প্রিয় খামারি বন্ধু, নিম্নে মাছের চাষের জন্য পুকুর খনন এবং প্রস্তুতকরণ ও পোনা ছাড়ার পদ্ধতি সুন্দর ও সহজভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
এ পাঠটি শেষে অবধি পড়লে আপনি- মাছের চাষের জন্য পুকুর খনন পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন। মাছের চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতকরণ পক্রিয়া সম্পর্কে জানতে পারবেন। পুকুরে মাছের পোনা ছাড়ার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(১) মাছের চাষের জন্য পুকুর খনন
মাছের চাষের জন্য সর্বপ্রথম যা প্রয়োজন তা হলো বিদ্যমান পুকুরকে চাষের জন্য প্রস্তুতকরণ অথবা নতুন পুকুর খনন। নিম্নে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।
নতুন পুকুর খননের কিছু নিয়ম হলো-
▣ সফলভাবে মাছের চাষের জন্য কোন স্থানে পুকুর খনন করতে হলে একটি আদর্শ পুকুরের যে বৈশিষ্ট্যগুলো থাকা দরকার যথাসম্ভব সেগুলো বজায় রেখে পুকুর খনন করতে হবে।
▣ পুকুর খননই একটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা একজন সম্ভাব্য মৎস্য চাষীকে সম্পন্ন করতে হয়। পুকুরের অবস্থান এবং মাটির গুণাগুণ মাছের চাষে সফলতা বা ব্যর্থতা নির্ধারণে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।
▣ পুকুর খননের সময় পুকুরটি যথাসম্ভব আয়তকার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
▣ পুকুরের গভীরতা এমনভাবে করতে হবে যেন সারা বছর ১.৫ থেকে ২.০ মিটার পানি থাকে।
▣ পুকুর খননের সময় পুকুরের পাড়ের ঢাল ন্যূনতম ১.৫ঃ২ রাখতে হবে। তবে বেলে মাটির পুকুরের ক্ষেত্রে ঢাল ১:৩ করতে হবে। তা না হলে পুকুরের পাড় অল্প দিনেই ভেঙ্গে যাবে।
▣ পুকুর খনন শেষে পুকুর তলায় বালু মাটির উপরে উর্বর ভালো মাটি বিছিয়ে দিতে হবে। এতে পুকুরের পানির ধারণ ক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে।
▣ পুকুরের পাড়ের উপরিভাগ ২.৫ মিটার চওড়া হলে ভালো।
▣ পুকুরের উপরিতলের ধারও পাড়ের মধ্যবর্তী কিছু স্থান ফাঁকা রাখা হয় যাকে বকচর বলে।
▣ পুকুরের তলদেশ সমান অথচ একদিকে কিছুটা ঢালু রাখতে হবে।
▣ নতুন পুকুর খননের পর পুকুরের পাড়ের মাটি দরমুজ দিয়ে পিটিয়ে শক্ত করে দিতে হবে এবং পাড়ে ঘাস লাগিয়ে দিতে হবে। এতে পাড় ভাঙবে না এবং বর্ষার সময় পাড়ের মাটি ক্ষয় হবে না।
(২) মাছের চাষের পুকুর প্রস্তুতকরণ
মাছের চাষের জন্য পুকুর প্রস্তুতি বা চাষের উপযোগী করা মাছের চাষের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মাছ মজুদের পূর্বে বিদ্যমান পুকুর সংস্কার করে নিলে মাছ বসবাসের অনুকূল পরিবেশ পায়। এতে মাছের দ্রুত দৈহিক বৃদ্ধি ঘটে এবং রোগ বালাই কম হয়। ফলে মাছের উৎপাদন বেশি হয় এবং মৎস্য চাষী লাভবান হন।
