Skip to content

 

ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ

ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ

ফার্টিগেশন সেচ বাংলাদেশের জন্য নতুন একটি সেচ প্রযুক্তি যার চাহিদা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইহা এমন একটি সেচ প্রযুক্তি যার মাধ্যমে পানিতে দ্রবণীয় সার যেমন: ইউরিয়া, পটাশ ইত্যাদি পানির সাথে মিশিয়ে সরাসরি গাছের শিকড় অঞ্চলে অল্প অল্প করে প্রয়োগ করা যায়।

সেচের সময় সার ও পানি একই সঙ্গে প্রয়োগ করা হয় এবং নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসলের গোড়ায় প্রয়োগের ফলে প্রয়োগকৃত সার এবং পানির প্রায় সবটুকুই উদ্ভিদ গ্রহণ করে। ফলে অব্যবহৃত সার চুঁইয়ে ভৃ-উপরিস্থ বা ভূ-গর্ভস্থ পানি দূষিত করে না।

স্ট্রবেরি অত্যন্ত আকর্ষণীয় বর্ণ, গন্ধ, স্বাদ ও উচ্চ পুষ্টিমানের জন্য অত্যন্ত সমাদৃত ফল। স্ট্রবেরি শীত প্রধান দেশের ফল হলেও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে উন্নত চাষ পদ্ধতির মাধ্যমে স্ট্রবেরির চাষ খুবই লাভজনক।

ফসল উৎপাদনে স্ট্রবেরি চাষের ক্ষেত্রে সেচ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিমিত পানি বা অতিরিক্ত মাটির রসের কারণে আশানুরূপ ফসল পাওয়া যায় না। তাই নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে চাষ করলে আশানুরূপ ফলন যেমন পাওয়া যায় তেমনি অধিক মুনাফা অর্জন সম্ভব।

নিম্নে স্ট্রবেরি চাষে ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতির ব্যবহার তুলে ধরা হলো-

ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ
ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষ

চারা রোপণের সময় ও পদ্ধতি:

বাংলাদেশের আবহাওয়ায় আশ্বিন মাস (মধ্য সেপ্টেম্বর-মধ্য অক্টোবর) পর্যন্ত স্ট্রবেরি চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। তবে নভেম্বর মাসেও চারা রোপণ করা যায়। স্ট্রবেরি উৎপাদনের জন্য কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।

ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে চারা রোপণের জন্য বেড পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। এজন্য ১ মিটার প্রশস্ত এবং ১৫-২০ সেমি উঁচু বেড তৈরি করতে হবে। দুইটি বেডের মাঝে ৪০-৫০ সেমি নালা রাখতে হবে। প্রতি বেডে ৫০ সেমি দূরত্বে সারিতে ৩০-৪০ সেমি দূরে দূরে চারা রোপণ করতে হবে।

সারের মাত্রা ও ব্যবহার:

গুণগত মানসম্পন্ন উচ্চফলন পেতে হলে স্ট্রবেরির জমিতে (ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতির ক্ষেত্রে) হেক্টর প্রতি নিম্নলিখিত পরিমাণ সার প্রয়োগ করতে হবে।

See also  পেঁয়াজের বীজ উৎপাদনে সেচ ও মাল্চ প্রযুক্তির ব্যবহার
সারের প্রকারহেক্টর প্রতি সারের প্রয়োজনীয়তা
ইউরিয়া১৬০-১৮০ কেজি
টিএসপি২০০ কেজি
এমওপি১৫০ কেজি
জিপসাম১৪০ কেজি
বরিক এসিড১২ কেজি
জিঙ্ক সালফেট৮ কেজি
পঁচা গোবর৫ টন

শেষ চাষের সময় সম্পূর্ণ গোবর, টিএসপি, জিপসাম, বরিক এসিড ও জিঙ্ক সালফেট সার জমিতে ছিটিয়ে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১৫-২০ দিন অন্তর ৪-৫ কিস্তিতে সেচের পানির সাথে মিশিয়ে ড্রিপ সেচের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।

সেচ প্রয়োগ/পদ্ধতি:

