কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের আর্থসামাজিক উন্নয়নে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ মৎস্য খাতে যে সাফল্য অর্জন করেছে তা আজ সারা বিশ্বে স্বীকৃত।
অভ্যন্তরীণ বন্ধ জলাশয়ে মৎস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে বিশ্বে বাংলাদেশের ৫ম স্থান অধিকার এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে (এফএও, ২০১৫)।
জাতীয় অর্থনীতিতে সম্ভাবনাময় এ খাতের ভূমিকা ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলেছে। বাংলাদেশের মোট জিডিপির ৩.৬৯ শতাংশ এবং কৃষিজ জিডিপির প্রায় এক-চতুর্থাংশ (২৩.১২ শতাংশ) মৎস্য খাতের অবদান (বাংলাদেশ অর্থনৈতিক সমীক্ষা, ২০১৫)।
দেশের রপ্তানি আয়ের ২০ শতাংশের অধিক আসে মৎস্য খাত হতে। আমাদের খাদ্যে প্রাপ্ত প্রাণিজ আমিষের প্রায় ৬০ শতাংশ জোগান দেয় মাছ। বাংলাদেশের মোট জনগোষ্ঠীর ১১ শতাংশের অধিক এ সেক্টরের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থেকে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করে। তথা এ বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা বিধান ও নিরাপদ খাদ্য সরবরাহে মৎস্য খাতের অবদান অত্যন্ত গুরুত্ববহ ও তাৎপর্যপূর্ণ।
(১) বাংলাদেশের মৎস্যসম্পদ
মৎস্যসম্পদ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনার পূর্বে “মৎস্য” কী এ সম্পর্কে অবশ্যই জানা প্রয়োজন।
মৎস্য একটি শীতল রক্তসম্পন্ন জলজ প্রাণী। এর শরীরে মেরুদণ্ড, শ্বাস-প্রশ্বাসের জন্য কানকোর নিচে ফুলকা ও জলে বিচরণ করার জন্য পাখনা (Fins) আছে।
বিজ্ঞানের পরিভাষায় মৎস্য (Fish) অর্থ সকল প্রকার কোমল অস্থি এবং কঠিন অস্থিবিশিষ্ট মাছ (Cartilaginous and bony fishes ), স্বাদু ও লবণাক্ত পানির চিংড়ি (Prawn and Shrimp), উভচর জলজ প্রাণী, কচ্ছপ ও কাঁকড়াজাতীয় (Crustacean), শামুক বা ঝিনুকজাতীয় (Mollusc) জলজ প্রাণী, একাইনোডার্মস জাতীয় সামুদ্রিক প্রাণী, ব্যাঙ (Frogs) এবং এদের জীবনচক্রের যে কোনো ধাপকে বোঝাবে।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ের (নদী, বিল ও প্লাবনভূমি, কাপ্তাই লেক, সুন্দরবন) পরিমাণ প্রায় ৩৯ লক্ষ ১০ হাজার হেক্টর, বন্ধ জলাশয়ের (পুকুর, মৌসুমি চাষকৃত জলাশয়, বাঁওড় ও চিংড়িঘের) পরিমাণ ৭ লক্ষ ৮৯ হাজার হেক্টর, সামুদ্রিক জলসীমার পরিমাণ ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এবং সমুদ্র উপকূল রয়েছে ৭১০ কিলোমিটার।
প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ১৯৮৩-৮৪ অর্থবছরে দেশে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ৭.৫৪ লক্ষ মেট্রিক টন। বিগত তিন দশকের ব্যবধানে এ উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫.৪৮ লক্ষ মেট্রিক টনে। এ সময়ে উপখাতওয়ারি উৎপাদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ১৯৮৩-৮৪ সালে উন্মুক্ত জলাশয়ের অবদান ৬৩ শতাংশ হলেও ২০১৩-১৪ সালে এ ক্ষেত্রের অংশ দাঁড়িয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশে। অন্যদিকে বন্ধ জলাশয়ের অবদান বৃদ্ধি পেয়েছে সাড়ে ৩ গুণ।
মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও মূলত বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট প্রতিবন্ধকতার কারণে প্রবৃদ্ধি কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। বাংলাদেশের স্বাদু পানির মৎস্য উৎপাদনে সাফল্যের পাশাপাশি বিশাল সমুদ্র বিজয়ের প্রেক্ষিতে সামুদ্রিক সম্পদ উন্নয়নে অপরিমেয় সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশের জলাভূমি বিচিত্র মৎস্য প্রজাতিতে ভরপুর। স্বাদু পানি ও লোনা পানিতে নানান প্রজাতির মাছ পাওয়া যায়। মিঠা পানির মৎস্য প্রজাতি ২৬০টি, মিঠা পানির চিংড়ি প্রজাতি ২৪টি এবং সামুদ্রিক মৎস্য প্রজাতি ৪৭৫টি ও সামগ্রিক চিংড়ি প্রজাতি রয়েছে ৩৬টি।
স্বাদু পানির উৎস হিসেবে নদী, বিল ও প্লাবনভূমি, কাপ্তাই লেক, সুন্দরবন এবং বদ্ধ জলাশয় হিসেবে পুকুর, মৌসুমি চাষকৃত জলাশয়, বাঁওড়, চিংড়িঘের উল্লেখযোগ্য।
স্বাদুপানির মৎস্য প্রজাতির মধ্যে রুই, কাতলা, মৃগেল, কালবাউশ, ঘনিয়া, বাটা, বোয়াল, পাঙাশ, পাবদা, টেংরা, পুঁটি, কাজলি, গুলসা, চিংড়ি, আইড়, বাঘাইর, সরপুঁটি, মলা, চেলা, দারকিনা, রানীমাছ, বেলে, এবং, শিলং, বাচা, রিটা, ফলি, চিতল, কৈ, শিং, মাগুর, শোল, গজার, টাকি, ভেলা, বাইম, গুচি বাইম, চাপিলা, খলিশা, ফ্যাশা, চাম্পা, কাকিলা ইত্যাদি।
মাছেভাতে বাঙালির রসনা মিটাতে এক সময়ের প্রাকৃতিক উৎসের মৎস্যভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত কয়েকটি প্রধান নদ-নদীর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তন্মধ্যে পদ্মা, যমুনা, ব্রহ্মপুত্র, মেঘনা ও কর্ণফুলীর নাম অন্যতম।
