Skip to content

 

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি

(১) মিষ্টি কুমড়ার জাতসমূহের নাম ও পরিচিতি

ক) বারি মিষ্টি কুমড়া-১

বারি মিষ্টি কুমড়া-১
বারি মিষ্টি কুমড়া-১
  • আগাম শীতকালীন জাত।
  • ফল উঁচু গোলাকার (High round)।
  • ফলের শাঁস আকর্ষণীয় গাঢ় কমলা রঙের এবং মিষ্টতা বেশি (টিএসএস ১১-১২%) হয়।
  • ফলের গড় ওজন ৪.৫-৫.০ কেজি এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ৩০-৩৫ টন।
  • জীবনকাল ১৫০-১৬০ দিন।

খ) বারি মিষ্টি কুমড়া-২

বারি মিষ্টি কুমড়া-২
বারি মিষ্টি কুমড়া-২
  • সারা বছর চাষ উপযোগী জাত এবং কাঁচা ফল সবজি হিসেবে ব্যবহারের জন্য উত্তম।
  • ফল চেপ্টা গোলাকৃতি (Flat round)।
  • ফলের শাঁস গাঢ় কমলা রঙের এবং মিষ্টতা বেশি (টিএসএস ১০-১১%) হয়।
  • ফলের গড় ওজন ২.৫-৩.০ কেজি এবং হেক্টরপ্রতি ফলন ২০-৩০ টন।
  • জীবনকাল প্রায় ৯০-১১০ দিন।

গ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-১

বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-১
বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-১
  • এটি একটি উচ্চফলনশীল জাত। ফল মাঝারী আকারের (গড় ওজন ২.৯ কেজি)।
  • ফল দেখতে গোলাকার-চ্যাপ্টা।
  • ফল কাচা অবস্থায গাঢ় সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় গাঢ় সবুজ দাগ (Patch) যুক্ত গাঢ় বাদামী বর্ণের।
  • এর টিএসএস বা মিষ্টতা (১০%)।
  • গাছ প্রতি গড়ে ফলের সংখ্যা ৮ টি এবং গড় ফলন প্রায় ৪০ টন/হেক্টর।

ঘ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-২

বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-২ জাতটি চাষাবাদের জন্য ২০১৯ সালে অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটি স্থানীয় জার্মপ্লাজম থেকে উৎপাদিত ২ টি প্যারেন্ট লাইনের মধ্যে সংকরায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে।

বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-২
বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-২
  • এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • ফল মাঝারী আকারের উচ্চ গোলাকার (High round)।
  • কাঁচা অবস্থায় গাড় সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় গাড় সবুজ দাগ (Patch) যুক্ত গাড় বাদামী বর্ণের ফল।
  • গাছ প্রতি গড়ে ৮ টি ফল ধরে এবং প্রতি ফলের গড় ওজন ৩.৪০ কেজি।
  • ফলের শাঁস গাড় হলুদ বর্ণের যা গড়ে ৪.৬ সেন্টিমিটার পুরু।
  • ফলের টীএসএস গড়ে ১১.০৫%।
  • জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৪৮-৪৯ টন হয়।

ঙ) বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-৩

বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-৩ জাতটি ২০১৯ সালে চাষাবাদের জন্য অবমুক্ত করা হয়। এ জাতটি স্থানীয় জার্মপ্লাজম থেকে উৎপাদিত ২ টি প্যারেন্ট লাইনের মধ্যে সংকরায়ন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হয়েছে।

বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-৩
বারি হাইব্রিড মিষ্টিকুমড়া-৩
  • এটি একটি উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • ফল মাঝারী আকারের চ্যাপ্টা গোলাকার (Flat round)।
  • কাঁচা অবস্থায় গাড় সবুজ রঙের এবং পাকা অবস্থায় কমলা দাগ (Patch) যুক্ত সবুজ বর্ণের ফল।
  • গাছ প্রতি গড়ে ১০টি ফল ধরে এবং প্রতি ফলের গড় ওজন ২.৪ কেজি।
  • ফলের শাঁস গাড় কমলা বর্ণের যা গড়ে ৩.৭ সেন্টিমিটার পুরু।
  • ফলের টীএসএস গড়ে ১১.১০%।
  • জীবনকাল ১২০-১৫০ দিন।
  • উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ করলে হেক্টর প্রতি ফলন প্রায় ৪৬-৪৭ টন হয়।
See also  চালকুমড়া চাষ পদ্ধতি

