বাংলাদেশ একটি কৃষি নির্ভর দেশ। বাংলাদেশের মূল অর্থনীতি, উন্নয়ন সবটাই নির্ভর করে কৃষির উপর। এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে বীজের গুরুত্ব সকল উপকরণের চেয়ে বেশি। বীজই হলো একমাত্র সেই উপকরণ যা মানসম্পন্ন না হলে অন্যান্য উপকরণের ব্যবহার ফলপ্রসূ হয় না।
কৃষি ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারাকে এগিয়ে নিতে হলে মানসম্পন্ন বীজকে গুরুত্ব দিতে হবে এবং এর সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। বীজের গুরুত্ব বিবেচনা করে ১৯৯৮ সালে বিএআরআই-তে বীজ প্রযুক্তি বিভাগ নামে এই বিভাগের জন্ম হয়। বিভিন্ন ফসলের মানসম্পন্ন বীজের উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং সংরক্ষণ ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন করাই এ বিভাগের প্রধান কাজ।
গবেষণা কর্মকর্তা, সম্প্রসারণকর্মী ও কৃষকদের আধুনিক মানসম্পন্ন বীজ উৎপাদনে প্রয়োজনীয় পরামর্শ, প্রশিক্ষণ ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য বিভিন্ন সভা সমিতি, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম ও প্রশিক্ষণ প্রদান অত্র বিভাগের বিজ্ঞানীদের অন্যতম দায়িত্ব। কৃষকের মাঠে বীজ উৎপাদন কার্যক্রম পরীক্ষা, পরিদর্শন ছাড়াও প্রযুক্তি হস্তান্তরের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বীজ উৎপাদনের আধুনিক কলা কৌশলের উপর মাঠ দিবস আয়োজন করা হয়ে থাকে।
বীজ প্রযুক্তি বিভাগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর থেকে অদ্যাবধি এখানে কর্মরত বিজ্ঞানীরা ভালো মানের বীজ উৎপাদনের এবং সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন রকম প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছেন।
কৃষক পর্যায়ে বীজের অংকুরোদ্গমের পরীক্ষা, বিভিন্ন বীজের সতেজতা পরীক্ষা, বৃষ্টিতে ভিজে যাওয়া গম বীজ কিভাবে সংরক্ষণ করা যায়; ফেলন, মুগবীন, সয়াবিন ইত্যাদি ফসলের বীজ বপনের এবং কর্তনের সঠিক সময় নির্ধারণ; বিভিন্ন ফসল যেমন চীনাবাদাম, মুগবীন, খেসারী, মসুর ইত্যাদি বীজ হিসাবে সংরক্ষণ পদ্ধতি উদ্ভাবন হলো। এগুলো বীজ প্রযুক্তি বিভাগের কর্মকান্ডের প্রতিফলন। শিম, টমেটো, মিষ্টি কুমড়া, লাউ, মিষ্টি মরিচ, বেগুন ফসলগুলোর বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা হয়েছে।
(১) গম বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা
- পুরনো খবরের কাগজ বা ছোট পাত্রে বালি ভরে সেখানে গমের বীজ গজানোর জন্য দিতে হবে।
- প্রতি পাত্রে ১০০টি বা ৫০টি করে বীজ ৪টি পাত্রে মোট ৪০০টি বা ২০০টি বীজ দুই ভাজ করে কাগজের মধ্যে দূরত্ব রেখে ট্রেতে বিছিয়ে ঘরের মাচায় রাখতে হবে এবং কাগজ সব সময় ভেজা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
- পাঁচদিন পর গজানো বীজের সংখ্যা গণনা করে গম বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নির্ণয় করা যায়। অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা শতকরা ৮৫ এবং তার বেশি হলে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ভাল এবং শতকরা ৭৫-৮০ ভাগ হলে অতিরিক্ত ২৫% বীজসহ বুনতে হবে।
- শতকরা ৭০ ভাগের নিচে অঙ্কুরোদগম হলে বীজ হিসেবে ব্যবহারের যোগ্য নয়।
(২) ভুট্টা বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা
- বালি বা মাটিপূর্ণ পাত্রে অথবা কলা গাছের খোল/বাকল ভুট্টা বীজ গজানোর জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে।
- কলা গাছের বাকল প্রয়োজনীয় আকারে কেটে নিয়ে আড়াআড়িভাবে মাঝখান দিয়ে চিরে নিতে হবে।
- তারপর দুই স্তরের মাঝে ৫০টি ভুট্টার বীজ স্থাপন করতে হবে।
- কলাগাছের বাকল যথেষ্ট ভেজা তাই আলাদাভাবে পানি দেয়ার প্রয়োজন নেই।
- বীজসহ বাকলটি ঘরের মধ্যে রেখে দিতে হবে।
- ছয় দিন পর্যন্ত গজাতে দিতে হবে এবং অঙ্কুরোদগমের হার দেখতে হবে।
- বীজ গজানোর হার যদি শতকরা ৯৮-১০০ ভাগ হয় তাহলে একটি করে বীজ প্রতি স্থানে দিতে হবে এবং ৭৫-৯৪ ভাগ হলে দুটি করে বীজ দিতে হবে। তবে ৭৫% এর নিচে হলে বীজগুলো ব্যবহার যোগ্য নয়।
(৩) চীনাবাদাম বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা
- মাটি বা প্লাস্টিকের ছোট পাত্রের ২/৩ ভাগ মাটি বা বালি দিয়ে ভরতে হবে। তার উপর ১০০টি বা ৫০টি করে বীজ বসিয়ে এর উপর আধা ইঞ্চি মাটি দিয়ে বীজ ঢেকে দিতে হবে। এরূপ ৪টি পাত্রে বীজ দিতে হবে।
- পাত্রের বালু প্রয়োজনমতো ভেজা রাখতে হবে। বীজ গজানো পরীক্ষার পাত্রটি ঘরের মধ্যে মাচায় রাখতে হবে।
- বীজ গজানোর সংখ্যা নির্ণয়ের জন্য ৮-৯ দিন অপেক্ষা করতে হবে। তারপর যে সংখ্যক বীজ গজালো তার মাধ্যমে চীনাবাদাম বীজ গজানোর হার নির্ণয় করা যায়।
- বীজ গজানোর পর যদি শতকরা ৮০-৯৫ ভাগ হয় সেক্ষেত্রে ২টি করে বীজ দিতে হবে এবং ৭০-৮০% হলে ৩টি করে বীজ প্রতি স্থানে দিতে হবে।
- শতকরা ৭০ ভাগের নিচে হলে বীজ হিসেবে ব্যবহার যোগ্য নয়।
[সূত্র: বিএআরআই]