Skip to content

 

বেবী কর্ণ চাষ পদ্ধতি (ভুট্টার জাত বিশেষ)

বেবী কর্ণ চাষ পদ্ধতি

বেবী কর্ণ বা বেবী ভুট্টা হলো, বিশেষ এক ধরনের ভুট্টা। ভুট্টার মোচা কচি অবস্থায় সংগ্রহ ও কাঁচা অবস্থা সালাদ হিসেবে খাওয়া করা হয় বলে নামকরণ হয়েছে বেবী কর্ণ।

সাধারণত ভুট্টা (Field corn), মিষ্টি ভুট্টা (Sweet corn) অথবা খই ভুট্টা (Pop corn) এবং হাইব্রিড বা মুক্তপরাগায়িত (OPV) যে কোন জাতকেই বেবী ভুট্টা হিসেবে ব্যবহার করা যায় যদি তা থেকে বাজারজাত করার উপযোগী মানসম্পন্ন মোচা পাওয়া যায়। তবে বেবী ভুট্টা হিসেবে ব্যবহারে জন্য উদ্ভাবিত বিশেষ জাতও রয়েছে।

বেবী ভুট্টা হিসেবে চাষকৃত জাতের একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এ জাতগুলোতে গড়ে প্রতি গাছে ২-৪টি মোচা পাওয়া যায়।

বেবি ভুট্টা অত্যন্ত কচি অবস্থায় সবজি, স্যুপ, সালাদ নুডুলস এর সাথে অথবা কাঁচা অবস্থায় রান্না ছাড়াই খাওয়া যায়। ভুট্টার কচি মোচা পরাগায়ণের পূর্বেই সংগ্রহ করে সবুজ খোসা অপসারণ করে ব্যবহার করতে হয়।

সম্প্রসারণের মাধ্যমে বেবি কর্ন হতে তৈরি বিভিন্ন খাবার ও প্রস্তুতপ্রণালি সাধারণ মানুষের নজরে আনার ও খাবার হিসেবে একে গ্রহণযোগ্যর চেষ্টা করা যেতে পারে। একই সঙ্গে কৃষকদের মাঝে প্রচলিত অন্যান্য ফসলের তুলনায় বেবি কর্ন চাষে অর্থনৈতিক লাভ তুলে ধরতে পারলে তা এর জনপ্রিয়তা বাড়াতে সহায়ক হবে।

(১) বেবী কর্ণ এর জাত ও বৈশিষ্ট্য

ক) বারি বেবী কর্ণ-১

থাইল্যান্ডের ক্যাসেটর্সাট বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জাতটি সংগ্রহ করে বাংলাদেশের আবহাওয়ায় চাষাবাদ উপযোগিতা যাচাই বাছাই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত “বারি বেবী কর্ণ-১” জাতটি ২০১৩ সালে চাষাবাদের জন্য অনুমোদিত হয়।

বারি বেবী কর্ণ-১
বারি বেবী কর্ণ-১
  • রবি মৌসুমের পুরুষ ফুল বের হতে গড়ে ৮৬ দিন এবং বীজ বোনা থেকে বেবী কর্ণ সংগ্রহ করা পর্যন্ত ৮৫-১০০ দিন সময় লাগে।
  • গাছের গড় উচ্চতা ১৪০-১৫৫ সেমি (রবি মৌসুমে)।
  • মোচার অগ্রভাগ সুচালো এবং মোচাতে সারির বিন্যাস সামঞ্জস্যপূর্ণ।
  • প্রতিটি গাছে ২-৩টি করে বাজারজাত উপযোগী মোচা উৎপন্ন হয়।
  • জাতটি টারসিকাম লিফ বাইট রোগ প্রতিরোধী। হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন পশু খাদ্য পাওয়া যায়।
  • রবি মৌসুমে গড় ফলন ১.২৭-১.৩০ টন/হেক্টর (খোসা ছাড়া)।
See also  ভুট্টা চাষের পদ্ধতি (ভুট্টা চাষ পদ্ধতি pdf সহ)