পদ্মা: পদ্মা বাংলাদেশের প্রধান নদী। হিমালয়ের গঙ্গোত্রী হতে উৎপন্ন হয়ে গঙ্গার একটি ধারা ভাগীরথী নাম। নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ ও পরে হুগলী নামে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। অন্য শাখাটি ‘পদ্মা’ নামে রাজশাহীর রামপুর- বোয়ালিয়ার ভিতর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। এটি গোয়ালন্দের নিকট ব্রহ্মপুত্রের প্রধান শাখা যমুনার সাথে মিশেছে। ভৈরব, আড়িয়াল খাঁ, মাথাভাঙ্গা, কুমার, গড়াই ও মধুমতি, পদ্মার প্রধান শাখা নদী। কপোতাক্ষ ও পশুর নদ ভৈরব নদের উপশাখা।
যমুনা: বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নদী। এ নদীর প্রবাহিত ধারা আরও দক্ষিণে চাঁদপুরের নিকটে মেঘনার সাথে মিলিত হয়ে মেঘনা নাম ধারণ করে মিশেছে সমুদ্র সঙ্গমে।
মেঘনা: মেঘনা বাংলাদেশের তৃতীয় বৃহত্তম নদী। আসামের বরাক নদী দুই শাখায় বিভক্ত হয়ে সুরমা ও কুশিয়ারা নামে সিলেট জেলায় বাংলাদেশের মাটির পরশ লাভ করেছে। পরে ঐ জেলার আজমিরীগঞ্জের নিকট দুইটি মিলিত শাখা কালনী নামে ভৈরব বাজারের নিকট পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের সাথে মিলিত হয়ে চাঁদপুরের নিকট পদ্মার সাথে মিলিত হয়েছে। এরপর মেঘনা নামেই বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। তিতাস ও ডাকাতিয়া নদী মেঘনার প্রধান শাখা নদী। মেঘনার মোহনায় ব-দ্বীপ সৃষ্টি হয়েছে।
ব্রহ্মপুত্র: তিব্বতের মানস সরোবর হতে উৎপন্ন হয়ে আসামে প্রবেশ করেছে এবং পরে আসামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের রংপুর জেলায় প্রবেশ করে প্রধান ধারায় বিভক্ত হয়েছে। প্রধান ধারাটি যমুনা নামে রাজশাহী ও ঢাকা বিভাগের মধ্যে দিয়ে গোয়ালন্দের নিকট পদ্মার সঙ্গে মিশেছে। মূল ধারাটি ব্রহ্মপুত্র নামে (এখন শু প্রায়) ময়মনসিংহের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ঢাকা জেলার উত্তর-পূর্ব ভাগে মেঘনার সাথে মিশেছে। এ ধারা পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নামে পরিচিত। প্রধান ধারা যমুনার উপনদীসমূহের মধ্যে তিস্তা, আত্রাই, করতোয়া প্রভৃতির নাম উল্লেখযোগ্য। ধলেশ্বরীও যমুনার শাখা। আবার ধলেশ্বরীর শাখা ঢাকার বুড়িগঙ্গা। পুরাতন ব্রহ্মপুত্রের শাখা হিসেবে নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যার নামও উল্লেখযোগ্য।
কর্ণফুলী: লুসাই পাহাড়ের খরস্রোতা প্রপ্রবণ কর্ণফুলী নামে পার্বত্য চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়ে বঙ্গোপসাগরে পড়েছে। ফেনী, হালদা, ইছামতি, কাচালং, চেংগী, সাংগু ও মায়ানী প্রভৃতি কয়েকটি পার্বত্য নদী চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে কর্ণফুলী নদীতে প্রবাহিত হয়। হালদা নদীটি রুই-কাতলা মাছের প্রজনন ক্ষেত্র হিসেবে এখনও বিখ্যাত।
কাপ্তাই লেক: কাপ্তাই লেক মনুষ্যসৃষ্ট বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ স্বাদু পানির জলাধার। মূলত এটি কর্ণফুলী নদীর উপর কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ (Hydro electric power generation) প্রকল্প তৈরির জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল। ইহা চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন রাঙ্গামাটি জেলার কাপ্তাই উপজেলায় অবস্থিত। কাপ্তাই লেকের সর্বমোট আয়তন ৬৮,৮০০ হেক্টর। এর গড় গভীরতা ১০০ ফুট (৩০ মিটার) এবং সর্বোচ্চ গভীরতা ৪৯০ ফুট (১৫০ মিটার)। প্রকল্প নির্মাণকাজ ১৯৬২ সালে সমাপ্ত হয়।
লেকটিকে মৎস্য সম্পদের অঢেল আধার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। Aquatic Research Group (ARG) 1986 পরিসংখ্যানমতে কাপ্তাই লেকে ৪৯ প্রজাতির দেশি মাছ এবং ৫ প্রজাতির বিদেশি মাছ পাওয়া যায়। অন্য পরিসংখ্যানে দেখা যায়, কাপ্তাই লেকে ৭১ প্রজাতির মাছের মধ্যে বিদেশি ৫ প্রজাতির মাছ ও চিংড়ির দুইটি প্রজাতির মাছ শনাক্ত করা হয়েছে, Halder et ol (1991)।
রুইজাতীয় মাছ আগে মোট উৎপাদনের শতকরা ৬০ ভাগ হলেও বর্তমানে ২০১৫ সালে এসে তা কমে ৪.২% এ নেমে এসেছে। পক্ষান্তরে চাপিলা (Gudusia chapra ) এবং কেচকি (Corica soborna) মাছ হতে মোট উৎপাদনের ৫০% সরবরাহ হয়ে থাকে। এ ছাড়া কাতলা, মৃগেল, রুই, কালবাউশ, ঘনিয়া, বোয়াল, চিতল, মলা, আইড়, বাটা, তেলাপিয়া মাছ অধিক হারে পাওয়া যায়।
চলন বিল: উত্তরাঞ্চলের অহংকার চলন বিল এ বাংলাদেশের একটি সুপরিচিত ও ঐতিহ্যবাহী বিল। রাজশাহী, নাটোর, নওগাঁ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও বগুড়া জেলার অংশবিশেষ নিয়ে বিস্তৃত চলন বিলের আয়তন বর্ষাকালে প্রায় ৪০ হাজার হেক্টর এবং শুষ্ক মৌসুমে প্রায় ৭ হাজার হেক্টর।
চলন বিলে পূর্ব মাধনগর, পিপরুল, ভাংগাপাড়া, তাজপুর, চলন, মাজগাঁও, বইসা, চনমোহন, সাতাইল, বাসদহ, গজনা, সোনাপাতিলা ঘুঘুদহ, কুরালিয়া, চিরল, দিক্ষী ইত্যাদি ছোট ছোট বিল এবং আত্রাই, গুর, করতোয়া, বড়াল, তুলসী, ভাই, চিকনাই, তেলকুপি, বগঞ্জা ইত্যাদি নদী ও তাদের শাখা-প্রশাখাসহ বহু খাল ও প্লাবনভূমি রয়েছে।
