মাছ চাষের ক্ষেত্র হিসেবে পুকুরের গুরুত্ব অপরিসীম। পুকুর হচ্ছে চাষ যোগ্য মাছের আবাসস্থান যা সাধারণভাবে ছোট, অগভীর ও বদ্ধ একটি জলাশয়।
মাছ চাষের পুকুরকে পুকুরের আয়তন, পানি ধারণ ক্ষমতা পানির স্থায়িত্ব এবং বিভিন্ন আকারের মাছ প্রতিপালনের উপর ভিত্তি করে বিভিন্নভাবে ভাগ করা যায়।
পানির স্থায়িত্বের উপর ভিত্তি করে পুকুরের দু’প্রকার- স্থায়ী পুকুর এবং অস্থায়ী পুকুর। এছাড়া বিভিন্ন আকারের মাছ প্রতি পালনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পুকুরের প্রয়োজন হয়।
যে পুকুরে রেণু পোনা ছেড়ে ধানী পোনা পর্যন্ত বড় করা হয় তাদেরকে আতুড় পুকুর বলে। সাধারণভাবে এ ধরনের পুকুরের আয়তন ১০-১৭ শতাংশ পর্যন্ত হয়। যে পুকুরে ধানী পোনা ছেড়ে চারা পোনা বা আঙ্গুলে পোনা তৈরি করা হয় তাকে লালন পুকুর বলে। যে পুকুরে ধানী বা আঙ্গুলে পোনা ছেড়ে বড় মাছে পরিণত করা হয় তাকে মজুদ পুকুর বলে। এই পোষ্টটিতে পুকুরে পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করা হল।
নিম্নে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় করার ব্যবহারিক কৌশল তুলে ধরা হলো-
প্রাসঙ্গিক তথ্য:
পুকুরের নিজস্ব এবং সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ফাইটো প্লাক্টটন উৎপাদনের জন প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সরবরাহের ফলে জলাশয়ে যে খাদ্য উৎপাদন হয় তাকে প্রাকৃতিক খাদ্য বলে। বিভিন্ন ধরনের প্রাণি ও উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন হলো মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য।
প্রয়োজনীয় উপকরণ:
- সেকিডিস্ক (২০ সে.মি. ব্যাস যুক্ত টিনের একটি সাদা কালো থালা)
- সূতা
- স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস।
- ব্যবহারিক খাতা, কলম, পেন্সিল ইত্যাদি।
কার্য পদ্ধতি:
পুকুরে পোনা মজুদের পূর্বেই সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হয়।
বিভিন্ন পদ্ধতিতে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় করা যায়। যেমন-
সেকি ডিস্ক পরীক্ষা: এ ক্ষেত্রে ২০ সে.মি. ব্যাসযুক্ত টিনের একটি কালো থালা (যাকে সেকিডিস্ক বলে) সূতা দ্বারা পানিতে ডুবানোর পর যদি ২৫-৩০ সে.মি. গভীরতায় থালা না দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য রয়েছে। যদি ৩০ সে.মি এর অধিক গভীরতায় সেকিডিস্ক দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার অনেক কম।
হাত পরীক্ষা: পুকুরের পানিতে হাতের কনুই পর্যন্ত ডুবিয়ে যদি হাতের তালু দেখা না যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমান মতো প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে।
গ্লাস পরীক্ষা: একটি স্বচ্ছ কাঁচের গ্লাস দিয়ে পুকুরের পানি নিয়ে সূর্যের আলোর দিকে ধরলে যদি পানির রং সবুজ বা বাদামি সবুজ দেখা যায় এবং পানিতে অসংখ্য সূক্ষ্ম কণা ও ছোট পোকার মতো দেখা যায় তবে বুঝতে হবে পুকুরে পরিমান মতো প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে। পরীক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়নি তবে আরো ২-৪ দিন অপেক্ষা করার প্রয়োজন হবে। এর পরও যদি খাদ্য তৈরি না হয় তাহলে পুনরায় পরিমান মত সার প্রয়োগ করতে হবে।
সতকর্তা:
- সেকিডিস্ক এবং সূতার যেন কোনো প্রকারের ক্ষতি না হয় লক্ষ রাখতে হবে।
- গ্লাস পরীক্ষায় ব্যবহৃত গ্লাস যেন না ভাঙ্গে সে দিকে নজর রাখতে হবে।
- পরীক্ষাগুলোর তথ্য সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করা হচ্ছে কি না তা লক্ষ্য রাখতে হবে।
শেষকথা: একটি আদর্শ পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি থাকবে। পুকুর মাছ চাষের জন্য উপযুক্ত আদর্শ পুকুর হবে আয়তাকার। আয়তন ২০-২৫ শতাংশ হলে তা পুকুর ব্যবস্থাপনার জন্য উপযুক্ত। পুকুর বন্যামুক্ত হতে হবে। পুকুরের স্থান এমন হতে হবে যা সহজে পানি নিষ্কাশন যোগ্য। পুকুরের মাটি হবে দোআঁশ, পলি দোআঁশ বা এটেল দোআঁশ। নিয়মিতভাবে পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি নির্ণয় করে দেখতে হবে। পুকুরে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের উৎপন্ন যেসকল কারণে বাঁধাগ্রস্থ হয় তা দূর করার ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।