Skip to content

 

বীজতলা কী? বীজতলা তৈরির পদ্ধতি ও বীজতলার পরিচর্যা

বীজতলা কী, বীজতলা তৈরির পদ্ধতি ও বীজতলার পরিচর্যা

নিম্নে সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরির পদ্ধতি ও বীজতলার পরিচর্যা সমূহ বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো-

সবজির চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। চারা উৎপাদন করে যেসব সবজি ও মসলার চাষ করা হয় তার মধ্যে বাঁধাকপি, ফুলকপি, ওলকপি, ব্রকলি, বেগুন, টমেটো, মরিচ ও পেঁয়াজ উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে আগাম শীতকালীন, গ্রীষ্ম ও বর্ষাকালীন চারা উৎপাদন প্রসার লাভ করছে।

(১) বীজতলা কী?

বীজতলা বলতে আমরা এমন একটি জায়গাকে বুঝি যেখানে বীজ বপন করে বিশেষ যত্নের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করা হয়।

কিছু কিছু সবজির বীজ, যেমন- লালশাক, পালংশাক, শিম, বরবটি, গাজর, মূলা সরাসরি মূল জমিতে বোনা যায়। আবার কিছু  কিছু সবজি যেমন – ফুলকপি, বাধাকপি, টমেটো, ব্রকলি, বেগুন, মরিচ ইত্যাদি সরাসরি জমিতে বুনে আবাদ করা যায় না।

বীজ তলায় বিশেষ যত্নের মাধ্যমে এগুলোর চারা উৎপাদন করে মূল জমিতে রোপন করতে হয়। আবার উন্নত জাতের ফলের কলম করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন রকম পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে কলমের চারা উৎপাদন করা হয়।

বীজতলায় উৎপাদিত চারার বিশেষ যত্ন নেয়ার সুযোগ থাকে বিধায় চারাগুলো সতেজ ও শক্ত চারা হিসাবে গড়ে উঠে। এই উদ্দেশ্যেই আমরা বীজতলা তৈরী করি।

চারা উৎপাদনের জন্য বীজতলা তৈরিতে নিম্নোক্ত কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করা উচিত।

(২) বীজতলার উপকারিতা

  • অল্প জায়গা লাগে।
  • চারার যত্ন ও পরিচর্যা করা সহজ হয়।
  • আগাম চারা উৎপাদন করে মূল জমি থেকে পানি নেমে যাবার পরপরই আগাম সবজি উৎপাদন করা যায়।
  • চারা রোপণের মাধ্যমে জমির সর্বত্র সমান সংখ্যক গাছ রাখা সম্ভব হয়।
  • জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
  • বীজতলা তৈরির উপকরণ
  • সুনিষ্কাশিত উর্বর দোআঁশ বা বেলে দোআঁশ সমৃদ্ধ মাটি, উত্তমরূপে পচানো গোবর/কম্পোস্ট ও টিএসপি সার।
  • বীজতলা ঢেকে দেয়ার জন্য কলাপাতা অথবা পলিথিন, বাঁশের বাতা অথবা কঞ্চি।
  • কেরোসিন, ছাই, চুন, তুঁতে, কীটনাশক ইত্যাদি।
  • ভালো গুণসম্পন্ন বীজ।
  • দা, কোদাল, শাবল ইত্যাদি।

(৩) আদর্শ বীজতলার পরিমাপ

কাজের সুবিধার জন্য একটি আদর্শ বীজতলার মাপ সাধারণতঃ ৩ মিটার দীর্ঘ (১০ ফুট) ও ১ মিটার প্রস্থ (৩ ফুট) হওয়া প্রয়োজন। তবে চারার সংখ্যা অনুযায়ী বীজতলার দৈর্ঘ্য কমানো বা বাড়ানো যেতে পারে।

গ্রীস্মকালীন ও শীতকালীন চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজতলার উচ্চতার তারতম্য থাকে। গ্রীস্মকালীন বীজতলার উচ্চতা সাধারণতঃ ১৫ সে.মি. উঁচু হওয়া দরকার এবং শীতকালীন বীজতলার ক্ষেত্রে ৭-৮ সে.মি. উচ্চতাই যথেষ্ট। পানি নিকাশের সুবিধার জন্য গ্রীস্মকালীন সময়ে বীজতলা অপেক্ষাকৃত উঁচু রাখার প্রয়োজন পড়ে।