চলন বিলের মৎস্যসম্পদ একসময় প্রবাদ বাক্যের মতো সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী ছিল। বহু বছরের ঐতিহ্য নিয়ে বিস্তৃত এ চলন বিল ধীরে ধীরে পলি দ্বারা ভরাট হয়ে বর্তমানে ২০১৫ সালে এসে তা পরিণত হয়েছে এক বিস্তৃত কৃষিজমিতে, বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে। কালের বিবর্তনে চলন বিল হারাতে বসেছে তার পুরনো ঐতিহ্য। কাজেই চলন বিলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের পাশাপাশি মৎস্যসম্পদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রয়োজন অবক্ষয়িত আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে জলাশয়ের জৈবিক ব্যবস্থাপনার প্রবর্তন।
(২) বাংলাদেশের মৎস্য খাতের সাফল্য ও উন্নয়ন সম্ভাবনা
ক) মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও গ্রামীণ কর্মসংস্থান
বাংলাদেশে মৎস্যবান্ধব কার্যক্রম পরিচালনা এবং চাষি ও উদ্যোক্ত পর্যায়ে চাহিদাভিত্তিক কারিগরি পরিষেবা প্রদানের ফলে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদন হয়েছে ৩৫.৪৮ লক্ষ মে.টন। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মাছের মোট উৎপাদন ছিল ২৭.০১ লক্ষ মে.টন। সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে মৎস্য উৎপাদনের ঈন্সিত লক্ষ্যমাত্রা ৩৭.০৩ লক্ষ মে.টন অর্জিত হবে বলে প্রাথমিক তথ্যে প্রতীয়মান হয়।
বিগত ১০ বছরের বাংলাদেশের মৎস্য উৎপাদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, এ খাতে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি উৎসাহব্যঞ্জক (গড় প্রবৃদ্ধি ৫.৩৮ শতাংশ) এবং বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হারে স্থিতিশীলতা বিরাজমান (মৎস্যসম্পদ জরিপ পদ্ধতি, ২০১৪)। প্রবৃদ্ধির এ ক্রমধারা অব্যাহত থাকলে আগামী ২০২০-২১ সালের মধ্যে দেশে মৎস্য উৎপাদন ৪৫.৫২ লক্ষ মে.টন অর্জিত হবে বলে আশা করা যায়। ফলে ২০২০-২১ সালে বাংলাদেশের বর্ধিত জনগোষ্ঠীর জন্য প্রক্ষেপিত মৎস্য চাহিদা ৪৫.২৮ লক্ষ মে.টন পূরণ করা সম্ভব হবে।
দেশের ১৪ লক্ষের বেশি নারীসহ প্রায় ১ কোটি ৭৮ লক্ষ লোক মৎস্য খাতের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়োজিত থেকে তাঁদের জীবন- জীবিকা নির্বাহ করে, যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১১ শতাংশের অধিক।
মৎস্য খাত সংশ্লিষ্ট এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রায় ১০ শতাংশ নারী, যা বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১ শতাংশ। বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা যায়, বর্তমানে প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানাসমূহে নিয়োজিত শ্রমিকের ৮o শতাংশের অধিক নারী। (তথ্য ২০১৫)
দেশের মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির ফলে পরিত্র মৎস্যজীবীদের আয় বৃদ্ধির সাথে সাথে অতিরিক্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। বিগত ৫ বছরে এ সেক্টরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে বার্ষিক অতিরিক্ত ৬ লক্ষাধিক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
খ) বন্ধ জলাশয়ে (পুকুর, দিঘি, বাঁওড়) মৎস্য চাষ নিবিড়করণ
মৎস্য অধিদপ্তরের লাগসই প্রযুক্তি হস্তান্তর ও চাহিদাভিত্তিক সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের ফলে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ইতোমধ্যে রুইজাতীয় মাছ উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি পাঙাশ, কৈ, শিং, মাগুর ও তেলাপিয়া মাছ উৎপাদনের ক্ষেত্রে এক নীরব বিপ্লব সাধিত হয়েছে।
প্রশিক্ষিত ও দক্ষ সম্প্রসারণ কর্মীর মাধ্যমে মাছ চাষের আধুনিক প্রযুক্তি হস্তান্তরের লক্ষ্যে চাষি প্রশিক্ষণ, উন্নত প্রযুক্তি হস্তান্তর, লাগসই সম্প্রসারণ সেবা প্রদান, প্রদর্শনী খামার পরিচালনা ইত্যাদি কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে বর্তমানে বাংলাদেশের ৩.৭১ লক্ষ হেক্টর পুকুর-দিঘিতে বার্ষিক হেক্টরপ্রতি গড় মৎস্য উৎপাদন প্রায় ৪.১ মে. টনে উন্নীত হয়েছে। (তথ্য ২০১৫)
চাহিদাভিত্তিক প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে বাংলাদেশে সব পুকুর-দিঘি লাগসই মাছ চাষের আওতায় আনা সম্ভব হলে ২০২০-২১ সালের মধ্যে হেক্টরপ্রতি মৎস্য উৎপাদন ৫.০ মে.টনে উন্নীত করা সম্ভব।
গ) নিমগাছি সমাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্প
বাংলাদেশেল উত্তরাঞ্চলের অপার সম্ভাবনাময় খাস জলজ সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার আপামর দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুষ্টি চাহিদা পূরণের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের নিমিত্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রায়গঞ্জ ও তাড়াশ এবং পাবনা জেলার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার প্রায় ৬৭৪.৭৬ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট ৭৮৩টি (চাষকৃত পুকুরের সংখ্যা ৫৪৬টি) সরকারি পুকুর-দিঘি দিয়ে নিমগাছি সামাজভিত্তিক মৎস্য চাষ প্রকল্প। বিগত ২০১৪-১৫ অর্থবছরে চাষকৃত ৫৪৬টি পুকুর হতে ১৭৫০ মে.টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে।
