বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ এবং মোট শ্রমশক্তির বেশ বড় অংশই কৃষিকাজের সাথে নিযুক্ত। কৃষি বিজ্ঞানের এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা যেটি আমাদের সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ করে।
বিভিন্ন ধরনের কৃষিজ দ্রব্যাদি যেমন খাদ্য সামগ্রী, কাঠ, তন্তু এবং গৃহ তৈরির বিভিন্ন কাঁচামালের যোগান নিশ্চিত করার মাধ্যমে কৃষি আমাদের জীবনকে সহজতর করে। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে কৃষি শিল্পের কাঁচামালও যোগান দিয়ে থাকে।
ধান, গম, পাট, তুলা, চা, চিনি, বাঁশ,বেত ইত্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে অবদান রেখেছে। বাঁশ-বেতের মাধ্যমে আমাদের কুটির শিল্পেরও প্রভূত উন্নতি সাধিত হচ্ছে।
অতএব, আমাদের সবারই জানা থাকা দরকার আমজাত কি কি খাদ্যদ্রব্য হয়, নারিকেলের ছোবড়া কি উপকারে আসে, বাঁশ-বেত দ্বারা কি ধরণের জিনিস তৈরি হয়। নিচে কয়েকটি কৃষিজ পন্যের ব্যবহার আলোচনা করা হলো।
নিম্নে বাংলাদেশে শিল্পে ব্যবহৃত ৪টি কৃষিজ দ্রব্যাদির পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও এদের ব্যবহার তুলে ধরা হলো-
কৃষি বিজ্ঞানের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ শাখা। কৃষি, মাটি ও মানুষের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দ্রব্য সরবরাহের মাধ্যমে কৃষি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আমূল পরিবর্তন এনেছে ও উন্নয়নে অবদান রেখেছে। এরকম কিছু গুরুত্বপূর্ণ কৃষিজ দ্রব্যাদি যেমন- আম, নারিকেল, বাঁশ,বেত ইত্যাদি।
(১) আম
আমের বৈজ্ঞানিক নাম Mangifera indica, পরিবার Anacardiaceae। আমকে ফলের রাজা বলা হয়।
পৃথিবীতে প্রায় ৩৫ প্রজাতির আম রয়েছে। আমের বিভন্ন জাত আছে যেমন ফজলি, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, খিরসা, আম্রপালি, হাড়িভাঙ্গা ইত্যাদি।
ভারতের মালদহ ও মুর্শিদাবাদে প্রচুর পরিমানে আম চাষ হয়ে থাকে। বাংলাদেশের রাজশাহী ও চাপাইনবাবগঞ্জে আম চাষ বেশি পরিমাণে হয়ে থাকে।
২০১০ সালের ১৫ নভেম্বর আম গাছকে বাংলাদেশের জাতীয় বৃক্ষ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়।
২০২০ সালের তথ্য অনুযায়ী, পৃথিবীতে আম উৎপাদনকারী শীর্ষ দেশগুলোর মধ্যে বাংলদেশের অবস্থান ৭ম এবং প্রতিবছর প্রায় ১ মিলিয়ন টন আম বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়।
পৃথিবীতে আমের অন্যতম আদি ভূমি বাংলাদেশ। সুস্বাদু ও জনপ্রিয়তার কারনেই আম ভারত, পাকিস্তান ও ফিলিপাইনের জাতীয় ফল। আম্রপালি আমের সবচেয়ে জনপ্রিয় উদ্ভাবিত জাত।
দেশে তৈরী আমের জুস রপ্তানি হচ্ছে আরব আমিরাত,সৌদি আরব, কুয়েত, কাতার, বাহরাইন, ওমান, ইতালি, জার্মান ও যুক্তরাজ্যের বাজারে।
