Skip to content

মিষ্টি তেঁতুল চাষ পদ্ধতি

মিষ্টি তেঁতুল চাষ পদ্ধতি

আমাদের বাংলাদেশে অপ্রধান ফলের মধ্যে তেঁতুল অন্যতম। ছোট বড় সকলের কাছে বেশ জনপ্রিয়, বিশেষ করে আচার এর জন্য তেঁতুলের কদর বেশি।

টক এবং মিষ্টি দুই ধরনের স্বাদের তেঁতুল রয়েছে। তবে দেশে উৎপাদিত তেঁতুলের অধিকাংশই টক শ্রেণির। পাকা ফল টাটকা অবস্থায় খাওয়া ছাড়াও চাটনি, সস, শরবত, আচার প্রভৃতি মুখরোচক খাবার তৈরিতে ব্যবহৃত হয়।

মিষ্টি তেঁতুল লিগিউমিনোসী (Leguminosae) পরিবারভুক্ত উদ্ভিদ।

তেঁতুল আমাদের বাংলাদেশে অত্যন্ত সুপরিচিত একটি ফল হলেও মিষ্টি তেঁতুল ততোটাই অপরিচিত। তেঁতুলের নাম শোনা মাত্রই সবার কাছে একটি টক স্বাদের ফলের কথা মনে পড়ে যায়। কিন্তু এই তেঁতুলটি সম্পূর্ণ মিষ্টি স্বাদযুক্ত একটি ফল।

খাদ্যমানের দিক থেকেও এটি একটি অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিমান সমৃদ্ধ ফল।

প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি তেঁতুলে ৭০ গ্রাম ক্যালরি, ১৪.৭ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৮৬৭ আই.ইউ ভিটামিন ‘এ’, ৪২৯ মি. গ্রাম ক্যালসিয়াম, ৪৪ মি. গ্রাম ভিটামিন ‘সি’, ২.৩ গ্রাম প্রোটিন ও ৬.৩ গ্রাম আঁশ পাওয়া পায়।

তদুপরি মিষ্টি তেঁতুলে রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ তুলনামূলকভাবে অনেক কম এবং এর চাষাবাদ সহজ হওয়ায় বাংলাদেশে বিশেষ করে পার্বত্য অঞ্চলে এর চাষাবাদের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে।

মিষ্টি তেঁতুলের বাজার মূল্য ও চাহিদা খুব বেশি। তাই বাংলাদেশে এর চাষাবাদ ও প্রচার ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা দরকার।

(১) তেঁতুলের জাত পরিচিতি

বারি তেঁতুল-১:

২০০৯ সালে পাহাড়ী কৃষি গবেষণা কেন্দ্র, খাগড়াছড়ি ‘বারি তেঁতুল-১’ নামে একটি মিষ্টি তেঁতুলের জাত উদ্ভাবন করেছে।

এই মিষ্টি তেঁতুলটির উৎপত্তিস্থল থাইল্যান্ড। ১৯৯৯ সালে প্রথম খাগড়াছড়িতে এর গাছ লাগানো হয় এবং ২০০৭ সালে এটি প্রথম ফল দেয়।

বারি তেঁতুল-১
বারি তেঁতুল-১
  • নিয়মিত ফলদানকারী উচ্চ ফলনশীল জাত।
  • গাছ মাঝারী, মধ্যম ঝোপালো ও ছড়ানো।
  • এপ্রিল-মে মাসে গাছে ফুল আসে এবং মার্চ মাসে ফল সংগ্রহের উপযোগী হয়।
  • ফল মাঝারী (৩২ গ্রাম)।
  • শাঁস নরম, আঠালো এবং মিষ্টি (টিএসএস ৭৫%)।
  • খাদ্যপযোগী অংশ ৫৩%।
  • হেক্টরপ্রতি ফলন ১০-১২ টন।