নির্দিষ্ট মাপমতো একটি বীজতলার চারকোণে চারটি খুটি পুঁতে দড়ি দিয়ে যুক্ত করে রেখা টানুন। ৩ মিটার লম্বা ও ১ মিটার চওড়া করে একটি আয়তকার ক্ষেত্র তৈরী করুন। এবার এর ৪ কোণায় ৪টি খুঁটি পুঁতে চার দিকে দড়ি দিয়ে বেঁধে দিন। তারপর কোদাল দিয়ে প্রায় ৬ ইঞ্চি বা ১৫ সেঃ মিঃ গভীর করে মাটি খুড়ে তুলে ফেলুন এবং নিম্নবর্ণিত তিনটি স্তরে বীজতলাকে সাজান।

  • সর্বনিম্ন স্তর: প্রায় ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি পুরাতন সুরকি, ভাংগা ইট, পোড়া মাটি ইত্যাদি।
  • মধ্য স্তর: ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি দোঁ-য়াশ মাটি ও বালুর মিশ্রণ।
  • উচ্চ স্তর: ৭.৫ সে:মি: বা ৩ ইঞ্চি বেলে-দোঁয়াশ মাটি , পঁচা গোবর ও কম্পোষ্ট সারের মিশ্রন।
See also  বীজ ও বীজতলা তৈরি

উচ্চ স্তরটি সমতল ভুমি হইতে শীতকালে ৭-৮ সে: মি: উঁচু হবে। বীজতলা যাতে অতি বর্ষায় ভেংগে না যায় এ জন্য ছিদ্র যুক্ত ইট বা বাঁশের চটা দিয়ে বীজতলার উপরিভাগের চার ধার বেধে দিতে হবে।

বীজতলার মধ্যভাগ দু কিনারা হতে একটু উঁচু হওয়া দরকার। এতে বৃষ্টির পানি বা অতিরিক্ত পানি সহজেই গড়িয়ে বের হয়ে যেতে পারবে।

একই ভাবে বীজতলার তৈরীর পদ্ধতি অনুসরণ করে মাটির টব, ঝুড়ি, চাড়ি, কাঠের বাক্স প্রভৃতিতেও চারা উৎপাদন করা যায়। এ পদ্ধতির সুবিধা হলো অল্প পরিসরে চারা উৎপাদন করা যায় এবং প্রতিকূল অবস্থায় সহজেই চারাকে এক স্থান হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা যায়। 

(৪) বীজতলা তৈরির পদ্ধতি

১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট প্রস্থ আকারের ১টি বীজতলা তৈরির পদ্ধতি নিম্নে তুলে ধরা হলো-

  1. জমির মাটি গভীরভাবে চাষ দিয়ে অথবা কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।
  2. তারপর আইল হতে ৯ ইঞ্চি দূরে ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৩ ফুট চওড়া আকারে মাপ দিয়ে চার পাশ থেকে ৪ ইঞ্চি গভীর করে মাটি তুলে বেডের উপর বিছিয়ে দিতে হবে যাতে নালা থেকে বেড ৬ ইঞ্চি উঁচু হয়, এতে বেড হঠাৎ বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হবে না এবং জমির আন্তঃপরিচর্যা করতে সুবিধা হবে।
  3. মাটি, বালি ও পচা গোবর সার বা কম্পোস্ট (২:১:১ অনুপাতে) মিশিয়ে বীজতলার মাটি তৈরি করতে হয়।
  4. মাটি উর্বর হলে রাসায়নিক সার না দেয়াই ভালো। উর্বরতা কম হলে উক্ত মাপের বীজতলার মাটিতে ১০০ গ্রাম টিএসপি সার বীজ বপনের অন্তত এক সপ্তাহ আগে মিশাতে হবে।
  5. বীজ বপনের কয়েকদিন আগে বীজতলার মাটি ২০-২৫ সে. মি. গভীর করে ঝুরঝুরা, উপরিভাগ মসৃণ এবং সমান ও ঢেলামুক্ত করে তৈরি করতে হবে।
  6. এরপর বীজতলার উপরিভাগে সমানভাবে বীজ বপন করতে হবে এবং বীজের উপর ঝুরঝুরে মাটি চালনির দ্বারা চেলে বীজগুলোকে ঢেকে দিতে হবে।

