বাংলাদেশে ভেড়ার উন্নত জাত নেই। উন্নত ভেড়ার জাতের সঙ্গে প্রজনন করালে উন্নত মানের উল এবং মাংস উৎপাদনকারী ভেড়ার জাত পাওয়া যায়। এসব গুরুত্বে কথা বিবেচনায় রেখেই এই পোষ্টটিতে খেড়ার খামার করেতে আগ্রহীদের জন্য ভেড়া পালন পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
এ পাঠ শেষে আপনি- বাংলাদেশের ভেড়ার বৈশিষ্ট্য ও অবস্থা বলতে পারবেন। ভেড়ার জাতের নাম জানতে পারবেন। ভেড়ার খামার করার বা ভেড়া পালনের সুবিধাগুলো বুঝতে পারবেন। ভেড়ার বাসস্থান কেন ও ভেড়ার ঘরের ধরন বলতে পারবেন। ভেড়ার খাবার তালিকা তৈরি করতে পারবেন। ভেড়ার পালনে কি কি যত্ন ও পরিচর্যা করতে হয়, তা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
অনেকেই আমরা ভেড়ার খামার করতে চাই, নিচে ভেড়া পালন পদ্ধতি ও ভেড়ার খাবার তালিকা সন্দর ও সহজভাবে তুলে ধরা হলো-
(১) বাংলাদেশের ভেড়ার বৈশিষ্ট্য
- ভেড়ার অত্যন্ত গুণী প্রাণী। কিন্ত এত গুণাগুণ থাকা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে এরা বেশ অবহেলিত ও তেমন একটা জনপ্রিয় নয়। সংখ্যাও খুব অল্প।
- বাংলাদেশের ভেড়ার কোনো ভালো জাত নেই।
- ভেড়া শুষ্ক ও শীতল আবহাওয়ার প্রাণী। বাংলাদেশের ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়া এদের জন্য উপযোগী নয়।
- বাংলাদেশে নোয়াখালী ও বরিশালের উপকূলীয় অঞ্চলেই বেশি সংখ্যায় ভেড়া পালন করা হয়।
- বাংলাদেশের স্থানীয় জাতের ভেড়ার লোম সাদা হলেও অযত্নের কারণে তা হলুদ বর্ণ ধারণ করে। এদের পশম অত্যন্ত মোটা ও নিম্নমানের। তাই এ থেকে উৎকৃষ্টমানের উল তৈরি করা যায় না। এ উল থেকে কম্বল ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করা সম্ভব নয়।
বাস্তবে, বাংলাদেশে ভেড়া থেকে মাংস ছাড়া আর কিছুই পাওয়া যায় না বললেই চলে। এ মাংসও বেশিরভাগ লোকই পছন্দ করেন না। তবে এদেশের ভেড়ার প্রতি কিছুটা নজর দিলে সহজেই এ থেকে আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে।
বিদেশী উন্নত জাতের ভেড়ার সঙ্গে প্রজনন ঘটিয়ে সংকর জাত সৃষ্টি করলে তা থেকে উন্নতমানের উলও পাওয়া যাবে। ফলে ভেড়া পালন অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হয়ে ওঠবে।
(২) ভেড়ার জাতের নাম
