Skip to content

বাংলাদেশে কাউন চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম: কিভাবে কাউন চাষ করতে হয়? কাউন এর জাত ও বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে কাউন চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম, কিভাবে কাউন চাষ করতে হয়, কাউন এর জাত ও বৈশিষ্ট্য

কাউন বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে চাষাবাদ হয়ে আসছে। ছোট দানা বিশিষ্ট শস্যটি এ দেশে গরীবের খাদ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।

বাংলাদেশের সাধারণত চরাঞ্চলে অথবা কম ঊর্বর জমিতে স্বল্প চাষে কাউনের চাষ করা হয়ে থাকে।

(১) কাউন এর জাত ও বৈশিষ্ট্য

ক) তিতাস

কাউনের এ জাতটি শিবনগর নামে ১৯৮০ সালে কুমিল্লা জেলা থেকে সংগ্রহ করা হয় এবং দেশি-বিদেশি জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়নের পর ১৯৮৯ সালে তিতাস নামে অনুমোদন লাভ করে।

তিতাস কাউনের জাত
তিতাস কাউনের জাত
  • তিতাস জাত উচ্চ ফলনশীল, আগাম রোগ ও পোকা প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
  • তিতাস জাতের গাছ মাঝারী লম্বা, পাতা সবুজ, কান্ড শক্ত।
  • গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না।
  • শীষ বেশ লম্বা, মোট এবং রোমশ।
  • বীজ মাঝারী আকারের এবং ঘিয়ে রঙের।
  • হাজার বীজের ওজন ২.৩-২.৫ গ্রাম।
  • স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন প্রায় ৩০-৩৫% বেশি।
  • জাতটি রবি মৌসুমে ১০৫-১১৫ দিনে এবং খরিফ মৌসুমে ৮৫-৯৫ দিনে পাকে।
  • তিতাস জাতটি গোড়া পচা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
  • রবি মৌসুমে তিতাসের ফলন হেক্টর প্রতি ২.০-২.৫ টন।
  • খরিফ মৌসুমে এর ফলন একটু কম হয়।

খ) বারি কাউন-২

এ জাতটি কুমিল্লা জেলার পরাকান্দি থেকে সংগ্রহ করা হয়। এ জাতটি দেশি-বিদেশি জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি কাউন-২ নামে অনুমোদিত হয়।

বারি কাউন-২
বারি কাউন-২
  • গাছের উচ্চতা ১২০ সেমি।
  • কান্ড শক্ত ও মজবুত হওয়ায় গাছ সহজে হেলে পড়ে না।
  • পাতা সবুজ, চওড়া এবং লম্বা।
  • শীষ ২০-২৫ সেমি লম্বা এবং ছোট শুয়োযুক্ত হয়।
  • বীজ গোলাকার এবং ঘিয়ে রঙের।
  • হাজার বীজের ওজন ২.৫৫ গ্রাম।
  • এ জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ২.৭৫-৩.০ টন (রবি মৌসুমে)।
  • তিতাস জাতের চেয়ে গড় ফলন প্রায় ২০% বেশি।
  • এ জাতটির জীবনকাল ১২০-১২৫ দিন।
  • এ জাতটিতে রোগ-বালাই বা পোকান্ডমাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা যায় না।
See also  কাউন চাল চাষের পদ্ধতি

গ) বারি কাউন-৩

কাউনের এ জাতটি মিউটেশন ব্রিডিং পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত। দেশি-বিদেশি কাউনের জাতসমূহের সাথে এবং প্যারেন্ট এর সাথে তুলনামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০০১ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি কাউন-৩ নামে অনুমোদিত হয়।

বারি কাউন-৩
বারি কাউন-৩
  • এই জাতটি খাটো অর্থাৎ গড়ে ৪৫-৫০ সেমি লম্বা হয়, গাছ খর্বাকৃতির হওয়ায় প্রবল বাতাসে নূয়ে পড়ে না। ফলে পাহাড়ের ঢালে চাষের জন্য বিশেষ উপযোগী।
  • এই জাতটির শীষ মাঝারি (গড়ে ১৭ সেমি) এবং ছোট শুয়াযুক্ত হয়।
  • বীজ আকারে বড়, গোলাকার এবং ঘিয়ে রঙের।
  • হাজার বীজের ওজন ২.৩৬ গ্রাম।
  • স্থানীয় জাতের চেয়ে ফলন শতকরা প্রায় ৩৫ ভাগ বেশি।
  • রবি মৌসুমে এ জাতটির ফলন হেক্টরপ্রতি ২.৫-৩.০ টন।
  • জীবকাল ১২০-১২৫ দিনে।
  • পাতার অগ্রভাগ সুঁচালো হওয়ায় পাখির আক্রমণজনিত ক্ষতি অনেক কম হয়।
  • এ জাতটিকে রোগবালাই বা পোকামাকড়ের আক্রমণ তেমন একটা দেখা যায় না।