(২) মিষ্টি কুমড়া চাষ পদ্ধতি বিস্তারিত বর্ণনা

ক) মাটি ও আবহাওয়া

  • মিষ্টি কুমড়ার জন্য প্রায় ১৬০-১৭০ দিনের মত উষ্ণ, প্রচুর সূর্যালোক এবং নিম্ন আর্দ্রতা উত্তম। চাষকালীন সময়ে অনুকূল তাপমাত্রা হলো ২০-২৫০ সে.।
  • চাষকালীন সময়ে উচ্চ তাপমাত্রা ও লম্বা দিন হলে পুরুষ ফুলের সংখ্যা বেড়ে যায় এবং স্ত্রী ফুলরে সংখ্যা কমে যায়।
  • জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোআঁশ বা এঁটেল দোআঁশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম তবে চরাঞ্চলে পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ভালো ফলন হয়।

খ) বীজের হার

প্রতি হেক্টরে ৫-৬ কেজি (প্রতি শতাংশে ২০-২৫ গ্রাম) বীজের প্রয়োজন হয়।

গ) বীজ বপন ও চারা উৎপাদন

  1. শীতকালে চাষের জন্য অক্টোবর-ডিসেম্বর এবং গ্রীষ্মকালে চাষের জন্য ফেব্রুয়ারি-মে মাসে বীজ বপন করা যায়।
  2. চারা নার্সারিতে পলিব্যাগে উৎপাদন করে নিলে ভাল হয়।
  3. বীজ বপনের জন্য ৮ × ১০ সেমি বা তার থেকে কিছুটা বড় আকারের পলিব্যাগ ব্যবহার করা যায়।
  4. প্রথমে অর্ধেক মাটি ও অর্ধেক গোবর মিশিয়ে মাটি তৈরি করে পলিব্যাগে ভরতে হবে।
  5. সহজ অঙ্কুরোদ্গমের জন্য পরিষ্কার পানিতে ১৫-২০ ঘণ্টা অথবা শতকরা এক ভাগ পটাশিয়াম নাইট্রেট দ্রবণে বীজ এক রাত্রি ভিজিয়ে অতঃপর পলিব্যাগে বপন করতে হবে।
  6. প্রতি ব্যাগে একটি করে বীজ বুনতে হবে।
  7. বীজের আকারের দ্বিগুন মাটির গভীরে বীজ পুঁতে দিতে হবে।
  8. বীজ সরাসরি মাদায়ও বপন করা হয়। সেক্ষেত্রে সার প্রয়োগ ও মাদা তৈরির ৪-৫ দিন পর প্রতি মাদায় ২-৩টি করে বীজ বপন করা যেতে পারে।

ঘ) বীজতলায় চারার পরিচর্যা

  1. নার্সারিতে চারার প্রয়োজনীয় পরিচর্যা নিশ্চিত করতে হবে। শীতকালে চারা উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ গজানোর পূর্ব পর্যন্ত প্রতি রাতে প্লাস্টিক দিয়ে পলিব্যাগ ঢেকে রাখতে হবে এবং দিনে খোলা রাখতে হবে।
  2. চারায় প্রয়োজন অনুসারে পানি দিতে হবে তবে সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার গায়ে পানি না পড়ে।
  3. পলিব্যাগের মাটি চটা বাঁধলে তা ভেঙ্গে দিতে হবে।
  4. চারাগাছে ‘রেড পামাকিন বিটল’ পোকার ব্যাপক আক্রমণ হয়। এটি দমনের ব্যবস্থা নিতে হবে।
  5. চারার বয়স ১৬-১৭ দিন হলে তা মাঠে প্রস্তুত মাদায় লাগাতে হবে।

ঙ) জমি নির্বাচন এবং তৈরি

  1. সেচ ও নিকাশের উত্তম সুবিধাযুক্ত এবং পর্যাপ্ত সূর্যালোক পায় এমন জমি নির্বাচন করতে হবে।
  2. জমিকে প্রথমে ভালভাবে চাষ ও মই দিয়ে এমনভাবে তৈরি করতে হবে যেন জমিতে কোন ঢিলা এবং আগাছা না থাকে।
  3. গাছের শিকড়ের যাথযথ বৃদ্ধির জন্য উত্তমরূপে গর্ত (মাদা) তৈরি করতে হবে।

চ) বেড তৈরি

বেডের উচচতা ১৫-২০ সেমি ও প্রস্থ ২.৫ মি এবং লম্বা জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে সুবিধামতো নিতে হবে। এভাবে পরপর বেড তৈরি করতে হবে। পাশাপাশি দুইটি বেডের মাঝখানে ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা থাকবে।

See also  হরমোন প্রয়োগে গ্রীষ্মকালীন লাউ চাষের পদ্ধতি

ছ) মাদা তৈরি

  1. মাদার ব্যাস ৫০-৫৫ সেমি, গভীরতা ৫০-৫৫ সেমি এবং তলদেশ ৪৫-৫০ সেমি প্রশস্ত হবে।
  2. ৬০ সেমি প্রশস্ত সেচ ও নিকাশ নালা সংলগ্ন বেডের কিনারা হইতে ৫০ সেমি বাদ দিয়ে মাদার কেন্দ্র ধরে ২ মিটার অন্তর অন্তর এক সারিতে মাদা তৈরি করতে হবে।
  3. প্রতি বেডে এক সারিতে চারা লাগাতে হবে। সারির অপর পার্শ্বে ২ মিটার খালি জায়গায় লতা বাইবার সুযোগ পাবে।

জ) সারের মাত্রা ও প্রয়োগ প্রদ্ধতি

(প্রতি শতকে ৬ টি মাদা ধরে হিসাব করা হয়েছে)

মাদায় চারা রোপণের পূর্বে সার দেয়ার পর পানি দিয়ে মাদার মাটি ভালভাবে ভিজিয়ে দিতে হবে। অতঃপর মাটিতে “জো” এলে ৭-১০ দিন পর চারা রোপণ করতে হবে।

সারের নামমোট সারের পরিমাণ (হেক্টরপ্রতি)মোট সারের পরিমাণ (শতাংশপ্রতি)জমি তৈরির সময় (শতাংশপ্রতি)মাদা প্রতি চারা রোপণের ৭-১০ দিন পূর্বেমাদা প্রতি চারা রোপণের ১০-১৫ দিন পরমাদা প্রতি চারা রোপণের ৩০-৩৫ দিন পরমাদা প্রতি চারা রোপণের ৫০-৫৫ দিন পরমাদা প্রতি চারা রোপণের ৭০-৭৫ দিন পর
পচা গোবর১০ টন৪০ কেজি১০ কেজি৫ কেজি
টিএসপি১৭৫কেজি৭০০ গ্রাম৩৫০ গ্রাম৬০ গ্রাম
ইউরিয়া১৭৫ কেজি৭০০ গ্রাম৩০ গ্রাম৩০ গ্রাম৩০ গ্রাম৩০ গ্রাম
এমওপি১৫০ কেজি৬০০ গ্রাম২০০ গ্রাম৫০ গ্রাম২৫ গ্রাম
জিপসাম১০০ কেজি৪০০ গ্রাম৪০০ গ্রাম
জিংক সালফেট১২.৫ কেজি৫০ গ্রাম৫০ গ্রাম
বোরাক্স১০ কেজি৪০ গ্রাম৪০ গ্রাম
ম্যাগনেসিয়াম সালফেট৬০ কেজি২৪০ গ্রাম৪০ গ্রাম

ঝ) চারার বয়স

বীজ গজানোর পর ১৬-১৭ দিন বয়সের চারা মাঠে লাগানোর জন্য উত্তম।

ঞ) চারা রোপণ

  1. মাঠে প্রস্তুত মাদাগুলোর মাটি ভালোভাবে ওলট-পালট করে, এক কোপ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জায়গা করে নিতে হবে।
  2. অতঃপর পলিব্যাগের ভাঁজ বরাবর ব্লেড দিয়ে কেটে পলিব্যাগ সরিয়ে মাটির দলাসহ চারাটি উক্ত জায়গায় লাগিয়ে চারপাশে মাটি দিয়ে ভরাট করে দিতে হবে।
  3. চারা লাগানোর পর গর্তে পানি দিতে হবে।
  4. পলিব্যাগ সরানোর সময় এবং চারা রোপণের সময় সাবধান থাকতে হবে যাতে চারার শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত না হয় এবং মাটির দলা না ভাংগে।
  5. নতুবা শিকড়ের ক্ষতস্থান দিয়ে ঢলে পড়া রোগের (ফিউজারিয়াম উইল্ট) জীবাণু ঢুকবে এবং শিকড় ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাছের বৃদ্ধি দেরিতে শুরু হবে।

ট) সেচ দেওয়া

  • মিষ্টি কুমড়া ফসল পানির প্রতি খুবই সংবেদনশীল। কাজেই সেচ নালা দিয়ে প্রয়োজন অনুসারে নিয়মিত সেচ দিতে হবে।
  • জমিতে কখনও সমস্ত জমি ভিজিয়ে প্লাবন সেচ দেয়া যাবে না। শুধুমাত্র সেচ নালায় পানি দিয়ে আট্কে রাখলে গাছ পানি টেনে নিবে। প্রয়োজনে সেচ নালা হতে ছোট কোন পাত্র দিয়ে কিছু পানি গাছের গোড়ায় সেচে দেওয়া যায়।
  • শুষ্ক মৌসুমে ৫-৭ দিন অন্তর সেচ দেয়ার প্রয়োজন পড়ে।
See also  লাউ চাষ পদ্ধতি

ঠ) মালচিং

প্রত্যেক সেচের পর হালকা মালচ্ করে গাছের গোড়ার মাটির চটা ভেঙ্গে দিতে হবে।

ড) আগাছা দমন

আগাছা অনেক রোগের আবাস স্থল। এছাড়াও আগাছা খাদ্যোপাদান ও রস শোষণ করে নেয়। কাজেই চারা লাগানো থেকে শুরু করে ফল সংগ্রহ পর্যন্ত জমি সবসময়ই আগাছা মুক্ত রাখতে হবে।

ঠ) সার উপরি প্রয়োগ

চারা রোপণের পর মাদা প্রতি সারের উপরি প্রয়োগের যে মাত্রা উল্লেখ করা আছে তা গাছের গোড়ার কাছাকাছি প্রয়োগ করতে হবে।

ণ) বিশেষ পরিচর্যা

  • গাছের গোড়ার দিকে ৪০-৪৫ সেমি পর্যন্ত শোষক শাখা (ডালপালা) গুলো ধারালো ব্লেড দিয়ে কেটে অপসারণ করতে হবে।
  • পরাগায়ন প্রধাণত মৌমাছির দ্বারা সম্পন্ন হয়। প্রাকৃতিক পরাগায়নের মাধ্যমে বেশি ফল ধরার জন্য হেক্টরপ্রতি ২-৩ টি মৌমাছির কলোনী স্থাপন করা যেতে পারে।
  • হাত দিয়ে কৃত্রিম পরাগায়ন করেও ফলন বৃদ্ধি করা সম্ভব।

ত) ফসল তোলা (পরিপক্কতা সনাক্তকরণ)

মিষ্টি কুমড়ার কাঁচা ফলের ভক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা:

কাঁচা ফল পরাগায়ণের ২০-২৫ দিনের মধ্যে সংগ্রহ করতে হবে। তখনও ফলে সবুজ রঙ থাকবে এবং ফল মসৃণ ও উজ্জ্বল দেখাবে। নখ দিয়ে ফলের গায়ে চাপ দিলে নখ সহজেই ভিতরে ঢুকে যাবে।

পাকা ফল সংগ্রহ ও সংরক্ষণযোগ্য পরিপক্কতা:

নিম্নলিখিত বিষয়গুলো অনুসরণ করে মিষ্টিকুমড়ার পূর্ণ পরিপক্কতা নির্ধারণ করা হয়-

  1. ফলের রঙ হলুদ অথবা হলুদ-কমলা অথবা খড়ের রং ধারণ করবে।
  2. ফলের বোঁটা খড়ের রঙ ধারণ করবে।
  3. গাছের ডগা শুকাতে শুরু করবে।

পাকা ফল সংগ্রহকালে বিশেষ সতর্কতা:

পাকা ফল সংগ্রহের দুই তিন সপ্তাহ পূর্বে সেচ দেওয়া সম্পূর্ণ বন্ধ করতে হবে। এতে ফলের সংরক্ষণকাল বৃদ্ধি হবে।

(৩) মিষ্টি কুমড়া চাষে পোকা মাকড় ও রোগবালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ক) ফলের মাছি পোকা মিষ্টিকুমড়ার জন্য একটি মারাত্মক পোকা

  • স্ত্রী মাছি কচি ফলে ডিম পাড়ে। ডিম ফুটে কীড়াগুলো ফলের শাস খায়, ফল পচে যায় এবং অকালে ঝরে পড়ে এক্ষেত্রে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ আক্রান্ত ও পচা ফল জমিতে না ফেলে তা মাটিতে পুতে ফেলতে হবে।
  • সেক্স ফেরোমন ও বিষটোপ ফাঁদ যৌথভাবে জমিতে ব্যবহার করতে হবে। বর্তমানে বিভিন্ন কীটনাশক এর দোকানে সেক্স ফেরোমন ফাঁদ সহজেই পাওয়া যায়।
  • বিষটোপের জন্য থেতলানো ১০০ গ্রাম পাঁকা/আদা পাঁকা মিষ্টিকুমড়ার সাথে সামান্য একটু সেভিন পাউডার মিশিয়ে ব্যবহার করা যেতে পারে। বিষটোপ ৩/৪ দিন পরপর পরিবর্তন করতে হবে।
সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও বিষটোপ ফাঁদ
সেক্স ফেরোমেন ফাঁদ ও বিষটোপ ফাঁদ

খ) এছাড়াও পামকিন বিটল নামক আরেকটি পোকা মিষ্টিকুমড়ার চারা গাছের খুব ক্ষতি সাধন করে থাকে

  • অনেক ক্ষেত্রে এই পোকার কীড়া গাছের গোড়ায় বাস করে এবং শিকড়ের ক্ষতি করে বড় গাছ মেরে ফেলতে পারে।
  • সেক্ষেত্রে পুনাঙ্গ পোকা হাত দিয়ে ধরে মেরে ফেলতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয় তবে ২ গ্রাম সেভিন প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে চারা গাছে স্প্রে করতে হবে।
  • কীড়া দমনের জন্য প্রতি গাছের গোড়ায় ২-৫ গ্রাম বাসুডিন/সানফুরান মাটিতে দিয়ে সেচ দিতে হবে।

গ) মিষ্টিকুমড়াতে সবচেয়ে যে রোগটি বেশী দেখা যায় তা হলো সাদা গুড়া রোগ বা পাউডারী মিলডিউ

  • এক্ষেত্রে পাতার উভয় পাশে প্রথমে সাদা সাদা পাউডার বা গুঁড়া দেখা যায়, ধীরে ধীরে এ দাগগুলো বড় ও বাদামি হয়ে পাতা শুকিয়ে যায় এবং ফল ঝরে যেতে পারে।
  • এ রোগ আক্রান্ত পাতা ও গাছ সংগ্রহ করে পুড়িয়ে ফেলে এবং প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ গ্রাম থিওভিট বা সালফোলাক্স/ কুমুলাস অথবা ১০ গ্রাম ক্যালিক্সিন ১৫ দিন পর পর ২ বার স্প্রে করে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।

ঘ) বর্তমানে মিষ্টিকুমড়াতে আরো একটি বড় সমস্যা দেখা যাচ্ছে তা হলো ভাইরাস রোগ

  • এই রোগে আক্রান্ত পাতা সবুজ ও হলুদের ছোপ ছোপ দাগ দেখা যায় এবং কচি পাতা আস্তে আস্তে কুকড়িয়ে যেতে থাকে।
  • এই ভাইরাস রোগ কোন প্রকার ঔষধ দিয়ে নিয়ন্ত্রন করা যায় না। সেক্ষেত্রে একমাত্র পথ হলো ভাইরাস আক্রান্ত গাছ জমিতে দেখা মাত্রই তা জমি থেকে তুলে ফেলে দিতে হবে এবং ভাইরাস মুক্ত গাছ হতে বীজ সংগ্রহকরতে হবে। তবেই কেবল মাত্র এ রোগ হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।

চরাঞ্চলে কৃষক ভাইয়েরা উপরোক্ত নিয়ম মেনে মিষ্টিকুমাড়া আবাদ করলে আর্ধিক ভাবে অনেক লাভবান হতে পারেন।

তবে এক্ষেত্রে একটি বিশেষ দিক খেয়াল রাখতে হবে তা হলো- হাইব্রিড জাত সমূহ ব্যবহার করলে কোন অবস্থাতেই তার বীজ পরবর্তী বছর ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করা যাবে না। প্রতি বছর নতুন ভাবে বীজ সংগ্রহ করে তা লাগাতে হবে, তবেই কেবল মাত্র ফলন ঠিক থাকবে।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page