বার্লির অপর নাম যব। বাংলাদেশে বার্লির চাষ দীর্ঘদিন ধরে হয়ে আসছে। সাধারণত চরাঞ্চলে অনুর্বর জমিতেও স্বল্প ব্যয়ে এর চাষ করা হয়।
বার্লি কিছুটা লবণাক্ততা সহনশীল ফসল। বার্লি দিয়ে শিশু খাদ্য, ওভালটিন, হরলিক্স প্রভৃতি সুস্বাদু খাদ্য তৈরি হয়। পুষ্টিমানের দিক থেকে বার্লি গমের চেয়ে উন্নত। বাংলাদেশে মোট বার্লি জমির পরিমাণ প্রায় ৩৩০ হেক্টর এবং মোট উৎপদান প্রায় ২৮৭ মে. টন।
(১) বার্লির উন্নত জাত ও গাছের বৈশিষ্ট্য
ক) বারি বার্লি-১
১৯৮৮ সালে CIMMYT থেকে এ জাতটি বাংলাদেশে আনা হয়। পরবর্তী কালে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে ১৯৯৪ সালে বারি বার্লি-১ নামে এ জাতটি অনুমোদন লাভ করে।
- এ জাতের উচ্চতা মাঝারী (৮৫-৯০ সেমি)।
- পাতার রং গাঢ় সবুজ ও কান্ড শক্ত।
- গাছ সহজে নুয়ে পড়ে না।
- বীজ, শীষে ৬ সারিতে অবস্থান করে।
- দানা খোসাযুক্ত।
- দানার রং সোনালী।
- হাজার দানার ওজন ৩৬-৩৮ গ্রাম।
- এ দেশের আবহাওয়ায় এর জীবনকাল ১০৮-১১২ দিন।
- এ জাতটিতে রোগ ও পোকার আক্রমণ খুব কম।
- সেচ ছাড়া চাষ করলেও হেক্টরপ্রতি ২.২-২.৫ টন ফলন পাওয়া যায়। তবে একটি সেচ প্রয়োগে ফলন বৃদ্ধি পায়।
খ) বারি বার্লি-২
‘বারি বার্লি-২’ জাতটি ১৯৯৪ সালে অনুমোদিত হয়।
- এ জাতের গাছ মাঝারী উচ্চতাসম্পন্ন।
- বীজ ৬ সারি বিশিষ্ট এবং খোসাযুক্ত কান্ড শক্ত, ফলে সহজে হেলে পড়ে না।
- জাতটি গোড়া পচা ও ঝলসানো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন।
- এ জাতটির হাজার বীজের ওজন ৩৫-৩৮ গ্রাম এবং দানাতে ১২-১৪% আমিষ থাকে।
- ‘বারি বার্লি-২’ সেচবিহীন চাষে হেক্টরপ্রতি ২.০-২.৫ টন এবং একটি সেচসহ চাষে ২.৫-৩.০ টন ফলন পাওয়া যায়।
গ) বারি বার্লি-৩
ক্যালিফোর্নিয়া থেকে আমদানিকৃত লাইন থেকে কারান-১৯ বাছাই করে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরিক্ষণ-নিরীক্ষণ করে জাতটি ২০০১ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
- গাছ খাট প্রকৃতির ৭৫-৮৫ সেমি।
- পাতা মোমযুক্ত ৬ সারি, খোসামুক্ত দানা, শীষ ১০-১২ সেমি লম্বা।
- হাজার দানার ওজন ৩৪-৩৬ গ্রাম।
- রোগবালাই কম, দানা বড়, ৯৫-১০০ দিনে ফসল পরিপক্ক হয়।
- গড় ফলন ২.২০-২.৫০ টন/হেক্টর।
ঘ) বারি বার্লি-৪
জাতটি ২০০১ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা থেকে নমুনা সংগ্রহ করে বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
- লবণাক্ততা সহনশীল, লবণাক্ত এলাকায় গাছের উচ্চতা ৯৫-১০০ সেমি, ৬ সারি খোসাযুক্ত দানা।
- শীষ ৮-১০ সেমি।
- হাজার দানার ওজন ৩৫-৩৮ গ্রাম।
- রোগবালাই কম, দানা পরিপুষ্ট ও সোনালী বর্ণের, ৯৫-১০০ দিনে ফসল; পরিপক্ক হয়।
- গড় ফলন ১.৭৫-২.০০ টন/হেক্টর।
ঙ) বারি বার্লি-৫
‘বারি বার্লি-১’ ও ‘বেল-৪’ এর মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত। জাতটি ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদিত হয়।
- গাছের উচ্চতা ৯৫-১০০ সেমি।
- আগাম পরিপক্কতা বিশিষ্ট।
- পাতার রং সবুজ।
- বীজের রং বাদামী, বীজ ৬ সারি বিশিষ্ট।
- শীষ ১০-১২ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
- প্রতি শীষে ৬০-৬৫ টি দানা থাকে।
- বীজ খোসাযুক্ত।
- জীবন কাল ৯৫-৯৮ দিন।
- হাজার দানার ওজন ৩৬-৩৮ গ্রাম।
- উপযুক্ত পরিবেশে গড় ফলন ২.৫০-৩.০০ টন/হেক্টর।
- এটি বাংলাদেশের কম ঊর্বর, খরা পিড়ীত ও চর অঞ্চলে চাষ উপযোগী।
চ) বারি বার্লি-৬
জাতটি ২০০৫ সালে জাতীয় বীজ বোড কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বারি বার্লি-১ এবং ই-৬ এর মধ্যে সংকরায়ণের মাধ্যমে উদ্ভাবিত।
- গাছের উচ্চতা ৮৫-৯০ সেমি।
- পাতার রং সবুজ, শক্ত কান্ড বিশিষ্ট, নুয়ে পড়ে না।
- শীষ ১০-১২ সেমি পযর্ন্ত লম্বা হয়।
- বীজ ৬ সারি বিশিষ্ট এবং খোসামুক্ত।
- প্রতিটি শীষে ৪৮-৬৫ টি বীজ থাকে।
- জীবনকাল ৯৮-১০২ দিন।
- হাজার দানার ওজন ৩৫-৩৮ গ্রাম।
- রোগবালাই কম, দানা বড় ও সোনালী বর্ণের।
- উপযুক্ত পরিবেশে গড় ফলন ২.৫০-২.৭৫ টন/হেক্টর।
- লবণাক্ত এলাকায় গড় ফলন ২.৫.২.৭৫ টন/হেক্টর।
- বীজের রঙ বাদামী।
- এটি বাংলাদেশের কম ঊর্বর, খরা পিড়ীত ও চর অঞ্চলে চাষ উপযোগী।
ছ) বারি বার্লি-৭
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি বার্লি-৭ একটি লবণাক্ততা সহনশীল খোসামুক্ত বার্লির জাত। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সংগৃহীত কারান-৩৫১ এর সাথে ICARDA E-21 জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
দেশের বিভিন্ন লবণাক্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় ভাল ফলন দেয়ায় জাতটি জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৫ সালে বারি বার্লি-৭ নামে অবমুক্ত করা হয়।
- লবণাক্ত এলাকায় এ জাতের গাছের গড় উচ্চতা ৫০-৬৫ সেমি।
- শীষ বের হতে ৬০-৬৫ দিন এবং বোনা থেকে পাকা পযর্ন্ত ৯৫-১০৫ দিন লাগে।
- জাতটির শীষ ছয় সারি বিশিষ্ট ও দানাগুলো খোসামুক্ত।
- প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা ৩৮-৪৮।
- দানার রঙ বাদামী ও আকারে মাঝারী।
- হাজার দানার ওজন ৩০-৪০ গ্রাম।
- জাতটি ০৮ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
- হেক্টর প্রতি ফলন ২.০০-২.৫০ টন/হেক্টর (লবণাক্ত এলাকায়)।
জ) বারি বার্লি-৮
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি বার্লি-৮ একটি লবণাক্ততা সহনশীল খোসামুক্ত বার্লির জাত। ক্যালিফোনিয়া থেকে সংগ্রহীত কারান-১৯ এর সাথে ICARDA, সিরিয়া থেকে সংগৃহীত IEBON/96-163 জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
দেশের বিভিন্ন লবণাক্ত এলাকায় মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় ভাল ফলন দেয়ায় জাতটির জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৮ সালে বারি বার্লি-৮ নামে অবমুক্ত করা হয়।
- এ জাতের গাছের গড় উচ্চতা ৭৩ সেমি।
- বোনা থেকে পাকা পযর্ন্ত ৯৫ দিন লাগে।
- জাতটির শীষ ছয় সারি বিশিষ্ট ও দানা গুলো খোসা মুক্ত।
- শীষ গড়ে ১০.৭ সেমি পর্যন্ত লম্বা হয়।
- প্রতিটি শীষে দানার সংখ্যা ৫৮।
- দানার রঙ বাদামী ও আকারে মাঝারী।
- হাজার দানার ওজন ৩৪-৩৮ গ্রাম।
- জাতটি ৪.৮-১০.০ ডিএস/মি পর্যন্ত লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে।
- হেক্টর প্রতিফলন ২.২০-২.৫১ টন/হেক্টর (লবণাক্ত এলাকায়)।
- কম ঊর্বর, প্রতিকূল প্রান্তিক জমি যেমন যেমন লবণাক্ত এলাকায় (নোয়াখালী, পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা ও খুলনা) এবং চরাঞ্চলে কম খরচে এই জাতটি চাষ উপযোগী।
ঝ) বারি বার্লি-৯
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগ কর্তৃক উদ্ভাবিত বারি বার্লি-৯ একটি খরা সহনশীল খোসামুক্ত বার্লির জাত। ক্যালিফোর্নিয়া থেকে সংগ্রহীত কারান-৩৫১ এর সাথে ICARDA, সিরিয়া থেকে সংগ্রহীত E-21 MRA জাতের সংকরায়ণের মাধ্যমে এবং বিভিন্ন আবহাওয়ায় পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়।
- দেশের বিভিন্ন খরা এলাকায় মাঠ পর্যায়ের পরীক্ষায় ভাল ফলন দেয়ায় জাতটির জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৮ সালে বারি বার্লি-৯ নামে অবমুক্ত হয়।
- জাতটির গড় উচ্চতা ১০০ সেমি এবং প্রতি গাছে ৩টি করে কার্যকরি কুশি আছে।
- খরা এলাকায় জাতটির দানার ফলন ২.২ টন/হেক্টর এবং খড়ের ফলন ৪.২ টন/হেক্টর।
- জাতটির শীষ ৮.৯ সেমি লম্বা, শীষে দানা ৬ সারি বিশিষ্ট হয় এবং প্রতি শীষে গড়ে ৩৮টি করে দানা আছে।
- দানা খোসামুক্ত ও খড় বর্ণের এবং ১,০০০ দানার ওজন ৩৬ গ্রাম। জাতটি ৯৭ -৯৯ দিনে পরিপক্ক হয়।
- বাংলাদেশের সকল এলাকাতে এই জাতটি চাষ করা যায় বিশেষভাবে খরা প্রবণ এলাকায় চাষ উপযোগী।
- জাতটিতে খড়ের পরিমাণ বেশি হয় বিধায় খরা প্রবণ এলাকায় যেখানে গবাদী পশুর খাবারের অভাব রয়েছে সেখানে চাষ করা উপযোগী।
(২) বার্লি চাষ পদ্ধতি ও সময়বিধি
ক) মাটি
পানি জমে না এমন বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি বার্লি চাষের জন্য উপযুক্ত।
জমিতে ‘জো’ আসার পর মাটির প্রকারভেদে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হয়।
খ) বপনের সময় ও বীজের হার
- কার্তিক মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে অগ্রহায়ণ মাস (নভেম্বরের ২য় সপ্তাহ থেকে ডিসেম্বরের ২য় সপ্তাহ) পর্যন্ত বীজ বপন করা যায়।
- বার্লি ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। ছিটিয়ে হেক্টরপ্রতি ১২০ কেজি এবং সারিতে বুনলে ১০০ কেজি বীজ প্রয়োজন হয়।
- সারিতে বুনলে ২ সারির মাঝে দূরত্ব ২০-২৫ সেমি রাখতে হবে। লাঙ্গল দিয়ে ৩.৫ সেমি গভীর নালা টেনে তাতে বীজ বুনে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
গ) আগাছা দমন
চারা গজানোর পর ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে ৮-১০ সেমি দূরত্বে একটি চারা রেখে বাকি চারা তুলে পাতলা করে দিতে হবে। জমিতে আগাছা দেখা দিলে নিড়ানি দিয়ে তুলে ফেলতে হবে।
ঘ) সারের পরিমাণ
সাধারণত অনুর্বর জমিতে চাষ করা হলেও সুপারিশমতো সার প্রয়োগে এর ফলন বাড়ানো যায়। বার্লির জমিতে নিম্নরূপ সার প্রয়োগ করা যায়।
সারের নাম | সারের পরিমাণ/হেক্টর |
ইউরিয়া | ১৫০-১৮০ কেজি |
টিএসপি | ১০০-১২৫ কেজি |
এমওপি | ১০০-১২০ কেজি |
জিপসাম | ৪০-৬০ কেজি |
জিংক সালফেট | ৩-৫ কেজি |
ঙ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি
সেচের ব্যবস্থা থাকলে শেষ চাষের সময় অর্ধেক ইউরিয়া এবং সবটুকু টিএসপি ও এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। বাকি অর্ধেক ইউরিয়া ২ কিস্তিতে বীজ বপনের ৩০-৩৫ দিন পর ১ম কিস্তি এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ বপনের ৫৫-৬০ দিন পর (সেচের পর) প্রয়োগ করতে হবে।
চ) পানি সেচ
রবি মৌসুমে খরা দেখা দিলে ১-২ টি হালকা সেচের ব্যবস্থা করলে ফলন বেশি পাওয়া যায়। ফসল সংগ্রহ: শীষ খড়ের রং এবং পাতা বাদামি হয়ে এলে বোঝা যাবে ফসল পেকেছে। চৈত্রের প্রথম সপ্তাহ থেকে মধ্য সপ্তাহ।
(৩) বার্লির চাষে রোগবালাই ব্যাবস্থাপনা
ক) বার্লির পাতা ঝলসানো রোগ
Bipolaris horde প্রজাতির ছত্রাক দ্বারা এ রোগটি ঘটে। সবুজ পাতায় ঈষৎ বাদামি রঙের ছোট ছোট ডিম্বাকার দাগ পড়ে। পরবর্তীকালে এ সকল দাগ বাড়তে থাকে ও গাঢ় বাদামী থেকে কালো বর্ণ ধারণ করে। দাগ একত্রিত হয়ে সমস্ত পাতা বাদামী বর্ণ ধারণ করে এবং ঝলসানোর লক্ষণ দেখা যায়।
ফসলের পরিত্যক্ত অংশ, বীজ ও বায়ুর মাধ্যমে এ রোগ বিস্তার লাভ করে। বায়ুর অধিক আর্দ্রতা ও ২৫০ সে. তাপমাত্রা এ রোগ বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার:
- গাছের পরিত্যক্ত অংশ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- টিল্ট ২৫০ ইসি (০.০৫%) ০.৫ মিলি ঔষধ প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে ১০-১২ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।
- প্রোভেক্স-২০০ ডাব্লিউপি প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
খ) বার্লির গোড়া পচা রোগ
- স্কেলেরোসিয়াম রফসি নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে। এ রোগ জীবাণু প্রায় সকল ক্ষেত্রে মাটির নিকটবর্তী কান্ড ও মূলের সংযোগস্থলে আক্রমণ করে।
- প্রথমে গাছের গোড়ায় হলদে দাগ দেখা যায়, পরে দাগ গাঢ় বাদামি হয়ে আক্রান্ত স্থানের চারদিকে ঘিরে ফেলে, ফলে গাছ শুকিয়ে মরে যায়। অনেক সময় গাছের গোড়ায় ও মাটিতে সরিষার দানার মতো বাদামি থেকে কালো রঙের স্কেলেরোসিয়া গুটি দেখা যায়।
- রোগের জীবাণু মাটিতে বা ফসলের পরিত্যক্ত অংশে দীর্ঘ দিন বেঁচে থাকে এবং বৃষ্টি ও সেচের পানির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করে। আর্দ্রতাপূর্ণ মাটি রোগ দ্রুত বিস্তারের জন্য সহায়ক।