ঘ) বারি কাউন-৪

এই জাতটি ২০১৩-১৪ সালে ICRISAT (International Crops Research Institute for the Sami-Aried Tropics), ভারত হতে সংগৃহীত জার্মপাজম সমূহের মধ্য হতে নির্বাচন করা হয়। কয়েক বছর বিভিন্ন জাতের সাথে তুলনামূলক মূল্যায়নের ভিত্তিতে ২০১৯ সালে প্রস্তাবিত জেনোটাইপ ISE 375, জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক বারি কাউন-৪ নামে অনুমোদিত হয়।

বারি কাউন-৪
বারি কাউন-৪
  • এ জাতের গাছের গড় উচ্চতা ১০৫ সে.মি., যা বারি কাউন-২ জাতের চেয়ে প্রায় ২৩% কম।
  • কান্ড দৃঢ়, শক্ত, মজবুত ও অপেক্ষাকৃত খাট হওয়ায় জাতটি সহজে হেলে পড়েনা।
  • এর শীষ খাড়া (erect), ছোট শুঁয়াযুক্ত, লম্বা ও আঁটসাট (compact)।
  • পাতা চওড়া, লম্বা ও কিছুটা বক্রাকার।
  • দানা গোলাকার বড় ও ঘিয়ে রঙের।
  • হাজার দানার ওজন ২.৫৫ গ্রাম।
  • জাতটির গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৩.৫৩ টন (রবি মৌসুমে), যা বারি কাউন-২ জাতের চেয়ে প্রায় ১৬% বেশি।
  • জাতটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং ১০৮ দিনে পরিপক্ক হয়।
  • খাদ্য ও পানির চাহিদা কম হওয়ায় খরা প্রবণ ও চরাঞ্চলেও চাষ করা যায়।
  • এ জাতটিতে রোগ-বালাই বা পোকান্ডমাকড়ের আক্রমণ তেমন দেখা যায় না।
See also  কাউন চাল চাষের পদ্ধতি

(২) বাংলাদেশে কাউন চাষ পদ্ধতি ও নিয়ম: কিভাবে কাউন চাষ করতে হয়?

মাটি: প্রায় সব ধরনের মাটিতেই কাউনের চাষ করা যায়। তবে পানি দাঁড়ায় না এমন বেলে দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়।

বপনের সময়: দেশের উত্তরাঞ্চলে অগ্রহায়ণ থেকে মাঘ মাস (মধ্য নভেম্বর থেকে মধ্য-ফেব্রুয়ারি)। পযর্ন্ত বীজ বোনা যায়।

বীজের হার: কাউনের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বোনা যায়। ছিটিয়ে বুনলে হেক্টরপ্রতি ১০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ৮ কেজি বীজের প্রয়োজন হয়। বীজ সারিতে বুনলে সারির থেকে সারির দূরত্ব ২৫-৩০ সেমি রাখতে হবে। চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে সারিতে চারার দূরত্ব ৬-৮ সেমি রেখে বাকি চারা তুলে ফেলতে হবে।

সারের পরিমাণ: কাউন চাষে সচারাচর রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয় না। তবে অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি নিম্নরূপ সার প্রয়োগ ফলন বেশি হয়।

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া১৩০-১৭০ কেজি
টিএসপি১০০-১২৫ কেজি
এমওপি৮০-৯০ কেজি
জিপসাম৪৫-৫৫ কেজি
জিংক সালফেট৩-৪ কেজি
বরিক এসিড

সেচবিহীন চাষে সবটুকু সার শেষ চাষের সময় প্রয়োগ করতে হবে। সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া বীজ বপনের ৩৫-৪০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।

পানি সেচ: কাউন একটি খরা সহিষ্ণু ফসল। তবে রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন ভাল হয়।

ফসল সংগ্রহ: কাউনের শীষ খড়ের রং ধারণ করলে বীজ দাঁতে কাটার সময় ‘কট’ করে শব্দ হলে বুঝতে হবে ফলন কাটার সময় হয়েছে।

(৩) কাউন চাষে রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা

কাউনে সাধারণত রোগবালাই দেখা যায় না। তাই রোগ দমন ব্যবস্থাও প্রযোজ্য নয়।

এছাড়া কাউনে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম।

পোকার আক্রমণ দেখা দিলে আক্রমণের ব্যপকতা বুঝে কার্বোফুরান ৫ জি (তার পোকার ক্ষেত্রে) জাতীয় দানাদার কীটনাশক (যেমন ফুরাডান, ব্রিফার ইত্যাদি) হেক্টর প্রতি ১৮ কেজি হারে বীজ বপনের সময় প্রয়োগ করতে হবে এবং কাটুই পোকার জন্য প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি ক্লোরোপাইরিফস ২০ ইসি জাতীয় কীটনাশক (ডারসবান/পাইরিফস/অন্য নামের) মিশিয়ে চারাগাছের গোড়ায় মাটি ভিজিয়ে ভালোভাবে স্প্রে করে দিয়ে এ পোকার আক্রমণ কমানো যায়।

See also  কাউন চাল চাষের পদ্ধতি

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts