Skip to content

বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি

বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি

বাঁধাকপি Brassicaceae পরিবরের একটি গুরুত্তপূর্ন পাতা জাতীয় সবজি। বিশ্বের সর্বপ্রধান পাঁচাট সবজির মধ্যে এটি অন্যতম। মানবপুষ্টি ও স্বাস্থের উপকারী দিক থেকে বাঁধাকপির জুড়ি মেলা ভার।

  • সবজিটিতে পানির পরিমাণ ৯৩%, সম্পৃক্ত চর্বি ও খারাপ এলডিএল (LDL) কোলষ্টেরলের পরিমাণ খুবই কম, খাবারউপযোগী আঁশের পরিমান বেশি।
  • সবজিটিতে ভিটামিন ’এ’, ভিটামিন ’সি’, রিবোফ্লাভিন, থায়ামিন, ভিটামিন বি৬, ভিটামিন ’কে’, বায়োটিন, ফলিক এসিড, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ম্যাঙ্গানিজ যথেষ্ট পরিমানে আছে।
  • এতে ক্যান্সার প্রতিরোধী ফাইটোকেমিক্যাল যেমন-গ্লুকোসিনোলেট, ইনডোল-৩-কার্বিনল, সালফোরাফেন, ডাইইনডোল মিথেন ও আইসোথায়োসায়ানেট থাকার কারনে এটা খেলে দেহে যকৃতের ক্যান্সার, প্রস্টেট ক্যান্সার, স্তন ক্যান্সার, ফুসফুস ক্যান্সার ও কোলন ক্যান্সার বাসা বাধতে পারে না।
  • সবজিটিতে পটাসিয়াম ও অন্যান্য প্রধান খনিজ লবনের উপস্থিতি ও আঁশ সমৃদ্ধতার কারনে এটা খেলে মানব দেহের হাড় মজবুত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্যতা দূর হয়, রক্তে কোলেস্টেরোলের পরিমান কমে যায় এবং উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রনে থাকে। বাঁধাকপি অ্যামাইনোএসিড ’গ্লুটামিন’ সমৃদ্ধ। গ্লুটামিন মানব শরীরে পেপটিক আলসার তৈরিতে বাঁধা প্রদান করে।

(১) বাঁধাকপির জাত

ক) বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী)

‘বারি বাঁধাকপি-১’ জাতটি বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয় এবং ১৯৮৫
সালে অনুমোদন করা হয়।

বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী)
বারি বাঁধাকপি-১ (প্রভাতী)
  • জাতটি বাংলাদেশে ফুল ও বীজ উৎপাদনে সক্ষম।
  • বীজ বপনের ১০০-১১০ দিন পরই বাঁধাকপি সংগ্রহের উপযুক্ত হয়।
  • প্রতিটি বাঁধাকপির ওজন ২.০-২.৫ কেজি।
  • এটি একটি বিশুদ্ধ জাত বলে চাষী নিজেরাই বীজ উৎপাদন করতে পারে।
  • প্রভাতী জাত থেকে হেক্টরপ্রতি ৪০০-৫০০ কেজি বীজ উৎপাদন করা যায়।
  • জীবন কাল কপি উৎপাদনে ১০০-১১০ দিন এবং বীজ উৎপাদনে প্রায় ১৮০ দিন
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ৫০-৬০ টন ফলন পাওয়া যায়।
  • দেশের উত্তরাঞ্চলে চাষ করে বীজের ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব।

খ) বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)

এশীয় অঞ্চলের একটি উষ্ণমন্ডলীয় প্রজাতি থেকে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। পরবর্তীকালে ১৯৯৮ সালে তা সারাদেশে চাষের জন্য অনুমোদন করা হয়।

বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)
বারি বাঁধাকপি-২ (অগ্রদূত)
  • বাঁধাকপি গোলাকার, উপর-নিচ চ্যাপ্টা। পাতার পৃষ্ঠদেশে পাতলা মোমের আবরণের মত বস্তু রয়েছে।
  • প্রতিটি বাঁধাকপির ওজন ২.০-২.৫ কেজি।
  • জাতটি বাংলাদেশের জলবায়ুতেই বীজ উৎপাদন করে।
  • বীজ বপন থেকে কপি উৎপাদন পর্যন্ত ১০০-১১০ দিন সময় লাগে।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে হেক্টরপ্রতি ফলন ৫৫-৫৬ টন এবং বীজের ফলন ৫৫০-৬৫০ কেজি পাওয়া যায়।
  • এ জাত বাংলাদেশের সর্বত্র চাষাবাদের উপযোগী।

(২) চীনাকপির জাত

বারি চীনাকপি-১:

বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ১৯৯৬ সালে ‘বারি চীনাকপি-১’ পাতাজাতীয় সবজিটি অনুমোদন করা হয়।

