(১) বীজ কি/বীজ কাকে বলে?
বীজ কি: ব্যাপকভাবে বীজ বলতে উদ্ভিদের যে কোনো জীবন্ত অংশ যা পরবর্তীতে বংশবিস্তারের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হয়। যেমন: ধান, মিষ্টি আলুর লতা, আখের কাজ, পাথর কুচির পাতা, পেঁয়াজ, গোলআলু ইত্যাদি।
বীজ কাকে বলে: উদ্ভিদের বংশবিস্তারের মাধ্যম হলো বীজ। বীজ থেকেই নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়। সাধারণভাবে উদ্ভিদের নিষিক্ত ও পরিপক্ক ডিম্বককে বীজ বলে। যেমন ধান, গম, পাট ইত্যাদির বীজ।
(২) ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য
আমরা এ পর্যন্ত অনেক বীজ দেখলাম এবং বীজের নাম শনাক্ত করতে পারলাম। এবার আমরা ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানব।.
ভালো বীজের বৈশিষ্ট্যসমূহ হলো-
- বীজ বিশুদ্ধতা: কাঙ্ক্ষিত ফসলের বীজের সাথে যেন অন্য ফসলের বীজ, আগাছার বীজ, কাঁকর জাতীয় পদার্থ প্রভৃতি মিশ্রিত না থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এতে বীজের বিশুদ্ধতা বজায় থাকে না।
- জাত বিশুদ্ধতা: কোনো বীজের নমুনায় একই ফসলের অন্য জাতের বীজ থাকলে বীজের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়। যেমন: নাইজারশাইল ধানের বীজের সাথে বিনাশাইল ধানের মিশ্রণ থাকলে জাত বিশুদ্ধতা থাকে না। নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে বীজ উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাত করলে জাত বিষণ্নতা বজায় থাকে।
- গজানোর ক্ষমতা: এ বিষয়টিকে বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা বলে। কোনো বীজ নমুনায় কতোটি বীজ অঙ্কুরিত হবে সে হিসাব থেকেই বীজের ভালোমন্দ গুণ বিচার করা হয়। উত্তম বীজের অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা ১০০% পর্যন্ত হতে পারে। কিন্তু সবসময় সব বীজ এ হারে গজায় না। কমপক্ষে ৮০% গজানোর হার সম্পন্ন বীজকে উত্তম বীজ বলা যায়।
- বীজের জীবনীশক্তি তেজ: নমুনা বীজের চারা যদি সতেজ, সঞ্জীব ও স্বাস্থ্যবান হয় এবং প্রতিকূল অবস্থায় তাড়াতাড়ি বেড়ে উঠতে পারে, তবে সে বীজকে তেজৰী বীজ বলা হয়।
- বীজের আর্দ্রতার নমুনা: বীজের মধ্যে শতকরা কতো ভাগ পানি আছে, তাই বীজের আর্দ্রতা। বীজের আর্দ্রতা বীজকে বাঁচিয়ে রাখে। যেমন দানা শস্যের বীজের আর্দ্রতা ৮–১০% রাখা উত্তম।
- বীজের বর্ণ: প্রত্যেক জাতের বীজের স্বতন্ত্র রং থাকে। আর তাই ভালো বীজের ক্ষেত্রে স্বাভাবিক উজ্জ্বল রং থাকতে হবে। ভালো বীজ চেনার প্রথম লক্ষণই হচ্ছে বীজের স্বাভাবিক উজ্জ্বলতা।
(৩) বীজ কত প্রকার? বীজের প্রকারভেদ
বিভিন্নভাবে বীজের শ্রেণিবিভাগ করা যায়। যেমন- ব্যবহারের ভিত্তিতে, বীজাবরণের উপস্থিতির ভিত্তিতে ও বীজপত্রের সংখ্যার ভিত্তিতে।
ব্যবহারের ভিত্তিতে বীজকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়-
- উদ্ভিদতাত্ত্বিক বীজ: উদ্ভিদ বিজ্ঞানীদের মতে, নিষিক্ত ও পরিপত্ব ডিম্বককে বীজ বলে। যেমন: ধান, পাট, গম ইত্যাদি বীজ।
- কৃষিতাত্ত্বিক বীজ: কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে, উদ্ভিদের যেকোনো অংশ যা উপযুক্ত পরিবেশে আপন জাতের নতুন উদ্ভিদের জন্ম দিতে পারে, তাকে কৃষিতাত্ত্বিক বীজ বলে। যেমন: আদা ও হলুদের কন্দ, মিষ্টি আলুর লতা, কাঁকরোলের মূল, আখের কাজ ইত্যাদি।
বীজাবরণের উপস্থিতির ভিত্তিতে বীজকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- অনাবৃত বীজ: এসব বীজে কোনো আবরণ থাকে না। যেমন: পাইন, সাইকাস ইত্যাদি।
- আবৃত বীজ: এসব বীজের আবরণ থাকে। যেমন: ধান, সরিষা, ইত্যাদি।
বীজপত্রের সংখ্যার ভিত্তিতে বীজকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
- একবীজপত্রী বীজ: এসব বীজে একটি মাত্র বীজপত্র থাকে। যেমন: ধান, গম, ভুট্টা ইত্যাদি
- দ্বিবীজপত্রী বীজ: এসব বীজে দুটি বীজপত্র থাকে। যেমন: ছোলা, আম, কাঁঠাল ইত্যাদি।
- বহুবীজপত্রী বীজ: এসব বীজে দুইয়ের অধিক বীজপত্র থাকে। যেমন: পাইন।
(৪) কিভাবে ভালো বীজ বাছাই করতে হয়?
