Skip to content

ফসল কি? অর্থকরী ফসল কাকে বলে? প্রধান ২০টি ফসলের নাম

ফসল কি, অর্থকরী ফসল কাকে বলে, প্রধান ২০টি ফসলের নাম

বিভিন্ন প্রকার মাঠ ফসল, উদ্যান ফসল, ঔষধি গাছপালা, মাছ চাষ, গৃহপালিত পশুপাখি পালন ইত্যাদির উৎপাদনকেই মূলত কৃষিজ উৎপাদন বলা হয়। মানুষের জীবনযাত্রা সচল রাখতে কৃষিজ উৎপাদনের কোনো বিকল্প নেই।

মানুষ পৃথিবীতে যতদিন বেঁচে থাকে ততদিন খাদ্য খেতে হয়। আর এই খাদ্য আসে সরাসরি ফসল চাষাবাদের মাধ্যমে। এরকম ফসল হলো ধান, গম, ভূট্টা, যব, কাওন ইত্যাদি।

খাদ্য ছাড়াও মানুষের বিভিন্ন রকম চাহিদা আছে। এই চাহিদা মেটাবার জন্য মানুষ আদিকাল থেকে বিভিন্ন রকম ফসল চাষ করে আসছে। যেমন- পাট, তুলা, চা ইত্যাদি।

এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- ফসল কি, অর্থকরী ফসল কাকে বলে, মাঠ ফসল কাকে বলে, উদ্যান ফসল কাকে বলে, এসবের সংজ্ঞা বলতে পারবেন। মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের পার্থক্য বুঝতে পারবেন। মাঠ ফসলের শ্রেণিবিভাগ সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। প্রধান প্রধান মাঠ ফসলের বাংলা, ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম জানতে পারবেন। ফসলের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারবেন।

(১) ফসল কি? অর্থকরী ফসল কাকে বলে?

আদিকালে মানুষ বিভিন্ন ধরনের উদ্ভিদকে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করত। পরবর্তীতে তারা ধীরে ধীরে বুঝতে শিখল যে, একেক ধরনের উদ্ভিদ থেকে একেক ধরনের দ্রব্য উৎপন্ন হয়। কোনো উদ্ভিদ থেকে দানা, কোনো উদ্ভিদ থেকে চিনি, কোনো উদ্ভিদ থেকে আঁশ ইত্যাদি পাওয়া যায়। মানুষ এসব উদ্ভিদকে সংগ্রহ করে যত্নের সাথে চাষ করে এবং নিজেদের প্রয়োজন মেটায়।

ফসল কি: ফসল হলো একটি উদ্ভিদ বা উদ্ভিদজাত দ্রব্য যা একটি নির্দিষ্ট উদ্দেশ্যে যেমন খাদ্য, আঁশ বা জ্বালানীর জন্য জন্মায়। অধিকাংশ ফসল মানুষের খাদ্য বা গবাদি পশুর জন্য খাদ্য হিসাবে কাটা হয়।

জমিনে জন্মানো সব উদ্ভিদই ফসল নয় তাই মানুষ প্রয়োজনে যে সমস্ত গাছপালার চাষ করে সেগুলোকেই ফসল বলা হয়।

অর্থকরী ফসল কাকে বলে: যেসব কৃষিপণ্য বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করা হয়, সেগুলোকে অর্থকরী ফসল বলে। বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল হচ্ছে পাট, চা ও তামাক।

(২) ফসল কত প্রকার ও কি কি?

ফসল কত প্রকার ও কি কি: ফসল প্রধানত ২ প্রকার। যথা- ১। মাঠ ফসল এবং ২। উদ্যান ফসল।

See also  ফসল সংগ্রহ ও বাছাই পদ্ধতি

মাঠ ফসল কাকে বলে: অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্ব সম্পন্ন যে সমস্ত উদ্ভিদ বা গাছপালা মানুষ যত্নের সাথে মাঠে চাষ করে, সেগুলোকে মাঠ ফসল বলা হয়।

উদ্যান ফসল কাকে বলে: স্বল্প পরিসরে প্রতিটি উদ্ভিদের আলাদা যত্ন করার মাধ্যমে বাগানে যে ফসলের চাষ করা হয় তাকে উদ্যান ফসল বলে। ফুল, ফল, শাকসবজি ও মসলাজাতীয় ফসল উদ্যান ফসলের অন্তর্ভূক্ত। সাধারণত বসতবাড়ি সংলগ্ন উঁচু জমিতে উদ্যান ফসলের আবাদ করা হয়।

