প্রিয় খামারি বন্ধুরা, আপনারা অনেকই জানতে চান ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? তারই প্রেক্ষিতে আমরা অনুষন্ধান করে আপনাদের জন্য ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত এর তলিকা প্রস্তুত করেছি। ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাতের নাম ও ফলনের পরিমাণ, তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সেরা ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? কোন প্রতিষ্ঠান বা কম্পানির ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? ইত্যাদি বিষয়গুলো সাজিয়েগুছিয়ে আপনাদের সামনে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করিআলোচনাটি আপনার উপকারে আসবে। আশা করি শেষ অবধি সাথেই থাকবেন। চলুন শুরা করা যাক।
(১) ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি?
ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ থেকে শুরু করে ১৭ অবধি সবগুলো। এবং বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১, বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ২, প্রোফিট, শাহী, ডন-১১১, ডন-১১২, প্যাসিফিক-১৩৯ ও কাভেরি-৩৬৯৬, ঊত্তরণ, উত্তরন-২, উত্তরন সুপার, বিপ্লব, বিপ্লব, শক্তি, শক্তি-৩, প্যাসিফিক ২৯৩, প্যাসিফিক ৯৮৪ ও প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার, প্যাসিফিক ৫৫৫ হাইব্রিড, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১ প্রভৃতি এগুলো হলো ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত। এগুলোর ফলন রবি মৌসুমে প্রতি শতকে ৪০-৪৭ কেজি বা, প্রতি বিঘাতে ১১৩৫-১৮৭০ কেজি বা, প্রতি হেক্টরে কমপক্ষে ১০ টন থেকে ১৪ টন অবধি হয়ে থাকে। এছাড়াও নতুন নতুন জাতও আসছে দিন দিন।
(২) সবচেয়ে সেরা ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি?
২০২৪ সাল অবধি, শীর্ষ স্থানে র্যাঙ্কিং থাকা, ১২টি সবচেয়ে বেশি উন্নত ও ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো-
- বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-২। যার ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১২.০-১৪.০ টন।
- উত্তরন-২। ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন।
- উত্তরন সুপার। ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন।
- প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার। ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন।
- প্যাসিফিক ২৯৩। ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১২-১৪ টন।
- প্যাসিফিক-১৩৯। এ সি আই লিমিটেড। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন।
- ডন-১১২। এ সি আই লিমিটেড। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন।
- ডন-১১১। এ সি আই লিমিটেড। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন।
- বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-১। যার ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১১-১৩ টন।
- প্যাসিফিক ৯৮৪। ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ। উৎপাদন (সেচ সহ) প্রতি হেক্টরে ১০-১২ টন।
- বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১৭। যার ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১১.০-১২.০ টন।
- হাইব্রিড ভুট্টা-১৬। যার ফলন রবি মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ১১.৫৭ টন।
(৩) কম্পানিভেদে ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি?
নিম্নে উল্লিখিত জাতগুলোর ফলন প্রতি হেক্টরে ১০ টন থেক ১৪ টন অবধি হয়ে থাকে-
এ সি আই লিমিটেড কম্পানির ৬টি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো: প্রোফিট, শাহী, ডন-১১১, ডন-১১২, প্যাসিফিক-১৩৯ ও কাভেরি-৩৬৯৬।
ব্র্যাক সীড এন্ড এগ্রো এন্টারপ্রাইজ এর ১১টি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো: ঊত্তরণ, উত্তরন-২, উত্তরন সুপার, বিপ্লব, বিপ্লব, শক্তি, শক্তি-৩, প্যাসিফিক ২৯৩, প্যাসিফিক ৯৮৪ ও প্যাসিফিক ৯৯৯ সুপার।
লাল তীর সীড লিমিটেড এর ১টি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো: প্যাসিফিক ৫৫৫ হাইব্রিড।
বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট এর ১৫টি ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত হলো: বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৫ থেকে শুরু করে ১৭ অবধি সবগুলো। বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ১, বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা ২, বারি মিষ্টি ভুট্টা-১।
দেশের মাঠে ভুট্টার এখন শতকরা একশত ভাগই (১০০%) হাইব্রিড ভুট্টা জাতের চাষ করা হচ্ছে।
ভুট্টার ক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতগুলো এতটাই সফল যে, দেশের কোন কোন এলাকার মানুষের কাছে হাইব্রিড ভুট্টা মহা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার মানুষের জীবন ধারাই বদলে দিয়েছে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ।
এগুলো জাত কৃষকের মাঠে রবি মৌসুমে যথেষ্ট জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে ভবিষতে এজাতগুলোর বীজ ব্যবহার করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করা সম্ভব।
এজাতগুলোর মধ্য থেকে ‘বিডাব্লিউএমআরআই হাইব্রিড ভুট্টা-২’ এর উপর দিনাজপুরে গত ১ মে ২০২৩ একটি মাঠ দিবস অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে এর ফলন প্রায় ১৪ টন/হেক্টর পাওয়া গিয়েছে।
(এখানে শুধু ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? তা উল্লেখ করা হলো। নিম্নক্তো ২টি পোষ্টে উপরের উল্লিখিত সকল ভুট্টার জাত সম্পর্কে বিষদ আলোচনা হয়েছে: https://inbangla.net/krisi/হাইব্রিড-ভুট্টার-জাত/ https://inbangla.net/krisi/ভুট্টার-জাত-সমূহ/ এই পোষ্টটিতে তুলে ধরা সকল ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত সমূহরে পরিচিতি, বৈশিষ্ট্য, গুণাবলী, চাষে উপযোগী অঞ্চল, ফলন, গাছ ও ফলের ছবি বিভিন্ন বিস্তারিত তথ্য জানতে পারবেন উপরে দেওয়া লিংক ২টি থেকে।)
(৪) হাইব্রিড ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত সম্পর্কে কিছু কথা
আমাদের দেশে ভুট্টার চাষ শুরু হয়েছিল ভুট্টার কম্পোজিট জাতের বীজ দিয়ে সেই ১৯৭৫ সনে।
কয়েকটি উত্তম ইনব্রিড লাইনের মধ্যে মুক্ত পর-পরাগায়ন করে পাওয়া বীজ তখন ভুট্টার আবাদের জন্য ব্যবহার করা হতো। ফলে এসব বীজের মান উত্তম না হওয়ায় ভুট্টার ফলন কখনো উৎসাহব্যঞ্জক হয়নি। এ কারণে ভুট্টার আবাদি জমির পরিমাণ এবং উৎপাদন দু’টিই যেমন কমেছে তেমনি কমেছে এর ফলনও। প্রচলিত ভুট্টা জাতের ব্যবহারের ফলে ১৯৬৭-৬৮ সন থেকে ১৯৮৬-৮৭ সন পর্যন্ত ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন তিনটিই শতকরা ২.১০ ভাগ, ৩.৫৯ ভাগ এবং ০.৬৯ ভাগ হ্রাস পেয়েছে। ভুট্টা চাষে সে সময় কৃষকদের মনোযোগও আকর্ষণ করা সম্ভব হয়নি।