ঘ) বাঁওড় ব্যবস্থাপনা
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ৫৪৮৮ হেক্টর আয়তন বিশিষ্ট প্রায় ৬০০টি বাঁওড় রয়েছে। বাঁওড়গুলোতে কাঙ্ক্ষিত হারে মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য ঝিনাইদহ ও যশোর জেলার ৬টি বাগুড় মৎস্য অধিদপ্তরে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ সব বাঁওড়ে সুফলভোগী দল গঠনের মাধ্যমে মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ নিশ্চিত করার যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সমন্বিত প্রচেষ্টার ফলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এসব বাঁওড় থেকে মোট ৫৬৬ মে. টন মাছ উৎপাদনসহ বাঁওড়ের মোট উৎপাদন ৭২৬৭ মে.টন-এ উন্নীত হয়েছে।
ঙ) পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ
চিংড়ি বাংলাদেশের একটি অন্যতম প্রধান রপ্তানি মৎস্যপণ্য। নিরাপদ মৎস্য উৎপাদন নিশ্চিতকল্পে টেসিবিলিটি নিশ্চিতকরণে ইতোমধ্যে ২ লক্ষ ৭ হাজার চিংড়িঘের রেজিস্ট্রেশন করা হয়েছে।
২০১৪ সালে কক্সবাজার জেলায় সীমিত পরিসরে আধানিবিড় পদ্ধতিতে বাগদা চিংড়ি চাষ শুরু করা হয়েছে। এ কার্যক্রম শুরুর প্রথম বছরেই এ সকল খামার থেকে হেক্টরপ্রতি ৭.২ মে.টন বাগদা চিংড়ি উৎপাদন সম্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক চিংড়ি সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়নকল্পে জাতীয় চিংড়ি নীতিমালা, ২০১৪ অনুমোদিত হয়েছে।
চ) ইলিশ উৎপাদন ব্যবস্থাপনা কৌশল
বাংলাদেশের জাতীয় মাছ ইলিশ। এর বাসভূমি সাগরে এবং এটি লবণাক্ত পানির মাছ। যদিও এর বাস সাগরের পানিতে তবু সারা বছরই এ বাংলাদেশের স্বাদুপানির নদ-নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ পাওয়া যায়।
ইলিশের প্রধান প্রজননকাল আশ্বিন ও কার্তিক মাস হলেও সারা বছরই ইলিশ মাছ ডিম ছেড়ে থাকে।
জাতীয় মাছ ইলিশ আমাদের ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক। অনাদিকাল থেকেই আমাদের জাতীয় অর্থনীতি, কর্মসংস্থান ও আমিষজাতীয় খাদ্য সরবরাহে এ মাছ অনন্য ভূমিকা পালন করে আসছে।
বাংলাদেশের মোট মৎস্য উৎপাদনে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১১% এবং বার্ষিক উৎপাদন প্রায় ৩.৮৫ লক্ষ মে.টন (২০১৩-১৪) যার বাজারমূল্য প্রায় ১৭,০০০ কোটি টাকার উর্ধ্বে। জিডিপিতে ইলিশ মাছের অবদান প্রায় ১%।
বিগত কয়েক দশকে বিভিন্ন প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে (নদ- নদীর নব্যতা হ্রাস, পরিবেশ বিপর্যয়, নির্বিচারে জাটকা নিধন ও অধিক মাত্রায় ডিমওয়ালা ইলিশ আহরণ) ইলিশের উৎপাদন দ্রুত হ্রাস পায়। এ মাছের উৎপাদন সহনশীল
অভয়াশ্রম এলাকা ও মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময়-
অভয়াশ্রমের নাম | মাছ ধরার নিষিদ্ধ সময় |
১. নিম্ন মেঘনা নদী | মার্চ ও এপ্রিল (মধ্য ফাল্গুন হতে মধ্য বৈশাখ) |
২. শাহবাজপুর চ্যানেল | ঐ |
৩. তেঁতুলিয়া নদী | ঐ |
৪. আন্ধারমানিক নদী | নভেম্বর-জানুয়ারি (মধ্য কার্তিক হতে মধ্য মাঘ) |
৫. পদ্মা নদীর নিম্নাংশ | মার্চ ও এপ্রিল (মধ্য ফাল্গুন হতে মধ্য বৈশাখ) |
পর্যায়ে বজায় রাখতে বিভিন্ন ব্যবস্থাপনা কৌশল যেমন- জাটকা সংরক্ষণ, সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে ইলিশ মাছ আহরণ নিষিদ্ধ, অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
ইলিশ মাছ সারা বছরই কম-বেশি প্রজনন করলেও সবচেয়ে বেশি প্রজনন করে অক্টোবর মাসের (আশ্বিন কার্তিক) বড় পূর্ণিমার সময়। এ সময় শতকরা ৬০-৭০ ভাগ ইলিশ মাছই পরিপক্ক ও ডিম ছাড়ার উপযোগ্য অবস্থায় থাকে। আর এ সময়েই সবচেয়ে বেশি পরিমাণ (মোট ধৃত মাছের ৫০-৬০%) মাছ ধরা পড়ে। একই সাথে বছরের বেশির ভাগ সময়ে নির্বিচারে প্রচুর পরিমাণে জাটকা ধরা হয়। ফলে ইলিশ মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন ও নতুন প্রজন্মের প্রবেশ ব্যাপকভাবে ব্যাহক হচ্ছিল। তাই ইলিশ মাছের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিতকরণের জন্য ৫টি নির্দিষ্ট এলাকা অভয়াশ্রম ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন করা হচ্ছে, তেমনি অবাধ প্রজনন ও প্রাকৃতিকভাবে অধিক ডিম ও পোনা উৎপাদনের জন্য ‘মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০’ এর অধীনে সর্বোচ্চ প্রজনন মৌসুমে প্রধান প্রজনন এলাকায় ১৫ দিন ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং তা বাস্তবায়িত হচ্ছে।
ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠা, জাটকার বিচরণক্ষেত্র ও ইলিশের প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ এবং ইলিশের আবাসস্থল নদী-মোহনার ইকোলজি বিষয়ে বিএফআরআই গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। উক্ত গবেষণালব্ধ ফলাফলের ভিত্তিতে নদীর পরিবেশ, জাটকা সংরক্ষণ ও অভয়াশ্রম বাস্তবায়নের প্রভাবে ক্রমাগত ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
ছ) জাটকা সংরক্ষণ ও ইলিশ সম্পদ উন্নয়ন
