Skip to content

 

মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি

মুগ ডালের চাষ পদ্ধতি

(১) মুগ ডালের চাষ পদ্ধতির বর্ণনা

ক) মাটি

বেলে দোআঁশ ও পলি দোআঁশ মাটি, উঁচু-মাঝারী উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত জমি মুগ আবাদের জন্য উপযোগী।

খ) জমি তৈরি

২-৩টি আড়াআড়ি চাষ ও প্রয়োজনীয় মই দিয়ে মাটি ভালোভাবে তৈরি করতে হবে।

গ) বপন পদ্ধতি

  • ছিটিয়ে ও সারি উভয় পদ্ধতিতেই বপন করা যায়।
  • আন্তঃফসল বা মিশ্র ফসল হিসেবে মুগ চাষ করলে সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা হয়। তবে সারি করে বপন করাই উত্তম। সারি করে বপন করলে আন্তঃপরিচর্যাসহ ফল সংগ্রহের সুবিধা হয় এবং বীজের গুণাগুণসহ ফলনও বেশি হয়।
  • সারিতে বপনের ক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৩০ সেমি বা ১২ ইঞ্চি রাখতে হবে এবং গাছ থেকে গাছের দূরত্ব ৭-৮ সেমি।

ঘ) বীজের হার

  • মুগের বীজের পরিমাণ নির্ভর করে বীজের আকার এবং বপন পদ্ধতির উপর।
  • ১৫-১৮ কেজি/হেক্টর ছোট দানার ক্ষেত্রে ১০০০ বীজের ওজন ২৫-৩২ গ্রাম এবং ২২-২৫ কেজি/হে. বড় দানার ক্ষেত্রে ৪০-৫২ গ্রাম/১০০০ বীজের ওজন এবং ছিটিয়ে বপনের ক্ষেত্রে বীজের পরিমাণ সামান্য বেশি দিতে হবে।

ঙ) বপনের সময়

  • এলাকাভেদে মুগের বপন সময়ের তারতম্য দেখা যায়। খরিফ-১ মৌসুমে ফাল্গুন মাসের ২য় সপ্তাহ থেকে শেষ পর্যন্ত (ফেব্রুয়ারির শেষ ভাগ হতে মার্চের মধ্য-ভাগ)।
  • খরিফ-২ মৌসুমে শ্রাবণ ৩য় সপ্তাহ-ভাদ্র ৩য় সপ্তাহ (আগস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহ হতে সেপ্টেম্বরের ১ম সপ্তাহ পর্যন্ত)।
  • বিলম্ব রবি মৌসুমে বরিশাল এলাকার জন্য বপনের উত্তম সময় মাঘ মাস (জানুয়ারির ২য় সপ্তাহ থেকে ফেব্রুয়ারির মধ্য ভাগ)।

চ) সারের পরিমাণ ও প্রয়োগ পদ্ধতি

একক ফসলের জন্য অনুর্বর জমিতে হেক্টরপ্রতি সারগুলি জমি শেষ চাষের সময় নিম্নরূপ হারে সার ব্যবহার করতে হবে।

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর (কেজি)সারের পরিমাণ/বিঘা (কেজি)
ইউরিয়া৪০-৪৫৫-৬
টিএসপি৮০-৯০১০-১৩
এমওপি৪০-৪৫৫-৬
জিপসাম৫০-৫৫৭-৮
বোরন (প্রয়োজনবোধে)৭-১০১-১.৫
অণুজীব সার (প্রয়োজনবোধে)সুপারিশমতোসুপারিশমতো

ছ) মুগের ডাল চাষে অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

  • বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন।
  • অতিবৃষ্টির ফলে যাতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হতে না পারে সে জন্য অতিরিক্ত পানি বের হওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • এছাড়া খরিফ-১ মৌসুমে বৃষ্টি না হলে সঠিক সময়ে বপনের জন্য বপনের পূর্বে বা পরে একটি সেচ প্রয়োজন।
  • সেচ দিলে চারা গজানোর পর মালচিং করে দিতে হবে।
  • এছাড়াও প্রয়োজনে পরবর্তীতে মাটিতে রসের অভাব হলে ১-২ টি হালকা সেচ দিতে হবে।

জ) ফসল সংগ্রহ

ফল পরিপক্ক হয়ে কালচে বর্ণ ধারণ করলে ফল সংগ্রহ করতে হয়। আর খরিফ-২ মৌসুমে বপন করলে ফসল পেকে গেলে গাছসহ একেবারে কেটে আনতে হয়।

See also  ডাল ফসল কি/কাকে বলে? ডাল ফসল কোন মাটিতে ভালো হয়? মসুর ও মুগ ডাল চাষ পদ্ধতি

ঝ) মুগ বীজের উপর ন্যাপথলিন এসেটিক এসিডের মাত্রার প্রভাব

বাংলাদেশে মুগ একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ডাল জাতীয় ফসল। খেসারী এবং মসুরের পরেই এর স্থান। মুগের অধিক পরিমাণে ও মানসম্মত বীজ উৎপাদনে অনেক কারণ জড়িত থাকলেও উদ্ভিদ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রকের (Plant growth regulators) ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ।

ন্যাপথলিন এসেটিক এসিড (৩০ পিপিএম) বীজ বপনের ৩০ দিন পর স্প্রে করলে বারি মুগ-৬ এর গাছে পডের সংখ্যা বেশি হয় এবং ফলন প্রতি হেক্টরে ১,৩৪৩ কেজি হয়ে থাকে যা ন্যাপথলিন এসটিক এসিড প্রয়োগ না করার চেয়ে শতকরা ১৭ ভাগ বেশি। শুধু তাই নয় ন্যাপথলিন এসেটিক এসিড (৩০ পিপিএম) প্রয়োগে বীজের গজানোর হার শতকরা ৮০ ভাগের অধিক হয়ে থাকে।

(২) মুগের ডাল চাষে পোকান্ডমাকড় ও রোগ-বালাই ব্যবস্থাপনা

মুগ ডালের চাষাবাদের ক্ষেত্রে কৃষকগণ যেসকল সমস্যার সম্মুখীন হন তার মধ্যে রোগ-বালাই এবং পোকান্ডমাকড় এর আক্রমণ অন্যতম।

ক) মুগের হলুদ মোজাইক রোগ

হলুদ মোজাইক মুগের সবচেয়ে মারাত্মক ভাইরাসজনিত রোগ। মুগ আবাদী দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার প্রায় সব কটি দেশেই। এ রোগের আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। তবে মুগের তুলনায় এর প্রকোপ কিছুটা কম হয়।

মুগের হলুদ মোজাইক
মুগের হলুদ মোজাইক

চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স্ক গাছ পর্যন্ত ফসলের যেকোন অবস্থায়ই এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। তবে আক্রমণ যত কম বয়সে হয় ক্ষতির পরিমাণ তত বেশি হয়।

গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায় এ রোগের আক্রমণ আট সপ্তাহ বয়সের মুগ ক্ষেতে তেমন কোন ক্ষতি করে না পক্ষান্তরে সাত, ছয়, পাঁচ এবং চার সপ্তাহ বয়সের ফসলে যথাক্রমে শতকরা ২০, ৩৮, ৬০ ও ৮৫ ভাগ ফসল কমে যেতে পারে। এমনকি এক থেকে দুই সপ্তাহ বয়সের মুগ ফসল আক্রান্ত হলে প্রায় শতকরা ১০০ ভাগ ফলন বিনষ্ট হতে পারে।

এই রোগের আক্রমণকারী ভাইরাস সাদা মাছি দ্বারা বিস্তার লাভ করে।

হলুদ মোজাইক আক্রান্ত মুগের পাতা
হলুদ মোজাইক আক্রান্ত মুগের পাতা

রোগের লক্ষণ:

