Skip to content

 

বারোমাসী মরিচের জাত বারি মরিচ-২ চাষের আধুনিক/উন্নত পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা

বারোমাসী মরিচের জাত বারি মরিচ ২ চাষের আধুনিক উন্নত পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা

(১) বারোমাসী মরিচের জাত বারি মরিচ-২ পরিচিতি ও গাছের বৈশিষ্ট্য

বাংলাদেশে রবি ও খরিফ-১ মৌসুমে মরিচ সহজলভ্য হলেও খরিফ-২ (জুলাই-অক্টোবর) মৌসুমে বাজারে মরিচের স্বল্পতা ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হয়। তাই এই সময়ে মরিচের দাম বেশি থাকে।

বর্ষা ও শীত মৌসুমের পূর্বে এই সময়টিতে মরিচের উৎপাদন অব্যাহত রাখার উদ্দেশ্যে আঞ্চলিক মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীগণের নিরলস প্রচেষ্টায় ৭টি মরিচের জার্মপ্লাজম পাতা পেঁয়াজের কুশি (বামে) ও মাঠে বীজ উৎপাদন (ডানে) কেন্দ্রের গবেষণা মাঠে ৫-৬ বছর যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে C0445 জার্মপ্লাজমটি নির্বাচন করা হয় এবং মসলা গবেষণা কেন্দ্রের বিভিন্ন আঞ্চলিক ও উপকেন্দ্রে দুই বছর পরীক্ষণের মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হয়। পরবর্তীতে এটি বারি মরিচ-২ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৩ সালে মুক্তায়িত হয়। জাতটি দেশে কাঁচা মরিচের মোট উৎপাদন বৃদ্ধিতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখছে।

  • এটি একটি গ্রীষ্মকালীন জাতের মরিচ।
  • গাছ লম্বা ও ঝোপালো।
  • উচ্চতা ৮০-১১০ সেমি, গাছের পাতার রং হালকা সবুজ।
  • গাছে প্রাথমিক শাখার সংখ্যা ৭টি, প্রতি গাছে মরিচের সংখ্যা গড়ে ৪৫০-৫০০টি (গড়ে ওজন ১১০০ গ্রাম)।
  • প্রতিটি মরিচের ফলের দৈর্ঘ্য ৭.০-৭.৫ ও প্রস্থ ০.৭-১.০ সেমি, ওজন গড়ে ২.৫ গ্রাম।
  • জাতটির ১০০০ বীজের ওজন প্রায় ৪.৫ গ্রাম।
  • এই জাতের মরিচের ত্বক পুরু।
  • কাঁচা অবস্থায় মরিচের রং হালকা সবুজ এবং পাকা অবস্থায় লাল রঙের হয়ে থাকে।
  • কাঁচা মরিচ সংগ্রহের পর ৫-৭ দিন পর্যন্ত স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যবহার উপযোগী থাকে।
  • এ জাতের মরিচের জীবনকাল প্র্রায় ২৪০ দিন (মার্চ-অক্টোবর)।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-২২ টন (সবুজ অবস্থায়)।
See also  মরিচের জাত কি কি? মরিচের জাতের নাম পরিচিতি ও মরিচ গাছের বৈশিষ্ট্য (বারোমাসী + শীতকালীন + উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত)

(২) বারোমাসী মরিচের জাত বারি মরিচ-২ চাষের আধুনিক/উন্নত পদ্ধতি ও গাছের পরিচর্যা

গ) চাষের মৌসুম

আগেই বলা হয়েছে এটি একটি গ্রীষ্মকালীন জাতের মরিচ। মার্চ- এপ্রিল মাসে (মধ্য চৈত্র থেকে মধ্য বৈশাখ) জমিতে এ মরিচের চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। মে মাসের ২য় সপ্তাহ পর্যন্ত এ জাতের মরিচের চারা জমিতে রোপণ করা যেতে পারে।

ঘ) চারা উৎপাদন পদ্ধতি

  1. ‘বারি মরিচ-২’ এর চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপণ করা হয়। এ জন্য মার্চ মাসে বীজ তলায় বীজ বপন করতে হবে।
  2. চারার গুণাগুণ ফলনের উপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে। একারণে উত্তম চারা উৎপাদনে বিশেষ দৃষ্টি রাখা আবশ্যক।
  3. অপেক্ষাকৃত উঁচু জমি যেখানে পানি মোটেও দাঁড়ায় না, যথেষ্ট আলো বাতাস পায়, নিকটে পানি সেচের উৎস রয়েছে এবং আশে পাশে সোলানেসী পরিবারের কোন উদ্ভিদ নাই এরূপ জমি বীজতলা তৈরির জন্য উত্তম।
  4. প্রতিটি বীজ তলার আকৃতি ৩মি ⨉ ১মি হওয়া বাঞ্চনীয়। এ ধরনের প্রতিটি বীজ তলায় ১৫ গ্রাম হারে বীজ সারিতে বপন করতে হবে।
  5. ভাল চারার জন্য প্রথমে বীজতলার মাটিতে প্রয়োজনীয় কম্পোস্ট সার এবং কাঠের ছাই মিশিয়ে ঝুরঝুরা করে নিতে হয়।
  6. বীজ বপনের ৫-৬ ঘণ্টা পূর্বে প্রতি কেজি বীজে ২ গ্রাম হারে প্রোভেক্স বা অটোস্টিন মিশিয়ে শোধন করে নিতে হবে।
  7. শোধিত বীজ তৈরিকৃত বীজতলায় ৪-৫ সেমি দূরে দূরে সারি করে ১ সেমি গভীরে সরু দাগ টেনে ঘন করে বপন করতে হয়।
  8. বীজ বপনের পর বীজ তলায় যাতে পোকামাকড় চারা ক্ষতিগ্রস্ত না করতে পারে, সেজন্য প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সেভিন পাউডার মিশিয়ে মাটিতে স্প্রে করতে হবে।
  9. অতিবৃষ্টি বা খরা থেকে চারা রক্ষা করার জন্য বাঁশের চাটাই, পলিথিন বা নেট দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। বাঁশের চাটাই বা পলিথিন সকাল, বিকাল বা রাতে সরিয়ে দিতে হবে।
  10. নেট ব্যবহারে বিভিন্ন শোষক পোকা চারাকে আক্রমণ করতে পারে না এবং নেটের উপর দিয়ে হালকা সেচ দিলে চারা ভাল থাকে।
  11. ৫-৭ দিনের মধ্যে বীজ গজায়। চারা ৩-৪ সেমি হলে নির্দিষ্ট দূরত্বে চারা পাতলা করা হয়।
  12. খাটো, মোটা কান্ড ও ৪-৫ পাতা বিশিষ্ট ৩০-৩৫ দিন বয়সের উৎকৃষ্ট চারা মূল জমিতে রোপণ করার উপযুক্ত বলে বিবেচনা করা হয়।
See also  মরিচের উন্নত/উচ্চ ফলনশীল জাত বারি মরিচ-৪ চাষ পদ্ধতি ও মরিচ গাছের পরিচর্যা

ঙ) জমি প্রস্তুত ও বেড তৈরি

  1. মরিচের জমিতে ৪-৫টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে গভীরভাবে চাষ করে মাটি ঝুরঝুরা করে নিতে হবে।
  2. জমি থেকে আগাছা ও পূর্ববর্তী ফসলের আবর্জনা ইত্যাদি সরিয়ে ফেলতে হবে।
  3. চারা রোপণের জন্য ১.২ মি. প্রস্থ বিশিষ্ট প্রয়োজন মতো লম্বা ৩০ সেমি উচ্চতার বেড তৈরি করতে হবে।
  4. পানি সেচ নিষ্কাশনের জন্য দুই বেডের মাঝে ৪০-৫০ সেমি প্রশস্ত নালা রাখতে হবে।

চ) বীজ হার ও রোপণ দূরত্ব

বারি মরিচ-২ এর চারা তৈরির জন্য হেক্টরপ্রতি ৫০০-৮০০ গ্রাম বীজ দরকার হয়। সঠিক সারি ও রোপণ দূরত্ব অবলম্বন করা হলে বিভিন্ন অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা সুষ্ঠুভাবে করা সম্ভব।

সারি থেকে সারি ৬০ সেমি ও গাছ থেকে গাছ ৫০ সেমি দূরত্বে চারা রোপণ করতে হবে। এভাবে রোপণ করলে হেক্টরপ্রতি প্রায় ৩৩,৩৩৩টি গাছ পাওয়া যাবে।

ছ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

মাটির প্রকৃতি, ঊর্বরতা ইত্যাদির উপর নির্ভর করে সারের মাত্রা ভিন্ন হয়। ‘বারি মরিচ-২’ এর জন্য হেক্টরপ্রতি কম্পোস্ট ও রাসায়নিক সারের পরিমাণ নিম্নের ছকে দেয়া হলো।

সারের নামহেক্টর প্রতি পরিমাণশেষ চাষের সময়১ম কিস্তিতে সার প্রয়োগ ২য় কিস্তিতে সার প্রয়োগ৩য় কিস্তিতে সার প্রয়োগ
কম্পোস্ট৫ টনসব
ইউরিয়া২১০ কেজি৭০ কেজি৭০ কেজি৭০ কেজি
টিএসপি৩৩০ কেজিসব
এমওপি২০০ কেজি৬৫ কেজি৪৫ কেজি৪৫ কেজি৪৫ কেজি
জিপসাম১১০ কেজিসব