বাংলাদেশে মোট উৎপাদিত মাছের এক-দশমাংশের অধিক আসে শুধু ইলিশ থেকে। কাজেই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। সর্বোপরি উপকূলীয় মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের জীবন-জীবিকা নির্বাহে ইলিশের গুরুত্ব অপরিসীম। জাতীয় মাছ ইলিশের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনায় প্রশাসন, কোস্টগার্ড, পুলিশ ও নৌবাহিনীর সহায়তায় মৎস্য অধিদপ্তর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালনা করে আসছে। ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধির অন্যতম কৌশল হচ্ছে জাটকা সংরক্ষণ ও মা ইলিশ রক্ষা।
জ) পোনা অবমুক্তি কার্যক্রম ও বিল নার্সারি স্থাপন
জলাশয় ভরাট, দূষণ, মাছের অতি আহরণ, প্রাকৃতিক উৎস থেকে পোনা সংগ্রহ, বিদেশি প্রজাতির মাছ অন্তর্ভুক্তি, কৃষিজমিতে নির্বিচারে কীটনাশকের ব্যবহার ইত্যাদি কারণে মুক্ত জলাশয়ের ক্রমহ্রাসমান মাছের প্রাচুর্যসমৃদ্ধকরণ ও বৈচিত্র্য বৃদ্ধির লক্ষ্যে উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্তি ও বিল নার্সারি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা হচ্ছে।
বিগত ছয় বছরে মোট পোনামাছ অবমুক্তির পরিমাণ প্রায় ৪ হাজার মে.টন। পোনামাছ অবমুক্তি কার্যক্রমের ফলে অতিরিক্ত প্রায় ৪১ হাজার মে.টন মাছ উৎপাদিত হয়েছে। উন্মুক্ত জলাশয়ে পোনা অবমুক্তি কার্যক্রমের আওতায় ২০১৪-১৫ অর্থবছরে রাজস্ব ও উন্নয়ন বাজেটের আওতায় দেশব্যাপী প্রায় ৯৪১ মে.টন গুণগত মানসম্পন্ন ও বিপন্নপ্রায় প্রজাতির পোনা অবমুক্ত করা হয়েছে। এক্ষেত্রে বার্ষিক প্রায় সাত হাজার মে.টন অতিরিক্ত মাছ উৎপাদিত হচ্ছে এবং ইতোমধ্যেই অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছের পুনরাবির্ভাব ঘটেছে।
ঝ) সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা ও মৎস্য অভয়াশ্রম স্থাপন
অভ্যন্তরীণ জলসম্পদের স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন, জলাশয় সংশ্লিষ্ট জেলে ও মৎস্যজীবীসহ সংশ্লিষ্ট সুফলভোগীদের অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং জলাশয়ের জৈবিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে জলাশয় সংশ্লিষ্ট জেলে ও সুফলভোগী সমন্বয়ে সমাজভিত্তিক সংগঠন গড়ে তোলার কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতির সংরক্ষণ, প্রজনন, বংশবৃদ্ধি ও জীববৈচিত্র্য রক্ষার জন্য অভয়াশ্রম স্থাপন একটি অন্যতম কারিগরি কৌশল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে ২৩৯টি অভয়াশ্রম স্থাপনসহ মোট ৫০০টির অধিক অভয়াশ্রম ব্যবস্থাপনা করা হচ্ছে।
স্থাপিত অভয়াশ্রমসমূহ স্থানীয় সুফলভোগী কর্তৃক সফলতার সাথে পরিচালিত হচ্ছে। মৎস্য অভয়াশ্রমে সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনার ফলে মাছের বিচরণক্ষেত্র সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ ও নিরাপদ আবাসস্থল সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সংকটময় মূহুর্তে প্রাকৃতিক উৎস ব্রুড মাছ ও পোনা সুরক্ষা পাচ্ছে; একই সাথে বিলুপ্তপ্রায় ও বিপন্ন প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে অভয়াশ্রম সংশ্লিষ্ট হাওর, বাঁওড়, নদী, খাল ও প্লাবনভূমিতে মাছের উৎপাদন ও প্রাচুর্য বৃদ্ধি পেয়েছে।
এসব অভয়াশ্রম স্থাপনের ফলে বিপন্নপ্রায় মৎস্য প্রজাতি, যথা- চিতল, ফলি, বামোশ, কালবাউস, আইড়, টেংরা, মেনি, রাণী, সরপুঁটি, মধু পাবদা, রিটা, কাজলি, ঢাকা, গজার, তারা বাইম ইত্যাদি মাছের তাৎপর্যপূর্ণ পুনরাবির্ভাব ঘটেছে এবং প্রাপ্যতা বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে।
অভয়াশ্রমে বেশি কৈ, শিং, মাগুর, পাবদা ইত্যাদির পোনা ছাড়ার ফলে এসব মাছের প্রাচুর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে। অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে সংশ্লিষ্ট জলাশয়সমূহে মাছের উৎপাদন ১৪০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি লক্ষ করা গেছে।
ঞ) প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র সংরক্ষণ
রুই-কাতলাজাতীয় মাছের স্বতন্ত্র প্রাকৃতিক প্রজননক্ষেত্র হালদা নদী, লবণাক্ত ও আধা-লবণাক্ত মাছের অন্যতম চারণক্ষেত্র সুন্দরবনের মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণে মৎস্য অধিদপ্তর নিবিড় কার্যকাত পরিচালনা করছে।
বাংলাদেশ সরকার প্রাকৃতিক পোনার উৎসস্থল হালদা নদী রক্ষায় নানামুখী কর্মকাণ্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। ২০১০ সালে হালনা নদীর উজানে ফটিকছড়ি অংশের নাজিরহাট ব্রিজ থেকে নদীর ভাটির অংশে হালদা-কর্ণফুলীর সংযোগস্থলসহ কালুরঘাট ব্রিজ পর্যন্ত প্রায় ৪০ কি.মি. মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণা করা হয়েছে।
অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধকরণ, নদীর তীরবর্তী স্থানে হ্যাচারি স্থাপন, জেলেদের বিকল্প কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ ও ক্ষুদ্রঋণ প্রদান, বনায়ন ইত্যাদি কার্যক্রমের মাধ্যমে মাছের প্রাকৃতিক প্রজনন নির্বিঘ্ন করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গৃহীত উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের ফলে ২০১১ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে হালদা নদী থেকে মোট ৩ হাজার ৪২ কেজি কৌলিতাত্ত্বিক বিশুদ্ধ মানের রেণু সংগ্রহ করা হয়, যার বার্ষিক গড় উৎপাদন প্রায় ৬০৯ কেজি। উল্লেখ্য যে, উন্নয়ন কার্যক্রম গ্রহণের পূর্বে ২০০৭ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ৪ বছরে মোট উৎপাদন ছিল মাত্র ৮৩২ কেজি (গড় উৎপাদন ২০৮ কেজি)।
ঞ) সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা
২০১৪ সালে বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ মীমাংসায় আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের এক রায়ে বাংলাদেশ নতুন প্রায় সাড়ে ১৯ হাজার বর্গকিলোমিটার সমুদ্র এলাকা পেয়েছে।
আন্তর্জাতিক সালিশ আদালতের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সীমানা পুণঃনির্ধারিত হওয়ায় ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গ কি.মি. এলাকায় মৎস্য আহরণে আইনগত ও ন্যায়সঙ্গত অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। ফলে নতুন নতুন মৎস্য আহরণক্ষেত্র চিহ্নিত করে তলদেশীয় ও ভাসমান মৎস্য আহরণের এক দিগন্ত উন্মোচিত হয়েছে।
উপকূলব্যাপী ৭১০ কি.মি. দীর্ঘ তটরেখা থেকে ২০০ নটিক্যাল মাইল পর্যন্ত বিস্তৃত একান্ত অর্থনৈতিক এলাকায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ উন্নয়নের বিশাল সুযোগ রয়েছে।
সমুদ্রের বিশাল জলরাশির মৎস্য সম্পদের মধ্যে রূপচান্দা, ছুরি, ভেটকি, কোরাল, লইট্যা ইত্যাদি মাছই প্রধান। রূপচান্দা খেতে খুবই সুস্বাদু এবং এর চাহিদাও অনেক বেশি। বঙ্গোপসাগরের উপকূলভাগে যে সব মাছ পাওয়া যায় অনুধ্যে রূপচান্দা, ভেটকী, পায়রা চান্দা, চান্দা, মেটে মাছ, ছুরি মাছ, বেলে মাছ, বামোশ, কামিলা, ইলিশ, চৌক্কা, সাগর মাগুর, সাগর কাউন, পাঙাশ, লটিয়া, একটুইট্যা, কোরাল, লাল দাতিনা, স্বপ্না, তাপসী, হ্যালিবাট প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
অভ্যন্তরীণ মৎস্য সম্পদের ন্যায় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মৎস্যজীবীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী মোট ৬৭, ৬৬৯টি যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক নৌযান মৎস্য আহরণে নিয়োজিত। প্রায় ২ লক্ষ ৭০ হাজার মৎস্যজীবী পরিবারের ন্যূনতম ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের জীবিকা নির্বাহ হচ্ছে। উপকূলীয় সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের মাধ্যমে মৎস্য আহরণে মোট ২০৫টি ও চিংড়ি আহরণে মোট ৩৭টি ট্রলার অর্থাৎ সর্বমোট ২৪২টি বাণিজ্যিক ট্রলার বর্তমানে বঙ্গোপসাগরে মৎস্যসম্পদ আহরণে নিয়োজিত রয়েছে। (তথ্য ২০১৫)
Blue Growth Economy নামে অভিহিত সমুদ্র অর্থনীতিতে ইতোমধ্যে বাংলাদেশ Pilot Country হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যথাযথ সংরক্ষণ ও সহনশীল মাত্রায় আহরণের মাধ্যমে বঙ্গোপসাগরের মৎস্যসম্পদের স্থায়িত্বশীল ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে।
সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদের সুষ্ঠু সংরক্ষণ ও স্থায়িত্বশীল প্রবৃদ্ধি অর্জনের লক্ষ্যে বর্তমান ট্রলার বহরের সকল বটম ট্রলার মিট্রলারে রূপান্তরসহ নতুন বটম ট্রলার ও সামুদ্রিক চিংড়ি ট্রলার সংযোজন রহিতকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে। এছাড়া বাণিজ্যিক ট্রলার কর্তৃক মৎস্য আহরণে নিয়োজিত জেলেদের নিরাপত্তা, স্বাস্থ্যঝুঁকি হ্রাস, আহরিত মাছের আহরণোত্তর পরিচর্যা এবং সুষ্ঠু সংরক্ষণ নিশ্চিতকল্পে কাঠ বডি নন-ফ্রিজ ট্রলার নির্মাণ ও আমদানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (তথ্য ২০২৫)
ট) মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি
আন্তর্জাতিক বাজারে স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ঢাকা, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৩টি আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন ল্যাবে মৎস্য মাননিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। মৎস্য অধিদপ্তরের আওতায় পরিচালিত এ ৩টি মৎস্য মান নিয়ন্ত্রণ ল্যাবরেটরি বাংলাদেশ অ্যাক্রিডিটেশন বোর্ড কর্তৃক প্রদত্ত অ্যাক্রিডিটেশন সনদ অর্জনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হয়েছে। চিংড়ি সেক্টরে ট্রেন্সিবিলিটি সিস্টেম কার্যকর করার অংশ হিসেবে ইতোমধ্যেই প্রায় ২ লক্ষ ৭ হাজার চিংড়ি খামার ও ৯৬২৪টি বাণিজ্যিক ফিন ফিশ (প্রধানত পাঙাশ, কৈ, তেলাপিয়া ও শিং-মাগুর) এর খামার রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে।
বিশ্ববাজারে আর্থিক মন্দাবস্থা থাকা সত্ত্বেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৫২৪ মে.টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানির মাধ্যমে আমাদের বাংলাদেশ আয় করেছে ৪ হাজার ৬৬০ কোটি টাকা। প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়, ২০০৩-০৪ সালে প্রায় ৫৪ হাজার মে.টন মৎস্য ও মৎস্যজাত পণ্য রপ্তানি করে দেশ ২ হাজার কোটি টাকা আয় করেছে।
(৩) মৎস্যসম্পদ উন্নয়নে সমস্যা ও উন্নয়ন কৌশল
মাছের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটানো, অধিক কর্মসংস্থান সৃষ্টি, রপ্তানি আয় বৃদ্ধি এবং মৎস্যচাষি ও মৎস্যজীবীদের আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নের ক্রমধারায় চিহ্নিত বর্তমান ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জসমূহ নিম্নে উল্লেখ করা হলো-
ক) অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়
- সরকারি বদ্ধ জলাশয়ের ব্যবহার অধিকার ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে নীতিমালার অভাব,
- বেসরকারি পুকুর-দিঘির যৌথ মালিকানা,
- জলাশয়ের পানির প্রতিযোগিতামূলক আত্মখাত ব্যবহার,
- দরিদ্র পুকুর মালিকদের পর্যাপ্ত পুঁজির অভাব,
- গুণগত মানসম্পন্ন পোনা ও মৎস্য খাদ্যের অভাব,
- উৎপাদন সামগ্রী ও যন্ত্রপাতির অভাব এবং অধিক মূল্য,
- প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জনশক্তির অপর্যাপ্ততা,
- মৎস্য চাষে প্রাতিষ্ঠানিক ঋণের অপ্রতুলতা,
- চাহিদামাফিক সম্প্রসারণ সেবা প্রদানে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা ইত্যাদি।
খ) অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়
- যুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণ সংক্রান্ত সঠিক তথ্যের অপ্রতুলতা,
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্র,;
- কৃষিজমিতে অতিরিক্ত সেচ,
- অপরিকল্পিতভাবে কীটনাশকের ব্যবহার,
- বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও রাস্তাঘাট নির্মাণ,
- শিল্পায়নের বর্জ্য দ্বারা জলাশয়ের পানি দূষণ,
- নদী বা সংযোগ খাল পলি দ্বারা ভরাট হয়ে যাওয়ার ফলে প্রাকৃতিকভাবে মাছের মজুদ ও বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি,
- মৎস্য প্রজনন ও বিচরণ ক্ষেত্রগুলো বিনষ্ট হওয়া ইত্যাদি।
গ) উপকূলীয় চিংড়ি চাষ ও ব্যবস্থাপনা
- গুণগত মানসম্পন্ন চিংড়ির পোনা ও উৎপাদন সামগ্রীর অপ্রতুলতা,
- উপযুক্ত মৌলিক অবকাঠামোর অভাবে নিবিড় ও আধা-নিবিড় পদ্ধতিতে চিংড়ি চাষ ব্যবস্থাপনা সমস্যা,
- জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘন ঘন প্রাকৃতিক দূর্যোগসহ উপকূলীয় অঞ্চলের পরিবেশগত অবক্ষয়,
- চিংড়ি পোনা আহরণের সময় অন্যান্য মাছ ও চিংড়ির পোনার ব্যাপক মৃত্যু,
- চিংড়ির রোগবালাই,
- চিংড়ি চাষে উচ্চ বিনিয়োগ খরচ,
- ভূমি ব্যবহারে আড্ডাখাত প্রতিযোগিতা,
- চাষ ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার অভাব,
- প্রযুক্তি প্রয়োগ সংক্রান্ত জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা,
- উপকূলীয় এলাকায় সমন্বিত নীতিমালার অভাব,
- খাদ্য নিরাপত্তা বিষয়ে চিংড়ি চাষি ও ব্যবসায়ীদের জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা ও অবহেলা,
- প্রক্রিয়াজাতকরণ কারখানায় কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন জনবলের অভাব ইত্যাদি।
ঘ) সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ
- মাছের মজুদ সম্পর্কে সীমিত তথ্য ও কারিগরি জ্ঞানের অভাব,
- উপকূলবর্তী এলাকায় অতিমাত্রায় মাছ ও চিংড়ি আহরণের ফলে মজুদের মারাত্মক ক্ষতি সাধন,
- মাছ আহরণে অবৈধ জালের ব্যবহার,
- অপরিকল্পিতভাবে ডিমার্সেল ও পেলাজিক মাছের আহরণ,
- পেলাজিক মাছ আহরণের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদির অভাব,
- যুগোপযোগী ব্যবস্থাপনা নীতির অভাব,
- ব্যবস্থাপনা ও সংরক্ষণের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা,
- আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মৎস্য অবতরণ কেন্দ্র ও পরিবহনের অপ্রতুলতা ইত্যাদি।
(৪) উন্নয়ন কৌশল
ক) অভ্যন্তরীণ বদ্ধ জলাশয়
- স্থানীয় মৎস্য সম্প্রসারণ কর্মীর মাধ্যমে অংশগ্রহণমূলক সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালনা এবং মৎস্য সম্প্রসারণ সেবা ইউনিট ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত বিস্তৃতকরণ;
- মৎস্য/চিংড়ি চাষ প্রদর্শনী খামার স্থাপনের মাধ্যমে উন্নততর চাষ পদ্ধতির প্রচলন;
- সরকারি বদ্ধ জলাশয়ের ব্যবহারের অধিকার ও প্রাপ্যতা সম্পর্কে নীতিমালা প্রণয়ন;
- ব্রুড মাছের জাত উন্নয়ন, জিনপুল প্রতিষ্ঠা ও গুণগত মানসম্পন্ন পোনার প্রাপ্যতা নিশ্চিতকরণ;
- মঙ্গাকবলিত এলাকায় মৎস্যবিষয়ক কার্যক্রম জোরদারকরণ ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আপৎকালীন জীবিকায়নের লক্ষ্যে খাদ্য সহায়তাসহ পুনর্বাসন কর্মসূচি গ্রহণ;
- মৎস্য খাদ্য ও খাদ্য উপকরণের মান নিশ্চিতকরণ;
- মাছ ও চিংড়ির রোগ নিরাময় ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনায় কারিগরি সহায়তা প্রদান;
- মৎস্যচাষিদের জন্য সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা নিশ্চিতকরণ;
- গবেষণার মাধ্যমে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ;
- উৎপাদিত পণ্যের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সংরক্ষণ ও সরবরাহ ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন;
- মৎস্য চাষ ও ব্যবস্থাপনা কার্যক্রমে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিতকরণ;
- ক্রমবর্ধমান সম্প্রসারণ সেবা প্রদানের লক্ষ্যে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা;
- মৎস্যসম্পদ জরিপ কার্যক্রম জোরদারকরণ।
খ) অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়
- মাছের প্রাকৃতিক আবাসস্থল পুনরুদ্ধার ও অভয়াশ্রম স্থাপন কার্যক্রম জোরদারকরণ;
- জলমহাল ব্যবস্থাপনা নীতিমালা পরিবর্তন/পরিমার্জন করে অভ্যন্তরীণ জলমহালে জৈবিক ব্যবস্থাপনা নিশ্চিতকরণ;
- সরকারি-বেসরকারি সংস্থা ও মৎস্যজীবীদের সমন্বয়ে দেশব্যাপী বিভিন্ন এলাকায় সমাজভিত্তিক মৎস্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম সম্প্রসারণ ও জোরদারকরণ;
- মৎস্যজীবী সম্প্রদায়কে দাদনদারদের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য আর্থিক/ উপকরণ সহায়তা প্রদান এবং সংগঠিত করে পুঁজি গঠনে উদ্বুদ্ধ করা;
- খাস জলাশয়ে দরিদ্র মৎস্যজীবীদের প্রবেশাধিকার নিশ্চিতকরণ। প্রবাহমান নদীর মৎস্য আহরণ সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার আওতায় আনয়নের লক্ষ্যে মৎস্যজীবীদের অধিকারপত্র/লাইসেন্স প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ;
- বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়হীন ও অপরিকল্পিত উন্নয়ন কার্যক্রম বন্ধ করার সাথে সাথে জলজ পরিবেশের অবক্ষয় ও দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ;
- বিল নার্সারি কার্যক্রম গ্রহণ ও মুক্ত জলাশয়ে মাছের পোনা অবমুক্তকরণ;
- মৎস্য সংরক্ষণ আইন সংশোধন এবং বাস্তবায়ন অধিকতর জোরদারকরণ;
- উপযুক্ততা নিরূপণ সাপেক্ষে ঘের, পেন ও খাঁচায় মাছ চাষ সম্প্রসারণ;
- প্লাবনভূমিতে মাছ চাষ ও ব্যবস্থপনার ক্ষেত্রে অর্জিত উত্তম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি সম্প্রসারণ ও সম্পদ সংরক্ষণের জন্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা;
- মৎস্যজীবীদের জীবিকা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিকল্প কর্মসংস্থান ও পুনর্বাসন কার্যক্রমের সম্প্রসারণ এবং জোরদারকরণ;
- ইলিশ মাছের অভিপ্রায়ণ ও মজুদ নিরূপণ সংক্রান্ত সমীক্ষা পরিচালনা। তাছাড়া উন্মুক্ত জলাশয়ের মৎস্য আহরণ ও মজুদ সংক্রান্ত ডাটাবেইজ গড়ে তোলার লক্ষ্যে জরিপ কাজ পরিচালনা;
- মৎস্য খাদ্য, মৎস্য হ্যাচারি, মৎস্য কোয়ারেনটাইন এবং মৎস্য অভয়াশ্রম আইন প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন;
- আধা লবণাক্ত পানি এলাকায় মাছ চাষ সম্প্রসারণ।
গ) উপকূলীয় চিংড়ি চাষ ও ব্যবস্থাপনা
- চিংড়ি চাষ এলাকা ঘোষণা ও চিংড়ি চাষ এলাকার মৌলিক অবকাঠামো উন্নয়ন;
- পরিবেশবান্ধব চিংড়ি চাষ সম্প্রসারণ ও চাষ নিবিড়করণ;
- চিংড়ি চাষ ও ব্যবস্থাপনার সকল পর্যায়ে উত্তম চাষ পদ্ধতি ও উত্তম ব্যবস্থাপনা পদ্ধতির প্রবর্তন;
- খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে হ্যাসাপ ও ট্রেন্সিবিলিটি বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি;
- সমুদ্র থেকে মা চিংড়ি সংগ্রহ কার্যক্রম উন্নয়ন;
- মোহনা ও উপকূলীয় এলাকায় কিশোর চিংড়ি আহরণ নিষিদ্ধকরণ;
- জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ঘন ঘন দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষার গণসচেতনতা সৃষ্টি;
- সুন্দরবন এলাকার মৎস্য নার্সারি ও প্রজনন ক্ষেত্রসমূহ চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণ;
- গবেষণার মাধ্যমে উন্নত প্রযুক্তির উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ;
- উপকূলীয় এলাকার জনগণকে চিংড়ি চাষ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে জড়িত করাসহ সম্প্রসারণ ও সম্পদ সংরক্ষণের জন্য গণমাধ্যমে ব্যাপক প্রচারণা।
ঘ) সামুদ্রিক মৎস্যসম্পদ
- জরিপের মাধ্যমে পেলাজিক এবং ডিমার্সেল মাছের মজুদ নিরূপণ ও ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রণয়ন;
- যান্ত্রিক নৌযানে কর্মরত মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা সৃষ্টি;
- সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে মনিটরিং, কন্ট্রোল ও সার্ভেল্যান্স বা এমসিএস কৌশল প্রবর্তন;
- উপকূলীয় মৎস্যজীবীদের স্থায়িত্বশীল জীবিকায়নের সুযোগ সৃষ্টি;
- আধুনিক সুযোগ-সুবিধা সম্পন্ন মৎস্য অবতরণকেন্দ্র স্থাপন এবং নিরাপদ ও সহজ পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন;
- জলযান নিবন্ধন ও মাছ ধরার অনুমতি প্রদানে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তির প্রয়োগ;
- সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ উন্নয়নের লক্ষ্যে যুগোপযোগী ব্যবস্থাপনা নীতির প্রবর্তন।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।