(২) মিষ্টি তেঁতুল চাষ পদ্ধতি

ক) জলবায়ু ও মাটি

  • মিষ্টি তেঁতুল মৃদু উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে ভাল জন্মে। তবে সুনিষ্কাশনের ব্যবস্থা থাকলে ভারী বৃষ্টিপাতযুক্ত স্থানেও হয়।
  • উঁচু, ঊর্বর, গভীর সুনিষ্কাশিত এবং মৃদু অম্লভাবাপন্ন বেলে দোআঁশ মাটিতে ভাল হয়।
  • মিষ্টি তেঁতুলের জন্য সর্বোচ্চ ৪৬ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রা এবং বাৎসরিক ৫০০-১৫০০ মি.মি. বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন।
  • মিষ্টি তেঁতুল সমুদ্র সমতল থেকে প্রায় ১,০০০ মি. উচ্চতা পর্যন্ত জন্মে।
  • সাধারণত এ গাছ মৃদু অম্ল ও ক্ষারযুক্ত মাটি সহ্য করতে পারে। কিন্তু বেলে দোআঁশ মাটিতেও ভাল হয়।

খ) বংশ বিস্তার

বীজ এবং অঙ্গজ দুই ভাবেই মিষ্টি তেঁতুলের বংশ বিস্তার করা সম্ভব।

বীজ দ্বারা:

পরিপক্ক বীজ বীজতলায় চারা তৈরি করে বংশ বিস্তার করা যায়। এক্ষেত্রে বীজ গজানোর জন্য এক সপ্তাহ সময় লাগে।

মিষ্টি তেঁতুলের বীজ ভালভাবে শুকিয়ে রাখলে কয়েক মাস পর্যন্ত এর সজীবতা বজায় থাকে। কিন্তু বংশ বিস্তারের জন্য সংগৃহীত বীজ একটি উৎকৃষ্ট মানসম্পন্ন গাছ থেকে নির্বাচিত হওয়া উচিত।

বীজ থেকে প্রাপ্ত গাছের গুণাগুণ মাতৃগাছের মত না হওয়ায় এবং ফলন দেরিতে হওয়ায় এ পদ্ধতি অনেক ক্ষেত্রেই পরিহার করা হয়।

বীজ থেকে প্রাপ্ত গাছ ৭-৮ বছরে ফল দেয়।

অঙ্গজ বংশ বিস্তার:

মিষ্টি তেঁতুলের ক্ষেত্রে অঙ্গজ উপায়ে বংশ বিস্তার করে ভাল ফল পাওয়া সম্ভব।

অঙ্গজ উপায়ে উৎপাদিত গাছে মাতৃগাছের গুণাগুণ বজায় থাকে। এক্ষেত্রে গুটি কলম ও গ্রাফটিং এর মাধ্যমে ভাল ফল পাওয়া যায়।

এরকম গাছ থেকে ৩-৪ বছরের মধ্যেই ফল পাওয়া সম্ভব।

কিন্তু এই সব পদ্ধতির ক্ষেত্রে গাছের কান্ডটি নির্বাচনের পূর্বে খুব ভাল করে খেয়াল করতে হবে যে, তা যেন রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ থেকে মুক্ত হয়।

গ) লেয়ারিং (Layering)

  1. বর্ষাকাল গুটি কলম করার উপযুক্ত সময়।
  2. এক বছর বয়স্ক পেন্সিল আকৃতির ডাল গুটি কলমের জন্য নির্বাচন করা হয়।
  3. শাখার অগ্রভাগ থেকে ৩০-৪০ সেমি দূরে পর্বসন্ধি থেকে ১ সেমি নিচে ৩-৪ সেমি জায়গা জুড়ে শাখার চতুর্দিকের বাকল তুলে ফেলা হয়।
  4. তারপর ক্ষতস্থানে লালচে স্তর (ক্যাম্বিয়াম) চাকু দ্বারা ভালভাবে চেঁছে তুলে ফেলা হয়। ক্যাম্বিয়াম স্তর না তুলে ফেলা হলে এতে শিকড় গজায় না।
  5. এরপর ক্ষতস্থানের অগ্রবর্তী নিকটতম পর্বসন্ধিসহ ক্ষতস্থানটিকে শিকড় মাধ্যম (অর্ধেক মাটি, অর্ধেক গোবর ও পানির মিশ্রণে তৈরি পেস্টের মতো) দ্বারা আবৃত করে সাদা পলিথিন কাগজ দ্বারা পেঁচিয়ে চিকন সুতলি দ্বারা বেঁধে দিতে হবে।
  6. এ কলম করার ৪-৮ সপ্তাহের মধ্যে এতে শিকড় গজায়।
  7. শিকড় গজানোর পর গুটির ১-২ সেমি নিচে ২-৩ ধাপে কলমটিকে কেটে মাতৃগাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করতে হবে।
  8. কিছু পাতা ফেলে দিয়ে ছিদ্রযুক্ত পলিথিনে কলম স্থাপন করে নার্সারিতে ঝাঁঝড়ি দিয়ে পানি দেয়াসহ প্রয়োজনীয় পরিচর্যা করলে এক বছরের মধ্যে চারা রোপণের উপযোগী হয়।

ঘ) গ্রাফটিং

মিষ্টি তেঁতুলের গুটি কলম
মিষ্টি তেঁতুলের গুটি কলম

গ্রাফটিং বলতে বুঝায় একটি কাঙ্খিত গাছের একটি কান্ড বা মুকুল কেটে নিয়ে অপর একটি গাছে (রুটস্টক) প্রতিস্থাপন করা। তারপর প্রতিস্থাপিত কান্ডটি অথবা মুকুলটি রুটস্টকের সাথে সফলভাবে জোড়া লেগে গেলেই গ্রাফটিং সফলভাবে শেষ হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।

গ্রাফটিং করার সময় সাধারণত একটি অধিক কাঙ্খিত বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন গাছ থেকে কান্ড বা কুঁড়ি সংগ্রহ করে অপর একটি সাধারণ রুটস্টকে সংযোজন করা হয়।

গ্রাফটিং ফল ধারণের সময় কমিয়ে আনে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।

গ্রাফটিং এ ব্যবহৃত যন্ত্রপাতিসমূহ হলো:

  1. একটি পরিষ্কার ও ধারালো কাঁচি;
  2. পলিথিন ট্যাপ (১.৫-২ সেমি চওড়া ও মোটামুটি ৩০-৪০ সেমি লম্বা যা একটি সাধারণ পরিষ্কার প্লাস্টিক ব্যাগ থেকে কেটে সংগ্রহ করেও কাজ চালানো সম্ভব যদি বাডিং ট্যাপ না থাকে।

ঙ) ক্লেফট গ্রাফটিং বা ফাটল জোড়কলম

  1. বসন্ত ও শরৎকাল এ কলম করার সবচেয়ে উপযোগী সময়। বিশেষত বসন্তের শুরুতে যখন গাছের সুপ্ততা ভেঙ্গে আসতে থাকে তখনই এ কলম করা হয়।
  2. এ কলম তৈরির জন্য সাধারণত ২.৫-১০ সেমি ও ব্যাসের আদিজোড় নির্বাচন করা হয়ে থাকে।
  3. নির্বাচিত আদিজোড়ের মসৃণ শাখাবিহীন স্থানে ধারালো ছুরি দ্বারা আনুভূমিকভাবে কেটে সেখানে লম্বাভাবে ৫-৭.৫ সেমি গভীর করে ফাটাতে হয়। লক্ষ্য রাখতে হয় যেন ফাটানো কাজটি খাড়াভাবে হয়।
  4. উপজোড় প্রস্তুতের জন্য সাধারণত ২-৩টি কুঁড়িযুক্ত ৭.৫-১০ সেমি দীর্ঘ উপজোড় শাখা নির্বাচন হয়।
  5. নির্বাচিত উপজোড়ের নিচের প্রান্তে তির্যক কর্তনের মাধ্যমে একটি গোজের মত তৈরি করা হয়।
  6. অপেক্ষাকৃত বড় আদিজোড় অর্থাৎ ২.৫ সেমি ব্যাসের চেয়ে বেশি ব্যসযুক্ত আদিজোড়ের জন্য একটি উপজোড় গোজের পরিবর্তে দুটি গোজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
  7. প্রতিটি গোজকেই ফাটলের যে কোন একপাশে বা কিনারে স্থাপন করা হয়।
  8. যদি এ ফাটলের মধ্যে উপজোড় গোজ শক্ত বা আঁটোসাঁটো হয়ে না বসে তবে সংযোগস্থান শক্ত করে বেঁধে আটোঁসাঁটো করা হয় এবং সংযোগ স্থান গ্রাফটিং মোম দ্বারা এমনভাবে আবৃত করা হয় যাতে ভিতরে কোন পানি ঢুকতে না পারে।
  9. এছাড়া সমস্ত কলমটিকে একটি পলিথিন দ্বারা আবৃত রাখলেও কলমের মধ্যে সহজে পানি ঢুকতে পারে না।

চ) মিষ্টি তেঁতুলের চারা রোপণের সময়

চারা রোপণ জুন-নভেম্বর মাসে করতে হবে। অতঃপর চারা প্রতিষ্ঠার জন্য নিয়মিত পানি সেচ দিতে হবে। তবে আষাঢ়-ভাদ্র (মধ্য জুন-মধ্য সেপ্টেম্বর) মাস চারা রোপণের উপযুক্ত সময়।

ছ) জমি প্রস্তুত ও গর্ত তৈরি

গর্ত তৈরির পূর্বে জায়গাটির আগাছা ও অন্যান্য অপ্রয়োজনীয় গাছপালা অপসারণ করতে হবে। তারপর কোদালের সাহায্যে গর্ত তৈরি করতে হবে।

গর্তের আকার হতে হবে ১ মি. ⨉ ১ মি. ⨉ ১ মি.।

জ) গর্তে সার প্রয়োগ

নিচে উল্লিখিত সার গর্তের মাটির সাথে ভালভাবে মিশিয়ে গর্ত ভরাট করে ১০-১৫ দিন রেখে দিতে হবে। মাটিতে রসের পরিমাণ কম থাকলে পানি সেচের ব্যবস্থা করতে হবে।

সারের নামসারের পরিমাণ
পচা গোবর২০-২৫ কেজি
টিএসপি৪০০-৫০০ গ্রাম
টিএসপি৫০০-৬০০ গ্রাম
জিপসাম২০০-৩০০ গ্রাম
জিঙ্ক সালফেট৪০-৬০ গ্রাম

ঝ) চারা রোপণ

চারা রোপণের দূরত্ব: ১০ মি. ⨉ ১০ মি.।

  • সুস্থ সতেজ এক বছর বয়সী চারা গর্তের মাঝখানে এমনভাবে রোপণ করতে হবে যেন চারার গোড়াটি মাটির বল ভেঙ্গে না যায়।
  • চারা রোপণের পর গাছের গোড়ার মাটি ভালভাবে চেপে দিয়ে হালকা সেচ দিতে হবে।
  • রোপণের পর চারা যাতে হেলে না পড়ে সে জন্য শক্ত কাঠি দিয়ে বেঁধে দিতে হবে এবং চারায় বেড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

ঞ) আগাছা ব্যবস্থাপনা

  • চারা অবস্থায় গাছের চারদিকের আগাছা অবশ্যই পরিষ্কার করা উচিত।
  • অন্তত চার বছর পর্যন্ত আগাছা ব্যবস্থাপনা করা উচিত যাতে গাছের বৃদ্ধি ব্যহত না হয়।
  • বাণিজ্যিকভাবে যে সব বাগান করা হয় বিশেষ করে সেসব ক্ষেত্রে যদি আন্তঃফসল হিসেবে কোন গাছ না থাকে তাহলে আগাছা দমন অত্যন্ত জরুরি। এতে বাগানের মাটিতে সঠিক পরিমাণে আর্দ্রতা ধরে রাখা সম্ভব।

ট) আন্তঃফসল

গাছ লাগানোর প্রথম চার বছর পর্যন্ত বাগানে আন্তঃফসল করা যায়। এ ক্ষেত্রে আন্তঃফসল হিসেবে সাধারণত বাদাম, শাকসবজি, বরবটি, মুগডাল, ফেলন, স্বল্পমেয়াদী দানা জাতীয় শস্য, আদা ও হলুদ চাষ করা যেতে পারে।

ঠ) পানি সেচ ও নিষ্কাশন

মিষ্টি তেঁতুল একটি খরা সহনশীল গাছ। প্রাপ্ত বয়স্ক বা প্রতিষ্ঠিত তেঁতুল গাছে পানি প্রয়োগের তেমন একটা প্রয়োজন হয় না। কিন্তু চারা অবস্থায় মাটির আর্দ্রতার বিশেষ প্রয়োজন হয় বলে ভালভাবে চারা প্রতিষ্ঠার জন্য নার্সারিতে প্রতি ২ সপ্তাহ অন্তর অন্তর পানি দিতে হয়।

পানি সব সময় বিকেলে দিতে হয়। কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত পানি সেচ দিলে গাছের গোড়ায় পানি আটকে চারা মারাও যেতে পারে। এ ক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের জন্য নালা করতে হবে যাতে অতিরিক্ত পানি নালার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়।

ড) ছাঁটাইকরণ

চারা গাছের ডাল ছাঁটাই অপরিহার্য।

গাছ লাগানোর পর থেকে ফল ধরার পূর্ব পর্যন্ত ধীরে ধীরে ডাল ছেঁটে গাছকে নির্দিষ্ট আকার দিতে হবে যাতে গাছ চারিদিকে ছড়াতে না পারে। তারপর নির্দিষ্ট আকার প্রাপ্তির পর থেকে শুধুমাত্র শুকনা ও মরা পাতা এবং ডাল কাটতে হবে।

ঢ) ফল সংগ্রহ

ফুল আসার সময়: এপ্রিলের শেষের দিকে সাধারণত মিষ্টি তেঁতুল গাছে ফুল আসে।

সংগ্রহের সময়: মিষ্টি তেঁতুলের ফল সংগ্রহের উপযোগী হয় বসন্তের শেষ দিকে এবং গ্রীষ্মের শুরতে (ফেব্রুয়ারি-মার্চ)।

ফলের পরিপক্কতা ও ফলন:

  • মিষ্টি তেঁতুলের সব ফল (পড) একসাথে পরিপক্ক হয় না। তাই হারভেস্টও করতে হয় আলাদা আলাদা সময়ে।
  • সাধারণত গাছ থেকে ফল পাড়ার সময় খেয়াল রাখতে হবে যে, প্রত্যেকটি পডের বাইরের রং যেন বাদামী বর্ণের হয়। সুষ্ঠুভাবে পরিপক্ক ফলের র্ভিতরের পাল্প আঠালো ও বাদামী বা গাঢ় বাদামী রঙের হয় এবং বীজগুলো শক্ত ও চকচকে হয়।
  • আরও একটি বিষয় বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে, সম্পূর্ণ পরিপক্ক অবস্থায় মিষ্টি তেঁতুলের পডের বহিঃত্বক খুব সহজেই হাত দিয়ে চাপ দিয়ে ভাঙ্গ যায় এবং চাচ দিলে একটি মচমচে শব্দ হয়। আর পডের ভিতরের পাল্প শুকিয়ে সামান্য কুঁচকে যায়।

ণ) ফল সংগ্রহের উপায়/কৌশল

গাছ থেকে পাকা অবস্থায় মিষ্টি তেঁতুল সংগ্রহের সবচেয়ে উৎকৃষ্ট উপায় হলো মই দিয়ে গাছে উঠে একটি একটি করে পাড়া যাতে এর বাইরের ত্বক ভেঙ্গে না যায়।

কারণ মিষ্টি তেঁতুলের শেলফ লাইফ মোটামুটিভাবে পুরোটাই নির্ভর করে এর বহিঃত্বক বা খোসার ওপর। কারণ বহিঃত্বক ভেঙ্গে গেলে পড খুব তাড়াতাড়ি ছত্রাক দ্বারা আক্রান্ত হয় এবং উপযুক্ত বাজার মূল্য পাওয়া যায় না।

(৩) মিষ্টি তেঁতুল চাষে রোগ ও পোকার ব্যবস্থাপনা

মিষ্টি তেঁতুল গাছে রোগ ও পোকামাকড়ের তেমন উপদ্রব লক্ষ্য করা যায় না। তবে মাঝে মাঝে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ দেখা যায়।

ফল ছিদ্রকারী পোকা দমন:

  1. ফল সংগ্রহ করার পর পর মৃত, অর্ধমৃত, শুকনা ডালপালা ছাঁটাই করে দিতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন চাষাবাদ করতে হবে।
  2. ফল ধরার পর আক্রমণ শুরু হলে আক্রমণের শুরতেই প্রতিলিটার পানিতে ৫০ গ্রাম আধা ভাঙ্গ নিমের বীজ সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকাল বেলা পুরো গাছে স্প্রে করতে হবে।
  3. তারপরও আক্রমণ দেখা গেলে সুমিথিয়ন ৫০ইসি ২ মিলি হারে প্রতিলিটার পানিতে মিশিয়ে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts