Skip to content

 

বাংলাদেশের ফসল মৌসুম কত প্রকার ও কি কি? খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম কি/কোনটি? রবিশস্য ও খরিপ শস্যের মধ্যে পার্থক্য

বাংলাদেশের ফসল মৌসুম কত প্রকার ও কি কি, খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম কি, কোনটি, রবিশস্য ও খরিপ

শস্য উৎপাদন প্রাকৃতিক শক্তির প্রভাব ছাড়াও শস্য মৌসুম দ্বারা বিশেষভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত বিশেষ বিশেষ ফসলের জন্য বিশেষ বিশেষ মৌসুম উপযোগী।

এই পোষ্ট শেষ অবধি পড়লে আপনি- বাংলাদেশের ফসল মৌসুম কত প্রকার ও কি কি, তা জানতে পারবেন। খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম কি/কোনটি তা চিনতে পারবেন। শস্য মৌসুম সম্পর্কে  ধারণা পাবেন। রবি ও খরিফ মৌসুমের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবেন। রবিশস্য ও খরিপ শস্যের মধ্যে পার্থক্যগুলো ধরতে পারবেন।

চলুন জেনে আসি-

(১) বাংলাদেশের ফসল মৌসুম কত প্রকার ও কি কি?

শস্য উৎপাদন বিচারে বাংলাদেশে প্রতি ছয় মাসকে এক মৌসুম ধরে সমগ্র বছরকে ২টি প্রধান শস্যমৌসুমে বিভক্ত করা হয়েছে। এগুলো হলো- রবি মৌসুম ও খরিফ মৌসুম।

ক) রবি মৌসুম

রবি মৌসুম কি, কোনটি

রবি মৌসুম কি/কোনটি: বাংলাদেশে রবি মৌসুম নভেম্বর মাস থেকে এপ্রিল (মধ্য আশ্বিন-মধ্যে চৈত্র) পর্যন্ত বিস্তৃত। বাংলাদেশে এটাই শুষ্ক মৌসুম। এই মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টি বিরল বলে ফসলের আবাদের জন্য পানিসেচ নিতান্তই প্রয়োজন। শুষ্ক এবং অনার্দ্র আবহাওয়ায় ও অল্প তাপমাত্রায় রবিশস্য উত্তমরূপে জন্মায়। ছোলা, মসুরি, খেসারি প্রভৃতি কয়েকটি রবিশস্য সেচ ছাড়াও চাষ করা যেতে পারে। এদের বৃদ্ধির জন্য মাটির স্বাভাবিক আর্দ্রতা সংরক্ষণই যথেষ্ট।

রবি মৌসুমের সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে: যে সকল শস্য তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং ফুল, ফল উৎপাদনের অধিকাংশ সময় রবি মৌসুমে অতিবাহিত করে তাদেরকে রবিশস্য বলা হয়ে থাকে।

রবি ফসলের উদাহরণ: শীতকালীন ধান, গম, গোল আলু, সরিষা, বার্লি, তামাক, মটর, ছোলা, মসুরি, শালগম, গাজর, বীট, টমেটো, সীম, লাউ, পালং শাক, ধনে প্রভৃতি।

See also  কৃষি মৌসুম কাকে বলে? কৃষি মৌসুম কয়টি? মৌসুমের সময়কাল ও কোন মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি? এবং বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে তার তালিকা

খ) খরিফ মৌসুম

খরিফ মৌসুম কি, কোনটি

খরিফ মৌসুম কি/কোনটি: মে থেকে অক্টোবর পর্যন্ত (মধ্য চৈত্র-মধ্য আশ্বিন) এই মৌসুমের শস্য সময়সীমা বিস্তৃত। বাংলাদেশে এটাই উষ্ণতম মৌসুম। বৃষ্টিপাতের প্রাচুর্য এই শস্যমৌসুমের বৈশিষ্ট্য এবং প্রচুর পরিমাণ বৃষ্টিপাতের ফলেই এই মৌসুমে পানিসেচের তেমন প্রয়োজন হয় না। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে মৌসুমী বৃষ্টিপাতের গুরুতেই এই মৌসুমের আগমন হয় এবং আর্দ্রতা বিহীন উত্তর-পূর্বে বায়ু প্রবাহ এর সমাপ্তি ঘোষণা করে।

খরিফ মৌসুমের সংজ্ঞা হিসেবে বলা যেতে পারে: যে সকল শস্য তাদের শারীরিক বৃদ্ধি এবং ফুল-ফল উৎপাদনের অধিকাংশ সময় বর্ষা মৌসুমে অতিবাহিত করে তাদেরকে খরিপ শস্য বলা হয়।

খরিফ ফসলের উদাহরণ: আউশ ধান, পাট, কলা, চাল কুমড়া, করলা, কাকরোল, ঝিঙ্গা, চিচিঙ্গা, পুঁইশাক, ধুন্দল, মিষ্টি কুমড়া ঢেঁড়শ, পটল প্রভৃতি।

(২) খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম কি/কোনটি?

চাষাবাদ পদ্ধতির বিজ্ঞানসম্মত আধুনিকায়নের ফলে কৃষি বিজ্ঞানীরা প্রচলিত রবি ও খরিপ ঋতুর ধারণাকে পুনবিন্যাস করে ৩টি শস্য মৌসুমে ভাগ করেছেন। এগুলো হলো- খরিপ-১, খরিপ-২ বা বর্ষা মৌসুম ও রবি মৌসুম।

ক) খরিফ-১

খরিফ-১ কি/কোনটি: এই মৌসুমের বিস্তৃতি মার্চ থেকে জুন মাস পর্যন্ত। এই মৌসুমে মাঝারি ধরনের বৃষ্টিপাত হয়। এই সময়ে তাপমাত্রা থাকে অধিক। শস্য উৎপাদনের জন্য সেচের প্রয়োজন অল্প। এই সময়ে দিন ও রাতের দৈর্ঘ্য থাকে প্রায় সমান সমান। শিলাবৃষ্টিতে শস্যহানির আশঙ্কা বেশি থাকে। আউশ ধান, পাট, ভূট্টা, কাউন, তিল, মিষ্টি কুমড়া প্রভৃতি খরিপ-১ মৌসুমের ফসল।

খ) খরিফ-২

খরিফ-২ কি/কোনটি: এই মৌসুমের বিস্তৃতি জুলাই থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত। এই সময়ে বৃষ্টি-পাতের পরিমাণ প্রচুর। বায়ুমন্ডলে এই সময়ে আর্দ্রতা থাকে অনেক বেশি। প্রায় সারাক্ষণই আকাশ থাকে মেঘাচ্ছন্ন। শস্য উৎপাদনের পানিসেচের কোন প্রয়োজন হয় না। পক্ষান্তরে আবদ্ধ পানি অপসারণের জন্য নিষ্কাশনের প্রয়োজন হতে পারে। এই সময়ে ফসলে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের উপদ্রব বেশি হয়। আমন ধান, ভূট্টা, মাসকলাই, মুগকলাই, প্রভৃতি খরিফ-২ মৌসুমের ফসল।

See also  কৃষি মৌসুম কাকে বলে? কৃষি মৌসুম কয়টি? মৌসুমের সময়কাল ও কোন মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি? এবং বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে তার তালিকা

গ) রবি মৌসুম

রবি মৌসুমের আবহাওয়া

রবি মৌসুম: এই মৌসুমের বিস্তৃতি নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত। এই মৌসুমে বৃস্টিপাতের পরিমাণ নগন্য। শস্য উৎপাদনের জন্য এই ঋতুতে পানি সেচের প্রয়োজন হয়। এই ঋতুতে পোকামাকড় ও রোগ বালাইয়ের উপদ্রব কম। বন্যা, শিলাবৃষ্টি বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কাও কম। গম, গোলআলু, মিষ্টি আলু, তামাক, মরিচ, বেগুন, সরিষা, মুগ, মসুর, ছোলাম, পিঁয়াজ, রসুন, চিনাবাদাম, টমেটো, কপি, বোরো ধান প্রভৃতি রবি মৌসুমের ফসল।

(৩) রবিশস্য ও খরিপ শস্যের মধ্যে পার্থক্য

রবি শস্যখরিফ শস্য
১। রবি মৌসুমের ফসল রবি শস্য নামে অভিহিত হয়। ১। খরিফ মৌসুমের ফসল খরিপ শস্য নামে অভিহিত হয়।
২। রবি শস্য উৎপাদনে পানির চাহিদা কম থাকে। ২। খরিফ শস্য উৎপাদনে পানির চাহিদা বেশী থাকে। 
৩। রবি শস্য সাধারণত স্বল্প তাপমাত্রায় ভল জন্মে। ৩। খরিফ শস্য সাধারণত অধিক তাপমাত্রায় ভাল জন্মে। 
৪। রবি শস্য জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না।৪। খরিফ শস্য জলাবদ্ধতা সহ্য করতে সক্ষম।
৫। রবি শস্য ছোট দিনের দৈর্ঘ্যে ভাল জন্মে। ৫। খরিফ শস্য বড় দিনের দৈর্ঘ্যে ভাল জন্মে।
৬। রবি শস্যে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।৬। খরিফ শস্যে বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
৭। রবি শস্যে শিলাবৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কম।৭। খরিফ শস্যে শিলাবৃষ্টির ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা বেশি।
৮। আবহাওয়া শুষ্ক থাকায় রবি শস্যে কীট-পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণের সম্ভাবনা কম।৮। আবহাওয়া আর্দ্র থাকায় খরিপ শস্যে কীট-পতঙ্গ ও রোগ বালাইয়ের আক্রমণের আশংকা বেশি।
৯। রবি শস্যে কীট-পতঙ্গ ও রোগ-বালাই দমনের ব্যয় অনেক কম।৯। খরিফ শস্যে কীট-পতঙ্গ ও রোগবালাই দমনের ব্যয় অনেক বেশি।

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরের আলোনাটির দ্বারা আমরা বাংলাদেশের ফসল মৌসুম কত প্রকার ও কি কি? খরিফ-১, খরিফ-২ ও রবি মৌসুম কি/কোনটি? রবিশস্য ও খরিপ শস্যের মধ্যে পার্থক্য প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানলাম।

See also  কৃষি মৌসুম কাকে বলে? কৃষি মৌসুম কয়টি? মৌসুমের সময়কাল ও কোন মৌসুমের ফসল কোনটি/নাম/কি কি? এবং বাংলাদেশের কোন অঞ্চলে কোন ফসল ভালো জন্মে তার তালিকা

কৃষিবিষয়ক এরকম তথ্য সমৃদ্ধ উপকারি আর্টিকেল পেতে আমাদের এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। আপনার আরও কোন তথ্য জানার থাকলে বা কোন মতামত থাকলে তা কমেন্ট বক্সে জানান। কোন লেখা খুবই উপকারি বলে হলে তা অবশ্যই আপনার বনুধুদের সাথে সাথে শেয়ার করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ রইলো। সাথে থাকার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।

[তথ্য সূত্র: ওপেন স্কুল]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page