পুকুর প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধারাবাহিক ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। ধাপগুলো নিম্নরূপ-
ক) পুকুরের পাড় এবং তলদেশ মেরামত
▣ পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে অতিরিক্ত বৃষ্টিতে অথবা বর্ষাকালে বন্যায় মাছ ভেসে যেতে পারে বা রাক্ষুসে মাছ ঢুকতে পারে। তাই পুকুরের পাড় ভাঙ্গা থাকলে অবশ্যই তা মেরামত করতে হবে।
▣ মেরামতের সময় পাড় উচু করে বাঁধতে হবে। পাড়ে বড় বড় গাছ পালা রাখা উচিত নয় আর যদি থাকে তাহলে ছোট ছোট করে রাখতে হবে। এতে করে পুকুরে সূর্যালোক পড়বে এবং পুকুরে প্রাকৃতিক খাবার তৈরি হবে।
▣ পুকুর যদি পুরানো হয় তাহলে তলায় অতিরিক্ত কাঁদা তুলে ফেলতে হবে। এ কাজটি পুকুর শুকিয়ে সহজে করা যায়। মাছের চাষের পুকুর ৩-৪ বছর পর পর একবার শুকানো উচিত। পুকুর শুকানোর পর কড়া রোদে তলায় ফাটল ধরাতে হবে।
▣ সম্ভব হলে পুকুরের তলায় চাষ দিয়ে নিতে হবে। এতে করে পুকুরের তলদেশ থেকে বিষাক্ত গ্যাস, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও পোকামাকড় দূর হবে এবং পুকুরের পরিবেশ ভালো থাকবে। এরপর পুকুরের তলায় একদিকে কিছুটা ঢালু হলে ভালো হয়। এতে জাল টানতে এবং মাছ ধরতে সুবিধা হয়।
খ) জলজ আগাছা দমন
পুকুরের ভিতরে ও পাড়ে বিভিন্ন ধরনের আগাছা যেমনখুদিপানা, কচুরিপানা, কলমিলতা, হেলেঞ্চা, শেওলা ইত্যাদি থাকলে তা ভালোভাবে পরিষ্কার করে ফেলতে হবে।
মাছের চাষে ভালো উৎপাদন পেতে হলে জলজ আগাছা ভালোভাবে দমন করা প্রয়োজন। কারণ জলজ আগাছা পুকুরে দেওয়া সার শোষন করে নেয় এবং পুকুরের সূর্যের আলো পড়তে বাধা দেয়।
আগাছার মধ্যে মাছের শত্রু যেমন- রাক্ষুসে মাছ, সাপ, ব্যাঙ ইত্যাদি লুকিয়ে থাকে এবং মাছের স্বাভাবিক চলাচলে বাধা দেয়।
জলজ আগাছা তিনভাবে দমন করা যায়। যেমন-
i) যান্ত্রিক উপায়ে বা কায়িক শ্রমের দ্বারা দমন
যান্ত্রিক উপায়ে দমনের ক্ষেত্রে উদ্ভিদ কাটার যন্ত্র যেমন- কাটি ব্যবহার করে পানির নিচের ভাসমান ও নির্গমনশীল ও লতানো উদ্ভিদ কেটে দমন করা হয়।
ii) রাসায়নিক উপায়ে দমন
রাসায়নিক উপায়ে দমনের ক্ষেত্রে কপারসালফেট, কপার সাইট্রেট ইত্যাদি রাসায়নিক দ্রব্য দ্বারা শেওলাজাতীয় উদ্ভিদ দমন করা যায়।
iii) জৈবিক উপায়ে দমন
জৈবিক উপায়ে দমনের ক্ষেত্রে গ্রাস কার্প, থাই সরপুঁটি, তেলাপিয়া ইত্যাদি মাছ দ্বারা জলজ উদ্ভিদ দমন করা হয়।
গ) রাক্ষুসে ও অবাঞ্চিত মাছ দূরীকরণ
যে সব মাছ অন্য মাছকে খেয়ে ফেলে তাদেরকে রাক্ষুসে মাছ বলে। যেমন- শোল, বোয়াল, চিতল, ফলি, টাকি, গজার ইত্যাদি। এছাড়া পুঁটি, চাপিলা, চান্দা ইত্যাদি অবাঞ্চিত মাছ চাষযোগ্য মাছের খাবার, জায়গা এবং অক্সিজেনে ভাগ বসায়। এতে করে চাষযোগ্য মাছের উৎপাদন কমে যায়।
নিম্নের যে কোনো একটি পদ্ধতি অনুসরণ করে রাক্ষুসে এবং অবাঞ্চিত মাছ দূর করা যায়। যথা-
i) জাল টেনে