সাধারণভাবে কৃষিতাত্ত্বিক ফসলগুলোকে মাঠ ফসল এবং বাগান ফসলগুলোকে উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল বলা হয়।

জমি তৈরি থেকে শুরু করে বীজ উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি পর্যায়ে মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলে যত্মের পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। 

মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের পার্থক্য নিচে তুলে ধরা হলো-

মাঠ ফসলউদ্যান ফসল
১। মাঠ ফসল সাধারণত সমষ্টিগতভাবে চাষ করা হয়। যেমন- ধান, গম, পাট ইত্যাদি।১। সাধারণত প্রতিটি গাছকে এককভাবে যত্ম নেয়া হয়। যেমন- আম, জাম, কলা ইত্যাদি।
২। মাঠ ফসলে সাধারণত বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয় না।২। উদ্যান ফসলে বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয়।
৩। মাঠ ফসল সাধারণত এক সাথে পরিপক্ক হয় বিধায় এক সাথেই সংগ্রহ করা হয়।৩। উদ্যান ফসল পর্যায়ক্রমে পরিপক্ক হয় বিধায় ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হয়। যেমন- টমেটো, বেগুন ইত্যাদি।
৪। মাঠ ফসল সাধারণত শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়। যেমন- ধান, পাট, ডাল ইত্যাদি।৪। উদ্যান ফসল সাধারণত তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়। যেমন-বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল।

(৩) মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ

বিভিন্ন ধরনের মাঠ ফসল আমরা জমিতে জন্মাতে দেখি। এবার দেখা যাক মাঠ ফসলের কৃষিতাত্ত্বিক শ্রেণিবিভাগ কী?

১। দানাজাতীয় শস্য: এরা গ্রামিনী পরিবারের অন্তর্গত। এ পরিবারের খাবার উপযোগী দানা জাতীয় শস্যগুলোকেই তন্ডুল ফসল বলে। যেমন- ধান, গম, ভূট্টা, যব, চীনা, কাওন ইত্যাদি।

২। ডাল ফসল: লিগুমিনোসি পরিবারের প্যাপিলিওনেসি উপ-পরিবারের যে সমস্ত দানাজাতীয় ফসল ডালের জন্য চাষ করা হয়, সেগুলোকে ডাল ফসল বলা হয়। যেমন- মসুর, খেসারি, মুগ, ছোলা, মাসকালাই ইত্যাদি।

৩। তৈল ফসল: যে সমস্ত ফসলের বীজ থেকে তেল সংগ্রহ করা হয়। সেগুলোকে তৈল ফসল বলা হয়। যেমন- সরিষা, সয়াবিন, তিল, তিসি, সূর্যমুখী ইত্যাদি।

৪। চিনি ফসল: যে সমস্ত ফসলের রস থেকে মিষ্টিজাতীয় পদার্থ যেমন- চিনি, গুড়, মিছরি ইত্যাদি তৈরি করা হয়, সেগুলোকে চিনি ফসল বলে। যেমন- আখ, বিট, খেজুর, তাল ইত্যাদি। খেজুর, তাল মাঠ ফসলের আওতাধীন না হলেও এরা চিনি ফসলের অন্তর্ভুক্ত।

See also  মাঠ ফসল কি, কাকে বলে? মাঠ ফসল কোনটি? মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য ও গুরুত্ব

৫। আঁশ ফসল: আঁশ পাওয়ার জন্য যে সমস্ত ফসল চাষ করা হয়, সেগুলোকে আঁশ ফসল বলা হয়। যেমন- পাট, তুলা, শনপাট, কেনাফ, রামী ইত্যাদি।

৬। নেশা ফসল: নেশাজাতীয় দ্রব্য উৎপাদানের জন্য যে সমস্ত ফসল চাষ করা হয়, সেগুলোকে নেশা ফসল বলে। যেমন- তামাক, গাঁজা, আফিম, কুম্ভি, হেনবেন ইত্যাদি।

৭। পানীয় ফসল: যে সকল ফসল পানীয় দ্রব্য উৎপাদনের জন্য চাষ করা হয়, সেগুলোকে পানীয় ফসল বলে। যেমনচা, কফি, কোকো ইত্যাদি।

৮। পশুখাদ্য ফসল: পশুর খাদ্যের জন্য যে সমস্ত ফসল চাষ করা হয়। সেগুলোকে পশুখাদ্য ফসল বলে। যেমন- প্যারা ঘাস, নেপিয়ার ঘাস, ভূট্টা, জোয়ার, খেসারি, মাসকালাই ইত্যাদি।

৯। সবুজ সার ফসল: যে সমস্ত সবুজ ফসল জন্মানোর একটা নির্দিষ্ট সময় পর মাটির সাথে মিশিয়ে দিয়ে জৈব সার তৈরির জন্য চাষ করা হয়, সেগুলোকে সবুজ সার ফসল বলে। যেমন- ধইঞ্চা, শনপাট ইত্যাদি। 

(৪) প্রধান ২০টি ফসলের নাম

প্রধান ২০টি ফসলের নাম

নিচে প্রধান প্রধান কিছু ফসলের বাংলা, ইংরেজি ও বৈজ্ঞানিক নাম উল্লেখ করা হলো-

ক্রমবাংলা নামইংরেজি নামবৈজ্ঞানিক নাম
১।ধানRiceOryza Sativa
২।গমWheatTriticum aestivum
৩।ভূট্টাMaizeZea mays
৪।যবBarleyHordeum vulgare
৫।কাওনFoxtail milletSelaria italica
৬।ছোলাgramCicer arieti-um
৭।মাসকালাইBlack gramVig-a mu-go
৮।মুগGree- gramVig-a radiata
৯।মসুরLe-tilLe-s culi-aris
১০।সয়াবিনSoyabea-Glyci-e max
১১।সরিষাMustardBrassica -apus
১২।সূর্যমুখীSu-flowerHelia-thus a–us
১৩।আখSugarca-eSaccharum offici-arum
১৪।তামাকTobacco-icotia-a tabacum
১৫।দেশী পাটDeshi JuteCorchrus capsularis
১৬।দেশী তুলাDeshi Cotto-Gossypium arboreum
১৭।চাTeaComellia si-e-sis
১৮।কফিCoffeeCoffea arabica
১৯।প্যারা ঘাসPara grassBrachiaria mutica
২০।নেপিয়ার ঘাস-apier grassPe–isetum purpureum

(৫) ফসল চাষের গুরুত্ব

বেঁচে থাকার জন্য মানুষের পুষ্টির প্রয়োজন। আর এই পুষ্টি উপাদান আসে বিভিন্ন প্রকার খাবার থেকে। ফসল, পশুপাখি ও মাছ থেকে আমরা আমাদের খাবার পেয়ে থাকি।

See also  মাঠ ফসল কি/কাকে বলে? মাঠ ফসলের বৈশিষ্ট্য, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ ও মাঠ ফসলের গুরুত্ব

জীবনকে সুস্থ, সবল, সচল, কর্মক্ষম ও দেহের বৃদ্ধিসাধনের জন্য যে সব উদ্ভিদজাত দ্রব্য প্রয়োজন হয় সেগুলোকে উদ্ভিদজাত খাদ্য বলা হয়।

  • ফসল হলো মানুষের খাদ্যের প্রধান উৎস। বিভিন্ন প্রকার ফসলের মধ্যে ধান আমাদের প্রধান। কারণ ভাত আমাদের প্রধান খাদ্য। সারা বিশ্বের প্রায় অর্ধেক জনসংখ্যাই খাদ্য হিসেবে ভাত গ্রহণ করে। বাংলাদেশে মোট আবাদি জমির প্রায় ৮০% জমিতেই ধান চাষ করা হয়। ধান প্রধানত শর্করা জাতীয় খাবারের চাহিদা মিটিয়ে থাকে। তবে এতে ৮% আমিষও রয়েছে। বাচ্চা থেকে শুরু করে সব বয়সের মানুষ নিরাপদে এ খাবার খেতে পারে।
  • মসুর, ছোলা, মুগ, অড়হর, মটর, মাসকালাই ইত্যাদি ডালজাতীয় ফসল মাঠে চাষ করা হয়। এ ফসলগুলো আমিষ সমৃদ্ধ ও মাংসের তুলনায় সস্তা বিধায় এদেরকে গরীবের মাংস বলা হয়। কৃষি প্রধান বাংলাদেশে ভূমির উর্বরতা রক্ষায় এজাতীয় ফসল অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। নিবিড় শস্য চাষ করলে জমিতে জৈব পদার্থ ধীরে ধীরে হ্রাস পায়। জৈব পদার্থ হলো মাটির প্রাণ। ডালজাতীয় শস্য চাষ করলে মাটিতে প্রচুর পরিমাণ জৈব পদার্থ ও নাইট্রোজেন সার যোগ হয়। এ জাতীয় ফসল মানুষের পুষ্টির পাশাপাশি আমিষ সমৃদ্ধ পশুখাদ্য হিসেবেও ব্যবহৃত হয়।
  • এছাড়া তৈলবীজ ফসল আমাদের স্নেহজাতীয় পদার্থের যোগান দিয়ে থাকে। আঁশজাতীয় ফসল চাষ করে আমরা আমাদের দৈনন্দিন অনেক চাহিদাই মিটিয়ে থাকি।
  • কিছু আঁশ ফসল আছে যেগুলো রপ্তানি করে অনেক বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হয়।

মোদ্দা কথা ফসলের চাষাবাদ খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করে এবং পুষ্টিহীনতা দূর করতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখে। মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর পুষ্টির যোগান দিতে এদের অবদান অনস্বীকার্য।


প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফসল কি, অর্থকরী ফসল কাকে বলে, ফসল কত প্রকার ও কি কি, মাঠ ফসলের শ্রেণীবিভাগ, প্রধান ২০টি ফসলের নাম, ফসল চাষের গুরুত্ব প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

কৃষিজ উৎপাদন বলতে বিভিন্ন ধরনের মাঠ ও উদ্যান ফসল ঔষধি গাছপালা, গৃহপালিত পশুপাখি মাছ ইত্যাদির চাষ বা উৎপাদনকে বুঝানো হয়ে থাকে। আদিকালে মানুষ বিভিন্ন ধরণের উদ্ভিদকে খাবার হিসেবে গ্রহণ করলেও পরবর্তীতে তারা জানতে পারল যে, একেক উদ্ভিদ থেকে একেক ধরনের দ্রব্য উৎপন্ন হয়।

মাঠে সমষ্টিগতভাবে চাষ করা হয় এবং যাদের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে এমন ফসলকে মাঠ ফসল বলে। আবার বাগান ফসল যেখানে প্রতিটি গাছকে আলাদাভাবে যত্ম নেবার প্রয়োজন হয়, তাদেরকে উদ্যান ফসল বলা হয়।

মানুষের জীবনকে সুস্থ, সচল, সবল, কর্মক্ষম ও দেহের বৃদ্ধিসাধনের জন্য উদ্ভিদজাত খাবার অপরিহার্য।

দিনে দিনে জন্যসংখ্যা অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। যার ফলে পুরনো দিনের পদ্ধতি দ্বারা উৎপাদিত ফসল মানুষের চাহিদা মেটাতে পারছে না। এজন্য কৃষিবিজ্ঞানীগণ নতুন নতুন কৃষি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন। উদ্ভাবিত এসব কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ করে বিভিন্ন ফসলের ফলন আগের চেয়ে বহুগুণ বাড়ানো সম্ভব হয়েছে।

যাই হোক আজকের মত আলোচনা এখানেই শেষ করছি। আমাদের এই কৃষি বিষয়ক ওয়েবসাইটটিতে সকল প্রকার ফসলের পরিচিতি ও গুরুত্ব, ধান, পাট, সরিষা ও মাস কালাই এর চাষ সম্পর্কে আলোচনা রয়েছে এবং প্রতিনিয়ত নতুন নতুন টপিককে আলোচনা যুক্ত হচ্ছে। আশা করি কৃষি বিষয়ক যেকোন বিষয়ে জানতে আমাদের এই ওয়েবসাইটির কথা স্মরণে রাখবেন। শেষ অবধি সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

ইন বাংলা নেট কৃষি

পশু-পাখি পালন ও চাষাবাদ সম্পর্কিত যা কিছু বাংলাতে।View Author posts