  • ফার্টিগেশন সেচ একটি নতুন সেচ প্রযুক্তি যার মাধ্যমে পানিতে দ্রবণীয় সার যেমন-ইউরিয়া, পটাশ ইত্যাদি পানির সাথে মিশিয়ে সরাসরি গাছের শিকড় অঞ্চলে ধীরে ধীরে ফোটা ফোটা করে প্রয়োগ করা হয়।
  • ইহা এমন একটি সেচ পদ্ধতি যা পানির ট্যাংক, ভাল্ব, ছাকনি, টি, মেইন লাইন, সাব-লাইন, জয়েন্টার, কানেক্টর এবং ড্রিপার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে গাছের শিকড় অঞ্চলে পানি প্রয়োগ করা হয়।
  • সাধারণত প্রতি ১৪০ লিটার পানিতে ১ কেজি সার মিশিয়ে ফার্টিগেশন পদ্ধতিতে প্রয়োজনীয় সার ও পানি নিয়মিত সেচের মাধ্যমে গাছের শিকড় অঞ্চলে প্রয়োগ করতে হয়।
  • ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার চারা রোপণের ১৫ দিন পর থেকে ১৫-২০ দিন পরপর ৪-৫ কিস্তিতে পানির সাথে মিশিয়ে ড্রিপ সেচের মাধ্যমে প্রয়োগ করতে হবে।
  • এই পদ্ধতিতে প্রতি ২-৩ দিন অন্তর অন্তর ড্রিপ পদ্ধতিতে অল্প পানি সেচ প্রয়োগ করতে হয়।
  • ভূ-উপরিস্থ পানির বাষ্পায়ন রোধে এবং ফলের গুণগতমান সংরক্ষণে ধানের খড় বা প্লাস্টিকের মালচ্ ব্যবহার করতে হবে।
  • বর্তমানে ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতির যাবতীয় উপকরণ স্থানীয়ভাবে তৈরি করা সম্ভব।
  • স্ট্রবেরি জলাবদ্ধতা মোটেই সহ্য করতে পারে না। তাই বৃষ্টির অতিরিক্ত পানি দ্রুত নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • সেচের পানি বাষ্পায়ন জনিত অপচয় রোধকল্পে ফসলের জমিতে সেচ সাধারণত সকালে অথবা বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। তাছাড়া প্রচ- তাপমাত্রার রৌদ্রের সময় যাতে ফসলের জমিতে সেচ না দেওয়া হয় সেদিকে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত।
See also  সেচ কি/সেচ কাকে বলে? সেচের পানির মূল উৎস কোনটি?

সেচ প্রয়োগে ফলনের প্রভাব:

  • নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে ফসলের গোড়ায় পানি প্রয়োগের ফলে প্রয়োগকৃত সারের প্রায় সবটুকুই গাছ গ্রহণ করে।
  • ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতি প্রচলিত পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ৫০-৫৫ ভাগ ইউরিয়া এবং ২৫ ভাগ পটাশ কম লাগে।
  • এই পদ্ধতিতে প্রচলিত ফারো বা প্লাবন সেচ পদ্ধতির চেয়ে শতকরা ৪৫-৪৮ ভাগ সেচের পানির কম লাগে।
  • ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরির ফলন ৯-১২ টন পর্যন্ত পাওয়া সম্ভব।
  • ফার্টিগেশন সেচ পদ্ধতিতে স্ট্রবেরি চাষের আয়-ব্যয়ের অনুপাত ৬:১ এবং প্রতি হেক্টর জমিতে নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে
  • স্ট্রবেরি চাষ করে নীট মুনাফা ১৫-১৮ লক্ষ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ) অর্জন সম্ভব।
  • প্রতি ১০ (দশ) শতক জমিতে ফসলের জন্য এই পদ্ধতিতে সেচের খরচ হয় মৌসুমে মাত্র ১,২০০-১,৫০০ টাকা (২০২৩ খ্রিঃ)।

অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা ও ফল সংগ্রহ:

  1. স্ট্রবেরি সরাসরি মাটির সংস্পর্শে এলে পঁচে নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য চারা রোপণের ১৫-২০ দিন পর স্ট্রবেরি বেড খড় বা কালো পলিথিন দিয়ে ঢেকে দিতে হবে। খড়ে যাতে পোকার আক্রমণ না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
  2. ব্যবহারের পূর্বে প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিমি ডার্সবান ২০ ইসি ও ৩ গ্রাম ব্যভিস্টিন ডি এম মিশিয়ে খড়ে স্প্রে করে শোধন করে নিতে হবে।
  3. স্ট্রবেরি জমি সব সময় আগাছামুক্ত রাখতে হবে।
  4. গাছের গোড়া হতে নিয়মিত রানার বের হয় যা ১০-১৫ দিন পর পর কেটে ফেলতে হবে। রানার না কাটলে গাছের ফুল ও ফল উৎপাদন হ্রাস পায়।
  5. স্ট্রবেরির ফলন পৌষ মাস হতে শুরু হয়ে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে। ফল পেকে লাল বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়।
  6. স্ট্রবেরির সংরক্ষণকাল খুবই কম বিধায় ফল সংগ্রহের পর গাদাগাদি অবস্থায় না রেখে প্লাস্টিকের ঝুড়ি বা ডিমের ট্রেতে সংরক্ষণ করে যত দ্রুত সম্ভব বাজারজাত করতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page