পুকুরের পানি কম থাকলে জাল টেনে মাছ ধরে ফেলা যায়।
ii) মাছ মারার বিষ প্রয়োগ করে
এক্ষেত্রে, মাহুয়ার খৈল অথবা রোটেনন ব্যবহার করা হয়। এসব দ্রব্য পুকুরে ব্যবহার করা হলে মাছ শ্বাসবন্ধ হয়ে মারা যায়। পুকুরে ১ ফুট বা ৩০ সে.মি. গভীরতায় পানির জন্য প্রতিশতাংশে ৩০-৩৫ গ্রাম রোটেনন বা ৩ কেজি মাহুয়ার খৈল ব্যবহার করতে হবে। বিষ প্রয়োগের পর মাছ ভাসতে শুরু করলে জাল টেনে মাছ ধরে ফেলতে হবে। বিষ প্রয়োগের ৭-১০ দিন পর্যন্ত পুকুরের পানি ব্যবহার করা যাবে না।
iii) পুকুর শুকিয়ে
পুকুরের পানি শুকিয়ে সব মাছ ধরে ফেলা যায়। অনেক মাছ পুকুরের তলায় কাদায় লুকিয়ে থাকতে পারে। তাই প্রখর রোদে পুকুর শুকিয়ে ফেলতে হবে।
ঘ) চুন প্রয়োগ
পুকুর শুকানোর পর পুকুরের তলায় চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। পুকুরের তলায় চাষ দিয়ে চাষের দিন চুন ছিটিয়ে দিতে হবে। এঁটেল মাটির জন্য প্রতি শতাংশে ১-২ কেজি এবং বালি মাটির জন্য ০.৫ থেকে ১.০ কেজি চুনা পাথর বা কৃষি চুন পুকুরে তলদেশে প্রয়োগ করতে হবে। পুকুরে পানি থাকলে অ্যালুমিনিয়ামের বালতি বা ড্রামে চুন গুলার পর ঠান্ডা হলে সমস্ত পুকুরে ছিটিয়ে দিতে হবে।
নিম্নে পুকুরে চুন প্রয়োগের উপকারিতা ও চুন প্রয়োগ মাত্রা তুলে ধরা হলো। যথা-
i) পুকুরে চুন প্রয়োগের উপকারিতা
- চুন পানির pH ঠিক রাখে
- চুন মাটি ও পানির উর্বরতা বাড়ায়।
- মাছের রোগ বালাই দূর করে।
- পানির ঘোলাত্ব কমায় ও পানি পরিস্কার রাখে। সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি করে। পুকুরের পানির pH মানের উপর চুন প্রয়োগের পরিমান নির্ভর করে।
ii) চুন প্রয়োগের সাধারণ মাত্রা
সাধারণত আমাদের বাংলাদেশে প্রতি শতকে ১-২কেজি চুন প্রয়োগ করা হয়।
iii) অম্লত্ব বা ক্ষারত্ব অনুযায়ী চুন প্রয়োগের মাত্রা
নিচে pH মানের উপর ভিত্তি করে চুন প্রয়োগের মাত্রা দেওয়া হলো-
পানির pH মান | চুনের (পাথর) পরিমান (কেজি/শতক) |
৩-৫ | ১২ |
৫-৬ | ৮ |
৬-৭ | ২ |
ঙ) সার প্রয়োগ
পুকুরে সার প্রয়োগের ফলে পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়। মাছের প্রধান প্রাকৃতিক খাবার হচ্ছে জু-প্লাঙ্কটন এবং ফাইটোপ্লাঙ্কটন। সার প্রয়োগের ফলে পানিতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান যেমন-পটাশিয়াম, ফসফরাস পানিতে মিশে। এসব পুষ্টি উপাদান ব্যবহার করে পানিতে ফাইটোপ্লাঙ্কটন তৈরি হয়। আর ফাইটোপ্লাঙ্কটনের উপর নির্ভর করে জু-প্লাঙ্কটন তৈরি হয়।
পুকুরে সাধারণত জৈব সারগুলো হলো গোবর মুরগির বিষ্ঠা ইত্যাদি। আর অজৈব সারগুলো হলো ইউরিয়া, টিএসপি, এম ও পি ইত্যাদি।
সাধারণত চুন প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর সার প্রয়োগ করতে হয়। রোদ্রোজ্জ্বল দিনে সকাল থেকে দুপুরের মধ্যে পুকুরে সার প্রয়োগ করা উচিত। সার পানিতে গুলে সমস্ত পুকুরে সমানভাবে ছিটিয়ে দিতে হবে।