আমজাত খাদ্যসমাগ্রীর ব্যবহার:
- ফল হিসাবে আম খাওয়া যায়। কারণ এতে শর্করা, ভিটামিন বি ও সি, ক্যালসিয়াম, আয়রন ও খনিজ লবনরয়েছে।
- কাঁচা আম, পাকা আম প্রক্রিয়াজাতকরণ করে আমের মোরব্বা, আমের চাটনি, আমের আচার, আমচুর, আমসত্ত্ব, পাকা আমের বোতলজাত জুস ইত্যাদি মুখরোচক খাদ্য তৈরি হচ্ছে।
(২) নারিকেল
নারিকেলের বৈজ্ঞানিক নাম Cocos nucifera, পরিবার Arecaceae। নারিকেল একটি অর্থকারী ও তেল জাতীয় ফসল।
নারিকেল গাছ বিশ্বের উষ্ণমন্ডলে বিস্তৃত, বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে নিচু জমি ও ক্ষুদ্র দ্বীপা লে এ গাছ ভাল জন্মে। শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া এবং ভারতে এ গাছ প্রচুর জন্মে।
নারিকেল গাছের উচ্চতা হয় ২০-৩০ মিটার, কান্ড মসৃন ও বেলনাকার, উপরের দিকে ক্রমশ সরু।
বাংলাদেশের সর্বত্রই নারিকেল গাছ জন্মে। তবে সমুদ্র তীরবর্তী লোনা মাটিতে এর উৎপাদন ভাল।
বাংলাদেশে যেসব নারিকেল হয় সেগুলো হল টিপিকা সবুজ, টিপিকা বাদামি ও দুধে। জাতভেদে বছরে প্রতি গাছে ২০০ বা ততোধিক নারিকেল পাওয়া যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে নারিকেল একটি গুরুত্বপূর্ণ ফল।
নারিকেলজাত দ্রব্যের ব্যবহার:
নারিকেল গাছ নানা কাজে ব্যবহৃত হয়। যেমন-
- নারিকেলের ফলের ভিতরের অংশ মানুষের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় এবং তা হতে তেলও পাওয়া যায়।
- নারিকেলের কচি ফলকে ডাব বলে। ডাবের পানি সুস্বাদু এবং পুষ্টিকর।
- নারিকেল থেকে মাথায় দেওয়ার এবং খাওয়ার তেল তৈরি করা হয়। শুকনো নারিকেলের শাঁস থেকে তৈরি উদ্ভিজ্জ তেল মাথায় ব্যবহার ছাড়াও রান্নায়, সাবান, শ্যাম্পু এবং অন্যান্য প্রসাধন সামগ্রী তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।
- তেল নিষ্কাশনের পর পরিত্যক্ত খৈল পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নারিকেলের খোল দিয়ে তৈরি হয় হুঁকো।
- গাছের কান্ড দিয়ে ঘরের আড়া, পুলের খাম্বা, ঘরের খুঁটি ও বর্শার হাতল তৈরি করা হয়।
- নারিকেলের ছোবড়া দিয়ে দড়ি, মাদুর প্রভৃতি তৈরি হয়। নারিকেল গাছের পাতার মধ্যশিরা দিয়ে ঝাঁটাও তৈরি হয়।
(৩) বাঁশ
বাঁশের বৈজ্ঞানিক নাম Bambusa vulgaris, পরিবার Bambusoideae। বাঁশ ফাঁপা কান্ডবিশিষ্ট ঘাসজাতীয় উদ্ভিদ।
কাষ্ঠল চিরহরিৎ উদ্ভিদ বাঁশগাছ সাধারনত একত্রে গুচ্ছ হিসেবে জন্মায়। এক একটি গুচ্ছে ১০-৭০ টি বাঁশ গাছ একত্রে দেখা যায়। এসব গুচ্ছকে বাঁশঝাড় বলে।
বাঁশের অধিকাংশ প্রজাতিই ফুল প্রদানের পর মৃত্যুবরণ করে।
পৃথিবীতে সর্বাধিক বাঁশের প্রজাতি আছে চীনে (৫০০ প্রজাতি)। বাংলাদেশে আছে ৬৬ প্রজাতির বাঁশ। বাঁশের প্রজাতি বৈচিত্র্যের দিক থেকে বাংলাদেশ বিশ্বে ৮ম।
ক) বাঁশজাত দ্রব্যাদির ব্যবহার
- আসবাবপত্র, গৃহনির্মাণ ও গৃহ সজ্জার কাজে প্রাচীনকাল থেকেই কাঠের বিকল্প হিসেবে বাঁশ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। গৃহনির্মাণ ও গৃহসামগ্রী থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠানে পর্যন্ত এর ব্যবহার বিস্তৃত।
- বড় বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানে বাঁশ থেকে কাগজ, পার্টিকেল বোর্ড, প্লাইবোর্ড, ইত্যাদি তৈরিকরা হয়।
- বাঁশ পাতলা করে চেরাই করে চাটাই, ঢোল, বীম, আড়, ঘরের খুটি, ইত্যাদি প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করা হয়।
- আধুনিক বিশ্বে দেশে ও বিদেশে বাঁশের হস্ত ও কুটির শিল্পের প্রভূত উন্নতি হয়েছে। বর্তমানে বাশঁ থেকে স্বাস্থ্যকর লেমিনেটেড বাশেঁর মেঝে ও দেওয়াল কভার, মাদুর, কুশন, সিটকভার এমনকি পাদুকা পর্যন্ত তৈরি সম্ভব হচ্ছে।
খ) বাঁশ শিল্পের শ্রেণী বিভাগ
বাঁশ শিল্পকে নিম্নোক্ত শ্রেণিতে ভাগ করা যায়, যথা-
- কাগজ শিল্প;
- নির্মাণ শিল্প;
- হস্ত শিল্প।
কাগজ শিল্প: মূলিবাঁশ কাগজ শিল্পের জন্য বিশেষ উপযোগী। মূলিবাঁশের তৈরি কাগজের মন্ড দিয়ে উন্নত মানের কাগজ তৈরি হয়। কাগজের উপজাত হিসেবে রেয়নও প্রস্তুত হয়। বাংলাদেশের নানা জায়গায় কাগজ শিল্প গড়ে উঠেছে। পার্বত্য চট্রগ্রামের অধিকাংশ বাঁশই এই শিল্প কারখানায় ব্যবহৃত হয়। কাগজ ছাড়াও বাঁশ থেকে পার্টিকেল বোর্ড, প্লাইবোর্ড বাঁশের ঢেউটিন, প্যানেলবোর্ড ইত্যাদি তৈরি করা যায়।
নির্মাণ শিল্প: বিভিন্ন নির্মাণশিল্পে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। নির্মাণ শিল্পের মধ্যে গৃহ বা দালান কোঠা নির্মাণই প্রধান। বাঁশ গ্রামীণ গৃহ নির্মাণের বিভিন্ন কাজে যেমন খুটি দেওয়া, ঘরের বেড়া দেওয়া, বীম বা আড় তৈরি ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হয়। বড় বড় দালান কোঠা নির্মাণেও বাঁশ ব্যবহৃত হয়।
আরও অনেক নির্মাণ শিল্প যেথায় বাঁশ অতীত কাল থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। যেমন- গ্রামের খাল বা অপ্রশস্ত নদীতে সেতু বা সাঁকো তৈরিতে, নৌকার মাস্তুল, ছই, পাটাতন, গরুর গাড়ি, ঠেলাগাড়ি, জোয়াল, ঘানি ও মাড়াই কল ইত্যাদি।
বৈদ্যুতিক খুটি, মাছ ধরার চাঁই, খাড়া জাল ইত্যাদি তৈরিতে বাঁশ ব্যবহৃত হয়।
ধর্ম জালের দন্ড, সবজি লাগানো গাছ বেয়ে উঠার জন্য মাচা, নৌকার হাল ও দাঁড়ের দন্ড, বক্তৃতার মঞ্চ, তোরণ এসব তৈরিতে বাঁশ ব্যবহৃত হচ্ছে নিয়মিত।
পাহাড়ি এলাকায় বাঁশ দ্বারা কূপ তৈরি করা হয়, যাকে বলা হয় আর্টেজীয় কূপ। এই কূপের সাহায্যে পাহাড়ি এলাকায় জমি চাষ করা হয়।
ক্ষুদ্র হস্তশিল্প: ক্ষুদ্র হস্তশিল্পেই অধিক হারে বাঁশ ব্যবহৃত হয়। কেননা এই শিল্পের দ্রব্যজাত তৈরি ও ব্যবহার বেড়ে গেছে। সমস্ত প্রকার বাঁশ বয়ন ক্ষুদ্র হস্তশিল্পরই অন্তুর্ভুক্ত। এই শিল্পের অধীনে তৈরি হয় চাটাই, ডোলা, কুলা, ঝুড়ি, ঝাকা, চালনি, খাঁচা, খেলনা, কলম, টুপি, ফুলদানি, লাইট স্টান্ড, লাঠি এমনকি দাঁত খিলান, বুকসেলফ ইত্যাদি।
ঔষুধি বাঁশ: বাঁশ শুধু কাগজ তৈরি বা গৃহ সামগ্রী তৈরির কাজেই ব্যবহৃত হয়না, ঔষধ তৈরির কাজেও বাঁশ ব্যবহৃত হয়। বাঁশের অনেক জাত আছে। তন্মেধ্যে সোনালি বাঁশ বিভিন্ন কাজে লাগে। কাশি, শোথ রোগ, প্রসাবজনিত রোগ, ফোঁড়া পাকা ইত্যাদি মানুষের সাধারণ রোগ। এই রোগগুলো থেকে মুক্তি পাওয়ার মহৌষধ হচ্ছে এই সোনালি বাঁশ। ঔষধ হিসাবে বাঁশের র্শীষ, পাতা ও মূল ব্যবহার করা হয়।
(৪) বেত
বেতের বৈজ্ঞানিক নাম Calamus tenuis পরিবার Arecaceae। বেত এক প্রকার সপুষ্পক উদ্ভিদ। এটি বাংলাদেশ, কম্বোডিয়া, লাওস, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, ভারত, জাভা, সুমাত্রা অঞ্চলের উদ্ভিদ।
বেত গাছ সাধারণত গ্রামের রাস্তার পাশে, বসতবাড়ির পেছনে, পতিত জমিতে ও বনে কিছুটা আর্দ্র জায়গায় জন্মে।
বেত চিরসবুজ উদ্ভিদ। বেত গাছের ফলকে বেতফল, বেত্তুন,বেথুন,বেথুল ইত্যাদি নামেও ডাকা হয়।
বাংলাদেশে ৬ প্রজাতির বেতফল পাওয়া যায়। এ ফল খেতে সুস্বাদু ও অনেকের প্রিয়।
বিশ্বে ১৩টি গাছের প্রায় ৬০০ প্রজাতির বেতরেয়েছে। বাংলাদেশে আছে বেতের মাত্র ২টি গণ যথা- Calamus ও Daemonorops।
২-৩ বছরে বেত বড় ঝাড় হয়ে উঠে, ৭-৮ বছরে তা কাটা যায়। চাষে বেশি যত্ন লাগে না।
ক) বেতের ব্যবহার
বেতের শিল্পগুণের জন্যই বেত সবার নিকট সুপরিচিত। বেতের কান্ড বেত শিল্পে ব্যবহার করা হয়। বেতের কান্ড শক্ত বটে কিন্তু নমনীয়ও চেরাইযোগ্য। এ থেকে আর্কষণীয় ও আভিজাত্যবহনকারী শিল্পদ্রব্য প্রস্তুত করা হয়।
খ) বেতের আসবাবপত্র তৈরি
বেতের তৈরি আসবাবপত্র একেবারেই প্রাকৃতিক। এতে কোনো প্রকার কৃত্রিমতা নেই।
বেতকে সুতার মতো ব্যবহার করে কোন শক্ত জিনিসের (রড, বাঁশ) উপর পেঁচিয়ে আসবাবপত্র তৈরি করা যায়। আবার বেতের মোটা শাখা প্রশাখা শুকিয়ে শোধন করে শক্ত কাঠামো দাড় করিয়ে সোফা চেয়ার, টেবিল, বুকসেলফ, খাট, দোলনা, মোড়া, জুতা রাখার তাক, কর্ণার সেলভ, ওয়ার্ডড্রোবস, রকিং চেয়ার, আরাম কেদারা ইত্যাদি আসবাবপত্র তৈরি করা যায়।
আসবাবপত্র তৈরির আগে বেতগুলোকে সাইজ মতো কেটে শোধন করতে হবে। একটি চাড়িতে আনুমানিক হারে বরিক এসিড ও পানির দ্রবণ তৈরি করে এই দ্রবণে বেত এক সপ্তাহ ভিজিয়ে রাখলে ভালোভাবে শোধিত হবে। এতে খুরা বা অন্যন্য পোকা মাকড় আক্রমন করবে না।
গ) বেতজাত শিল্প প্রতিষ্ঠান
বেতের ব্যবহার ব্যাপক। বেত শিল্পই হচ্ছে গ্রামীণ শিল্প ঐতিহ্য।
বেতের শিল্পকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করা যায়-
- হালকা নির্মাণ শিল্প;
- বুনন শিল্প;
- ক্ষুদ্র হস্ত শিল্প;
- মিশ্র শিল্প।
হালকা নির্মাণ শিল্প: বেতের হালকা নির্মাণশিল্প বলতে বোঝায় মোটা বেতের আসবাবপত্র, যা হালকা ভার বহন করতে পারে। হালকা নির্মাণ শিল্পের প্রধান উদাহরণ হচ্ছে সোফাসেট, চেয়ার, খাট, পার্টিশন, শেলফ, টেবিল ইত্যাদি। এই শিল্পে যে বেত ব্যবহার করা হয় তা অপেক্ষাকৃত মোটা এবং পরিমাণে বেশি। আর এই বেত ব্যবহারে শিল্প নৈপুণ্যের দরকার হয়ে থাকে। দেশবিদেশের অভিজাত মহলে হালকা নির্মাণ শিল্প দ্রব্যাদিরও প্রচুর চাহিদা রয়েছে। এই শিল্পে সাধারণত গোল্লাবেত, উদমবেত, কদমবেত ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়।
বুনন শিল্প: বুননশিল্পে সরু ও নমনীয় বেত ব্যবহার করা হয়। এসব বেত চেরাই করে আরও সরু ফালি পাওয়া যায়। এই সরু ফালিকে বেতি বলা হয়। বাঁধাই ও বুনন কাজে এই বেতি ব্যবহার করা হয়। বুনন শিল্পের মাধ্যমে হালকা নির্মাণ শিল্পকে কারুকার্যময় ও নান্দনিক করা হয়। বুনন শিল্পের জন্য বান্দরিয়েত ও জালিবেত ব্যবহার করা হয়।
ক্ষুদ্র হস্ত শিল্প: ক্ষুদ্র হোক অথবা বড় হোক বস্তুত বেতশিল্পের পুরোটাই হস্তশিল্প। নির্মাণশিল্প ও বুনন শিল্পের অপ্রয়োজনীয় অবশিষ্ঠাংশ ব্যবহার করে যেসব সৌন্দর্যবর্ধক দ্রব্যাদি হাতে তৈরি করা হয় তাকেই বলে বেতের ক্ষুদ্র হস্তশিল্প। বেতের ক্ষুদ্র হস্তশিল্পের উদাহরণ হচ্ছে খেলনা, ফুলের সাজি, কলমদানি, বেতের ধামা, জুতার র্যাক, মোড়া, ফুলদানি ইত্যাদি।
মিশ্র শিল্প: বেতের সাথে বাঁশ, কাঠ, প্লাষ্টিক, নাইলন, স্টিল, ইত্যাদি মিশ্রণ করে যেসব দ্রব্যাদি তৈরি হয় তাকে বেতের মিশ্রশিল্প বলে। মোটা বেতের অভাব হলে এর স্থলে কাঠ, বাঁশ ইত্যাদি ব্যবহার করে মিশ্র শিল্প হিসেবে দোলনা, মোড়া, র্যাক, সেলফ, চেয়ার তৈরি করা হয়। আবার, সরু বেতের অভাব হলে এর স্থলে নাইলনের বা প্লাস্টিকের বেতি মোটা বেতের সাথে মিশ্রণ করে খাট, বক্স, সোফা ইত্যাদি তৈরি করা হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোত্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশে শিল্পে ব্যবহৃত ৪টি কৃষিজ দ্রব্যাদির পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, গুরুত্ব ও এদের ব্যবহার সম্পর্কে জানতে পারলাম।
বিভিন্ন কৃষিজ দ্রব্যাদি শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে সরাসরি ব্যবহৃত হয়। গুরুত্বপূর্ণ কিছু কৃষিজ দ্রব্য যেমন আম, নারিকেল, বাঁশ এবং বেত বিভিন্ন শিল্পে যেমন কাগজশিল্পে, নির্মাণশিল্পে, ক্ষুদ্র হস্তশিল্পে, বুনন শিল্পে ও মিশ্রশিল্পে ব্যবহৃত হয়। অতএব কৃষিজ দ্রব্য শিল্পের কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারের মাধ্যমে কিভাবে আমরা আমাদের দেশের শিল্প প্রতিষ্ঠানের উন্নতি সাধন করতে পারি সেটা অনুসন্ধান করা উচিত।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]