শেষ চাষের সময় কম্পোস্ট, টিএসপি, জিপসাম এমওপি সার মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। তারপর চারা রোপণের ২৫, ৫০ ও ৭০ দিন পর পর্যায়ক্রমে ১ম, ২য় ও ৩য় কিস্তিতে ইউরিয়া ও এমপি সার ছকে উল্লেখিত পরিমাণে পার্শ্ব প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।

See also  মরিচ গাছের রোগের প্রতিকার ও পোকা দমন

জ) সেচ

চারা রোপণ করার পর অবস্থা বুঝে হালকা সেচ প্রয়োগ করতে হবে, যাতে চারা সতেজ থাকে এবং মাটিতে সহজে খাপ খাওয়াতে পারে। যেহেতু বারির এ জাতটি, খরিফ-২ মৌসুমে চাষ হয়, তাই অন্যান্য মরিচের মত বেশি সেচ প্রয়োজন হয় না। তবে অবস্থা ভেদে ৩-৪টি সেচ প্রয়োজন হতে পারে।

ঝ) আগাছা দমন

আগাছা জমি থকে খাদ্য, আলোবাতাস ও স্থান দখল করে মরিচ গাছকে দুর্বল করে ফেলে। তাছাড়া আগাছা বিভিন্ন রোগ ও পোকান্ডমাকড়ের আবাসস্থল হিসাবে কাজ করে। এতে ফসল সহজেই রোগ ও পোকান্ডমাকড় দ্বারা আক্রান্ত হয় ও ফলন হ্রাস পায়।

তাই মরিচের জমিতে গাছের মধ্যে খাদ্যোপাদান, আলো বাতাস ইত্যাদি বণ্টনের প্রতিযোগিতা মুক্ত রাখার জন্য আগাছা দমন করতে হবে। চারা রোপণের ১৫, ৩০, ৪৫ ও ৬০ দিন পরপর নিড়ানী দিয়ে আগাছা দমন করতে হবে।

ঞ) মাটি তোলা

ভাল ফসলের জন্য সার প্রয়োগের পর ৩-৪ বার দুই সারির মাঝের মাটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হয়। এতে গাছের গোড়া শক্ত হয় এবং পানি নিষ্কাশনের সুবিধা হয়।

ট) খুঁটি প্রদান

অধিক উচ্চতা, ফলনের ভার, ঝড় বা অতিবৃষ্টির কারণে গাছ হেলে পড়ে। ফলে মরিচের গুণাগুণ হ্রাস পায়। তাই হেলে পড়া থেকে রক্ষা পাবার জন্য খুঁটি প্রদান করা হয়। গাছের পাশে বাঁশের খুঁটি পুঁতে প্লাস্টিকের সুতলী দিয়ে গাছ বেঁধে দিতে হবে।

ঠ) ফসল ও বীজ সংগ্রহ

চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর মরিচ ফল উত্তোলন করা হয়। বারি মরিচ-২ এর জীবনকাল দীর্ঘ হওয়ায় প্রায় ৮-১০ বার ফসল উত্তোলন করা হয়। উত্তম বীজের জন্য বড়, পুষ্ট ও সম্পূর্ণ পাকা মরিচ নির্বাচন করতে হবে।

বর্ষাকালে মরিচ শুকানো খুবই কষ্টকর। এজন্য পাকা মরিচ দুই ফালি করে কেটে বীজ বের করে নিয়ে শুকানো যেতে পারে।

ড) বীজ সংরক্ষণ

  • মরিচের বীজ বিভিন্ন ধরনের বায়ুরোধী পাত্র, পলিথিন বা অ্যালুমিনিয়াম ফয়েল প্যাকেটে সংরক্ষণ করা যায়।
  • ডাবল পলিথিনের ছোট ছোট প্যাকেটের (২৫০-৫০০ গ্রাম বীজ) মধ্যে ৫-৬ টুকরো শুকনো কাঠ কয়লা রেখে প্যাকেটের খোলামুখ বায়ুরোধী করে বীজ সংরক্ষণ করা যেতে পারে। কাঠকয়লার টুকরা প্যাকেটের বা পাত্রের ভিতরের আর্দ্রতা শোষণ করে নেয়।
  • বীজ সংরক্ষণের জন্য অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির বায়ুরোধী পাত্র বা পলিথিন প্যাকেট ইত্যাদি ব্যবহার করা উচিত।
  • দূরবর্তী স্থানে কাচা মরিচ পরিবহনের ক্ষেত্রে ছিদ্রযুক্ত বাঁশের ঝুড়ি এবং চটের ব্যাগ ব্যবহার করলে মরিচ ভাল থাকে। মরিচ শুকানোর পরে ছায়াযুক্ত স্থানে ঠান্ডা করে সংরক্ষণ করতে হবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page