প্রতিকার:
- সবসময় মাটিতে পরিমিত আর্দ্রতা বজায় রাখা প্রয়োজন।
- প্রোভেক্স-২০০ ডাব্লিউপি (প্রতি কেজি বীজে ২.৫-৩.০ গ্রাম) মিশিয়ে বীজ শোধন করে বপন করতে হবে।
(৪) বার্লির চাষে পোকা-মাকড় দমন
বার্লিতে তেমন কোন পোকান্ডমাকড়ের আক্রমণ দেখা যায় না। তবুও সময় সময় কিছু পোকা বার্লি ফসলে আক্রমণ করে থাকে। বার্লির প্রধান অনিষ্টকারী পোকাগুলো হলো: তারপোকা ও কাটুই পোকা।
ক) তারপোকা
চারা অবস্থায় বার্লির ক্ষেতে “তারপোকা” দেখা যায়। গাছের বয়স যখন ২৫-৩৫ দিন হয় তখন তারপোকার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয় ফলে Dead heart লক্ষণ দেখা দেয়। এ ধরণের আক্রান্ত গাছ উঠালে দেখা যাবে গাছের গোড়ার অংশ থেতলিয়ে গেছে।
তারপোকার দমন ব্যবস্থা:
- তার পোকা আক্রান্ত ডগা সংগ্রহ করে কীড়াসহ ধ্বংস করতে হবে।
- যে সমস্ত এলাকায় এ পোকার আক্রমণ বেশি হয় সেখানে হেক্টর প্রতি ১৮ কেজি কার্বোফুরান (ফুরাডান ৫ জি অথবা সানফুরাডান ৫ জি অথবা ফুরাডান ৫ জি) বীজ বপনের সময় মাটিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- সাধারণত বেলে ও বেলে দোআঁশ জমিতে তারপোকার আক্রমণ বেশি হয়। সময় ও স্থানভেদে এ পোকার দ্বারা ৭.৫% পর্যন্ত চারাগাছ আক্রান্ত হতে পারে।
- ফসল তোলার পর আক্রান্ত জমি ভালোভাবে চাষ করলে এ পোকার বংশ বৃদ্ধি কমে যায়।
খ) কাটুই পোকা
এই পোকার ক্ষতিকর ধাপ হচ্ছে কীড়া। কীড়া সাধারণত রাতের বেলা কার্যক্ষম থাকে। দিনের বেলা কীড়া মাটির ফাটলে, মাটির ঢেলায় এবং আবর্জনার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। এরা রাতের বেলা বের হয়ে বার্লির চারাগাছ কেটে ফেলে। সকাল বেলা ক্ষেতে কাটুই পোকা দ্বারা কাটা বার্লির চারাগাছ দেখা যায়। ভোর বেলা ক্ষেতের মধ্যে কাটা গাছের কাছে মাটি খুঁড়লে কাটুই পোকার কীড়া দেখতে পাওয়া যায়। কাটুই পোকার আক্রমণে জমিতে বার্লিগাছের সংখ্যা কমে যায় বলে স্বাভাবিকভাবে ফলনও কম হয়।
কাটুই পোকার দমন ব্যবস্থা:
- কাটুই পোকা দমনের জন্য দিনের বেলা আক্রান্ত গাছের গোড়া থেকে মাটি সরিয়ে পোকা বের করে মেরে ফেলতে হবে।
- হালকা সেচ দিলে মাটির নিচে লুকিয়ে থাকা কীড়া মাটির উপরে আসবে, ফলে পাখি সহজে এদের ধরে খাবে বা হাত দ্বার এদের মেরে ফেলা যাবে।
- এছাড়া বিষ ফাঁদ ব্যবহার করে এ পোকা দমন করা যায়। বিষ ফাঁদ তৈরি করার জন্য প্রতি হেক্টরে ২ কেজি সেভিন ৮৫ ডাব্লিউ পি এর সাথে ১০০ কেজি গম বা ধানের কুড়া মিশ্রিত করে সন্ধ্যার সময় জমিতে প্রয়োগ করতে হবে।
- এছাড়া প্রতি লিটার পানির সাথে ৫ মিলি ডার্সবান ২০ ইসি বা পাইরিফস ২০ ইসি অথবা প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি কীটনাশক (ক্যারেট ২.৫ ইসি বা ফাইটার ২.৫ ইসি) মিশিয়ে গাছের গোড়ার চারপাশে ভালোভাবে স্প্রে করে পোকা দমন করা যায়।
[সূত্র: বিএআরআই]