Skip to content

 

মাটি কাকে বলে? মাটি কি? মাটি বলতে কি বুঝায়? মাটির উপাদান কয়টি? মাটি কত প্রকার? মাটির বৈশিষ্ট্য

মাটি কাকে বলে, মাটি কি, মাটি বলতে কি বুঝায়, মাটির উপাদান কয়টি, মাটি কত প্রকার, মাটির বৈশিষ্ট্য

এই পাঠ শেষে আপনি- মাটি কাকে বলে, মাটি কি, মাটি বলতে কি বুঝায়, মাটির উপাদান কয়টি, মাটি কত প্রকার ও মাটির বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন। বিভিন্ন ফসলের জন্য মাটির কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্যাবলী সম্পর্কে জানতে পারবেন। অঞ্চল ভিত্তিক মাটির বৈশিষ্ট্য এবং উপযোগী ফসলের নাম বলতে পারবেন। মাটি ও পরিবেশের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করতে পারবেন।

(১) মাটি কাকে বলে?

মাটি কাকে বলে: উদ্ভিদ জন্মানোর উপযোগী খনিজ, জীব ও জৈব সমন্বয়ে গতিশীল প্রাকৃতিক বস্তুকে মাটি বা মৃত্তিকা বলে৷

অথবা,

মাটি কাকে বলে: পৃথিবীর উপরিভাগের যে নরম স্তরে গাছপালা মূল স্থাপন করে রস শোষণ করে জন্মায় ও বৃদ্ধি পায় তাকে মাটি বলে৷

অথবা,

মাটি কাকে বলে: পৃথিবীর জল, বায়ু, খনিজ এবং জৈব পদার্থের সাথে মিশে গিয়ে ভূ-ভাগের সমান্তরালে যে পাতলাআবরণের সৃষ্টি হয়েছে, তাকে মাটি বলে।

অথবা,

মাটি কাকে বলে: যে ভূ-ত্বকের গভীরে যতটুকু লাঙলের ফলা পৌছে, তাই মাটি এবং ফসল উৎপাদনের উপযোগী। অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠের ১৫-১৮ সেমি. গভীর স্তরকে মাটি বলে।

(২) মাটি কি?

মাটি কি: মাটি হলো কঠিন পদার্থের ছোট ছোট টুকরা, পানি ও বায়ুর সমন্বয়ে গঠিত যৌগিক পদার্থ।

অথবা,

মাটি কি: মাটি হলো পৃথিবীর উপরিভাগের নরম ও দানাদার আবরণ, পাথর গুঁড়ো হয়ে সৃষ্ট খনিজ পদার্থ এবং জৈব যৌগ মিশ্রিত হয়ে মাটি গঠিত হয়।

অথবা,

মাটি কি: মাটি হলো পৃথিবীর ভূত্বকের উপরের আলগা স্তর, যার মাধ্যমে উদ্ভিদ শিকড় বিস্তার লাভ করে দারিয়ে থাকে এবং বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সংগ্রহ করে।

অথবা,

মাটি কি: মাটি হলো এক ধরনের প্রাকৃতিক উপাদান যা খনিজ পদার্থ, জৈব পদার্থ, পানি, এবং বায়ু দিয়ে গঠিত। এটি উদ্ভিদের জন্য পুষ্টি সরবরাহ করে এবং পানি ধরে রাখে। মাটি গঠনের প্রক্রিয়াটি অত্যন্ত ধীর এবং সময়সাপেক্ষ।

অথবা,

মাটি কি: মাটি হলো জৈবিকভাবে সক্রিয় এবং ছিদ্রযুক্ত মাধ্যম যা পৃথিবীর ভূত্বকের উপরের স্তরে বিকশিত হয়েছে। এটি জল এবং পুষ্টির আধার এবং ক্ষতিকারক বর্জ্য পরিস্রাবণ এবং ভাঙ্গনের একটি মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। এটি গ্লোবাল ইকোসিস্টেমের মাধ্যমে কার্বন এবং অন্যান্য উপাদানের সাইক্লিংয়েও সাহায্য করে।

(৩) মাটি বলতে কি বুঝায়?