ভালো বীজে ভালো ফসল অর্থাৎ গুণগত মানসম্পন্ন বীজ থেকেই ভালো ফসল জন্মায়।
প্রবাদ আছে যে, ‘সুবংশে সুসন্তান সুধীজনে কয় ভালো বীজে ভালো ফসল জানিবে নিশ্চয়’।
ফসল উৎপাদনে ভালো বীজের গুরুত্ব অপরিসীম। অনেক সময় ভালো বা উন্নত জাতের বীজ হলেও নানা কারণে বীজ ভালো হয় না। বীজে অনেক কিছু থাকতে পারে, যা উন্নত জাতের বীজকেও নির্গুণ করে দেয়।
ক) ভালো বীজের বৈশিষ্ট্য
- অন্য জাতের মিশ্রণমুক্ত থাকতে হবে।
- বীজ পরিষ্কার ও পুষ্ট হবে।
- বীজের রং স্বাভাবিক হবে।
- বীজ দাগযুক্ত বা পোকা খাওয়া বা ভাঙা হবে না।
- ইট, পাথরের কণা ও আগাছা থেকে বীজ যুক্ত হবে।
- বীজ অঙ্কুরোদ্গমের শতকরা হার কম পক্ষে ৮০ ভাগ হবে।
খ) ভালো বীজ পেতে করণীয়
- ভালো বীজ পেতে হলে নীরোগ ও পোকামুক্ত জমি হতে বীজ সংগ্রহ করতে হবে।
- ভালো করে ফসল কাটার পর পরিচ্ছন্নভাবে মাড়াই-ঝাড়াই করে বীজকে অন্যজাতের বীজ, ইট-পাথরকণা, আগাছার বীজ, চিটা ইত্যাদি থেকে মুক্ত করতে হবে।
- তারপরও বীজে ভেজাল থাকতে পারে। তাই বীজ বাছাই করা একান্ত প্রয়োজন।
খ) কিভাবে ভালো চারা বাছাই করতে হয়?
নিম্নলিখিতভাবে বীজ বাছাই করা যায়।
i) বীজ বাছাইয়ের উপকরণ নির্বাচন
- ১টি চিমটা, ১টি আতশ কাচ, ১ তা সাদা কাগজ ও ১টি ছোট নিক্তি
- নির্দিষ্ট ফসলের বীজ
ii) বীজের পরিমাণ
- ছোট বীজ ১০ গ্রাম
- মাঝারি বীজ ৫০ গ্রাম
- ধান বা গম আকারের বীজ ১০০ গ্রাম
iii) কাজের ধাপ
- ১০০ গ্রাম ধানের বীজ গুণে নিন।
- সাদা কাগজে ধানের বীজগুলো রাখুন।
- বীজগুলো হতে- অন্য জাতের বীজ, ভাঙা বা পোকা খাওয়া বীজ, অপুষ্ট বীজ, আগাছার বীজ ও জড় পদার্থ বস্তুগুলো অপসারণ করুন।
- এখন বাছাইকৃত বীজ ও অপসারিত বস্তু আলাদাভাবে ওজন কর এবং বাছাইকৃত বীজের শতকরা হার বের কর। যার সূত্র: বাছাইকৃত বীজের শতকরা হার = (মোট বীজের ওজন – অপসারিত বস্তুর ওজন) ÷ মোট বীজের ওজন।
বাছাইকৃত বীজের শতকরা হার যত বেশি হবে বীজ তত ভালো হবে, অর্থাৎ বীজ তত বিশুদ্ধ হবে। এভাবে আমরা বীজের বিশুদ্ধতার হার নির্ণয় করে ভালো বীজ চিনতে পারি।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।