বারি চীনাকপি-১
বারি চীনাকপি-১
  • এ জাত শীতকালে বাধাঁকপির মত শক্ত কপি উৎপাদন করে। গ্রীষ্মকালেও এ জাতটি শাক হিসেবে চাষাবাদ করা যায়। সালাদ হিসেবে এ সবজির যথেষ্ট জনপ্রিয়তা রয়েছে।
  • জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং স্বল্পকালীন সময়ে উৎপাদনযোগ্য। প্রতিটি কপির ওজন ১.০-১.৫ কেজি।
  • কপি কিছুটা লম্বাকৃতির। এ জাতটি বাংলাদেশের আবহাওয়ায় বীজ উৎপাদন করতে পারে।
  • বপনের ৬০-৭০ দিনের মধ্যেই ফসল উঠানো যায়। তবে বীজ উৎপাদনের জন্য ১০৫-১২০ দিন সময় লাগে।
  • রবি মৌসুমে প্রতিটি কপির ওজন ১.০-১.৫ কেজি।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে ফলন প্রতি হেক্টরে ৪০-৪৫ টন সবজি এবং প্রতি হেক্টরে ৫০০-৬০০ কেজি বীজ উৎপাদন করা সম্ভব।
  • বাংলাদেশে প্রায় সব এলাকায় শীতকালে এ সবজির চাষ করা যায়।
  • গ্রীষ্মকালে উঁচু ও সুনিষ্কাশিত জমিতে বেড করে ‘বারি চীনাকপি-১’ এর চাষ করা যায়।

(৩) বাঁধাকপি চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা

ক) জলবায়ু ও মাটি

প্রায় সব ধরনের মাটিতে বাঁধাকপি জন্মানো যায়। তবে দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি উত্তম।

খ) জমি তৈরি ও চারা রোপণ

গভীর চাষ দিয়ে মাটির ঢেলা ভেঙ্গে আগাছা পরিষ্কার করে ভালভাবে বাঁধাকপির জন্য জমি তৈরি করতে হয়।

গ) চারা রোপণ

  • বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর চারা রোপণের উপযুক্ত হয়।
  • উত্তমরূপে জমি তৈরি করার পর ১৫-২০ সেমি উঁচু ১ মিটার প্রশ্বস্ত বেড তৈরি করতে হয়।
  • পাশাপাশি ২টি বেডের মাঝখানে ৩০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।
  • বেডের উপর ৬০ সেমি দূরত্বে ২টি সারি করে সারিতে ৪৫ সেমি দূরে দূরে চারা লাগাতে হয়।

ঘ) বপনের সময়

  • ভাদ্র-আশ্বিন (মধ্য-আগস্ট থেকে মধ্য-অক্টোবর) থেকে শুরু করে কার্তিক (মধ্য-অক্টোবর থেকে মধ্য-নভেম্বর) পর্যন্ত বারি বাঁধাকপির চারা রোপণ করা যেতে পারে।
  • অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) রোপণ করলে মাথা তেমন বাঁধে না ও অকালে ফুল এসে যায়।

ঙ) সারের পরিমাণ

বাঁধাকপির জমিতে নিম্নরূপ হারে সার প্রয়োগ করতে হয়।

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া৩০০-৩৫০ কেজি
টিএসপি২০০-২৫০ কেজি
এমওপি২৫০-৩০০ কেজি
গোবর৫-১০ টন

ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

  • শেষ চাষের সময় সবটুকু গোবর বা কম্পোস্ট, টিএসপি ও ১০০ কেজি এমপি সার জমিতে সমানভাবে ছিটিয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  • সম্পূর্ণ ইউরিয়া ও বাকি এমপি সার ৩ কিস্তিতে চারা রোপণের ১০, ২৫ এবং মাথা বাঁধার সময় প্রয়োগ করতে হবে।

চ) পানি সেচ

উচ্চ ফলনের জন্য বাঁধাকপিতে চারা রোপণের ২০-৩০ দিন পর পর ২-৩টি সেচ দিতে হবে।

(৪) হরমোন (বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্য) ব্যবহার করে বাঁধাকপি চাষের পদ্ধতি