মাটি বলতে কি বুঝায়: মাটি বলতে তাকেই বোঝায় যেখানে ফসল জন্মায়, বন সৃষ্টি হয় আর গবাদিপশু বিচরণ করে।

অথবা,

মাটি বলতে কি বুঝায়: মাটি বলতে পৃথিবীর উপরিভাগের ক্ষয়প্রাপ্ত শিলা, জৈব পদার্থ, পানি এবং বায়ু দ্বারা গঠিত নরম স্তরকে বোঝায়।

See also  জমি চাষের বিবেচ্য বিষয় কয়টি ও কি কি?

(৪) মাটির উপাদান কয়টি ও কি কি?

মাটির উপাদান কয়টি ও কি কি: মাটি প্রধানত ৪ টি প্রধান উপাদান সমন্বয়ে গঠিত। যথা-

  1. খনিজ পদার্থ = ৪৫%
  2. জৈব পদার্থ = ৫%
  3. বায়ু = ২৫ %
  4. পানি = ২৫%

(৫) মাটি কত প্রকার ও কি কি? মাটির বৈশিষ্ট্য

মাটি কত প্রকার ও কি কি: মাটি প্রধানত ৩ প্রকার। যথা-

  1. এঁটেল মাটি
  2. বেলে মাটি
  3. দোআঁশ মাটি

এঁটেল মাটির বৈশিষ্ট্য: এঁটেল মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

  1. এটেল মাটিতে বালু অপেক্ষা পলি ও কাদার ভাগ বেশি থাকে।
  2. এ কাদা মাটি খুব নরম, দানা খুব ছোট ও মিহি।
  3. ও মাটি বেশি পানি ধরে রাখতে পারে।
  4. এ মাটিতে ভালভাবে বাতাস চলাচল করতে পারেনা।
  5. এ মাটি সব ফসলের জন্য তেমন উপকারী নয়, তবে ধান চাষ করা যায়।

বেলে মাটির বৈশিষ্ট্য: বেলে মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

  1. বেলে মাটিতে বালির ভাগ বেশি থাকে।
  2. এ মাটির পানি ধারন ক্ষমতা কম।
  3. বেলে মাটিতে ফসল তেমন ভাল হয় না তবে তরমুজ শসা, বাঙ্গী, চীনাবাদাম, মিষ্টি আলু ইত্যাদি ভাল জন্মে।

দোআঁশ মাটির বৈশিষ্ট্য: দোআঁশ মাটির বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ-

  1. দোআঁশ মাটিতে বালি, পলি ও কাদা সম পরিমানে থাকে।
  2. এ মাটির পানি ধারন ক্ষমতা মাঝারী।
  3. চাষাবাদের জন্য দোআঁশ মাটি উপযুক্ত। এ মাটিতে ধান, পাট, গম, পিয়াজ, মরিচ, ভূট্টা, আলু, শাকসবজি ইত্যাদি ভাল জন্মে।

(৬) মাটির বুনট কি/কাকে বলে? বুনট অনুসারে মাটি কত প্রকার ও কি কি?

বুনট কি/কাকে বলে: মৃত্তিকায় বালি, পলি ও কর্দম এই তিন ধরনের কণা থাকে। মৃত্তিকায় বালি, পলি ও কর্দম কণার পারস্পারিক অনুপাত বা শতকরা হার হলো মাটির বুনট।

বুনট অনুসারে মাটি কত প্রকার ও কি কি: আন্তর্জাতিক ও যুক্তরাষ্ট্রীয় উভয় পদ্ধতিতে মাটিকে একক কণার ভিত্তিতে ১২টি বুনট শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে। ১২টি মাটির প্রকার হলো-

  1. বালি
  2. দোআঁশ বালি
  3. বেলে দোআঁশ
  4. দোআঁশ
  5. পলি এটেল দোআঁশ
  6. পলি
  7. বেলে এটেল দোআঁশ
  8. এটেল দোআঁশ
  9. পলি এটেল দোআঁশ
  10. বেলে এটেল
  11. পলি এটেল
  12. এটেল

মাটি ফসল উৎপাদনের একটি মাধ্যম। ফসল উৎপাদন মাটির বৈশিষ্ট্যের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। মাটিই হচ্ছে পানি ও পুষ্টির প্রাকৃতিক উৎস।

সব মাটিতে সব ফসল জন্মায় না। যেমন, ধান গাছ কাদা মাটি বা এঁটেল দোআঁশ মাটি পছন্দ করে। অপর দিকে বাদাম বেলে বা বেলে-দোআঁশ পছন্দ করে। তবে বাংলাদেশের মাটি গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনার পলি দ্বারা সৃষ্টি হওয়ার কারণে সব ধরণের ফসলই কমবেশি জন্মায়। বাংলাদেশের অধিকাংশ মাটিই নরম, হালকা, ধুলিময় ও কর্ষণযোগ্য।

