ্য মাছের সাথে একত্রে পুকুরে মিশ্রচাষ করা যায়।

বিদেশি চাষযোগ্য মাছের মধ্যে- থাই পাঙ্গাশ, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, থাই সরপুটি, তেলাপিয়া অন্যতম।

(২) পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায়? বাংলাদেশে পুকুরে চাষযোগ্য মাছের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে পানিতে অনেক রকমের মাছ পাওয়া গেলেও সব মাছ পুকুরে চাষ করা যায় না। যে সকল মাছের পোনা সহজলভ্য, তাড়াতাড়ি বাড়ে, বাজারে চাহিলা ও ভালো দাম রয়েছে, পুষ্টিমান ভালো ও খেতে সুস্বাদু, সে সকল মাছই পুকুরে চাষ করা হয়। তাছাড়া এসব মাছ পুকুরের প্রাকৃতিক খাবার ও বাইরে থেকে দেওয়া সম্পূরক খাবার দক্ষতার সাথে হজম করতে পারে।

পুকুরে চাষযোগ্য কয়েকটি প্রধান মাছ হলো- রুই, কাতলা, মৃগেল, সিলভার কার্প, গ্রাস কার্প, তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি ইত্যাদি পুকুরে চাষ করা যায়।

চিত্র- পুকুরে চাষযোগ্য কয়েকটি প্রধান মাছ
চিত্র- পুকুরে চাষযোগ্য কয়েকটি প্রধান মাছ

আমাদের দেশি কয়েকটি প্রধান চাষযোগ্য মাছ হলো রুই, কাতলা, মৃগেল। এরা সবাই নদীর মাছ। তবে পুকুরে চাষের জন্য খুব উপযোগী। প্রাকৃতিক খাদ্য ছাড়াও এরা সম্পূরক খাবার খায়। বর্ষাকালে স্রোতশীল নদীতে ডিম পাড়ে। তবে বর্তমানে চাষের উদ্দেশ্যে হ্যাচারিতে পোনা তৈরি করা হচ্ছে। নিচে এদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-

  • রুই: দেহ লম্বা আকৃতির। মাথা তুলনামূলক ছোট। ঠোঁট ফোলা ফোলা ও ঠোঁটের কিনারায় অনেক সূক্ষ্ম খাঁজ আছে। পিঠের দিক কিছুটা বাদামি। পেটের দিক হালকা সোনালি। বছরে ১ কেজি ওজনের হয়ে থাকে।
  • কাতলা: এদের মাথা বড়, দেহ চওড়া ও একটু চ্যাপটা। পিঠ উঁচু, মুখ উপরের দিকে বাঁকানো। এ মাহ বেশ তাড়াতাড়ি বাড়ে। ঠিকমতো খাবার পেলে দুই বছরে ৪-৫ কেজি পর্যন্ত বড় হয়।
  • মৃগেল: মাথা দেহের তুলনায় ছোট। মুখ কিছুটা নিচের দিকে। দেহ লম্বাটে, নিচের অংশ লম্বালম্বিভাবে সোজা। মুখের দুই পাশে ছোট দুই জোড়া শুঁড় আছে।

পুকুরে চাষযোগ্য বিদেশি মাছের মধ্যে সিলভার কার্প, গ্রাসকার্প, তেলাপিয়া, থাই সরপুঁটি বর্তমানে ব্যাপকভাবে চাষ করা হচ্ছে। নিচে এদের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো-

  • সিলভার কার্প: এরা চীন ও রাশিয়ার নদীর মাছ। এদের মাথা ছোট, দেহের মাঝের অংশ চওড়া, সামনের ও পেছনের দিক সরু। আঁশ খুব ছোট। দেহের রং চকচকে রুপালি। এদের মুখ কাতলা মাছের মতো উপরের দিকে বাঁকানো। এ দেশের চাষযোগ্য মাছের সাথে পুকুরে চাষ করা যায়। পুকুরে চাষযোগ্য বিদেশি মাছের মধ্যে সিলভার কার্প সবচেয়ে তাড়াতাড়ি বাড়ে।
  • গ্রাসকার্প: এদেরও চীন এবং রাশিয়ার নদীতে পাওয়া যায়। এদের দেহ বেশ লম্বা, মাথা ছোট। দেহের রং সাদাটে ও পাখনা ছোট। এরা দ্রুত বাড়ে। চাষ অবস্থায় যেকোনো ঘাস বা লতাপাতা খাওয়ানো যায়।
  • তেলাপিয়া: থাইল্যান্ড থেকে এদের আনা হয়েছে। তেলাপিয়া বেশ খাটো এবং তুলনামূলকভাবে চওড়া আকৃতির। দেহ চ্যাপটা এবং রং ধূসর-নীলাভ। এরা দ্রুত বর্ধনশীল ও খেতে সুস্বাদু। এদের সাধারণত পুকুরে এককভাবে চাষ করা হয়। এরা ৩-৪ মাসেই খাবার উপযোগী হয়।
  • থাই সরপুঁটি: এ মাছকে রাজপুঁটিও বলা হয়। এ মাছের দেহের রং উজ্জ্বল রুপালি। দেহ বেশ চ্যাপটা। মাথা বেশ ছোট। এদের এককভাবে বা অন্য মাছের সাথে মিশ্রচাষ করা যায়। এরাও ৩-৪ মাসে খাবার উপযোগী হয়।
See also  মাছের চাষের পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়

(৩) পুকুরে চাষযোগ্য মাছের পুষ্টি ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব

মাছ চাষ করে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারি। মাছ সকলের নিকট খুব প্রিয় খাদ্য। অন্যান্য খাবারের সাথে সকলের দৈনিক মাছ খাওয়া উচিত। মাছের বর্তমান উৎপাদন আমাদের চাহিদার তুলনায় অনেক কম। তাই নিজেদের জলাশয়ে মাছ চাষ করে পরিবারের পুষ্টির চাহিদা পূরণ করতে হবে। তাছাড়া অতিরিক্ত উৎপাদিত মাছ বাজারে বিক্রি করে নগদ অর্থ আয় করা যায়। আমাদের পুষ্টির চাহিদা পূরণ, কাজের সুযোগ সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন এবং সামাজিক উন্নয়নে মাছ চাষের গুরুত্ব অপরিসীম। নিচে মাছের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা করা হলো।

ক) পুষ্টির চাহিদা পুরণ

আমাদের প্রতিদিনের খাবার তালিকায় আমিষের প্রধান উৎস হচ্ছে মাছ। এটি একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর খাবার। আমাদের দৈহিক বৃদ্ধি ও রোগ প্রতিরোধের জন্য আমিষ সরকার। একজন পূর্ণ বয়স্ক লোকের দৈনিক ৩৩ থেকে ৬৬ গ্রাম আমিষ জাতীয় খাবারের প্রয়োজন হয়। আমিষের মধ্যে প্রাণিজ আমিষ উৎকৃষ্ট মানের। কিন্তু বর্তমানে আমরা প্রাণিজ আমিষের চাহিদার তুলনায় কম খেয়ে থাকি। মাছ চাষের মাধ্যমে উৎপাদন বাড়িয়ে প্রাণিজ আমিষের অভাব দূর করা সম্ভব। তাই মাছ চাষ খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

চিত্র- রুই মাছের কারি
চিত্র- রুই মাছের কারি
চিত্র- তেলাপিয়া ফ্রাই
চিত্র- তেলাপিয়া ফ্রাই

এ ছাড়াও মাছের তেল দেহের জন্য উপকারী। বিভিন্ন জাতের ছোট মাছ যেমন- মলা, ঢেলা, কাচকি মাছে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। ভিটামিন ‘এ’ রাতকানা রোগ দূর করে। মাছের কাঁটায় প্রচুর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস পাওয়া যায়, যা দেহের হাড় গঠনে সাহায্য করে।

খ) জীবিকার উৎস

বাংলাদেশে প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ মাছ থেকে বিভিন্নভাবে জীবিকা নির্বাহ করে। যেমন- মাছ চাষ, মাছ ধরা, বিক্রয় ইত্যাদি। জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে আমাদের দেশে কাজের সুযোগ কমে যাচ্ছে। মাছ চাষের মাধ্যমে কাজের সুযোগ সৃষ্টি করা সম্ভব।

চিত্র- জেলেরা মাছ ধরছে
চিত্র- জেলেরা মাছ ধরছে
চিত্র- বাজারে বিক্রেতা মাছ বিক্রি করছে
চিত্র- বাজারে বিক্রেতা মাছ বিক্রি করছে

বৈদেশিক মুদ্রা আয় মাছ বিদেশে রপ্তানি করে বাংলাদেশ প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করছে। মৎস্য সম্পদ রপ্তানি করে যে পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়, তার শতকরা প্রায় ৮৬ ভাগই আসে চিংড়ি থেকে। মাছ চাষ বৃদ্ধি করে এ আয় আরও বাড়ানো সম্ভব।

See also  মাছের চাষ করতে পুকুর খনন এবং প্রস্তুতকরণ ও পোনা ছাড়ার পদ্ধতি

আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বাংলাদেশে অনেক পতিত পুকুর, ডোবা ও নালা রয়েছে, যেখানে মাছ চাষ করা হয় না। এসব জলাশয়ে মাছ চাষ করে গ্রামের গরিব ও স্বল্প আয়ের লোকেদের আর্থিক অবস্থার উন্নতি ঘটানো সম্ভব। নতুন শব্দ জলাশয়, আমিষ।

প্রিয় কৃষক বন্ধু, আজকে আমরা পুকুরে কি কি মাছ চাষ করা যায় এবং বাংলাদেশের চাষযোগ্য মাছগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় জানলাম। পরবর্তী আলোচনায় আমরা প্রত্যকটি মাছগুলোর চাষ পদ্ধতি সম্পর্কে জানব। কৃষির সাথই থাকুন, ধন্যবাদ।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page