নিম্নে পুকুুর সার প্রয়োগের মাত্রা দেওয়া হলো। যথা-
i) পুকুরে জৈব সার প্রয়োগের মাত্রা
সারের নাম | মাত্রা (প্রতি শতাংশে) |
গোবর | ৫-৭ কেজি |
মুরগির বিষ্ঠা | ৩-৪ কেজি |
ii) পুকুরে অজৈব সার প্রয়োগের মাত্রা
সারের নাম | মাত্রা (প্রতি শতাংশে) |
ইউরিয়া | ১০০-১৫০ গ্রাম |
টি এস পি | ৫০-৭৫ গ্রাম |
এমওপি | ২০ গ্রাম |
চ) প্রাকৃতিক খাদ্য পরীক্ষা
পোনা মজুদের পূর্বেই পুকুরে সার প্রয়োগের ৫-৭ দিন পর পুকুরে প্রাকৃতিক খাদ্য তৈরি হয়েছে কি না তা পরীক্ষা করে দেখতে হবে।
কয়েকটি পদ্ধতিতে পুকুরের প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিত পরীক্ষা করা যায়। যেমন- ১. সেক্কিডিস্ক পরীক্ষা, ২. হাত পরীক্ষা এবং ৩. গ্লাস পরীক্ষা। পরীক্ষা করার পরও যদি দেখা যায় খাদ্য তৈরি হয়নি আরও ২-৪ দিন অপেক্ষা করতে হবে। এরপরও খাদ্য তৈরি না হলে, পুনরায় সার প্রয়োগ করতে হবে।
পুকুরের খাদ্য পরীক্ষা করার পদ্ধতিগুলো নিয়ে আলাদাভাবে বিস্তারিত একটি আলোচনা রয়েছে। তাই এখানেই এটি সংক্ষিপ্ত করা হলো।
ছ) পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা
পুকুরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ মারার পর রাক্ষুসে বা অবাঞ্চিত মাছ দূর করার পর পোনা মজুদের পূর্বে পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করতে হবে।
পোনা মজুদের ১ দিন পূর্বে পুকুরে হাপা স্থাপন করে বা বালতিতে অথবা পাতিলে পুকুরের পানি দিয়ে তাতে ১০-১৫টি পোনা ছেড়ে ২৪ ঘন্টা পর্যন্ত রাখতে হবে। এ সময়ে পোনা মারা না গেলে বোঝা যাবে পুকুরের পানিতে কোনো বিষক্রিয়া নেই। তখন পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।
(৩) পুকুরে পোনা ছাড়ার পদ্ধতি
পোনা ছাড়ার পূর্বে পোনা পরিবহনের বিষয়টিও গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ একমাত্র সুস্থ ও সবল পোনা মাছের চাষে সফলতা আনতে পারে। যেমন-
▣ পোনা পরিবহনের সময় দুটো বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে। যেমন- ১. অক্সিজেনের অভাবে যেন পোনা পানির উপরে ভেসে না উঠে এবং ২. পরিবহনের সময় যেন পোনা আঘাত প্রাপ্ত না হয়।
▣ দূর দূরান্ত থেকে পোনা পরিবহন একটি কষ্টসাধ্য কাজ। তাই নিকটবর্তী কোনো সরকারী বা বেসরকারী হ্যাচারি বা নার্সারি খামার হতে পোনা সংগ্রহ করতে হবে। এ ক্ষেত্রে মাটির হাঁড়ি বা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্রে পোনা পরিবহন করা যেতে পারে।
▣ দূরবর্তী স্থান থেকে পোনা পরিবহন করতে হলে পলিথিন ব্যাগে অক্সিজেন দিয়ে পোনা পরিবহন করা উচিত। এক্ষেত্রে পলিথিন ব্যাগের ৩ ভাগে ১ ভাগ পানি আর ২ ভাগ অক্সিজেন দিয়ে ভর্তি করে পোনা পরিবহন করতে হবে।
▣ পোনা পরিবহনের সময় যাতে মারা না যায় অথবা কম মারা যায় সেজন্য পোনাকে টেকসই করে নিতে হয়।
▣ পোনা সরাসরি পুকুরে ছাড়া উচিত নয়। পোনা ছাড়ার পূর্বে পোনাকে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হয়। এ জন্য পোনা ভর্তি পলিব্যাগ বা পাত্র পুকুরের পানিতে ১৫-২০ মিনিট ভাসিয়ে রাখতে হবে। তখন অল্প অল্প করে পলিথিনে বা পাত্রে পুকুরের পানি মেশাতে হবে। ফলে পাত্রের পানির তাপমাত্রা ও পুকুরের পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান হবে। অত:পর পলিব্যাগ বা পাত্র কাজ করে আস্তে আস্তে এর ভিতরে পুকুরের পানির ঢেউ দিলে পোনা ধীরে ধীরে পুকুরে চলে যাবে।
▣ সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠান্ডা আবহাওয়ায় পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।
▣ পুকুরে পোনা ছাড়ার পূর্বে পোনাগুলোকে শোধন করে নিলে ক্ষতিকারক পরজীবী দ্বারা আক্রান্ত থাকলে তা থেকে পোনা মুক্ত হবে এবং রোগাক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম হবে। পাতিলে বা বালতিতে ১০ লিটার পানিতে ১ চা চামচ পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট বা ২০০ গ্রাম লবন মিশিয়ে তাতে প্রতিবারে ৩০০-৫০০টি পোনা আধা মিনিট চুবায়ে রেখে গোছল করাতে হবে। একবার তৈরিকৃত মিশ্রণে ৪-৫ বার শোধন করা যাবে।
▣ পুকুরের আয়তন অনুযায়ী নির্দিষ্ট পরিমাণে পোনা ছাড়তে হবে।
(৪) সারসংক্ষেপ
সফলভাবে মাছের চাষের জন্য কোনো স্থানে পুকুর খনন করার ক্ষেত্রে একটি আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্যগুলো বজায় রেখে পুকুর খনন করতে হবে। পুকুর খননের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ কাজ।
মাছের চাষের ক্ষেত্রে পুকুর প্রস্তুতকরণ একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। পুকুর প্রস্তুতকরণ প্রক্রিয়াটি কয়েকটি ধারাবাহিক ধাপে সম্পন্ন করতে হয়। যেমন- ক) পুকুরের পাড় এবং তলদেশ মেরামত দূরীকরণ, খ) জলজ আগাছা দমন গ) রাক্ষুসে ও অবাঞ্জিত মাছ দূরীকরণ ঘ) চুন প্রয়োগ ঙ) সার প্রয়োগ চ) প্রাকৃতিক খাদ্যের উপস্থিতি পরীক্ষা এবং ছ) পানির বিষাক্ততা পরীক্ষা করা।
পোনা ছাড়ার পূর্বে মাছের পোনা পরিবহনের বিষয়টি গুরুত্বসহকারে বিবেচনায় আনতে হবে। কারণ একমাত্র সুস্থ ও সবল পোনাই মাছের চাষের সফলতা আনতে পারে। দূর থেকে পোনা পরিবহনের সময় অক্সিজেন ভর্তি পলিব্যাগে পোনা পরিবহন করা উচিত।
পোনা পরিবহনের আগে পোনাকে টেকসই করে নিতে হয় যেন না মারা যায়। পোনা পুকুরে সরাসরি ছাড়া যাবে না। ছাড়ার পূর্বে পোনাকে পুকুরের পানির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে হবে। পলিব্যাগ বা পাত্রের পানির তাপমাত্রা প্রায় সমান হলে পোনা ছাড়তে হবে। সকালে বা বিকালে বা দিনের ঠান্ডা অবস্থায় পুকুরে পোনা ছাড়তে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।