Skip to content

 

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

ভুট্টা একটি অধিক ফলনশীল ও বহুমুখী ব্যবহার সম্পন্ন দানা শস্য। বাংলাদেশে ভুট্টার চাষ বাড়ছে। ইদানিং গরুর খাদ্য হিসেব সাইলেজ ও ভুট্টার চাহিদা অত্যাধিক বেড়েছে। এখানে আমরা সহজভাবে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি উপস্থাপন করার চেষ্টা করব।

ভুটা বর্ষজীবী গুল প্রকৃতির। একই গাছে পুরুষ ফুল ও স্ত্রী ফুল জন্যে। পুরুষ ফুল একটি মঞ্জরিদণ্ডে বিন্যস্ত হয়ে গাছের মাথায় বের হয়। স্ত্রী ফুল গাছের মাঝামাঝি উচ্চতায় কাণ্ড ও পাতার অক্ষকোণ থেকে মোচা আকারে বের হয়। স্ত্রী ফুল নিষিক্ত হলে মোচার ভিতরে সানার সৃষ্টি হয়।

ধান ও গমের তুলনায় ভুট্টা দানার পুষ্টিমান বেশি। ভুট্টার দানা মানুষের খাদ্য হিসেবে এবং এর রসাল গাছ ও সবুজ পাতা উন্নত মানের গোখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। গবাদিপশু, হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য হিসেবে আমাদের দেশে ভুট্টা দানার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

চিত্র- ভুট্টা গাছ
চিত্র- ভুট্টা গাছ

(১) ভুট্টা চাষের পদ্ধতি

নিম্নে ভুট্টা চাষের পদ্ধতি উপস্থাপন করা হলো-

ক) জাত: বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট ভুটার অনেকগুলো উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাত উদ্ভাবন করেছে। তার মধ্যে বর্ণালি, শুভ্রা, মোহর, বারি ভুট্টা-৫, বারি ভুট্টা-৬, বারি ভুট্টা-৭, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-১, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-২, বারি হাইব্রিড ভুট্টা-৩ অন্যতম। এছাড়া খই (পপ কর্ণ) এর জন্য বের করেছে খই ভুট্টা এবং কচি অবস্থায় খাওয়ার জন্য বের করেছে বারি মিষ্টি ভুট্টা-১। এর বাইরে বিভিন্ন বীজ কোম্পানি বিদেশ থেকে হাইব্রিড জাতের ভুট্টা বীজ আমদানি করে থাকে।

খ) মাটি: বেলে দোআঁশ ও দোআঁশ মাটি ভুট্টা চাষের জন্য উত্তম। তবে খেয়াল রাখতে হবে জমিতে যেন পানি না জমে।

গ) বপন সময়: আমাদের দেশে রবি মৌসুমে অক্টোবর-নভেম্বর এবং খরিপ মৌসুমে মধ্য ফেব্রুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত সময় বীজ বপনের উপযুক্ত সময়।

See also  বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা

ঘ) বীজের হার ও বপন পদ্ধতি: বারি ভুট্টা জাতের জন্য হেক্টর প্রতি ২৫-৩০ কেজি এবং এই ভুট্টার জন্য ১৫-২০ কেজি হারে বীজ সারিতে বুনতে হয়। সারি থেকে সারির দূরত্ব হবে ৭৫ সেমি এবং সারিতে ২৫ সেমি দূরত্বে ১টি অথবা ৫০ সেমি দূরত্বে ২টি গাছ রাখতে হবে।

ঙ) জমি তৈরি ও সার প্রয়োগ: আমাদের দেশে রবি মৌসুমে ভুট্টার চাষ বেশি হয়ে থাকে। ৪-৫টি গভীর চাষ ও মই দিয়ে জমি তৈরি করতে হবে।

ভুট্টা চাষে বিভিন্ন প্রকার সারের পরিমাণ নিচে দেওয়া হলো-

সারের নামসারের পরিমাণ (কেজি/হেক্টর)
ইউরিয়া১৭২-৩১২
টিএসপি১৬৮-২১৬
এমওপি৯৬-১৪৪
জিপসাম১৪৪-১৬৮
  • জমি তৈরির শেষ পর্যায়ে মোট ইউরিয়ার এক-তৃতীয়াংশ এবং অন্যান্য সারের সবটুকু ছিটিয়ে জমি চাষ দিতে হবে। এছাড়াও এ সময় হেক্টর প্রতি জিংক সালফেট ১০-১৫ কেজি, বোরন সার ৫-৭ কেজি এবং গোবর সার ৫ টন প্রয়োগ করলে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বাকি ইউরিয়া সমান দুই কিস্তিতে ভাগ করে, প্রথম কিস্তি বীজ গজানোর ২৫-৩০ দিন পর এবং দ্বিতীয় কিস্তি বীজ গজানোর ৪০-৫০ দিন পর উপরি প্রয়োগ করতে হবে।
  • দ্বিতীয় কিস্তির ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগের সময় দুই সারির মাঝখান থেকে মাটি গাছের গোড়া বরাবর তুলে দিতে হবে।
  • চারা গজানোর ৩০ দিনের মধ্যে জমি থেকে অতিরিক্ত চারা তুলে ফেলতে হবে। চারার বয়স এক মাস না হওয়া পর্যন্ত জমি আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

(২) ভুট্টা চাষে পরিচর্যা

ক) সেচ প্রয়োগ: উচ্চ ফলনশীল জাতের ভুট্টার আশানুরূপ ফলন পেতে হলে রবি মৌসুমে ৩-৪টি সেচ দেওয়া প্রয়োজন। ৫ পাতা পর্যায়ে প্রথম, ১০ পাতা পর্যায়ে দ্বিতীয়, মোচা বের হওয়ার সময়ে তৃতীয় এবং দানা বাঁধার পূর্বে চতুর্থ সেচ দিতে হয়। ভুট্টার জমিতে যাতে পানি না জমে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।

See also  বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা
চিত্র- বিভিন্ন বয়সের ভুট্টা গাছ
চিত্র- বিভিন্ন বয়সের ভুট্টা গাছ

খ) পোকা দমন ব্যবস্থাপনা: ভুট্টা ফসলে পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কম হয়। তবে চারা অবস্থায় কাটুই পোকার লার্ভা গাছের গোড়া কেটে দেয়। এরা দিনের বেলায় মাটির নিচে লুকিয়ে থাকে এবং রাতে বের হয়। সদ্য কেটে ফেলা গাছের চারপাশের মাটি খুড়ে পোকার লার্ভা বের করে মেরে ফেলতে হবে। আক্রমণ বেশি হলে ফুরাডান অথবা ডারসবান অনুমোদিত মাত্রায় ব্যবহার করে জমিতে সেচ দিতে হবে।

চিত্র- কাটুই পোকার লার্ভা
চিত্র- কাটুই পোকার লার্ভা

গ) ভুট্টা ফসলের রোগ: ভুট্টা ফসলে বেশ কয়েকটি রোগ দেখা দিতে পারে। যেমন- ভুট্টার বীজ পচা ও চারা মরা রোগ, পাতা ঝলসানো রোগ, কান্ড পচা রোগ, মোচা ও দানা পচা রোগ। এ রোগগুলো বিভিন্ন ধরনের বীজ ও মাটিবাহিত ছত্রাকের আক্রমণে হয়ে থাকে। ভুট্টার বীজ বপনের সময় মাটিতে রস বেশি এবং তাপমাত্রা কম থাকলে বীজ পচা ও চারা মরা রোগ দেখা দেয়। পাতা ঝলসানো রোগে আক্রান্ত গাছের নিচের দিকের পাতায় লম্বাটে ধূসর বর্ণের দাগ দেখা যায়। পরে তা গাছের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে। রোগের আক্রমণ বেশি হলে পাতা আগাম শুকিয়ে যায় এবং গাছ মরে যায়।

রোগ দমন পদ্ধতি-

  • রোগ প্রতিরোধী জাত ব্যবহার করতে হবে।
  • বীজ বপনের পূর্বে শোধন করে নিতে হবে।
  • ভুট্টা কাটার পর পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  • একই জমিতে বার বার ভুট্টা চাষ বন্ধ করতে হবে।
চিত্র- পাতা ঝলসানো রোগ
চিত্র- পাতা ঝলসানো রোগ

(৩) ভুট্টা ফসল সংগ্রহ ও ফলন

ক) ভুট্টা ফসল সংগ্রহ:

  • মোচা চকচকে খড়ের রং ধারণ করলে এবং পাতা কিছুটা হলদে হলে, দানার জন্য ভুট্টা সপ্তাহের উপযুক্ত হয়।
  • ভুট্টা গাছের মোচা ৭৫-৮০% পরিপক্ব হলে ফসল সংগ্রহ করা যাবে।
  • মোচা সপ্তাহের পর ৪-৫ দিন রোদে শুকাতে হবে। অতঃপর হস্ত বা শক্তিচালিত মাড়াই যন্ত্র যারা দানা ছাড়িয়ে বাছাই কাড়াই করে সংরক্ষণ করতে হবে।
  • জীবনকাল রবি মৌসুমে ভুট্টা গাছের জীবনকাল ১৩৫-১৫৫ দিন এবং খরিপ মৌসুমে জীবনকাল ১০-১১০ দিন।
See also  বীজের অঙ্কুরোদ্গম পরীক্ষা
চিত্র- হস্তচালিত মাড়াই যন্ত্র
চিত্র- হস্তচালিত মাড়াই যন্ত্র

খ) ফলন: বাংলাদেশে রবি মৌসুমে ভুট্টার ফলন বেশি হয় এবং খরিপ মৌসুমে ফলন কম হয়। জাত ও মৌসুম ভেদে ভুট্টার ফলন ৩.৫-৮.৫ টন/হেক্টর হয়ে থাকে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page