বিএআরআই ১৯৮৬ সনে তিন তিনটি ভুট্টার হাইব্রিড জাত আবাদের জন্য অবমুক্ত করে। অতঃপর ধীরে ধীরে প্রাইভেট বীজ কোম্পানিগুলোর মাধ্যমে এ দেশে আসতে থাকে বিদেশি হাইব্রিড ভুট্টার নানা রকম জাতের বীজ।
১৯৯৩ সন থেকে এদেশে ভুট্টা চাষের জন্য হাইব্রিড ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত ্ বীজের ব্যবহার মোটামুটি শুরু হয়ে যায়। বাড়তে থাকে ভুট্টার আবাদি জমি, বাড়তে থাকে মোট উৎপাদন এবং হেক্টর প্রতি ফলনও। ১৯৮৭-৮৮ সনের সাথে ২০০৩-০৪ সনের তুলনা করলে স্পষ্টতই দেখা যায় যে, ভুট্টার আবাদি এলাকা, মোট উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন বেড়েছে যথাক্রমে ১৯.৮৩, ৩৪.৪০ এবং ১৪.৫৬ ভাগ।
হাইব্রিড ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাতগুলো ওসিলায় দেশের ভুট্টা চাষের ইতিহাসটাই যেন পাল্টে যাচ্ছে দিন দিন।
মাঠে ভুট্টা গাছ আর এর দানাসমৃদ্ধ হলদে মোচার দাপট দেখলে কে বলবে যে, সুদূর মেক্সিকোতে এর জন্মস্থান। এ দেশের জল-হাওয়া-মৃত্তিকায় চমৎকার মানিয়ে নিয়েছে ভুট্টা। গত এক দশকে হাইব্রিড ভুট্টার আবাদি এলাকা, উৎপাদন ও হেক্টর প্রতি ফলন উল্লেখযোগ্য রকমভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। হেক্টর প্রতি ফলনের দিক থেকে ভুট্টার স্থান দানাশস্যগুলোর মধ্যে প্রথম, কিন্তু আবাদি এলাকা ও মোট উৎপাদনের দিক থেকে এটি ধান ও গমের পর এখন তৃতীয় স্থানে রয়েছে।
২০০২-০৩ সনে এ দেশে মোট ভুট্টার উৎপাদন ছিল মাত্র ১.৭৫ লাখ টন। ২০১২-১৩ সনে সে ভুট্টার ফলন দাঁড়িয়েছে ২১.৭৮ লাখ টনে। গত দশ-এগার বছরে এ দেশে ভুট্টার ফলন বৃদ্ধি পেয়েছে ১২ গুণেরও অধিক। ২০১৩ সনে বাংলাদেশের ৩.১২ লাখ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যা ২০১০ সনে ছিল ২.৮৩ লাখ হেক্টর। বাংলাদেশে হেক্টর প্রতি ভুট্টার ফল বেশ ভালো। যেখানে বিশ্বে ভুট্টার হেক্টর প্রতি গড় উৎপাদন ৪.৯ মেট্রিক টন, বাংলাদেশে তা ৫.৩৭ মেট্রিক টন।
ভুট্টা হলো আমাদের দেশের একমাত্র ফসল যার প্রতিটি জাতই এখন হাইব্রিড। অর্থাৎ এ দেশের মাঠে ভুট্টার এখন শতকরা একশত ভাগই হাইব্রিড ভুট্টা জাতের আবাদ করা হচ্ছে।
হাইব্রিড ফসল নিয়ে আমাদের নাক সিটকানোর দিন শেষ হয়েছে। ভুট্টা ছাড়াও বহু সবজি ফসলে এখন হাইব্রিড জাতের বীজই উৎপাদনের অন্যতম ভরসা।
ভুট্টার ক্ষেত্রে হাইব্রিড জাতগুলো এতটাই সফল যে, দেশের কোন কোন এলাকার মানুষের কাছে হাইব্রিড ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত চাষ মহা আশীর্বাদ হিসেবে দেখা দিয়েছে। অনেক এলাকার মানুষের জীবন ধারাই বদলে দিয়েছে হাইব্রিড ভুট্টার চাষ।
হাইব্রিডের বিপক্ষে যারা সোচ্চার তাদের জন্য বাস্তবে এর ফলন ও মানুষের জীবনযাত্রার ওপর ভুট্টার হাইব্রিডের কি দারুণ প্রভাব তা পর্যবেক্ষণ করা বড় জরুরি বলে বিবেচনা করি।
চরের ধূ ধূ বালুতে হাইব্রিড ভুট্টা কতটা প্রাণচাঞ্চল্য ফিরিয়ে এনেছে না দেখলে তা বিশ্বাস করা কঠিন।
ভুট্টার চাষ এসব এলাকার মানুষের জীবনযাত্রায় বহুমাত্রিক প্রভাব নিয়ে এসেছে। এর ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। ভুট্টার দানা ভুট্টার প্রধান আকর্ষণ বটে তবে পাশপাশি ভুট্টা থেকে আলাদা করা মোচা ও ভুট্টার গাছ চাষিরা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছেন। নারী শ্রমিকেরাও এখানে ভুট্টা সংগ্রহ, মাড়াই, বাছাই ও শুকানোসহ নানা রকম কাজের সাথে জড়িত হয়েছে। ফলে নারীদেরও স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