বাংলাদেশের মাটি যে কোন ফসল উৎপাদনের জন্যই কমবেশি উপযোগী। যদিও মাটির বৈশিষ্ট্য অঞ্চল ভেদে ভিন্ন হবেই এবং সে কারণে দেশের কোথাও ধান উৎপাদন অধিক ফলপ্রসু বিবেচিত হতে পারে আবার অন্য স্থানে ধান ভিন্ন অন্য ফসলের জন্য অধিক উৎপাদনশীল হতে পারে।

নিম্নে প্রধান কয়েকটি ফসলের উপযোগী মৃত্তিকা বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করা হলো।

(৭) কোন ফসল চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

ক) ধান চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

ধান চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য:

  • ধান উৎপাদনের জন্য এঁটেল ও এঁটেল দোঁআশ মাটি খুবই কার্যকর। যদিও বেলেমাটি বা কংকর মাটি ছাড়া সব মাটিই ধান চাষের জন্য বিবেচিত হতে পারে।
  • অধিক জৈব পদার্থ সম্পন্ন অম্লত্বক হতে নিরপেক্ষ মাটির অবস্থা ধান চাষের জন্য অধিক ফলপ্রসু।
  • ধানের জাতের বৈচিত্র্য অনুসারে ঊঁচু মাঝারী বা নীচু যে কোন জমিতে ধান চাষ করা যায়।
See also  কোন মাটিতে কী ফসল চাষ ভালো হয়? ধান, গম, পাট, ডাল, আলু ও টমেটো

খ) গম চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

গম চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য:

  • দোআঁশ অথবা মাঝারি দোআঁশ মাটি গম চাষের জন্য ব্যাপক উপযোগী। অধিকন্তু এটেল দোআঁশ মাটিও গমের চাষের জন্য নির্বাচিত করা যেতে পারে।
  • উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি গম চাষের জন্য উপযুক্ত। হাওড় বা বিল অঞ্চল গম চাষের জন্য অনুপযোগী।
  • সহজে পানি নিস্কাশিত হয় এমন ভারী মাটিতে (যেমন, এঁটেল ও এঁটেল দোআঁশ) গমের চাষ করা যেতে পারে।
  • লবণাক্ত মাটি গম চাষের অনুকুল নয়।

গ) পাট চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

পাট চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য:

  • পলিবাহিত উর্বর সমতল ভূমি পাটের জন্য সর্বোত্তম।
  • দোআঁশ ও বেলেদোআঁশ মাটিও পাট ভালো জন্মে।
  • সাদা পাট অধিকতর পানি সহিষ্ণু বিধায় সাধারণত নিচুজমি, এমনকি জলাবদ্ধ জমিতেও চাষ করা যায়।
  • মাঝারি বা নিম্নমাঝারী জমি তোষাপাটের জন্য অধিকতর উপযোগী, সেজন্য জলাবদ্ধতা এ পাটের জন্য ক্ষতিকর।
  • ৫.০-৮.৬ অম্লমানের মাটি পাট ফলানোর জন্য উপযোগী।

ঘ) গোল আলু চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

গোল আলু চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য:

  • আলু উৎপাদনের জন্য দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি সবচাইতে উপযোগী।
  • জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ, নরম, ঝুরঝুরে এবং বায়ু চলাচল উপযোগী মাটিতে আলুর চাষ ভালো হয়।
  • সুনিস্কাশিত গভীর এবং কিছুটা অম্লত্ব মাটির ক্ষেত্র বিশেষ উপযোগী। যেহেতু এই অবস্থায় স্কেভিস রোগের প্রাদুর্ভাব কমে যায়।

ঙ) টমেটো চাষের উপযোগী মাটি কোনটি?