  • আক্রান্ত পাতার উপর চাকা ও গাঢ় সবুজ এবং হলুদ রঙের মিশ্রণ যুক্ত নানা বর্ণের বিন্যাস এরোগের প্রধান লক্ষণ। জাত ভেদে এ রোগের লক্ষণের কিছুটা তারতম্য হলেও এরূপ হলুদ হয়ে যাওয়া সর্বাবস্থায় দেখা যায়।
  • আক্রান্ত গাছ খর্বাকৃতির হয়। আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ফুল ও ফল কুকড়ে যায় এবং ফলের আকার ছোট হয়। প্রতিটি ফলে বীজের সংখ্যা হ্রাস পায়।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছে ফুল ফল মোটেই ধরে না বা খুবই কম ধরে থাকে।

ব্যবস্থাপনা:

  1. এ রোগটির ব্যবস্থাপনা খুবই কষ্টসাধ্য। তবে ডাল গবেষণা কেন্দ্র কর্তৃক উদ্ভাবিত মুগের জাত বারি মুগ-৬, বারি মুগ-৭ এবং বারি মুগ- ৮ রোগটির প্রতি সহনশীল।
  2. খরিফ-১ মৌসুমে বপনকৃত ফসলে খরিফ-২ মৌসুমে বপনকৃত ফসলের তুলনায় এরোগের আক্রমণ উল্লেখযোগ্য হারে কম হতে দেখা যায়।

খ) পাতায় সারকোস্পোরা দাগ

সারকোস্পোরা দাগ মুগের পাতার একটি খুবই অনিষ্টকারী রোগ। এই রোগ অনুকূল আবহাওয়ায় মুগের যথেষ্ট ক্ষতি করে থাকে।

এ রোগ “সারকোস্পোরা ক্রোয়েন্টা” বা “সারকোস্পোরা কেনেসেন্স” নামক ছত্রাকের আক্রমণের কারণে হয়ে থাকে।

জীবাণু ছত্রাক আক্রান্ত ফসলের পরিত্যক্ত আবর্জনার মাধ্যমে বেঁচে থাকতে পারে।

রোগের লক্ষণ:

  • রোগের লক্ষণ প্রথমে পাতার উপর ছোট ছোট পানিতে ভেজা আলপিনের মাথার সমান দাগের আকারে প্রকাশ পায়। পরে এই দাগগুলি বাদামী বা লালচে বাদামী রং ধারণ করে ক্রমশ আকারে বড় হতে থাকে। প্রায়ই ০.৫ সেমি ব্যস বিশিষ্ট হয়। একাধিক দাগ এক সাথে মিশে বড় দাগের সৃষ্টি হতে পারে।
  • ফসলের জাত ভেদে দাগগুলি বিভিন্ন ধরনের হতে দেখা যায়। কোন কোন জাতের দাগগুলি চারিদিকে বাদামী রং বলয়যুক্ত এবং কেন্দ্রের কিছুটা অংশ সাদা হয়। আবার কোন কোন জাতে দাগের বেশির ভাগ অংশই সাদাটে হয়। সাধারণত দাগগুলো কোন নির্দিষ্ট আকার বা আকৃতির হয় না।
  • খুব বেশি মাত্রায় আক্রান্ত হলে গাছের পাতা ঝরে যায়।
See also  মুগের ডালের জাত

ব্যবস্থাপনা:

  1. রোগের জীবাণু ফসলের আক্রান্ত অংশে বেঁচে থাকতে পারে বিধায় আক্রান্ত ফসলের আবর্জনা যাতে ভালোভাবে পচে যায় সে ব্যবস্থা করতে হবে। অথবা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  2. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক উদ্ভাবিত বারিমুগ-৫ ও বারিমুগ-৬, বারি মুগ-৭ এবং বারি মুগ-৮ এ রোগে কম আক্রান্ত হয়।
  3. এছাড়া রোগ দেখা দেয়ার সাথে সাথে অটোস্টিন-৫০ ডব্লিউ পি নামক ঔষধ প্রতি লিটার পানিতে ২.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে ৭-১০ দিন অন্তর অন্তর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।

গ) পাউডারী মিলডিউ দমন

পাউডারী মিলডিউ মুগ ও মাসকলাই উভয় ফসলকেই আক্রমণ করে। বাংলাদেশে এ রোগটি খরিফ-২ আবাদ মৌসুমে বেশি আক্রমণ করে। বিশেষত দেরিতে বোনা ফসলের বেশি ক্ষতি করে থাকে।

গবেষণার ফলাফল থেকে জানা যায়া যে, এ রোগের আক্রমণের কারণে খরিফ-২ মৌসুমে ৪২% এবং খরিফ-১ মৌসুমে ১৭% পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে।

ইহা একটি ছত্রাকজনিত রোগ। এ রোগের জীবাণু ছত্রাক ইরাইছিফি পলিগনি বা অয়ডিয়াম এসপি প্রধানত বায়ু প্রবাহের মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্য স্থানে বাহিত হয়।

মুগের পাউডারী মিলডিউ
মুগের পাউডারী মিলডিউ

রোগের লক্ষণ:

  • এ রোগ সর্ব প্রথম পাতার উপরে ছোট ছোট সাদা হালকা পাউডারী দাগের আকারে প্রকাশ পায়। ধীরে ধীরে দাগ থেকে আরও অসংখ্য অনুরূপ পাউডারী দাগের সৃষ্টি হয় এবং পাতার উপরের পুরো অংশ আক্রান্ত হয়ে যায়। পরে পাতা থেকে কান্ড ও ফল-ফুল প্রভৃতি অংশেও আক্রমণ বিস্তার লাভ করে।
  • পাতার উপরের সাদা পাউডার ক্রমে ছাই রং ধারণ করে এবং পরিশেষে তা কাল বা গাঢ় বাদামী রঙের পাউডারে পরিণত হয়। পাতার সবুজ রং ও পরিবর্তিত হয়ে ছাই রঙে পরিণত হয়।

ব্যবস্থাপনা:

  1. এ রোগের প্রতিরোধী কোন জাতের সন্ধান এখনও পাওয়া যায়নি। তবে সময়মতো বপন করলে রোগের আক্রমণে ক্ষতির পরিমাণ কম হয়।
  2. এছাড়া ছত্রাকনাশক ব্যবহার করেও এ রোগ দমন করা যায়। টিল্ট-২৫০ ইসি ০.৫ মিলি অথবা থিউভিট ২.০ গ্রাম প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে রোগের আক্রমণের শুরু থেকে ৭ হতে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।

ঘ) মুগ চাষে পাতা পচা রোগ

সাস্প্রতিকালে মুগ ফসলে এ রোগের প্রকোপ বৃদ্ধি পেয়েছে। ইহা একটি ছত্রাকজনিত রোগ।

এ রোগটি সর্ব প্রথম যশোর এবং ঈশ্বরদী ডাল গবেষণা কেন্দ্রসমূহের গবেষণা খামারে লক্ষ্য করা গিয়েছিল এবং তার আক্রমণকারী ছত্রাককে সনাক্ত করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে কৃষকের জমিতেও তার আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়।

বর্তমানে এই রোগ একটা প্রধান রোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

মুগের পাতা পচা রোগ
মুগের পাতা পচা রোগ

রোগের লক্ষণ:

  • এ রোগের আক্রমণের শুরুতে পাতার উপর পানিতে ভেজা দাগের সৃষ্টি হয়। উষ্ণ ও মেঘলা আবহাওয়ায় দাগের আকার বৃদ্ধি পেয়ে পাতার প্রায় সম্পূর্ণ অংশই আক্রান্ত হয়ে পড়ে। রৌদ্রোজ্জ্বল দিনে আক্রান্ত পাতাগুলো শুকিয়ে বাদামী রং ধারণ করে। শুকনা আক্রান্ত অংশে ছত্রাকের সাদা মাইসিলিয়াম দেখা যায় এবং পরে বিভিন্ন আকারে স্কে্লরোশিয়াম তৈরি হয়।
  • স্কে্লরোশিয়ামগুলো প্রথমে সাদা রংয়ের থাকে এবং পুরোমাত্রায় পরিপক্কতা আসলে তুলার বীজের মত গাঢ় বাদামী বা কাল রং ধারণ করে।
See also  মুগের ডালের জাত

রোগ বিস্তার:

এ রোগের আক্রমণকারী ছত্রাক (Sclrotinia sclerotiorum) মাটিতে থাকে। আক্রান্ত গাছের উপর ইহা ছত্রাকের স্কে্লরোশিয়াম তৈরি করে। স্কে্লরোশিয়াম মাটির সাথে মিশে মাটিতে থেকে যায়। উপযুক্ত আবহাওয়ায় ইহা অঙ্কুরিত হয়ে এসকোকার্প তৈরি করে। পরিপক্ক এসকোকার্প বিষ্ফোরিত হয়ে এসকোস্পোর নিক্ষেপ করে যা শস্যকে আক্রমণ করে।

ব্যবস্থাপনা:

  1. রোগ দমনের জন্য জমিতে আক্রান্ত ফসলের আবর্জনা এবং স্কে্লরোশিয়াসমূহ পরিপক্ক হয়ে পড়ে যাওয়ার পূর্বে পরিষ্কার করা দরকার।
  2. ফলিকুর ২৫০ ইসি ২.০ মিলি প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে রোগের আক্রমণের শুরু থেকে ৭ হতে ১০ দিন পর পর ২-৩ বার স্প্রে করলে এ রোগ দমন করা যায়।

ঙ) ফ্লি-বিটেল পোকার প্রতিাকার

  • দুই পাতা নিয়ে চারা বের হওয়া মাত্র ফ্লি-বিটল অসম গোলাকার ছিদ্র করে পাতা খেয়ে ফেলে।
  • অনেক সময় চারার বর্ধনশীল কুশিটিও খেয়ে ফেললে চারাটি আর বাড়তে পারে না।
  • এছাড়াও এরা গাছের বৃদ্ধিপর্যায়ে পাতা খেয়ে ঝাঝরা করে ফেলে। এতে গাছের বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফল ধারণ কমে যায়।
  • মারাত্মক আক্রমণে আইসোপ্রোকার্ব জাতীয় কীটনাশক (যেমন- মিপসিন ৭৫ ডব্লিও পি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ২ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

চ) চারার থ্রিপস ব্যবস্থাপনা

থ্রিপস আক্রান্ত মুগের চারা গাছ
থ্রিপস আক্রান্ত মুগের চারা গাছ
  • গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় চারায় প্রথম তিনপত্রকের পাতা বের হলেই থ্রিপসের আক্রমণ পরিলক্ষিত হয়। এর ফলে পাতা উপরের দিকে কুঁকড়ে যায়। গাছ খর্বাকৃতির হয়ে বৃদ্ধি মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
  • আক্রমণ দেখা দেয়া মাত্র ক্লোরফিনাপির (যেমন- ইন্ট্রিপিড ১০ এসসি) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ১-২ বার স্প্রে করতে হবে।

ছ) ফুলে থ্রিপস পোকার আক্রমণ

মুগের থ্রিপস আক্রান্তফুল
মুগের থ্রিপস আক্রান্তফুল
  • গাছে ফুল ধরা শুরু করলেই ফুলে থ্রিপসের আক্রমণ হয়ে থাকে। এপ্রিল মে মাসে গরম ও শুষ্ক আবহাওয়ায় এদের আক্রমণ হয়। দুই/চারটি ফুটন্ত ফুল হাতের তালুতে ঝারা দিলেই ছোট ছোট কালো থ্রিপস পোকা দেখা যায়। এদের মারাত্মক আক্রমণে ফুল ঝরে পড়ে এবং ফল ধারণ ব্যাহত হয়।
  • গাছে ফুল আসলেই পোকার আক্রমণ বুঝে ইমিডাক্লোপ্রিড জাতীয় কীটনাশক (যেমন- ইমিটাফ ২০ এসএল বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ০.৫ মিলি হারে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর ২-৩ বার স্প্রে করতে হবে।

জ) পাতা মোড়ানো পোকা

মুগের পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া ও আক্রান্ত গাছ
মুগের পাতা মোড়ানো পোকার কীড়া ও আক্রান্ত গাছ
  • মুগ গাছ সক্রিয় বর্ধনশীল অবস্থায় পাতা মোড়ানো পোকা দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে। এ পোকা পাতাকে মুড়িয়ে ভিতরে বসে পাতার সবুজ অংশ খেয়ে ফেলে। এতে বৃদ্ধি ব্যাহত হয় এবং ফুল ও ফল ধারণ কমে যায়।
  • প্রথমত মোড়ানো পাতাগুলো কীড়াসহ সংগ্রহ করে কীড়া ধ্বংস করতে হবে। দ্বিতীয়ত আক্রান্ত ক্ষেতে ল্যাম্বডা সাইহ্যালোথ্রিন (যেমন- ক্যারাটে ২.৫ ইসি বা অন্য নামের) প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলি লিটার হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ঝ) ফুল ও ফল ছেদক কীট

মুগের ফুল ও ফল ছেদক পোকা আক্রান্ত পুষ্প মঞ্জুরী
মুগের ফুল ও ফল ছেদক পোকা আক্রান্ত পুষ্প মঞ্জুরী
  • গাছে ফুল ধরার সময় থেকে ফল পরিপক্ক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এ পোকার আক্রমণ হয়ে থাকে। প্রথমে এরা ফুল খেয়ে তাকে মুড়িয়ে এবং জড়িয়ে নষ্ট করে ফেলে। পরে ফল ছিদ্র করে বীজ খেয়ে ফেলে। এতে ফলন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হতে পারে।
  • আক্রমণের ব্যাপকতা বেশি মনে হলে থায়ামিথক্সাম+ ক্লোরানট্রানিলিপ্রোল এর মিশ্রণ (যেমন- ভিরতাকো ৪০ ডব্লিউ জি) প্রতি লিটার পানিতে ০.১৫ গ্রাম হারে মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে।

ঞ) মুগে শুসরী পোকার আক্রমণ

শুসরী পোকা আক্রান্ত মুগের বীজ
শুসরী পোকা আক্রান্ত মুগের বীজ
  • মুগ গুদামে সংরক্ষণকালে শুসরী পোকার আক্রমণে বীজ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। মাঠে ফসল পরিপক্ক অবস্থায় এদের আক্রমণ (ডিম পাড়া) শুরু হয়ে থাকে এবং মাড়াই, ঝাড়াই, শুকানো ও ঠান্ডাকরণ ইত্যাদি কাজের মধ্যেও আক্রমণ চলতে থাকে। বীজের গায়ে পেড়ে দেয়া ডিম ফুটে কীড়া বের হয়ে বীজ দানাকে খেয়ে নষ্ট করে ফেলে। এতে বীজ খাওয়ার অনুপোযুক্ত হয়ে যায় ও অঙ্কুরোদগম ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়।
  • গুদামে বীজ সংরক্ষণের আগে বীজকে উত্তমরুপে কট্কটে করে শুকিয়ে বায়ুরোধী পাত্রে (যেমন- পলিব্যাগসহ ছালার বস্তা, ধাতব বা প্লাস্টিক ড্রামে) সংরক্ষণ করতে হবে এবং প্রতি ৫০-১০০ কেজি বীজের জন্য ১টি এ্যালুমিনিয়াম ফসফাইড ট্যাবলেট (ফসটক্সিন ট্যাবলেট) ন্যাকড়ার পুটলিতে বেঁধে ব্যবহার করলে দীর্ঘ সময় বীজ ভাল থাকবে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page