হাইব্রিড ভুট্টার আবাদ এক নবযুগের সূচনা করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তপরাগী ভুট্টার জাত নিয়ে যখন কিছুতেই আর ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব হচ্ছিল না তখন ভুট্টার হাইব্রিড জাত সৃষ্টি আমেরিকাতে এক নতুন মাত্রা নিয়ে যেন হাজির হয়। অল্প কিছু দিনের ভেতরই সেখানে হাইব্রিড এতটাই জনপ্রিয় হয়ে উঠে যে ১৯৩৪ সনে যেখানে মাত্র শতকরা এক ভাগ জমিতে ভুট্টার হাইব্রিড আবাদ করা হয় সেখানে চল্লিশের দশকে এসে তা শতকরা ৭৮ ভাগ জমি দখল করে নেয়। পঞ্চাশের দশকে এসে হাইব্রিড ভুট্টা যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ জমি দখল করে। এখন যুক্তরাষ্ট্রে ৯৯ শতাংশ জমিতেই আবাদ করা হচ্ছে নানা রকম হাইব্রিড ভুট্টা।
বাংলাদেশে মূলত হাঁস-মুরগির ও গোখাদ্য হিসেবে ভুট্টার দানা ব্যবহার করা হয়। মৎস্য খাদ্যেরও একটি অন্যতম উপকরণ হলো ভুট্টা দানার গুঁড়া।
দেশে এখন মানুষও ভুট্টা সেদ্ধ বা পুড়িয়ে খাওয়া শুরু করেছে। মানুষের জন্য নানা রকমের খাবার তৈরি করা যায় ভুট্টা থেকে। রুটি, আটার সাথে মিশিয়ে রুটি, গোলআলুর সাথে মিশিয়ে রুটি, পুরি, ভুট্টার প্যানকেক, ভুট্টার বিস্কুট, ভুট্টা খিচুরি, ভুট্টা-চাল খিচুরি, ভুট্টা পোলাও, সবুজ ভুট্টার দানা, ভুট্টা সেদ্ধ, ভুট্টা পুড়িয়ে কতভাবেই না ভুট্টাকে মানুষের খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করা যায়। ভুট্টার পপকর্ণ তো দিনে দিনে শহরাঞ্চলে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। ভুট্টার খাদ্যমান বেশ ভালো। চালের তুলনায় ভুট্টার আমিষ, ফসফরাস ও চর্বির পরিমাণ অধিক। ভুট্টার বীজে তেলের পরিমাণ শতকরা ৭-১২ ভাগ। ভুট্টার তেল ভোজ্যতেল হিসেবে উত্তম। শিশু, গর্ভবতী মহিলা ও দুগ্ধপানকারী মায়ের জন্য ভুট্টার তেল উত্তম। তাছাড়া ভুট্টাতে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং সালফার এসব গৌণ খনিজ উপাদান বেশ ভালোই রয়েছে।
বাংলাদেশে ভুট্টা আবাদে ব্যবহৃত হাইব্রিড জাতগুলোর মূল উৎস দু’টি। বিদেশ থেকে আমদানি করা ভুট্টা জাত হলো ভুট্টা বীজের প্রধান উৎস। বাংলাদেশে উদ্ভাবিত ভুট্টা হাইব্রিড জাত হলো ভুট্টা বীজের দ্বিতীয় উৎস।
বাংলাদেশে বিদেশি হাইব্রিড জাতগুলোর চাহিদা বেশি দু-তিনটি কারণে। এ কারণগুলো হলো-
- বিদেশি জাতগুলোর ভুট্টা গাছে ২-৩টা ভুট্টার মোচা তৈরি হয়, বাংলাদেশী জাতগুলোতে ১-২টা মোচা তৈরি হয়। মোচার সংখ্যা বেশি হলে মোচা ছোট হয় এবং দানার সংখ্যা কম হয়। তবে তিন মোচার ভুট্টা গাছে দুই মোচার ভুট্টা গাছ অপেক্ষা ফলন কিছুটা বেশি হয়।
- বিদেশি জাতের বীজ পেতে সহজ হয়। কোম্পানিগুলো বিদেশি জাতের বীজ ও চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে কৃষকের দোড়গোড়ায় পৌঁছে যায়। দেশি জাতের বীজ এতটা সুলভ নয়, তাছাড়া এ নিয়ে প্রচার প্রচারণাও এত বেশি হয়।
- বিদেশি কোনো কোনো হাইব্রিড ভুট্টার জাতের ফলন দেশি হাইব্রিড জাতগুলোর চেয়ে বেশি।
