প্রিয় পাঠক বন্ধু, আজকে এই পোষ্টটিতে আমরা মাছের চাষের পুকুরের বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়গুলো সম্পর্কে আলোচনা করব।
এ পাঠটি শেষে অবধি অধ্যয়ন করলে আপনি- প্লাঙ্কটন কি/কাকে বলে? প্লাঙ্কটন এর সংজ্ঞা জানতে পারবেন। মাছের চাষের পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় কত প্রকার ও কী কী তা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
নিম্নে মাছের চাষের পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায় সম্পর্কে সহজ সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা করা হলো-
আমরা জানি যে, পানিতে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান সকল জীব তথা উদ্ভিদ প্রাণি মাছের জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রধান উৎস। পুকুরে বসবাসকারী উদ্ভিদ ও প্রাণির পর্যাপ্ততা উক্ত পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতাকে নির্দেশ করে।
মাছের চাষের পুকুরে বসবাসকারী এসব জীব সম্প্রদায়কে প্রধানত নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
(১) প্লাঙ্কটন
প্লাঙ্কটন হলো পানিতে বিদ্যামান আণুবীক্ষনিক জীব। এরা মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাদ্য। প্লাঙ্কটন দুই প্রকার যথা-উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন (ফাইটোপ্লাঙ্কটন) এবং প্রানি প্লাঙ্কটন (জুওপ্লাঙ্কটন)। উদ্ভিদ প্লাঙ্কটন হলো মাছের প্রাকৃতিক খাদ্যের প্রধান উৎস। এগুলো সবুজ বর্ণের ক্ষুদ্র জলজ উদ্ভিদ। যেমন-স্পাইরোগাইরা, নাভিকুলা, এনাবেনা ইত্যাদি। অপর দিকে পানিতে বিদ্যমান ক্ষুদ্র জলজ প্রাণি ও লার্ভা হলো জুওপ্লাঙ্কটন। ফাইটোপ্লাঙ্কটন এর পাশাপাশি জু প্লাঙ্কটনের আধিক্য পানির রংকে বাদামী, সবুজ বা হলদেটে সবুজ করে তোলে। ডেফনিয়া, সাইক্লোপস, ফিলিনিয়া ইত্যাদি জুওপ্লাঙ্কটনের উদাহরণ।
(২) নেকটন
জলজ প্রাণি যারা কিছুটা বড় আকারের পানিতে মুক্তভাবে সাঁতার কাটতে সক্ষম এবং পানিতে স্বাধীনভাবে চলাচল করতে পারে তাদেরকে নেকটন বলে। যেমন- জলজ পোকা মাকড় এবং ওয়াটার ত্রিটল।
(৩) বেনথোস
এরা পুকুরের তলদেশে কাদার উপরিভাগে অথবা কাঁদার মধ্যখানে বসবাসকারী জীব। যেমন-শামুক ঝিনুক ইত্যাদি।
(৪) নিউসটন
পানির উপরিভাগে ঝুলে থেকে অথবা ভাসমান অবস্থায় সাঁতার রত বা বিশ্রামরত জীবকে নিউসটনে বলে। যেমন- প্রোটোজোয়া, কীটপতঙ্গ ইত্যাদি।
(৫) পেরিফাইটন
যে সকল ক্ষুদ্র উদ্ভিদ ও প্রানি শিকড়যুক্ত এবং অপেক্ষাকৃত বড় উদ্ভিদের শাখা প্রশাখায় লেগে থাকে অথবা পানির তলদেশে শক্ত কোনো আশ্রয়ে দৃঢ়ভাবে অবস্থান করে জীবন যাপন করে তাদেরকে পেরিফাইটন বলে।
(৬) জলজ উদ্ভিদ
মাছের চাষের পুকুরে বিভিন্ন ধরনের জলজ উদ্ভিদ জন্মায়। এরা প্রধানত দুই ধরনের। যথা– শেওলা জাতীয় নিম্নতর উদ্ভিদ এবং ফলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ।
i) শেওলা জাতীয় নিম্নতর উদ্ভিদ
দেহ-গঠনের ওপর ভিত্তি করে এদেরকে নিম্নলিখিত ভাগে ভাগ করা যায়, তা হলো-
- প্লাঙ্কটন জাতীয় শেওলা: এ জাতীয় শেওলা অধিকাংশ খালি চোখে দেখা যায় না। এরা পানির সাথে একস্থান হতে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত হয়। যেমন- পেন্ডোরিনা।
- তন্ত্রজাতীয় শেওলা: এ ধরনের শেওলা তন্তু বা সূতার মত অনেক লম্বা হয় এবং পানির ঠিক নিচেই এরা অবস্থান করে। বদ্ধ পানিতে এরা বেশি পরিমানে জন্মে এবং এদের রং ঘন সবুজ। যেমন- স্পাইরোগাইরা।
- নিমজ্জিত শেওলা: এরা অনেকটা দেখতে উন্নত উদ্ভিদের মত। এরা পানির নিচে মাটিতে লেগে থাকে এবং দেহ উপরের দিকে উঠে। সূর্যালোক পানির যে অঞ্চলে পড়ে সে অঞ্চলে এরা জন্মায়। যেমন- চারা।
ii) ফুলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ
এদেরকে জীবন বৃত্তান্তের ওপর ভিত্তি করে নিম্নলিখিতভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- ভাসমান উদ্ভিদ: এসকল উদ্ভিদ পানির উপরে ভেসে থাকে এবং দল বেঁধে জন্ম। এদের মূল মাটিতে আটকানো থাকে না। যেমন- কচুরিপানা, ক্ষুদিপালা, কুটি পানা ইত্যাদি।
- নির্গমনশীল উদ্ভিদ: এ সকল উদ্ভিদের মূল বা শিকড় পানির নিচে কাদার সাথে সংযুক্ত থাকে। এদের কান্ড, পাতা এবং ফুল পানির উপরিভাগে ভাসতে থাকে। যেমন- শাপলা, বিষকাটালী, পানিফল ইত্যাদি।
- লতানো উদ্ভিদ: এরা মূল বা শিকড় দ্বারা জলাশয়ের পাড়ে বা কম পানিতে লেগে থাকে। এদের দেহ লতার মত থাকে এবং কান্ড, পাতা পানিতে ছড়িয়ে থাকে। যেমন- কলমিলতা, হেলে া, মাল ইত্যাদি।
- ডুবন্ত উদ্ভিদ: এ ধরনের জলজ উদ্ভিদ পানির তলদেশে ডুবন্ত অবস্থায় থাকে। এদের শিকড় মাটিতে থাকে। এদের পাতা বা কান্ড বা ডাল কখনো পানির উপরে আসে না। যেমন- পাতাঝাঁঝি, কাঁটাঝাঝি, পাতা শেওলা ইত্যাদি।
মাছের চাষের পুকুরের পানিতে স্বাভাবিকভাবে বিদ্যমান সকল জীব তথা উদ্ভিদ প্রানি মাছের জীবন ধারনের জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্যের প্রধান উৎস। এদের পর্যাপ্ততা উক্ত পুকুরের প্রাথমিক উৎপাদনশীলতাকে নির্দেশ করে। পুকুরে বসবাসকারী জীব সম্প্রদায়কে প্লাঙ্কটন, নেকটন, বেনথোস, নিউসটন, ফেরিফাইটন, জলজ উদ্ভিদে ভাগ করা যায়। জলজ উদ্ভিদকে আবার প্রধান দুইভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- শেওলাজাতীয় নিম্নতর উদ্ভিদ এবং ফুলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ। ভাসমান উদ্ভিদ, নির্গমনশীল উদ্ভিদ, ডুবন্ত ও লতানো উদ্ভিদ হলো ফুলধারী উচ্চতর উদ্ভিদ।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।