(৫) বীজতলায় বীজ বপন

বীজতলার উপরের স্তর ভালভাবে কুপিয়ে ঝুরঝুরে করে তৈরী করতে হবে। এতে মাটির ভিতরে সহজেই বাতাস ও পানি চলাচল করতে পারবে। চারা গুলোর শিকড় সহজেই মাটিতে প্রবেশ করে খাদ্য ও রস গ্রহণ করতে পারবে। এরপর বীজতলার উপরের স্তর সমান করে বীজ বপন করতে হবে।

বীজ বপনের সময় সমস্ত বীজতলা জুড়ে সমানভাবে বীজ ছিটিয়ে বা লাইন করে বীজ বপন করতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে বীজতলার কোথাও যেন বেশী বীজ এবং কোথাও কম বীজ না পড়ে। তবে ছিটিয়ে বীজ বপনের চেয়ে লাইনে বীজ বপন করা উত্তম, কারন উৎপন্ন চারাগুলো ঠিকমত আলো বাতাস পায়, খাদ্য নিয়ে প্রতিযোগিতা কম হয়, সুস্থ্য-সবল ও মান সম্পন্ন চারা উৎপন্ন হয়।

See also  বীজ ও বীজতলা তৈরি

বীজ যত ক্ষুদ্র হবে (তামাক, সরিষা) মাটিকে তত বেশী ঝুরঝুরে করতে হবে। ছোট আকারের বীজ সমতল হতে ৫ মি:মি: গভীরে বপন করতে হবে। বড় আকারের বীজ যেমন – শিম, লাউ, করল্লা ইত্যাদি সমতল থেকে ২-৩ সে:মি: গভীরে বপন করতে হবে।

  1. বীজতলায় সারি করে বা ছিটিয়ে বীজ বপন করা যায়, তবে সারিতে বপন করা উত্তম।
  2. সারিতে বপনের জন্য প্রথমে নির্দিষ্ট দূরত্বে (৪ সে.মি.) কাঠি দিয়ে ক্ষুদ্র নালা তৈরি করে তাতে বীজ ফেলে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  3. ছোট বীজের বেলায় বীজের দ্বিগুণ পরিমাণ শুকনো ও পরিষ্কার বালু বা মিহি মাটি বীজের সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে মাটিতে বীজ বপন করতে হয়।
  4. শুকনো মাটিতে বীজ বপন করে সেচ দেয়া উচিত নয়, এতে মাটিতে চটা বেঁধে চারা গজাতে ও বাতাস চলাচলে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে। তাই সেচ দেয়া মাটির জো অবস্থা এলে বীজ বপন করতে হয়।
  5. যে সমস্ত বীজের আবরণ শক্ত, সহজে পানি প্রবেশ করে না, সেগুলোকে সাধারণত বোনার পূর্বে পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে এক রাত ভিজিয়ে বপন করতে হয়। যেমন- লাউ, চিচিঙ্গা, মিষ্টি কুমড়া, করলা, উচ্ছে ও ঝিঙ্গা ইত্যাদি।

কোন কোন সবজির বীজ কিছু সময় ভিজিয়ে রাখার পর বপন করা হয়। এতে বীজে অংকুরোদগম ভাল হয়। তবে কপি জাতীয় সবজি ও টমেটোর বীজ বপনের পূর্বে ভিজানোর প্রয়োজন পড়ে না।  

বিভিন্ন বীজের ভিজিয়ে রাখার সময়কাল নিচে দেখানো হলো-

বীজের নামভিজানোর সময়কাল বীজের নাম ভিজানোর সময়কাল   
বেগুন    ২৪-৪৮ ঘন্টা   লাউ   ৪-৬ ঘন্টা   
মরিচ   ৪৮ ঘন্টা   কুমড়া  ৪-৬ ঘন্টা   
পুই শাক   ২৪ ঘন্টা   করলা     ৪-৬ ঘন্টা   
গীমাকলমী   ২৪ ঘন্টা    গাজর   ২৪ ঘন্টা  
পেঁয়াজ    ২৪ ঘন্টা   পানং শাক৪-৬ ঘন্টা   