বিদেশি জাতগুলোর মধ্যে অঞ্চলভেদে কোনো কোনো জাতের বেশ জনপ্রিয়তা রয়েছে। এসব জাতের মধ্যে রয়েছে এনকে-৪০, এনকে-৪৬, এনকে-৪৮, এনকে-৬০, প্যাসেফিক-১১, প্যাসেফিক-৬০, ৯০০ এম, কনক, ৭১৭, বারি ভুট্টা-৫। আরো কিছু ভালো ভালো হাইব্রিড ভুট্টা জাত রয়েছে বাজারে। নতুন নতুন জাতও আসছে দিন দিন। প্রতিযোগিতামূলক বাজারের এটিই সুবিধা।
দেশের অনেক এলাকাতেই হাইব্রিড ভুট্টার আবাদের বিস্তৃতি ঘটছে।
বৃহত্তর রংপুর, দিনাজপুর, বগুড়া ও কুষ্টিয়া ছাড়াও দেশের অনেক জেলাতে এখন এর আবাদ করা হচ্ছে। রাজশাহী, মানিকগঞ্জ ও কুমিল্লা জেলার ধানী জমিতে এখন ভুট্টার আবাদ শুরু হয়েছে। গম কোনো কোনো এলাকায় ধান আবাদের বদলে মানুষ ভুট্টা চাষ শুরু করেছে। ভুট্টার প্রতি কৃষকের বাড়তি আগ্রহের কারণ একাধিক।
একই খরচে ভুট্টার ফলন গম ও ধানের চেয়ে অনেক বেশি।
হাঁস-মুরগি, গো-মহিষাদি এবং মৎস্যের খাবার হিসেবে ভুট্টার অনেক বেশি চাহিদা থাকায় ভুট্টা বিক্রয় করে বেশি মুনাফা অর্জন করা যায়।
ভুট্টা আবাদের জন্য হেক্টর প্রতি খরচ বেশ কম অথচ লাভ এতে বেশি।
- এক হিসেবে দেখা গেছে যে, এক কেজি ভুট্টা আবাদ করতে খরচ হয় ৪.১২ টাকা অথচ এক কেজি ভুট্টা বিক্রি করে পাওয়া যায় ৭.৮০ টাকা।
- কোনো বছর তাপমাত্রা বৃদ্ধি ঘটলে গমের আবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয় অথচ তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ভুট্টা চাষ খুব একটা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না।
- ভুট্টা চাষের বড় সুবিধা হলো রোগবালাইয়ের আক্রমণ কম ঘটে এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণের ফলে ক্ষতি কম হয়।
- ভুট্টা আবাদ করতে কম সেচের প্রয়োজন হয় কিন্তু অধিক সারের প্রয়োজন হয়, যা বাজার থেকে কিনে নিয়ে প্রয়োগ করা সম্ভব।
- বাজারে ভুট্টার চাহিদা অধিক হওয়ায় ভুট্টা বিক্রি করে কৃষকের হাতে নগদ অর্থ আসে এবং কৃষক সরাসরি লাভবান হয়।
আমাদের ভুট্টা গবেষণা ভালোই এগিয়েছে।
তবে বিদেশ থেকে আমদানি করা হাইব্রিড জাতগুলোর সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে হলে আমাদের গবেষণার কৌশল খানিকটা পাল্টাতে হবে। বিভিন্ন উত্তম হাইব্রিড জাতগুলোর কয়েক বংশধর স্ব-পরাগায়ন করা হলে স্ব-পরাগায়িত বংশধর থেকে উত্তম ইনব্রিড লাইন বাছাই করা সম্ভব হতে পারে। এসব ইনব্রেড লাইনের সাথে আমাদের অন্যান্য ইনব্রিড লাইনের সংযুক্তি ক্ষমতা যাচাই-বাছাই করে পাওয়া সম্ভব উত্তম মানের হাইব্রিড। আমাদের বিজ্ঞানীদের সৃষ্ট হাইব্রিড ভুট্টা বীজ ব্যবহার বাড়লে ভুট্টা ফসল উৎপাদনের খরচও খানিকটা হ্রাস পাবে বলে হাইব্রিড ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত চাষ আরো লাভজনক হয়ে উঠবে।
আজেকের ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত বিষয়ক আলোনাটি এখানেই সমাপ্ত হচ্ছে।
আশা করছি যে, আমরা উক্ত আলোচনা থেকে ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাতের নাম ও ফলনের পরিমাণ, তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে সেরা ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? কোন প্রতিষ্ঠান বা কম্পানির ভুট্টার উচ্চ ফলনশীল জাত কোনটি? ইত্যাদি বিষয়গুলো জানতে সক্ষম হয়েছি।
আলোচনাটিতে থেকে আপনি যদি উপকৃত হয়ে থাকে অবশ্যই কমেন্ট একটা ধন্যবাদ দিয়ে আমাদের উৎসাহিত করবেন। আর কোন মতামত থাকলে জানাবেন। দেখা পরবর্তী কোন কৃষি বিষয়ক আলোচনা। সেই অবধি ভালেঅ থাকুিন, সুস্থ থাকুন, কৃষির সাথেই থাকুন। আল্লাহ হাফেয।
[সূত্র: বিএআরআই, বিডব্লিউএমআরআই, এআইএস ও কৃষি বাতায়ন]