উন্নত জাতের ভেড়ার নাম: বাণিজ্যিক খামার স্থাপনে ভালো জাতের ভেড়া করতে নির্বাচন হবে। বিশ্বে কয়েকটি উন্নত ভেড়ার জাত হলো মেরিনো, লিসিস্টার লং উল, টুরকানা, ডরসেট, লিনকন, সিগাই, ডরপার, ইস্ট ফ্রিসিয়ান, হ্যাম্পশায়ার, সাফক ইত্যাদি।
এছাড়া, গাড়ল একটি উৎকৃষ্ট মানের ভেড়ারই জাত। বাংলাদেশে গাড়লের খামার রয়েছে, যেখানে গাড়ল প্রজাতির ভেড়া পালন করা হয়।
বাংলাদেশে ভেড়ার জাত: বাংলাদেশে প্রধানত তিন ধরনের ভেড়া পাওয়া যায়। যথা- বরেন্দ্র অঞ্চলের ভেড়া, যমুনা অববাহিকা অঞ্চলের ভেড়া, উপকূলীয় এলাকার ভেড়া।
বর্তমানে দেশি ভেড়ার পাশাপাশি গাড়ল জাতের ভেড়ার খামারও দেশের বিভিন্ন এলাকায় গড়ে উঠছে। বাণিজ্যিক ভেড়ার খামার স্থাপনের জন্য এলাকাভিত্তিক দেশি উন্নত জাত অথবা সংকর জাতের ভেড়া দিয়ে খামার স্থাপন করা যেতে পারে।
(৩) ভেড়ার খামার বা ভেড়া পালনের সুবিধা
ভেড়া পালনের অনেক সুবিধা রয়েছে। এগুলো নিম্নরূপ-
- ভেড়া তুলনামূলকভাবে দামে সস্তা ও দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। প্রতি বিয়ানে একেকটি ভেড়ি ১-৪টি বাচ্চার জন্ম দেয়।
- ছাগলের মতো এরাও ১৫ মাসে দু’বার বাচ্চা দেয়। তবে এদের পরিপক্কতা কিছুটা দেরিতে আসে।
- তেমন কোন সম্পূরক খাদ্য ছাড়াই শুধু ঘাস খেয়ে এরা বেঁচে থাকতে পারে। আগাছাপূর্ণ ভূমি পরিষ্কার করতে এদের জুড়ি নেই। আগাছা, ঘাস, লতাগুল্ম, মূল, কন্দ, শস্যদানা, পাতা, ছাল, এমনকী খাদ্য ঘাটতির সময় প্রয়োজন হলে মাছ বা মাংসও খেতে সক্ষম।
- ঘাস খেয়ে অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে এরা তা উল ও মাংসে রূপান্তরিত করতে পারে।
- ছাগলের মতো ভেড়া গাছগাছড়া নষ্ট করে না।
- এরা সর্বদা দলনেতাকে অনুসরণ করে, তাই লালন-পালন ও ব্যবস্থাপনা বেশ সহজ।
- এদের জন্য তেমন কোনো উন্নতমানের বাসস্থানের প্রয়োজন হয় না।
- ভেড়ার মাংস ও দুধ বেশ সুস্বাদু। এদের চামড়া বিক্রি করেও ভালো অর্থ আয় করা যায়।
- ভেড়ার লোম বা পশমই উল (ড়িড়ষ) নামে পরিচিত। এগুলো অত্যন্ত দামি। উল থেকে শীতের কাপড়, কম্বল, শাল ইত্যাদি তৈরি হয়।
- গোবর ও চনা উৎকৃষ্টমানের জৈব সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
- ভেড়ার হাড়ের গুঁড়ো গবাদিপশু ও পোল্ট্রির খাদ্য এবং উৎকৃষ্ট সার হিসেবে ব্যবহৃত হয়। নাড়িভুঁড়ি ও রক্তে রয়েছে উন্নতমানের আমিষ যা হাঁসমুরগির খাদ্য হিসেবে বেশ জনপ্রিয়।
- সর্বোপরি ভেড়া অত্যন্ত অর্থকরী প্রাণী।
(৪) ভেড়ার বাসস্থান কেমন?
ক) ভেড়ার বাসস্থান
ভেড়ার জন্য বাসস্থান তেমন কোন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়। কারণ এরা প্রধানত মাঠে চরে ঘাস খাওয়ার ওপর নির্ভরশীল। এদেরকে ঘাসপূর্ণ বিস্তীর্ণ মাঠে পালন করা হয় যেখানে দল বেধে ঘাস খেতে খেতে একপ্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে যেতে থাকে। রাতের বেলা মাঠেই একসঙ্গে বিশ্রাম নেয়। তবে শীতপ্রধান দেশে শীতকালে এদের জন্য বাসস্থানের দরকার পড়ে।
তাছাড়া আরও কয়েকটি কারণে ভেড়ার বাসস্থানের প্রয়োজন পড়ে। যেমন-
- রাতের বেলা ভালোভাবে বিশ্রাম নেয়ার জন্য।
- শিকারী প্রাণীর হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য।
- যেসব ভেড়া বেশি দুধ দেয় তাদের দুধ দোহনের জন্য।
- গর্ভবতী, প্রসূতি ও বাচ্চা ভেড়ার সঠিক পরিচর্যা করার জন্য।
- চোরের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
- আমাদের মতো স্যাঁতস্যাঁতে দেশে ঝড়বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা করার জন্য।
খ) ভেড়ার ঘর তৈরি
ভেড়া পালনের জন্য প্রধানত তিন ধরনের ঘর ব্যবহার করা হয়। যেমন-
১। খোলা বা উন্মুক্ত ঘর: যেসব অঞ্চলে বৃষ্টিপাত অত্যন্ত কম হয় সেখানে উন্মুক্ত ঘরে ভেড়া পালন করা হয়। নির্দিষ্ট জায়গার চারদিকে বেড়া দিয়ে এ ধরনের ঘর তৈরি করা হয়। এতে কোন ছাদ থাকে না। মেঝেতে প্রধানত খড় ব্যবহার করা হয়।
২। আধা-উন্মুক্ত ঘর: চারদিক ঘিরে বেড়া দেয়া একটি নির্দিষ্ট স্থানের এক কোণে খানিকটা জায়গা ছাদ দিয়ে ঘিরে এ ধরনের ঘর তৈরি করা হয়।
৩। আবদ্ধ বা ছাদযুক্ত ঘর: এ ধরনের ঘরের পুরো অংশই ছাদ দিয়ে ঘেরা থাকে। ঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা থাকে। মেঝে পাকা বা আধাপাকা হতে পারে। আমাদের মতো দেশে ভেড়া পালনের জন্য এ ধরনের ঘরই বেশি উপযোগী। ভেড়া সারাদিন মাঠে চড়বে ও রাতের বেলা ঘরে আশ্রয় নেবে। তাছাড়া ঝড়বৃষ্টি বা খারাপ আবহাওয়ার হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য এ ধরনের ঘর অত্যন্ত দরকারি।
গ) ভেড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা
ভেড়ার জন্য ভূমিসমতল মেঝে (খড়ের তৈরি) বা মাঁচার মেঝে তৈরি করা যায়। মাঁচার মেঝেতে জীবাণু ও কৃমি সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা কম থাকে। তাছাড়া এটি স্বাস্থ্যসম্মতও বটে। মাঁচার তৈরি মেঝেতে ভেড়ার জন্য তুলনামূলকভাবে জায়গাও কম লাগে। সারণি ১৭-এ বিভিন্ন বয়সের ভেড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গার পরিমাণ উল্লেখ করা হয়েছে।
নিম্নে মাঁচা মেঝে ও খড়ের মেঝেতে বিভিন্ন বয়সের ভেড়ার জন্য বরাদ্দকৃত জায়গার পরিমাণ উল্লেখ করা হলো। যথা-
ভেড়ার ধরন | মাঁচার মেঝে(বর্গ মিটার) | খড়ের মেঝে (ভূমিসমতল) (বর্গ মিটার) |
বাচ্চা ছাড়া বড় ভেড়ী (৬৮-৯০ কেজি) | ০.৯৫-১.১০ | ১.২০-১.৪০ |
বাচ্চাসহ বড় ভেড়ী (৬৮-৯০ কেজি) | ১.২০-১.৭০ | ১.৪০-১.৮৫ |
বাচ্চা ছাড়া ছোট ভেড়ী (৪৫-৬৮ কেজি) | ০.৭৫-০.৯৫ | ১.০০-১.৩০ |
বাচ্চাসহ ছোট ভেড়ী (৪৫-৬৮ কেজি) | ১.০০-১.৪০ | ১.৩০-১.৭৫ |
মর্দা ভেড়া (৩২ কেজি) | ০.৫৫-০.৭৫ | ০.৭৫-০.৯৫ |
মর্দা ভেড়া (২৩ কেজি) | ০.৪৫-০.৫৫ | ০.৭৫-০.৯৫ |
বাচ্চা ভেড়া (৬ সপ্তাহ) | – | ০.৪০ |
বাচ্চা ভেড়া (২ সপ্তাহ) | – | ০.১৫ |
(৫) ভেড়ার খাবার তালিকা
ভেড়া অন্য সকল গৃহপালিত পশুর মতো খাদ্যর উচ্ছুষ্টাংশ খেয়ে থাকে। শুকনো খড়, গাছের পাতা লতা, সবুজ ঘাস ইত্যাদি খেয়ে থাকে। তাছাড়া ভেড়া খোলা মাঠে সবুজ ঘাস খেতে ভালোবাসে। ভেড়া একটি তৃণভোজী স্তন্যপায়ী প্রাণি।
ভেড়া আঁশজাতীয় খাদ্য, লতা-পাতা প্রভৃতিকে সহজেই সাধারণ শর্করাতে পরিণত করতে পারে। ভেড়া সাধারণত চরে খেতে পছন্দ করে এবং ছাগলের মতো কোন গাছের মাথা বা ঘাসের ডগা নয় ঘাসের নিচের অংশ থেকে খাওয়া শুরু করে। তাই ভেড়া পালনে খাদ্য খরচ কম।
ভেড়ার দানাদার খাদ্যের সাধারন মিশ্রণ:
খাদ্য উপাদান | শতকরা হার |
চাল/গম/ভূট্টা ভাঙ্গা | ১০% |
গমের ভূষি/আটা/চালের কুঁড়া | ৫০% |
খেসারি/মাসকলাই/অন্য ডালের ভূষি | ১৫% |
সয়াবিন/তিল/নারিকেল/সরিষার খৈল | ২০% |
শুটকি মাছের গুঁড়া/মিট এন্ড বোন মিল/প্রোটিন কনসেনট্রেট | ১% |
ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট | ২% |
লবণ | ১.৫% |
ভিটামিন মিনারেট প্রিমিক্স | ০.৫% |
(এই মিশ্রণে বিপাকীয় শক্তি (মেগাজুল/কেজি) ১০.৮৭% এবং বিপাকীয় প্রোটিন (গ্রাম/কেজি) ৬৬%।)
ভেড়ার জন্য ঘাস চাষ: ভেড়া সাধারণত সব ধরনের ঘাস খায়। ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশী ঘাস চাষ করা যায়। ইপিল-ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাসকালাই, দুর্বা, বাক্সা ইত্যাদি দেশী ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর। এছাড়া উচ্চ ফলনশীল নেপিয়ার, স্প্লেন্ডিডা, এন্ড্রোপোগন, প্রিকাটুলুম ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে।
ঘাস চাষের জন্য জমি ভালভাবে তৈরি করে হেক্টর প্রতি ১৫-২০ টন জৈব সার এবং ৫০,৭০ এবং ৩০ কেজি যথাক্রমে ইউরিয়া, টিএসপি এবং এমপি সার প্রয়োগ করতে হবে। ঘাস লাগানোর এক মাস পর এবং প্রতিবার ঘাস কাটার পর হেক্টর প্রতি ৫০ কেজি ইউরিয়৷ সার ছিটাতে হবে।
ভেড়ার জন্য উচ্চ ফলনশীল ঘাসগুলো সাধারণত ৩৫-৪৫ দিন পর কাটা যায় ।
(৬) ভেড়ার পালনে যত্ন পরিচর্যা
ভেড়াকে সুস্থ-সবল ও কর্মক্ষম রাখা ও এর থেকে পর্যাপ্ত উৎপাদন পেতে হলে সঠিকভাবে পরিচর্যা করতে হবে। গরু, মহিষ বা ছাগলের মতোই দৈনিক ভেড়ার পরিচর্যা করতে হবে। বিভিন্ন বয়সের ভেড়াকে প্রয়োজন অনুযায়ী সেবা করতে হবে। তাছাড়া গর্ভবতী, প্রসূতি, নবজাতক প্রভৃতি ভেড়ার ক্ষেত্রে বিশেষ যত্ন নিতে হবে।
নিম্নলিখিতভাবে ভেড়ার পরিচর্যা করা যায়। যথা-
- প্রতিদিন সকালে ঘর থেকে বের করে মাঠে চড়ার জন্য ছেড়ে দিতে হবে। তারা যেন পর্যাপ্ত সময় মাঠে চড়তে পাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
- ঘর ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে। গোবর বা চনা যেন কোন রোগের কারণ না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে।
- সপ্তাহে অন্তত একবার জীবাণুনাশক ওষুধ দিয়ে ঘর জীবাণুমুক্ত করতে হবে।
- এদের চিহ্নিত করার জন্য অবশ্যই কানে ট্যাগ নম্বর লাগাতে হবে।
- সাধারণত বিশেষ অবস্থা ছাড়া ভেড়াকে তেমন কোন দানাদার খাদ্য সরবরাহ করতে হয় না। তবে, গর্ভবতী, প্রসূতি, বাচ্চা ভেড়া ও প্রজননের পাঠার জন্য সম্পূরক (Supplementary) খাদ্যের ব্যবস্থা করতে হবে।
- নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার করতে হবে। এতে উলের ভেতরের ময়লা বেরিয়ে আসবে ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বৃদ্ধি পাবে। নিয়মিত ব্রাশ করলে উল উজ্জ্বল দেখাবে ও চামড়ার মান বৃদ্ধি পাবে।
- প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে ভেড়ীর দুধ দোহন করতে হবে। দুধ দোহনের সময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে হবে।
- ভেড়ার উল কাটার পূর্বে এদেরকে বহিঃপরজীবীনাশক ওষুধ দিয়ে গোসল করাতে হবে বা ওষুধ গায়ে ছিটিয়ে দিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে যেন কোনভাবেই ভেড়া যেন বিষাক্ত বহিঃপরজীবীনাশক ওষুধ খেয়ে না ফেলে। এভাবে বহিঃপরজীবীনাশক ব্যবহার করলে বিভিন্ন ধরনের উকুন, আঁটালি ও অন্যান্য বহিঃপরজীবী ধ্বংস হওয়ার পাশাপাশি উল থেকে বিভিন্ন ময়লা দূর হয়, মাছির কীঁড়া দেহে বাসা বাঁধতে পারে না। এতে উলের মানও বৃদ্ধি পায়।
- নির্দিষ্ট মৌসুমে ভেড়ার দেহ থেকে উল কেটে নিতে হবে। প্রজননের উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত ভেড়াকে একাজে ব্যবহারের পূর্বে উল কেটে দিলে প্রজনন ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়ে।
- প্রজননের কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্য না থাকলে পুরুষ বাচ্চা ভেড়াকে সময়মতো খাঁসি করে নিতে হবে।
- অসুস্থ ভেড়াকে অন্যান্য সুস্থ ভেড়া থেকে পৃথক করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- সকল বয়সের ভেড়াকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও টিকা প্রদান করতে হবে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের ভেড়ার বৈশিষ্ট্য, ভেড়ার জাতের নাম, উন্নত জাতের ভেড়ার নাম, বাংলাদেশে ভেড়ার জাত ভেড়ার খামার বা ভেড়া পালনের সুবিধা, ভেড়ার বাসস্থান কেমন, ভেড়ার বাসস্থানের প্রয়োজনীয়তা, ভেড়ার ঘর তৈরি, ভেড়ার জন্য প্রয়োজনীয় জায়গা, ভেড়ার খাবার তালিকা, ভেড়ার পালনে যত্ন পরিচর্যা প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
ভেড়া তুলনামূলকভাবে দামে সস্তা। দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে; ১৫ মাসে দুবার বাচ্চা দেয়। এদের পশম বা উল অত্যন্ত দামি। উল থেকে শীতবস্ত্র, কম্বল, শাল ইত্যাদি তৈরি হয়।
ভেড়ার জন্য তেমন কোন বাসস্থান লাগে না। এরা শুধু ঘাস খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে, তেমন কোন সম্পূরক খাদ্যের প্রয়োজন হয় না। কারণ এরা প্রধানত মাঠে চরে ঘাস খাওয়ার ওপর নির্ভরশীল।
ভেড়ার জন্য তিন ধরনের ঘর ব্যবহার করা হয়, যথা- উন্মুক্ত, আধা-উন্মুক্ত ও আবদ্ধ ঘর। এদের ঘরের জন্য ভূমিসমতল মেঝে বা মাঁচার মেঝে তৈরি করা যায়। মাঁচার মেঝেতে জীবাণু ও কৃমি সংক্রমণ ঘটার সম্ভাবনা কম।
নিয়মিত ব্রাশ দিয়ে দেহ পরিষ্কার করলে উলের ভিতরের ময়লা বেরিয়ে আসে ও রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া বাড়ে। উল কাটার পর্বে এদেরকে বহিঃপরজীবীনাশক ওষুধ দিয়ে গোসল করাতে হবে। সকল বয়সের ভেড়াকে নিয়মিত কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়াতে হবে ও টিকা প্রদান করতে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।