বীজতলায় বীজ বপনের পর বীজ চাটাই দিয়ে বীজ তলাটি ঢেকে দিতে হবে।

অনেক জাতের সবজি ও ফলের বীজে গজানোর সাথে সাথে পিঁপড়া লাগে ও গজানো বীজগুলো সব নিয়ে যায়। এজন্য বীজ বপনের পর পরই বীজতলার চারদিকে সেভিন পাউডার বা ছাই এর সাথে কেরোসিন মিশিয়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। 

(৬) বীজতলায় চারা উৎপাদিত চারার যত্ন ও বীজতলার পরিচর্যা

চিত্র- টমেটোর বীজতলা
চিত্র- টমেটোর বীজতলা

বীজতলায় বীজ বপনের ২ দিন পর থেকে বীজ কি পরিমাণ গজালো তা লক্ষ্য রাখতে হবে। বীজ গজানো শুরু হলে সাথে সাথে বীজতলা ঢেকে রাখা চাটাই তুলে ফেলতে হবে।

গজানো চারা অতিরিক্ত রৌদ্র ও বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষার জন্য বাঁশের চাটাই অথবা অন্য কিছু দিয়ে তৈরী ঝাপ ব্যবহার করতে হবে। চাটাই অথবা ঝাপ এমন ভাবে খুটর উপরে দিতে হবে যেন  বীজতলা থেকে ১.৫ ফুট বা ৪৫ সে:মি: উপরে থাকে।

  • চারা গজানোর পর থেকে ১০-১২ দিন পর্যন্ত হালকা ছায়া দ্বারা অতিরিক্ত সূর্যতাপ থেকে চারা রক্ষা করা প্রয়োজন।
  • বীজতলায় রাসায়নিক সার ব্যবহার না করাই ভালো। তবে যদি চারার বৃদ্ধি কম হয় বা চারা হলুদ হয়ে যায় তখন প্রতি ১ বর্গমিটার জায়গায় ১০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০ গ্রাম জিপসাম ছিটিয়ে নিয়ে সাথে সাথে পানি দিতে হবে। এতে চারার বৃদ্ধি ত্বরান্বিত হয়।
  • চারা অবস্থায় কাণ্ডের গোড়ায় পচন রোগ দেখা যায়। একে ডাম্পিং অফ বলে। বিভিন্ন ছত্রাক এর জন্য দায়ী। বীজতলার মাটি সব সময় ভেজা থাকলে এবং মাটিতে বাতাস চলাচলের ব্যাঘাত হলে এ রোগ বেশি হয়।এ জন্য বীজতলার মাটি সুনিষ্কাশিত রাখা রোগ দমনের প্রধান উপায়।
  • প্রতিষেধক হিসেবে মাটিতে ক্যাপটান, কপার অক্সিক্লোরাইড বা ডায়থেন এম-৪৫ (১-২ গ্রাম প্রতি লিটার) পানিতে মিশিয়ে বীজতলার মাটি ভালো করে ভিজিয়ে কয়েকদিন পর বীজ বপন করতে হবে।
  • এছাড়াও সৌরতাপ, পোলট্রি রিফিউজ ও খৈল ব্যবহার করেও ডাম্পিং অফ থেকে চারাকে রক্ষা করা যায়।
See also  বীজ ও বীজতলা তৈরি

সকাল বিকাল চাটাই অথবা ঝাপ সরিয়ে দিয়ে চারাগুলোতে রোদ বাতাস লাগানোর ব্যবস্থা রাখতে হবে। চারাগুলো যতই আকারে বাড়বে ততই তাদের রোদের তীব্রতা সহ্য করবার শক্তি বৃদ্ধি পাবে। প্রয়োজন বোধে সকাল বিকাল ঝাঝারি দিয়ে হালকা  সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

চারার বয়স ১০/১২ দিন হলে কাঠ অথবা ক্ষুদ্রাকার নিড়ানী দিয়ে বীজতলার মাটি হালকাভাবে আলগা করে দিতে হবে এবং আগাছা দমন করতে হবে। এই ভাবে প্রতি ২/৩ দিন অন্তর অন্তর মাটি আলগা করতে হবে।

কপির বীজ গজানোর ১৪/১৫ দিন পর অথবা চারাগুলো চার পাতা বিশিষ্ট হলে অন্য একটি আলাদা বীজতলায় রোপন করলে শিকড় অধিকতর শক্তিশালী হয় ও উৎপাদন ভালো হয়।

চারার বৃদ্ধি ভালো না হলে, প্রতি লিটার পানিতে ১-২ গ্রাম ইউরিয়া সার গুলে চারার উপর সেপ্র করলে চারা গুলো আরোও সতেজ হবে। তবে কোন অবস্থাতেই বেশী ইউরিয়া সার দেয়া ঠিক হবে না।

বীজতলার মাটি যদি ভিজা স্যাঁতস্যাঁতে থাকে তবে মাটিতে বসবাসকারী জীবানুগুলো সক্রিয় হয়ে পড়ে এতে বিভন্নি প্রকার রোগ দেখা দিতে পারে। এসব রোগের ভিতর গোড়া পচা রোগ উল্লেখযোগ্য। এই রোগের কারণে অনেক সময় চারা উৎপাদন কষ্টকর হয়। এ রোগের আক্রমণ দেখা দিলে বীজতলা শুকনা রাখা, কুপ্রাভিট অথবা ডাইথেন এম-৪৫ প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে সেচের পানির সাথে প্রয়োগ করলে উপকার পাওয়া যাবে। 

(৭) চারা তোলার সময়

চারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য বীজতলায় রাখা যাবে না। বীজ বপনের ২৫-৪৫ দিনের মধ্যে অধিকাংশ চারা রোপণের উপযোগী হয়। বৃদ্ধির হার স্বাভাবিক হলে বীজ বপনের কতদিন পরে বিভিন্ন প্রকার সবজির চারা রোপনের উপযোগী হয় তা  নিচের তালিকা এ দেখানো হলো। তবে চারা তোলার ৫-৭ দিন আগে থেকে পানি সেচের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। এতে গাছে শর্করার পরিমাণ বেশী হবে ও চারা তোলা জনিত আঘাত সহ্য করতে পারবে। 

বিভিন্ন চারার উত্তোলনকালীন উপযুক্ত বয়স নিচে দেখানো হলো-

চারার নাম রোপণের সময়কাল   চারার নামরোপণের সময়কাল   
ফুল কপি   ২৫-৩০ দিন   টমেটো৩০-৩৫ দিন   
বাধা কপি   ২৫-৩০ দিন    বেগুন ৪০-৫০ দিন   
ওল কপি   ২৫-৩০ দিন      মরিচ  ৪০-৫০ দিন   
শালগম  ২৫-৩০ দিন     পেঁয়াজ৪৫-৫০ দিন   
লেটুস    ২৫-৩০ দিন      পুঁইশাক ২৫-৩০ দিন    
বিট  ২৫-৩০ দিন      চায়নাকপি  ২৫-৩০ দিন    

(৮) চারা তোলার পদ্ধতি

বীজতলা থেকে চারা উঠানোর সময় একবার হালকা সেচ দিয়ে চারা উঠানো উচিত এত চারার শিকড় কম ছিড়ে ও রোপণজনিত আঘাত দ্রুত সেরে উঠে। চারার উঠানোর সময় চিকন কোচা কাঠি দিয়ে মাটিতে চাপ দিলে চারাগুলো সহজেই উঠে আসবে।

(৯) চারা সংরক্ষণ

চারা উঠানোর পর পরই রোপন করা উচিত, এতে করে চারার স্বাস্থ্য ভাল থাকে। তবে অনেক সময় চারা সংরক্ষণের প্রয়োজন হয়। তখন ঠান্ডা অন্ধকারযুক্ত স্থানে চারা ২৪ ঘন্টা থেকে ৩৬ ঘন্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। সেক্ষেত্রে চারার পাতায় প্রয়োজনমত পানি ছিটিয়ে দেওয়া দরকার।

(১০) চারা পরিবহণ

উৎপাদিত চারা দুর দূরান্তে নেওয়ার পূর্বে ও চারা তোলার পূর্বে ভালো ভাবে সেচ দিতে হবে যাতে পরিবহনের সময় চারার শরীরে পানির অভাব না হয়।

চারা রোপনের উপযুক্ত হলে বিক্রয় করতে হবে। চারা বিক্রির জন্য তোলার সময় চারা তোলার পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে। বিক্রিত চারা কলাপাতা, কচুপাতা অথবা পলিথিন কাগজ দিয়ে গোড়া বেঁধে পাতার উপর সামান্য পানি ছিটিয়ে দিয়ে ক্রেতার হাতে দিতে হবে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page