গৃহপালিত পশু-পাখির বেঁচে থাকার জন্য সর্বপ্রথম খাদ্য ও আবাসনের প্রয়োজন। গবাদিপশু-পাখির খাদ্য উদ্ভিদ ও প্রাণিজ উভয় উৎস থেকেই আসতে পারে।
পশু-পাখিরা তাদের দেহের খাদ্য চাহিদা অনুযায়ী পুষ্টি উপাদান গ্রহণ করে থাকে। এসব পুষ্টি উপাদানের মধ্যে শর্করা, আমিষ, স্নেহপদার্থ, ভিটামিন, পানি ও খণিজপদার্থ উল্লেখযোগ্য। তাই এখানে মুরগির খাদ্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোচনা করা হয়েছে।
এ পাঠ শেষে আপনি- মুরগির খাদ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ বলতে পারবেন। মুরগির খাবার তালিকা বা ফিড তৈরির ফর্মুলা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পারবেন। মুরগির রসদে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণের নাম ও বয়সভেদে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণ নির্ধারণ করতে পারবেন। দেশি মুরগির খাবার তালিকা, ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা ও ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা বা ব্রয়লার ফিড তৈরির ফর্মুলা সম্পর্কে জানতে পারবেন। মুরগির জন্য বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশিয়ে রেশন তৈরির পদ্ধতি শিখতে করতে পারবেন। মুরগিকে খাওয়ানোর বিভিন্ন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
নিম্নে দেশি মুরগির খাবার তালিকা, ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা, ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা বা ব্রয়লার ফিড তৈরির ফর্মুলা এবং মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট তুলে ধরা হলো-
(১) মুরগির খাবারের বৈশিষ্ট্য
মুরগির জীবন রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি এবং ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। মুরগির খাদ্য হিসেবে সাধারণত বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা ও তাদের উপজাত দ্রব্য ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া আধুনিক খামার ব্যবস্থায় এই খাদ্যের সঙ্গে সঠিক মাত্রায় ভিটামিন ও খণিজ মিশ্রণ এবং অনেক সময় প্রোবায়োটিক প্রদান করা হয়।
একটি বিষয় জানা প্রয়োজন এই যে, মুরগি খামার পরিচালনার মোট খরচের প্রায় ৭০%-ই খাদ্যবাবদ হয়ে থাকে। কাজেই খামারিকে মুরগির জন্য সঠিক বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন খাবার সংগ্রহ করা প্রয়োজন।
মুরগির খাদ্যের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিম্নরূপ হওয়া উচিত। যেমন-
- মুরগির জন্য ব্যবহৃত খাদ্যদ্রব্য অর্থাৎ শস্যদানা ও তাদের উপজাত দ্রব্যসমূহ তাজা এবং মানসম্পন্ন হতে হবে।
- খাদ্যে মুরগির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকতে হবে।
- প্রয়োজনীয় সব খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করে রসদ তৈরি করতে হবে।
- খাদ্য হজমযোগ্য ও সহজপাচ্য হবে।
- খাদ্য জীবাণু, ছত্রাক ও পরজীবীমুক্ত হবে।
- খাদ্য সুস্বাদু হতে হবে।
- খাদ্যে কোন ধরনের দুর্গন্ধ থাকতে পারবে না।
- খাদ্য উপকরণসমূহ সহজলভ্য হবে।
- খাদ্যে উৎপাদন খরচ কম হতে হবে।
(২) মুরগির খাবার তালিকার পরিচিতি
ক) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ কাকে বলে?
মুরগিকে সারাদিনে অর্থাৎ ২৪ ঘন্টায় যে পরিমাণ খাদ্য সরবরাহ করা হয়, তাকে মুরগির খাবার তালিকা/রসদ বলে।
রসদে বিভিন্ন ধরনের পুষ্টি উপাদান, যেমন- আমিষ, শর্করা, স্নেহপদার্থ বা চর্বি, ভিটামিন ও খণিজপদার্থ সঠিত মাত্রায় থাকতে হবে। এছাড়াও প্রতিদিন প্রয়োজনীয় পরিমাণ পানিও সরবরাহ করতে হবে।
যে রসদে বিভিন্ন ধরনের মুরগি, যেমন- ব্রয়লার (মাংস উৎপাদনকারী মুরগি), লেয়ার (ডিমপাড়া মুরগি), ব্রিডার (প্রজননকারী মুরগি) ইত্যাদির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানসমূহ সঠিক মাত্রায় থাকে তাকে সুষম রসদ বলে।
খ) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদের ধরন
মাংসের জন্য ব্যবহৃত ব্রয়লার মুরগিদের সচরাচর ২ ধরনের রসদ প্রদান করা হয়, যেমন-
- প্রারম্ভিক রসদ (০-৪ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত)
- সমাপ্তির রসদ (৪-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত)
ডিমপাড়া বা লেয়ার এবং প্রজননকারী মুরগিদের ৩ ধরনের রসদ প্রদান করা হয়, যেমন-
- প্রারম্ভিক রসদ (০-৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত)
- বৃদ্ধির রসদ (৯-১৮ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত)
- সমাপ্তির রসদ (১৯-৭২ সপ্তাহ বয়স পর্যন্ত)
নিচে ব্রয়লার, লেয়ার ও ব্রিডার মুরগির রসদে কি পরিমাণ শক্তি (শর্করা ও চর্বি) ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান থাকা উচিত তা দেখানো হয়েছে।
গ) ব্রয়লার, লেয়ার ও ব্রিডার মুরগির খাবার তালিকায় প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদানের পরিমাণ
শক্তি/পুষ্টি উপাদান | ব্রয়লার মুরগি প্রারম্ভিক রসদ (০-৪ সপ্তাহ) | ব্রয়লার মুরগি সমাপ্তি রসদ (৫-৮ সপ্তাহ) | লেয়ার/ব্রিডার মুরগি প্রারম্ভিক রসদ (০-৮ সপ্তাহ) | লেয়ার/ব্রিডার মুরগি বৃদ্ধির রসদ (৯-১৮ সপ্তাহ) | লেয়ার/ব্রিডার মুরগি রসদ (১৯-৭২ সপ্তাহ) |
বিপাকীয় শক্তি (কিলো ক্যালরি/কেজি খাদ্য) | ৩,০৫০ ক্যালরি | ৩,২০০ ক্যালরি | ২,৬৭৫ ক্যালরি | ২,৪১০ ক্যালরি | ২,৮৩০ ক্যালরি |
আমিষ | ২১-২২% | ১৯-২০% | ২০.০% | ১৬% | ১৫% |
ক্যালসিয়াম | ১.১% | ০.৯% | ১.০% | ১.০% | ৩.০% |
ফসফরাস | ০.৭% | ০.৬% | ০.৭% | ০.৬% | ০.৬% |
(৩) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ তৈরিকরণ
বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য প্রয়োজনীয় মাত্রায় একত্রে মিশিয়ে মুরগির রসদ বা খাদ্যতালিকা তৈরি করা হয়।
ক) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদে ব্যবহৃত খাদ্য উপকরণ
মুরগির রসদ তৈরিতে-
- শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, যেমন- বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা (গম, ভুট্টা, চালের কুঁড়া, ভুশি ইত্যাদি);
- স্নেহপদার্থসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, যেমন- বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল (সয়াবিন তেল, তিলের তেল ইত্যাদি);
- আমিষসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, যেমন- শুঁটকি মাছের গুঁড়া, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, সয়াবিন মিল, রক্তের গুঁড়া ইত্যাদি;
- ভিটামিনসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, যেমন- তাজা শাকসবজি, ভিটামিন-মিনারেল প্রিমি• ইত্যাদি এবং
- খণিজপদার্থসমৃদ্ধ খাদ্যদ্রব্য, যেমন- খাদ্য লবণ, ঝিনুকের খোসার চূর্ণ, ডিমের খোসা, হাঁড়ের গুঁড়া, চুনা পাথর ইত্যাদি নির্দিষ্ট পরিমাণে মিশ্রিত করে ব্যবহার করতে হয়।
- এছাড়াও প্রচুর পরিমাণে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত পানি সরবরাহ করতে হয়।
খাদ্য উপকরণের পুষ্টিমান, প্রাপ্যতা ও দাম বিবেচনা করে এগুলো রসদ তৈরির জন্য নির্বাচন করতে হয়।
নিচে মুরগির রসদ তৈরিতে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মিশ্রণের মাত্রা দেখানো হয়েছে। তাছাড়া ব্যবহারিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য মিশ্রিত করে বিভিন্ন বয়সের ব্রয়লার ও ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির জন্য তৈরি রসদের দু’টি উদাহরণ দেখানো হয়েছে।
খ) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ তৈরিতে বিভিন্ন খাদ্য উপকরণের ব্যবহার মাত্রা
উপাদান | বাচ্চা ক্ষেত্রে ব্যবহার মাত্রা | বাড়ন্ত/ডিমপাড়া মুরগি ক্ষেত্রে ব্যবহার মাত্রা |
শক্তির উৎস | ||
ভুট্টা | ৬০% | ৬০% |
গম | ৫০% | ৫০% |
চিটাগুড় | ৫% | ১০% |
চালের মিহিকুঁড়া | ৪০% | ৪০% |
গমের কুঁড়া | ১০% | ১৫% |
পোল্ট্রি বিষ্ঠার মিল | ১০% | ১০% |
উদ্ভিজ্জ আমিষের উৎস | ||
বাদাম তেলের খৈল | ৪০% | ৪০% |
সয়াবিন মিল | ৪০% | ৪০% |
তিলের খৈল | ২০% | ২০% |
সূর্যমুখীর খৈল | ২০% | ২০% |
তিসিবীজ মিল | ২০% | ৩০% |
তুলাবীজ মিল | ৫% | ৫% |
সরিষার তেলের খৈল | ১০% | ১০% |
ভুট্টার ময়দার মিল | ২০% | ২০% |
প্রাণিজ আমিষের উৎস | ||
শুটকি মাছের গুঁড়া | ১৫% | ১০% |
মাংসের গুঁড়া | ৫% | ১০% |
রক্তের গুঁড়া | ৫% | ১০% |
পালক চূর্ণ | ৫% | ৫% |
মাংস ও হাড়ের গুঁড়া (একত্রে) | ৬% | ৬% |
পোল্ট্রি উপজাত মিল | ৫% | ৫% |
হ্যাচারি উপজাত মিল | ৫% | ৫% |
গ) ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ বা ব্রয়লার ফিড তৈরির ফর্মুলা
উপাদান | প্রারম্ভিক রসদ (০-৪ সপ্তাহ) | সমাপ্তি রসদ (৫-৮ সপ্তাহ) |
গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৪৭.৫০% | ৪৯% |
চালের মিহিকুঁড়া | ১৭.৫০% | ১৮% |
তিলের খৈল | ১৩% | ১২% |
শুটকি মাছের গুঁড়া | ১৮% | ১৪.৭৫% |
সয়াবিন তেল | ২% | ৩% |
হাড়ের গুঁড়া | ১.২৫% | ১% |
ঝিনুক চূর্ণ | – | ১.৫০% |
লবণ | ০.২৫% | ০.৫০% |
ভিটামিন-খণিজ মিশ্রণ | ০.২৫% | ০.২৫% |
সর্বমোট | ১০০% | ১০০% |
ঘ) ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ
উপাদান | প্রারম্ভিক রসদ (০-৮ সপ্তাহ) | বৃদ্ধি রসদ (৯-১৮ সপ্তাহ) | লেয়ার রসদ (১৯-৭২ সপ্তাহ) |
গম/ভুট্টা ভাঙ্গা | ৫০% | ৫৪% | ৫৪% |
গমের ভুশি | ১০% | ৭% | ৫% |
চালের মিহিকুঁড়া | ১০% | ১৫% | ১৫% |
তিলের খৈল | ১২% | ১০% | ৭% |
শুটকি মাছের গুঁড়া | ১৪% | ১২% | ১০% |
হাড়ের গুঁড়া | ১.৫% | ৩% | ২.৫% |
ঝিনুক চূর্ণ | ২% | ২.৫% | ৬% |
লবণ | ০.৫% | ০.৫% | ০.৫% |
সর্বমোট | ১০০% | ১০০% | ১০০% |
বিশেষ দ্রষ্টব্য: ভিটামিন-খণিজ মিশ্রণ (Vitami–mi-eral premix) উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের নির্দেশিত মাত্রায় এ খাদ্যতালিকার সঙ্গে যোগ করতে হবে।
(৪) মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
প্রতিদিন প্রতিটি ব্রয়লার বা লেয়ার একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করে ও নির্দিষ্ট পরিমাণ ওজন লাভ করে। সারণি ০৬ ও ০৭-এ প্রতিদিন প্রতিটি ব্রয়লার বা লেয়ার মুরগি কতটুকু খাদ্য গ্রহণ করে তা দেয়া হয়েছে। তবে, মুরগির জাত বা স্ট্রেইনের ওপর নির্ভর করে খাদ্য গ্রহণের পরিমাণের তারতম্য ঘটতে পারে।
ক) ব্রয়লার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
বয়স | দৈহিক ওজন | গড় খাদ্য গ্রহণ |
১ সপ্তাহ | ১০৪ গ্রাম | ১০.৪ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
২ সপ্তাহ | ২১৩ গ্রাম | ২২.৭ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৩ সপ্তাহ | ৩৭২ গ্রাম | ৩৮.৬ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৪ সপ্তাহ | ৫৫৮ গ্রাম | ৫৩.১ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৫ সপ্তাহ | ৭৮০ গ্রাম | ৬৫.১ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৬ সপ্তাহ | ১০৪০ গ্রাম | ৮৩.০ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৭ সপ্তাহ | ১৩২০ গ্রাম | ৯৩.০ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
৮ সপ্তাহ | ১৬০০ গ্রাম | ১০৮.০ গ্রাম/ব্রয়লার মুরগি/দিন |
খ) ডিমপাড়া বা লেয়ার মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট
বয়স | দৈহিক ওজন(গ্রাম) | গড় খাদ্য গ্রহণ (গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন) |
১ সপ্তাহ | ৭০ গ্রাম | ১১ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
২ সপ্তাহ | ১৩০ গ্রাম | ২৫ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৩ সপ্তাহ | ১৯০ গ্রাম | ২৯ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৪ সপ্তাহ | ২৬০ গ্রাম | ৩১ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৫ সপ্তাহ | ৩৪০ গ্রাম | ৩৪ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৬ সপ্তাহ | ৪২০ গ্রাম | ৩৭ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৭ সপ্তাহ | ৫১০ গ্রাম | ৪০ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৮ সপ্তাহ | ৬১০ গ্রাম | ৪৩ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৯ সপ্তাহ | ৭২০ গ্রাম | ৪৮ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১০ সপ্তাহ | ৮২০ গ্রাম | ৫০ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১১ সপ্তাহ | ৯১০ গ্রাম | ৫২ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১২ সপ্তাহ | ১০০০ গ্রাম | ৫৫ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১৪ সপ্তাহ | ১১৭০ গ্রাম | ৬০ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১৬ সপ্তাহ | ১৩৩৫ গ্রাম | ৬৮ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
১৮ সপ্তাহ | ১৫২০ গ্রাম | ৭৯ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
২০ সপ্তাহ | ১৭০০ গ্রাম | ৯২ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
২২ সপ্তাহ | ১৯১০ গ্রাম | ১০০ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
২৬ সপ্তাহ | ১৯৮০ গ্রাম | ১০৫ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
২৮ সপ্তাহ | ২০২০ গ্রাম | ১১০ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
৩০-তদুর্ধ | ২০৫০ গ্রাম | ১১৫-১২৫ গ্রাম/লেয়ার মুরগি/দিন |
(৫) মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ তৈরির নিয়মাবলী
- প্রথমেই মুরগির রসদ তৈরির জন্য ব্যবহৃত জায়গাটি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে নিতে হবে।
- বিভিন্ন খাদ্য উপকরণ মাপার জন্য নিক্তি বা পাল্লা ব্যবহার করতে হবে।
- গম বা ভুট্টা আগে থেকেই মেশিনের সাহায্যে ভাঙ্গিয়ে নিতে হবে। খৈলও ভালোভাবে গুঁড়া করে নিতে হবে।
- প্রথমে গম বা ভুট্টা মেপে মেঝেতে ঢালতে হবে।
- এরপর তার উপর চালের মিহি কুঁড়া, গমের ভুশি, খৈল, শুটকি মাছের গুঁড়া বা সয়াবিন মিল মেপে ঢালতে হবে।
- এরপর পরিমাণমতো ঝিনুকের গুঁড়া, হাঁড়ের গুঁড়া ও খাদ্য লবণ ছিঁটিয়ে দিতে হবে।
- অতঃপর খাদ্যস্তুপের উপর ভিটামিন-মিনারেল প্রিমিক্স ছিটিয়ে দিয়ে সকল খাদ্য উপকরণগুলো ভালোভাবে মিশাতে হবে।
- রেশন তৈরি হয়ে গেলে এগুলো বস্তায় ভরে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।
তবে, বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফিড মিল বা খাদ্য তৈরির প্রতিষ্ঠান মিশ্রিত খাদ্য তৈরি করে বাজারে বিক্রি করছে যা অনেক খামারিই ব্যবহার করেন। মুরগির বয়স ও পালনের উদ্দেশ্য অনুযায়ী বাজার ম্যাশ বা গুঁড়া খাবার, ক্র্যাম্বল বা দানাদার খাবার ও পিলেট বা বড়ি আকারের খাবার পাওয়া যাচ্ছে।
(৬) মুরগিকে খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতি
মুরগিকে শুধু সুষম খাদ্য দিলেই চলবে না। এ খাদ্য সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়াতে হবে। এখানে মুরগিকে খাদ্য খাওয়ানোর কয়েকটি পদ্ধতি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হয়েছে।
- স্বাধীনভাবে বিভিন্ন খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে বিভিন্ন খাবারের পাত্রে ভিন্ন ভিন্ন খাবার রাখা হয় এবং মুরগি তার পছন্দমতো খাবার খায়।
- দানা ও গুঁড়া খাবার মিশিয়ে খাওয়ানোর পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে একইসাথে দানা ও গুঁড়া খাবার খাওয়ানো হয়। বাড়ন্ত বাচ্চা ও ডিমপাড়া মুরগিকে খাদ্য খাওয়ানোর জন্য এ পদ্ধতিটি খুবই উপযোগী।
- চূর্ণ খাদ্য খাওয়ানোর পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে সব ধরনের খাদ্যদ্রব্য চূর্ণ করে একসাথে মিশ্রিত করে খাওয়ানো হয়। বাচ্চা ও বাড়ন্ত বাচ্চাকে এ পদ্ধতিতে খাওয়ালে ভালো ফল পাওয়া যায়।
- আর্দ্র চূর্ণ পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্য চূর্ণ করে একসাথে মিশ্রিত করতে হয়। পরে পানিতে ভিজিয়ে মুরগিকে খেতে দেয়া হয়। সাধারণত দুপুর বেলায় এই ধরনের খাবার দেয়া ভালো।
- বড়ি তৈরি করে খাওয়ানোর পদ্ধতি: এই পদ্ধতিতে খাদ্যদ্রব্যকে চূর্ণ করে পরে উচ্চ চাপে বড়ি বা পিলেট তৈরি করা হয়। এই পিলেট মুরগিকে খেতে দেয়া হয়।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলোচনার মাধ্যমে আমরা- মুরগির খাবার তালিকার বৈশিষ্ট্য ও পরিচিতি; দেশি মুরগির খাবার তালিকা; ডিম পাড়া মুরগির খাবার তালিকা; ব্রয়লার মুরগির খাবার তালিকা বা ব্রয়লার ফিড তৈরির ফর্মুলা; মুরগির ওজন বৃদ্ধির চার্ট; মুরগির খাবার তালিকা বা রসদ তৈরির নিয়মাবলী; মুরগিকে খাবার খাওয়ানোর পদ্ধতি প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে জানতে পারলাম।
মুরগির জীবণ রক্ষা, দৈহিক বৃদ্ধি এবং ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য সুষম খাদ্যের প্রয়োজন। মুরগি থেকে অধিক ডিম ও মাংস উৎপাদন করতে হলে লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগির জন্য বয়সভেদে সঠিক মাত্রায় শক্তি, আমিষ ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান দিয়ে রসদ তৈরি করতে হবে। রসদ তৈরিতে বিভিন্ন ধরনের শস্যদানা, যেমন- গম, ভুট্টা ইত্যাদি, চালের কুঁড়া, খৈল, শুকটির গুঁড়া, সয়াবিন মিল, ব্লাড মিল, ঝিণুকচূর্ণ, খাদ্য লবন ইত্যাদি দ্রব্য ব্যবহৃত হয়।
বয়সভেদে প্রতিটি মুরগির জন্য যে পরিমাণ খাদ্যের প্রয়োজন তা সরবরাহ না করলে সঠিক উৎপাদন পাওয়া যাবে না। মুরগির খাদ্য উপকরণগুলো আনুপাতিক হারে ও সঠিক নিয়মে মিশ্রণ করে সঠিক পদ্ধতিতে খাওয়াতে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।