টমেটো চাষোপযোগী মাটির বৈশিষ্ট্য:

  • বেলে ও কংকরময় মাটি ছাড়া যে কোন মাটি টমেটো চাষ উপযোগী।
  • ক্ষেত্র বিশেষে জৈব সার ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বেলে মাটিতেও টমেটো চাষ করা সম্ভব।
  • দোআঁশ ও বেলে দোআঁশ মাটি টমেটো চাষের জন্য উৎকৃষ্ট।
  • নিরপেক্ষমাত্রার অম্লমান সমৃদ্ধ মাটিতে টমেটোর উৎপাদন ভালো হয়।

(৮) মাটি ভিত্তিক পরিবেশ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল নির্বাচন

মাটির বৈশিষ্ট্য বলতে মাটির শ্রেণি, জৈব পদার্থের মাত্রা, পটাশজনিত খনিজের মাত্রা ও অম্লমান মাত্রা এবং মাটির বন্ধুরতাকে বোঝায়। মাটির প্রকৃতি বা বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বাংলাদেশকে ত্রিশটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে ভাগ করা হয়েছে। কোনো একটি কৃষি পরিবেশ অঞ্চল প্রকৃতপক্ষে সে অঞ্চলের মাটির প্রতিনিধিত্ব করে। কৃষি কর্মকান্ডের জন্য সবচেয়ে বড় কাজ হলো মাটির বৈশিষ্ট্য ও বন্ধুরতা অনুযায়ী ফসল নির্বাচন করা। মাটির বৈশিষ্ট্যভিত্তিক ফসল কৃষি কাজের একটি অত্যাবশ্যক প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তি যত নিখুঁতভাবে ব্যবহার করা যাবে কৃষি কাজের ফলাফলও তত বেশি লাভজনক হবে।

মাটি অনুযায়ী বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশ অঞ্চল কয়টি: মাটির গঠন ও প্রকৃতি অনুযায়ী বাংলাদেশের ৩০টি কৃষি পরিবেশ অঞ্চলকে রয়েছে, যা নিম্নোক্ত ৫টি ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-

  1. দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি অঞ্চল
  2. কাদা মাটি অঞ্চল
  3. বরেন্দ্র অঞ্চল ও মধুপুর অঞ্চল
  4. পাহাড়ি ও পাদভূমি অঞ্চল
  5. উপকূলীয় অঞ্চল

এই অঞ্চলগুলোর মাটির বৈশিষ্ট্যভিত্তিক ফসল নির্বাচন দেখানো হলো।

ক) দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য:

  • মাটি দোআঁশ থেকে পলি দোআঁশ প্রকৃতির।
  • মাটিতে জৈব পদার্থের মাত্রা অল্প থেকে মাঝারি।
  • দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটির অম্ল ও ক্ষারের মাত্রা যথাক্রমে ৫.২-৬.২ এবং ৪.১-৬.১ পর্যন্ত।

নির্বাচিত ফসল: এই শ্রেণির মাটি প্রায় সকল ধরণের ফসলের জন্য উপযোগী। চাষপদ্ধতি বৃষ্টি নির্ভর কিংবা সেচ নির্ভর উভয়ই হতে পারে। রবি মৌসুমের জন্য গম, মূলা, টমেটো, ফুলকপি, বাধাকপি, মরিচ, আখ, আলু, মুগ, সরিষা ইত্যাদি অগ্রগন্য। খরিপ মৌসুমের জন্য রোপা আমন, রোপা আউস, পাট, তিল, বেগুন ইত্যাদি চাষ করা যেতে পারে।

See also  বাংলাদেশের কোন ধরণের অঞ্চলে কি ফসল চাষ হয়?

খ) কাদা মাটি অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য:

  • বাংলাদেশের কৃষি অঞ্চলের মাঝারি উঁচু ও নিচু এলাকার মাটি এ শ্রেণির অর্ন্তভূক্ত।
  • মাঝারি মাত্রার জৈব পদার্থের উপস্থিতি এ শ্রেণির মাটির সাধারণ বৈশিষ্ট্য। ক্ষেত্র বিশেষে উচ্চমাত্রার জৈব পদার্থের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।

নির্বাচিত ফসল: এ অঞ্চলের মাটি ধান চাষের জন্য খুবই উপযোগী। সেচ ব্যবস্থাপনায় রবি মৌসুমে অন্যান্য ফসলও জন্মানো সম্ভব। 

গ) বরেন্দ্র ও মধুপুর অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য:

  • উঁচু ও মাঝারি উঁচু ভূমি বরেন্দ্র ও মধুপুর অঞ্চলের প্রধান বৈশিষ্ট্য।
  • মাটির বৈশিষ্ট্য দোআঁশ প্রকৃতির যা নিম্নমাত্রার জৈব পদার্থ ধারন করে।
  • মাটির অম্লমান সাধারনত ৫.৫-৬.৫।

উপযোগী ফসল: সেচ সুবিধা থাকলে রবি মৌসুমে বোরো, আখ, আলু, গম, সরিষা, মসুর, টমেটো, ছোলা, বাঁধাকপিসহ শীতকালীন সবজি এবং খরিপ মৌসুমে রোপা আউশ, রোপা আমন, পাট, ঢেঁড়শ, মুগ প্রভৃতি ভালো জন্মে। বৃষ্টি নির্ভর ফসল হিসেবে আলু, সরিষা, মসুর, ছোলা, কাউন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

ঘ) পাহাড় ও পাদভূমি অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য:

  • খাগড়াছড়ি, বান্দরবন, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজার, আখাউড়াসহ কিছু জেলার পাহাড়ী অঞ্চল এ মৃত্তিকা শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত।
  • মাটির প্রকৃতি দোআঁশ সদৃশ্য যাতে সামান্য মাত্রার জৈব পদার্থ বিদ্যমান।
  • মাটির অম্লমান-৫-৫.৭

নির্বাচিত ফসল: বৃষ্টি নির্ভর ফসল হিসেবে রবি মৌসুমে গম, আখ, সরিষা, মসুর, ছোলা এবং খরিপ মৌসুমে রোপা আমন, পাট চাষ করা যেতে পারে। সেচ সুবিধা থাকলে রবি মৌসুমে আখ, মসুর ডাল এবং খরিপ মৌসুমে ধৈ া লাভজনক বিবেচিত হতে পারে।

ঙ) উপকূলীয় অঞ্চল

বৈশিষ্ট্য:

  • বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলের মাটি এ শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত যেমন-ভোলা, সেন্টমার্টিন, ফেনী, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম ও বরিশালসহ সকল সমুদ্র উপকুলীয় এলাকা।
  • মাটি দোআঁশ এবং বেলে ও পলিদোআঁশ প্রকৃতির।
  • নিম্নমাত্রার জৈব পদার্থের উপস্থিতি বিদ্যমান।
  • মাটির অম্লমান মাত্রা ৭.০-৮.৫।

নির্বাচিত ফসল: বৃষ্টি নির্ভর ফসল হিসাবে রবি মৌসুমে গম, সরিষা, মুগ, মরিচ, সীম, পেঁয়াজ, রসুন, বেগুন এবং খরিপ মৌসুমে রোপা আউশ, পাট, কাকরোল উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে সেচ সুবিধা থাকলে রবি মৌসুমে বোরো, টমেটো, আলু, তরমুজ, মুগ, মরিচ এবং খরিপ মৌসুমে রোপা আমন এবং রোপা আউশ চাষ করা যেতে পারে।

প্রিয় পাঠক, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা- মাটি কাকে বলে? মাটি কি? মাটি বলতে কি বুঝায়? মাটির উপাদান কয়টি ও কি কি? মাটি কত প্রকার ও কি কি? মাটির বৈশিষ্ট্য; মাটির বুনট কি/কাকে বলে? বুনট অনুসারে মাটি কত প্রকার ও কি কি? কোন ফসল চাষের উপযোগী মাটি কোনটি? মাটি ভিত্তিক পরিবেশ অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ফসল নির্বাচন; প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।

মাটি ফসল উৎপাদনের প্রধান মাধ্যম। বৈশিষ্ট্য ভেদে মৃত্তিকাকে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় যেমন- বেলে দোআঁশ, পলি দোআঁশ, এঁটেল ইত্যাদি। আবার অঞ্চলভেদেও মাটির বৈশিষ্ট্য ভিন্নরূপ হয় এবং বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয় যেমন, পলি দোআঁশ মাটি অঞ্চল, বরেন্দ্র ও মধুপুর অঞ্চল, পাহাড় ও পাদভূমি অঞ্চল। যেহেতু এসকল শ্রেণির মাটি বৈশিষ্ট্য ভিন্ন প্রকৃতির, তাই এ সকল জমিতে কৃষি উৎপাদনের জন্য ফসল নির্বাচনের ক্ষেত্রেও বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে। মাটি ভেদে ফসলের উৎপাদন যেহেতু ভিন্ন হয়, তাই অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য মাটির বৈশিষ্ট্য এবং সেই সাথে মাটির উপযোগী ফসল নির্বাচনের দিক সম্পর্কেও জানতে হবে।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page