বাঁধাকপি (বৃদ্ধি পর্যায়)
বাঁধাকপি (বৃদ্ধি পর্যায়)
চারা লাগানোর ৪৫ দিন পর ২য় বার GA3 ৩ স্প্রে করা হচ্ছে
চারা লাগানোর ৪৫ দিন পর ২য় বার GA3 ৩ স্প্রে করা হচ্ছে
হরমোন স্প্রে ব্যাতিত বাঁধাকপি (কন্ট্রোল)
হরমোন স্প্রে ব্যাতিত বাঁধাকপি (কন্ট্রোল)
৫০ পিপিএম GA3 স্প্রেকৃত বাঁধাকপি
৫০ পিপিএম GA3 স্প্রেকৃত বাঁধাকপি
৭৫ পিপিএম GA3 স্প্রেকৃত বাঁধাকপি
৭৫ পিপিএম GA3 স্প্রেকৃত বাঁধাকপি
বিষয়বিবরণ
ফসল:বাঁধাকপি (হরমোন বা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে চাষ)।
জাত:অ্যাটলাস-৭০, কেকে-ক্রস, কেওয়াই-ক্রস, কৃষিবিদ বাইব্রিড-১।
বীজ বপনের সময়:অ্যাটলাস-৭০, কেকে-ক্রস, কেওয়াই-ক্রস, কৃষিবিদ বাইব্রিড-১।
চারা রোপনের সময়:নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ।
রোপন পদ্ধতি:সাধারণত ৩০-৩৫ দিনের চারা ৬০ সেমি × ৪০ সেমি দূরত্বে রোপন করতে হয়।
প্রয়োগকৃত হরমোনের মাত্রা:জিবারেলিক এসিড ৫০-৭৫ পিপিএম ; ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড ৬০ পিপিএম।
হরমোন প্রয়োগ পদ্ধতি:চারা লাগানোর ২৫ দিন পরে একবার এবং প্রথম স্প্রে করার ২০ দিন পরে অরেকবার জিবারেলিক এসিড বা ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড নির্দিষ্ট মাত্রায় প্রয়োগ করতে হয়। জিবারেলিক এসিড বা ন্যাপথ্যালিন এসিটিক এসিড-এর দ্রবলের মধ্যে টুইন-২০ বা ট্রিক্স ০.০৫% হারে মিশিয়ে নিলে দ্রবণের পাতায় হরমোন লেগে থাকার সক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
সারের মাত্রা/হেক্টর:১। ইউরিয়া = ৩০০ কেজি;
২। টিএসপি = ২০০ কেজি;
৩। এমওপি = ২৫০ কেজি;
৪। জিপসাম = ১৫০ কেজি;
৫। বরিক এসিড = ১০ কেজি;
৬। জিংকসালফেট = ১২ কেজি;
৭। গোবর/কম্পোস্ট = ৫ টন;
সার প্রয়োগ পদ্ধতি:জমি তৈরির সময় অর্ধেক গোবর/ কম্পোস্ট, সমুদয় টিএসপি, জিপসাম, বরিক এসিড ও সমুদয় জিংক সালফেট সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক গোবর/ কম্পোস্ট চারা রোপণের ১ সপ্তাহ পূর্বে মাদায় দিয়ে মিশিয়ে রাখতে হবে। এরপর চারা রোপণ করে চারার গোড়ায় পানি দিতে হবে। ইউরিয়া ও এমওপি সার সমান ২ কিস্তিতে উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর ১৫ দিন পর ১ম কিস্তি এবং তার এক মাস পর ২য় কিস্তি উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
অন্যান্য অন্তবর্তীকলিীন পরিচর্যা:আগাছা পরিষ্কার করতে হবে। জমির প্রয়োজন অনুসারে সেচ প্রয়োগ করতে হবে। চারা লাগানোর পর চারার পোড়ায় ঝাঝরি দিয়ে বেশ কয়েকদিন পানি দিতে হবে। চারা মাটিতে সেট না হওয়া পর্যন্ত এভাবে পানি দিতে হবে। বাঁধাকপিতে শুস্ক মৌসুমে ঘন ঘন সেচ দিতে হয়। মাটির প্রকৃতিভেদে ৫-৬ টি প্লাবন সেচের প্রয়োজন হয়।
প্রযুক্তি ব্যবহারে সম্ভাব্য ফলন:৮০-৮৫ টন/হেক্টর। হরমোন প্রয়োগের ফলে হেক্টর প্রতি ১৫-২০% বেশী ফলন পাওয়া সম্ভব।
ফসল সংগ্রহ:চারা রোপণের ৭০-৮৫ দিন পর মাথা দৃঢ় হয়ে আসলে কপি সংগ্রহ করা যায়। কোনো কোনো জাতের মাথা পরিণত হওয়ার সময় ফেটে যায়। এসব জাত সংগ্রহে দেরী করা উচিৎ নয়।
খরচ ও নিট মুনাফা:সাল ২০২৩ এর হিসাব অনুযায়ী, প্রতি হেক্টরে প্রায় ১.৩০ থেকে ১.৩৫ লক্ষ টাকা খরচ করে নিট মুনাফা প্রায় ৩.০ থেকে ৪.০ লক্ষ টাকা আয় করা যায়। হেক্টর প্রতি বৃদ্ধিনিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্যের জন্য খরচ হয় ৮০০০.০০ থেকে ৯০০০.০ টাকা। প্রতি শতাংশে বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রক রাসায়নিক দ্রব্যসহ ৫০০.০০ থেকে ৬০০.০০ টাকা খরচ করে ১২০০.০০ থেকে ১৫০০.০০ টাকা আয় করা সম্ভব।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts