আমরা খাদ্যে শস্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করলেও পুষ্টির চাহিদা পূরণে ফল চাষ উৎপাদনের দিকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিভিন্ন প্রকার খনিজ ও ভিটামিনে সর্বোৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে ফল। ফলজাত সামগ্রী উৎপাদনের জন্য নতুন নতুন শিল্প কারখানা স্থাপিত হচ্ছে যা মানুষের কর্মসংস্থানে ও আয় বৃদ্ধিতে বিশেষ ভূমিকা রাখছে। এছাড়াও চিকিৎসাশাস্ত্রে, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে সামাজিক কর্মকান্ডে ফল ব্যবহার হয়।
পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে জন প্রতি ১১৫ থেকে ১২৫ গ্রাম ফল খাওয়া প্রয়োজন, কিন্তু আমরা খেতে পারছি মাত্র ৪০ থেকে ৪৫ গ্রাম। বিদেশী ফলের আমদানি কমিয়ে আমাদের প্রচলিত অপ্রচলিত সব ধরনের ফলের উৎপাদন বাড়াতে হবে।
আবার ফুল বা সুদৃশ্য গাছগুলো মানসিক আনন্দ দানের একটি অন্যতম উপাদান। কতগুলো ফুলে সৌন্দর্য মানুষকে চিত্তের আনন্দ দেয় আবার কতগুলো ফুলের গন্ধ খুবই মনোমুগ্ধকর। গৃহ, প্রতিষ্ঠান, স্কুল, কলেজ ও মসজিদ প্রাঙ্গনে এ ফুল ও সুদৃশ্য গাছ শোভা বর্ধন করে। বর্তমানে বাংলাদেশে ফুল ও সৃদৃশ্য গাছের বাণিজ্যিক উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে।
সুগন্ধিযুক্ত গাছ বা গাছের অংশবিশেষ এবং গাছ কর্তক উৎপাদিত বস্তুকে মসলা বলে। আমাদের দেশের প্রধান মসলাগুলো হলো পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ, হলুদ, আদা, তেজপাতা, ধনিয়া, জিরা ইত্যাদি।
এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- ফলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। ফুলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন। মসলার পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(১) ফলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব
ক) ফলের পরিচিতি
প্রকৃত ফল: নিষিক্ত হওয়ার পরে ফুলের গর্ভাশয় অংশ বিশেষ পরিপুষ্ট, পরিবর্ধিত ও বিকশিত হয়ে ফলে পরিণত হয়। অর্থ্যাৎ এক কথায় নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয়ই ফল। উদ্ভিদ বিজ্ঞানে এগুলো প্রকৃত ফল বলে।
অপ্রকৃত ফল: সব সময় আবার নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয় থেকে ফল উৎপন্ন হয় না। নিষেক ছাড়া গর্ভাশয় বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্থ্যাৎ পার্থেনোজেনিটিকভাবে বা ডিম্বক সরাসরি ফলে পরিণত হয়। এসব ফলে বীজ থাকে না। যেমন- গর্ভাশয় ছাড়াও সম্পূর্ণ পুষ্পমঞ্জুরী ফলে রূপান্তরিত হতে পারে এগুলোকে অপ্রকৃত ফল বলে।
উদ্যানতাত্বিক ফল: আমরা বলতে পারি প্রকৃত বা অপ্রকৃত ফল পরিণত বা পাকা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া হয় তাদেরকে উদ্যানতাত্বিক ফল বলে।
পোমোলজি: উদ্যানতত্বের যে শাখায় ফল, নিয়ে আলোচনা করে তাকে ফল বিজ্ঞান বা পোমোলজি (Pomology) বলে।
খ) ফলের শ্রেণীবিন্যাস
ফলকে বিভিন্নভাবে শ্রেণীবিন্যাস করা যায় তা নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
i) জীবন কালের উপর ভিত্তি করে ফল ২ প্রকার। যথা-
- স্বল্পমেয়াদী ফল: কলা, পেঁপে, আনারস।
- দীর্ঘমেয়াদী ফল: আম, কাঠাল, জাম, লিচু।
ii) উৎপত্তি বা উৎস অনুসারে ফল ২ প্রকার। যথা-
- প্রকৃত ফল: আম, জাম, লিচু, পেঁপে।
- অপ্রকৃত ফল: আপেল, নাশপাতি, চালতা।
iii) পুষ্পপঞ্চমঞ্জুরীর ভূমিকার উপর ভিত্তি করে ফল ২ প্রকার। যথা-
- সরল ফল: যখন একটি ফুলের একটি অথবা অনেকগুলি যুক্ত গর্ভপত্র বিশিষ্ট গর্ভাশয় ফলে পরিণত হয়। যেমন- আম, জাম।
- গুচ্ছ ফল: যখন বহু যুক্তহীন গর্ভপত্র বিশিষ্ট ফুলের প্রতিটি গর্ভপত্র পৃথক ফলে পরিণত হয় যা একক ফলগুলো গুচ্ছাকারে থাকে। যেমন-আতা, শরীফা।
iv) পরাগায়নের ভিত্তিতে ফল ৩ প্রকার। যথা-
- স্ব-পরাগী ফল: পেয়ারা, ডুমুর, আঙ্গুর, আমলকী
- পর-পরাগী ফল: আম, জাম, লিচু, পেঁপে
- স্ব ও পরপরাগী ফল: কাঁঠাল, লেবু জাতীয় ফল ইত্যাদি।
v) জলবায়ুর চাহিদার উপর ভিত্তি করে ফল ৩ প্রকার। যথা-
- উষ্ণ মন্ডলীয় ফল: খেজুর, অ্যাভে কেডো, কলা, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি।
- অবউষ্ণম-লীয় ফল: পেয়ারা,ডালিম, কুল, কলা, জলপাই
- শীতম-লীয় ফল: স্ট্রবেরী, পীচ, আঙ্গুর, আপেল।
গ) ফলের গুরুত্ব
মানুষের খাদ্য তালিকায় ফল একটি উল্লেখযোগ্য স্থান দখল করে আছে ফল যেহেতু রান্না করে খাওয়া হয় না বলে সমস্ত পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ গ্রহণ করে। খাদ্য হিসেবেই নয়, জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে, চিকিৎসা শাস্ত্রে, সামাজিক কর্মকান্ডে ইত্যাদিতে ফল বিভিন্নভাবে অবদান রাখছে।
ফল চাষের গুরুত্ব সংক্ষেপে আলোচনা করা হলো-
i) পুষ্টি সরবরাহে ফলের অবদান
সব ফলেই সব ধরণের পুষ্টি উপাদান কমবেশি আছে। বিশেষ করে ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এবং সর্বোৎকৃষ্ট উৎস হলো ফল।
কোন ফলে কি পরিমাণ পুষ্টি উপাদান অধিক রয়েছে তা থাকে তা বর্ণনা করা হলো-
- শর্করা: কিসমিস, খেজুর, আম, কলা, বেল, কাঁঠাল ইত্যাদি।
- চর্বি: কাজু বাদাম, অ্যাভেকেডো, বাদাম, কাঠাল বীজ ইত্যাদি।
- খনিজ লবণ: খেজুর, কলা, লিচু, বেল, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
- ভিটামিন: ভিটামিন এ-পাকা আম, পাকা পেঁপে, কাঁঠাল, কমলা খেজুর, ভিটামিন বি-১ (থায়ামিন)-কলা, কাজুবাদাম ইত্যাদি।
- ভিটামিন বি-২: বেল, পেপে, লিচু, আনার ডালিম। ভিটামিন সি-আমলকী, পেয়ারা, কমলা, লেবু ও আনারস ইত্যাদি।
- পানি: তরমুজ, নারিকেল, আনারস ইত্যাদি।
ii) উৎপাদন বৃদ্ধিতে ফলের অবদান
দানাজাতীয় খাদ্য শস্যের গড় ফলনে চেয়ে ফলের গড় ফলন অনেক বেশি হয় ফলে কৃষক একক জায়গা থেকে লাভবান হয়।
iii) ফল চাষে পতিত জমি ব্যবহার
অনেক পতিত জমি, বসতবাড়ির আশে পাশে, পুকুর পাড়ে, রাস্তার পাশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সংলগ্ন জমি যেখানে মাঠ ফসল জন্মানো সম্ভব হয় না এই সব জমি বা জায়গায় সঠিক ব্যবহার শুধু ফল গাছ লাগিয়ে সম্ভব।
iv) আয় বৃদ্ধিতে ফলের অবদান
দানা জাতীয় শস্য অপেক্ষা ফলের গড় ফলন বেশি তেমনি ফলের দাম ও অনেক বেশি। ফল চাষে কৃষক খাদ্য শস্যের চেয়ে ফল চাষে অনেক বেশি আয় করতে পারে। ফল বাগানে আন্তঃশস্য যেমন-আদা, হলুদ চাষ করে বাড়তি আয় করতে পারে।
v) ঔষধ হিসেবে ফলে অবদান
বিভিন্ন প্রকার ফল ঔষধ হিসেবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যেমন: পেটের পীড়ায় বেল ও পেপে খেতে বলা হয়। ত্রিফলা (আমলকি, হরিতকি ও বয়রা) বিভিন্ন রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। ফল ছাড়াও গাছের বিভিন্ন অংশ যেমন: ছাল, পাতা, মুল ঔষধি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
vi) নতুন শিল্প স্থাপন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ফলের অবদান
বিভিন্ন ফল ও ফলজাত দ্রব্যের উপাদানের জন্য নতুন শিল্প স্থাপনের মাধ্যমে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা সম্ভব। ফলের বাণিজ্যিক নার্সারী স্থাপনের মাধ্যমে স্বচ্ছলতা আনা সম্ভব। দেশে ফলের রস, আচার, স্কোয়াশ, জ্যাম, জেলি ইত্যাদির জন্য নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান করলে বিদেশ থেকে এসব আমদানি করতে হবে না। এর ফলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অপচয় থেকে রক্ষা করা সম্ভব। এছাড়া বয়স্ক ফল গাছের কাঠ থেকে আসবাবপত্র তৈরি এবং ডালপালা জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হয়।
vii) জাতীয় অর্থনীতিতে ফলের অবদান
ফলের উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব। বিদেশ থেকে ফল ও ফলজাত আমদানী করতে অর্থের প্রয়োজন হয়। যেখানে ফল ও ফলজাত দ্রব্য বাংলাদেশে উৎপন্ন হলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।
viii) পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় ফলের অবদান
ফল গাছ রাস্তার দুধারে মাটি ক্ষয় রোধ করে, ছায়া প্রদান করে অতিবৃষ্টি ও ঝড়ের তীব্রতা কমায় ফলে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে।
(২) ফুলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব
ক) ফুলের পরিচিতি
ফুলজাতীয় ফসল: উদ্যানতত্ত্ব ফসলের মধ্যে যে সব ফসল শুধু ফুলের জন্য চাষ করা হয় তাকে ফুলজাতীয় ফসল বলে।
ফ্লোরিকালটার: ফুল ও সুদৃশ্য গাছপালা উৎপাদনের কলাকৌশল পুস্পোদ্যান বিদ্যা বা Floriculture নামে অভিহিত।
খ) ফুলের শ্রেণীবিন্যাস
ফুল ও সুদৃশ্য গাছপালা কে মূলত দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। যথা- বর্ষজীবী (একবর্ষজীবী) এবং দীর্ঘজীবী (বহুবর্ষ জীবী)।
i) বর্ষজীবী ফুল
বর্ষজীবী জাতের ফুল কোন বিশেষ ঋতুতে বা সময়ে জন্মে এবং ফুল দেয়ার পর মরে যায় সেগুলোকে মৌসুমী ফুল বলে।
বর্ষজীবী জাতের ফুলকে ৩ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- শীতকালীন ফুল: বাংলাদেশে মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য এপ্রিল পর্যন্ত ফুল ফুটে যেমন ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গাঁদা, কসমস, পপি পিটুনিয়া, লুপিন, ডায়ান্থাস।
- গ্রীস্মকালীন ফুল: এসব ফুল মধ্য এপ্রিল থেকে মধ্য অক্টোবর পর্যন্ত ফুল ফুটে যেমন: দোপাটি, বোতাম ফুল, মোরগফুল, সূর্যমুখী ইত্যাদি।
- বারোমাসী ফুল: সেব ফুল শীত অথবা গ্রীষ্ম যে কোন সময়ে জন্মে তাকে উভয় মৌসুমের ফুল বলে। যেমন: সূর্যমুখী, জিনিয়া ইত্যাদি। আবার লিলি জাতীয় ফুল রয়েছে যেমন- কলাবতী, দোলনচাপা, উলটচন্ডাল, ডে লিলি, অ্যাসপারাগাস ইত্যাদি।
ii) বহুবর্ষজীবী ফুল
বহুবর্ষজীবী ফুল ও সুদৃশ্য গাছ একের অধিক বছর বেঁচে থাকে।
বহুবর্ষজীবী ফুলকে ৬ ভাগে ভাগ করা হয়। যথা-
- লতা জাতীয়: অপরাজিতা, বাগানবিলাস, ঝুমকোলতা, মাধবীলতা।
- ঝোপ জাতীয় গাছ: গোলাপ, বেলী, যুই, গন্ধরাজ, মল্লিকা, মুসান্ডা।
- বৃক্ষ জাতীয় গাছ: চাপা, নাগেশ্বর চাপা, কৃষ্ণচুড়া, বকফুল, জারুল, সোনালু, কাঞ্চন, ঝাউ, পাম, থুজা ইত্যাদি।
- ক্যাকটাস: বিভিন্ন ধরনের জাত ও প্রজাতি।
- অর্কিড: ডেন্ডোবিয়াম, এপিডেন্ড্রাম, সিমবিডিয়াম গণের অর্কিড।
- ফার্ণ: মেইডেন হেয়ার ফার্ণ, স্ট্যাগনট হর্ণ, হেমিওনিটিস।
আবার অনেক জলজ উদ্ভিদ রয়েছে, যেমন- শাপলা, পানশূল বাগানের সৌন্দর্য বর্ধন করে।
গ) ফুলের গুরুত্ব
ফুল এর সৌন্দর্য ও সুগন্ধ মানুষের চিত্তের তৃপ্তিদানের অতি উৎকৃষ্ট উপাদান। পরিবেশ সৌন্দর্য বর্ধনে অনেক সুদৃশ্য গাছপালা বাগানে থাকলে তা সমাজের মানুষের আনন্দ দান করে। বিভিন্ন ধরনের সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ফুল ব্যবহার হয়ে আসছে। যেমন- জন্মদিনে, বিবাহে, অভ্যর্থনায়, শ্রদ্ধাঞ্জলিতে, বিদায়, টেবিল ও গৃহসজ্জায় প্রধান উপকরণ ফুল।
ফুলদানিতে নিয়মিত টাটকা ফুল সাজিয়ে রাখা ব্যক্তির রুচিবোধের পরিচায়ক। জাপানীদের ফুলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। জাপানে পুষ্পসজ্জা শিল্প হয়ে দাড়িয়েছে। এছাড়া বাড়ির সামনে ও স্কুল কলেজ প্রতিষ্ঠান প্রাঙ্গনে ফুল বাগান জন সাধারণের মনঃতুষ্টি ও পরিবেশ উন্নয়নের একটি উল্লেখযোগ্য উপকরণ।
ফুল শুধু মনের আনন্দ দেয় না, ফুল থেকে মৌমাছি অমূল্য সম্পদ মধু সংগ্রহ করে। নানাবিধ সুগন্ধযুক্ত ফুলের নির্যাস থেকে পারফিউম, সেন্ট, আতর ইত্যাদি তৈরি হয়। অনেক উন্নত দেশে ফুল ও সুদৃশ্য গাছের বাণিজ্যিক ভিত্তিতে উৎপাদন করে অর্থনৈতিকভাবে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।
(৩) মসলার পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব
ক) মসলার পরিচিতি
মসলাজাতীয় ফসল: খাদ্যদ্রব্যকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করার জন্য যেসব ফসল ব্যবহৃত হয়ে থাকে সেগুলোকে মসলাজাতীয় ফসল বলে। যেমন- আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, ইত্যাদি।
বাংলাদেশে কমপক্ষে ২৫ ধরণের মসলা ফসলের চাষ হয়। এর মধ্যে আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন, মরিচ ও ধনিয়াকে প্রধান ও অন্যান্য মসলা ফসলকে অপ্রধান হিসেবে গণ্য করা হয়।
মসলার পুষ্টিমান ও ঔষধি গুণ অনন্য। খাদ্যকে সুস্বাদু করা ছাড়াও খাদ্য সংরক্ষণ ও এর গুণাগুণ রক্ষার্থে ব্যাপকভাবে মসলা ব্যবহৃত হয়।
খ) মসলার শ্রেণীবিন্যাস
মসলা প্রধানত ২ প্রকার হয়ে থাকে। যেমন-
- সাধারন মসলা: যেমন- মরিচ, আদা, গোলমরিচ, ধনিয়া ইত্যাদি।
- সুগন্ধি মসলা: যেমন- এলাচ, তেজপাতা, জিরা, কালজিরা ইত্যাদি।
গ) মসলার গুরুত্ব