খ) বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১

বাংলাদেশ গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত এ হাইব্রিডটি সিঙ্গেল ক্রস পদ্ধতিতে উদ্ভাবিত তুলনামূলকভাবে খাটো আকৃতির উচ্চফলনশীল জাত। প্রথমে বানিজ্যিক বেবিকর্ণ জাত BCP 271 হতে ৭ (সাত) বছর ধরে স্ব-পরাগায়ন (সেলফিং) ও নির্বাচন (সিলেকসন) এর মাধ্যমে ইনব্রিড লাইন তৈরি করা হয়। পরবর্তীতে সেখান থেকে কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন ইনব্রিড লাইনগুলো সনাক্ত করে তাদের মধ্যে সংকরায়নের মাধ্যমে তৈরিকৃত হাইব্রিডগুলি মূল্যায়ন করা হয়। মূল্যায়নে প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হাইব্রিডগুলি বেশ কয়েক বছর ধরে বহুস্থানিক মাঠ মূল্যায়ন করা হয়। সেখান থেকে মাঝারি উচ্চতা বিশিষ্ট ও অধিক সংখ্যক মোচাসমৃদ্ধ একটি হাইব্রিড (BML 74 × BML-73) বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী হিসেবে প্রতীয়মান হয়। পরবর্তীতে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক নিবন্ধনের পর হাইব্রিডটি ২০২০ সালে অবমুক্ত করা হয়।    

বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১ (গাছ)
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১ (গাছ)
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১ (মোচা)
বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড বেবিকর্ণ-১ (মোচা)
  • গাছে সংগ্রহ উপযোগী প্রথম বেবি মোচা গড়ে ৯৭ দিনে এবং বাকি মোচাগুলোও পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যেই সংগ্রহ করা যায়।
  • রবি মৌসুমে গাছ ও মোচার উচ্চতা যথাক্রমে ১৭০-১৮৫ সে.মি. এবং ৭০-৭৫ সে.মি.।
  • প্রতিটি গাছ থেকে ৩-৪ টি কচি মোচা পাওয়া যায় যাদের মোট ওজন ৩৪.৪ গ্রাম।
  • বেবিমোচার সিল্কের রং মাঝারী গোলাপী বর্ণের, খোসা ছাড়ানো কচি মোচা হলুদ থেকে ক্রীম বর্ণের।
  • কচি মোচা সংগ্রহের সময় গাছ ও পাতা সবুজ অবস্থায় থাকে বিধায় সম্পূর্ন গাছকে সবুজ গো-খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়। কর্ণের TSS এর পরিমাণ ১২.২ ব্রিক্স।
  • সমগ্র বাংলাদেশেই জাতটি আবাদের উপযোগী।   
  • রবি মৌসুমে হেক্টর প্রতি অপরিপক্ক বা কচি খোসা ছাড়ানো মোচার ফলন ২.৩০-২.৬৫ টন। জাতটি থেকে হেক্টর প্রতি ৪১.৩-৪৪.০ টন সবুজ গো-খাদ্য পাওয়া যায়।

(২) বেবী কর্ণ চাষ পদ্ধতি ও পরিচর্যা

মাটি:

উঁচু ও মাঝারী উঁচু ঊর্বর বেলে দো-আঁশ মাটি অথবা পানি দাঁড়ায় না এমন এঁটেল মাটিতে বেবী কর্ণ চাষ করা যায়।

See also  ৫০টি ভুট্টার জাত সমূহ

জমি তৈরি:

মাটির ‘জো’ থাকা অবস্থায় জমির প্রকারভেদে প্রথমে ৩-৪টি আড়াআড়ি চাষ ও মই দিয়ে মাটি ঝুরঝুরে করে নিতে হবে।

বপনের সময়:

সারা বছর বেবী কর্ণ চাষ করা যায় (বৈশাখ, জ্যৈষ্ঠ , আষাঢ় ও শ্রাবণ মাস ছাড়া)। বীজের হার: হেক্টরপ্রতি ২৫-৩০ কেজি।

বীজের বপন পদ্ধতি:

সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০-৫০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ২০-২৫ সেমি। এতে প্রতি হেক্টর জমিতে ৮০,০০০-১,২৫,০০০ গাছ থাকবে।

সারের পরিমাণ:

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া২৫০-৩০০ কেজি
টিএসপি১২৫-১৫০ কেজি
এমওপি৮০-১০০ কেজি
জিপসাম (প্রয়োজনবোধে)১২৫-১৫০ কেজি
জিংক সালফেট (প্রয়োজনবোধে)৮-১০ কেজি

সারের প্রয়োগ পদ্ধতি:

জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে ইউরিয়া সারের ১/৩ অংশ ও অন্যান্য সারের সবটুকুই জমিতে ছিটিয়ে চাষ ও মই দিয়ে মাটির সাথে ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে। বাকি ইউরিয়া সমান ২ ভাগ করে চারা গজানোর ১৫-২০ দিন এবং ৩৫-৪০ দিন পর জমির ঊর্বরতাভেদে উপরি প্রয়োগ করতে হবে। মাটির ঊর্বরতাভেদে সারের তারতম্য হতে পারে।

আগাছা দমন:

গাছের বয়স ১ মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি অবশ্যই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

সেচ ও পানি নিষ্কাশন:

রবি মৌসুমে সাধারণত ২ বার সেচের প্রয়োজন হয় এবং ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় সেচ দিলে ভালো হয়। খরিফ মৌসুমে খরা দেখা দিলে সেচ দিতে হবে। খরিফ মৌসুমে অতি বৃষ্টিতে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

বেবী কর্ণের পুরুষ ফুল/মঞ্জুরীদন্ড অপসারণ:

পুরুষ ফুল কচি অবস্থায় ফুটে বের হওয়ার পূর্বেই টাসেল ধরে টান দিয়ে অপসারণ করতে হয়।

ফসল সংগ্রহ:

নিচের দিকে মোচার মাথায় যখন সিল্কগুলো ১-৩ সেমি লম্বা হয় তখন ধারালো চাকু বা কাঁচি দ্বারা মোচাটি গাছ থেকে কেটে নিতে হবে।

ফলন:

হেক্টরপ্রতি ফলন ১.২৭-১.৩০ টন (খোসা ছাড়া) এছাড়া গো-খাদ্য হিসেবে (গাছ) ১৫-২০ টন।

See also  বেবী কৰ্ণ বা বেবী ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

জীবন কাল:

গ্রীষ্মকাল : ৫০-৬০ দিন, শীতকাল : ৭০-৮০ দিন।

সংরক্ষণ:

টাটকা মোচার ক্ষেত্রে সংগ্রহের পর হতে ভোক্তার হাতে পৌঁছার পূর্ব পর্যন্ত বাজার জাতকরণের সকল স্তরে নিম্ন তাপমাত্রা (৫-৭০ সে.) এবং উচ্চ আপেক্ষিক আর্দ্রতায় (৯০ শতাংশ) সংরক্ষণ করতে পারলে ৭-১০ দিন পর্যন্ত ভালো থাকে।

তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে মোচা অল্প সময়ে শুষ্ক হয়ে দানা বসে যায় এবং বাদামী বর্ণ ধারণ করে, ফলে বাজারমূল্য কমে যায়।

এছাড়া ব্রাইন দ্রবণে বায়ুরোধক পাত্রে (ক্যানে) বেবী কর্ণ সংরক্ষণ করা হলে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়। প্রতি ক্যানে ১ কেজি বেবীকর্ণ থাকে। অভিজাত দোকানে একটি ক্যানের বর্তমান বাজার মূল্য ২০০-২২৫ টাকা।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page