i) মসলা ফসলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব
মসলা চাষ অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক। মসলা চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, গুদাম জাতকরণে অনেক বেকার লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে। বর্তমানে মসলা প্রক্রিয়াজাতকরণ ও প্যাকেট আকারে বাজারজাতকরণ হচ্ছে। সাথে সাথে বিদেশে রপ্তানি বাড়ালে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় সম্ভব হবে।
আমাদের বাংলাদেশে প্রতিবছর মসলা আমদানির জন্য অনেক বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হয়।
মসলা বিভিন্ন ধরনের ঔষধ, খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে, বেকারী ও প্রসাধন শিল্পে ব্যবহার হচ্ছে। এছাড়া বস্ত্রের রং, সুপানীয় ও সুগন্ধি প্রস্তুতিতে মসলা ব্যবহার হয়।
ii) মসলা ফসলের ভেষজ গুরুত্ব
মসলার অনেক ওষুধিগুন রয়েছে। মসলা ঔষধ শিল্পেও ব্যবহার করা হয়। যেমন-
- আদা-সর্দি কাশি, হজম শক্তি বাড়ানো ও বায়ুনাশক হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- হলুদ শরীরে সৌন্দর্যচর্চা, ক্ষত নিরাময় করে।
- রসুন-হৃদরোগ, উচ্চরক্ত চাপ, ব্যাথায় ভালো কাজ করে।
- জিরা-আমাশয় রোগে ব্যবহৃত হয়।
- কালোজিরা-অনেক রোগে কাজ করে।
- পিঁয়াজ-ঠান্ডা কাশিতে চুলে ব্যবহার হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা ফুল, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারফুল, ফল ও মসলা জাতীয় ফসলের পরিচিতি, শ্রেণীবিন্যাস ও গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারলাম।
ফল বলতে নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয়কে বুঝায়। নিষিক্ত পরিপক্ক গর্ভাশয় ছাড়াও বিশেষ প্রক্রিয়ায় অর্থাৎ পার্থোনোজেনিটিকভাবে বা ডিম্বক সরাসরি ফলে পরিণত হয়। এগুলোকে অপ্রকৃত ফল বলে। প্রকৃত বা অপ্রকৃত ফল পরিণত বা পাকা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া হয় তাদেরকে উদ্যানতাত্ত্বিক ফল বলে। ফল যেহেতু রান্না করে খাওয়া হয় না তাই সমস্ত পুষ্টি উপাদান অবিকৃত অবস্থায় দেহ গ্রহণ করে। এছাড়া ঔষধি হিসেবে, সামাজিক কর্মকান্ডে ফল গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে।
উদ্যানতত্ত্ব ফসলের মধ্যে যেসব ফসল শুধু ফুলের জন্য চাষ করা হয় তাকে ফুলজাতীয় ফসল বলে। বর্ষজীবী ফুলকে শীতকালীন, গ্রীষ্মকালীন ও উভয় মৌসুমের এই তিনভাগে ভাগ করা হয়। ফুল চাষের জন্য আমাদের দেশের আবহাওয়া বেশ উপযোগী তাই ফুল চাষ করে উৎপাদিত ফুল বিদেশে রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা যায় এবং আত্মকর্মসংস্থান এর সুযোগ সৃষ্টি হয়।
খাদ্য দ্রব্যকে সুস্বাদু ও মুখরোচক করার জন্য যেসব ফল ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে মসলা জাতীয় ফসল বলে। যেমন-আদা, হলুদ, পিঁয়াজ, রসুন ইত্যাদি। মসলা বিভিন্ন ধরণের ঔষধ, খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে বেকারী, প্রশাধন, পানীয় ও ভেষজ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে।
[তথ্য সূত্র: ওপেন স্কুল]