Skip to content

রাইজোবিয়াম কী/কাকে বলে? রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি এবং অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার পদ্ধতি

রাইজোবিয়াম কী,কাকে বলে, রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি এবং অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার

এ আর্টিকেলটি পড়লে আপনি- রাইজোবিয়াম কী/কাকে বলে? তা জানতে পারবেন। রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি সম্পর্কে ধারণা পাবেন। অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার করার পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।

(১) রাইজোবিয়াম কী/কাকে বলে?

রাইজোবিয়াম কী বা কাকে বলে

রাইজোবিয়াম কী/কাকে বলে: রাইজোবিয়াম এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া। এই ব্যাকটেরিয়া শিম ও ডাল জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ের কাছে অবস্থান নিয়ে বায়ু থেকে নাইট্রোজেন গ্রহন করে শিকড়ে গুটি তৈরি করে। এ ব্যাকটেরিয়া বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংযোজন করে নিজের প্রয়োজন মিটায় এবং উদ্ভিদে সরবরাহ করে। শিম জাতীয় উদ্ভিদ যেমন- মুগ, মসুর, ছোলা, মটর, সয়াবিন, চিনাবাদাম, ধইঞ্চা ইত্যাদি ফসলে ব্যাকটেরিয়া সার ব্যবহার করে উত্তম ফসল পাওয়া যায়। নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী রাইজেবিয়াম অণুজীব সার ইউরিয়া সারের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়।

(২) রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি

রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি

রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি নিচে বর্ণনা করা হলো-

ক) রাইজোবিয়াম প্রজাতি নিবার্চন

রাইজোরিয়াম প্রজাতি শিম জাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে নডিউল থেকে সরাসরি আলাদা করে গবেষণাগারে সংরক্ষণ করা হয়। সংগৃহীত রাইজোবিয়াম প্রজাতি কতোগুলো পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতকরণ করা হয়। এ কাজের জন্য প্রথমে বিভিন্ন মৃত্তিকায় সুপারিশকৃত উদ্ভিদকে কার্যকরী নডিউল তৈরী করতে সক্ষম হতে হবে। এছাড়া উক্ত উদ্ভিদটির অনুপস্থিতিতে প্রজাতির মাটিতে টিকে থেকে বংশবৃদ্ধি করার ক্ষমতা থাকতে হবে।

খ) আবাদ মাধ্যম

রাইজোবিয়ামের বংশবৃদ্ধির জন্য সাধারণত দুই ধরনের আবাদ মাধ্যম ব্যবহার করা হয়। কঠিন মাধ্যম ও তরল মাধ্যম।

i) কঠিন মাধ্যম

কঠিন আবাদ মাধ্যমের মধ্যে রয়েছে- পিটমাটি, কাঠের গুড়া ও ছাই। জীবাণু যাতে জীবাণুসারে দীর্ঘদিন টিকে থাকে, কার্যকর থাকে এবং ব্যবহারের সুবিধা বিবেচনায় আবাদ মাধ্যমের যাথেষ্ট পানি ধারণক্ষমতা ও প্রচুর কার্বন থাকতে হবে।

ii) তরল মাধ্যম:

  1. প্রথমে তরল আবাদ মাধ্যম (Liquid Culture medium) প্রস্তুত করতে হবে। প্রয়োগোপযোগী অণুজীবের চাষ করতে হবে।
  2. এরপর তরল মাধ্যমটি ১৫ পাউন্ড চাপে (১২১ সেলসিয়াস তাপমাত্রায়) ৩০ মিনিট ধরে নিবীর্জ করা হয় এবং ঠান্ডা করে তরল মাধ্যমে নির্বাচিত অনুজীব (রাইজোবিয়াম) জন্মানো হয়।
  3. তরল কালচারকে ২৮ সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রেখে অনবরত কিছুক্ষণ ঝাঁকুনি দিলে ভিতরের তরল মাধ্যমে অক্সিজেন প্রবেশ করে প্রচুর অণুজীব উৎপন্ন করতে সক্ষম হয়। অতঃপর এ অণুজীব তরল অবস্থায় বাহকের ভিতর ঢুকিয়ে দেয়া হয়।
  4. যথেষ্ট সংখ্যক অণুজীব (১০৬-১০৯/মিলিলিটার) জন্মানোর পর পরিমাণমত তরল কালচার নির্বীজ (sterile) করা পিট মাটির সাথে মেশানো হয়।
See also  ট্রাইকোডার্মা কি? ট্রাইকোডার্মা অণুজীব সার কাকে বলে? ট্রাইকোর্ডামা অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি

গ) পীট মাটি তৈরী

  1. পিট মাটি সংগ্রহের পর রোদে শুকানো হয়। কোন আবর্জনা বা পাথর থাকলে তা ভালভাবে পরিস্কার করে প্রথমে হাতুড়ি দিয়ে ও পরে মেশিনের সাহায্যে গুড়া করা হয়।
  2. রাইজোবিয়াম জন্মানোর জন্য ৭৫ মাইক্রোমিটার বিশিষ্ট চালুনি দিয়ে পিটের গুঁড়া চালা হয় এবং এতে শতকরা ২-৩ ভাগ ক্যালশিয়াম কার্বনেট মেশাতে হয় যাতে অম্লমান ৬.৫-৭.৩ হয়।
  3. পলিথিনের ব্যাগে ভরে (সাধারণত ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম, ২০০ গ্রাম) তা অটোক্লেভে দিয়ে নির্দিষ্ট সময় ও তাপে নির্বীজ (sterile) করা হয়।
  4. এরপর গামা রেডিয়েশন দিয়ে পিট মাটি জীবাণুমুক্ত করা হয়। এভাবে তৈরি পিট মাটির প্যাকেটে পরিমাণ মতো তরল মাধ্যমে জন্মানো অণুজীব সতর্কতার সাথে সিরিঞ্জের সাহায্যে প্রবেশ করানো হয় যাতে নতুনভাবে অনাকাক্সিক্ষত অণুজীব ব্যাগে ঢুকতে না পারে।
  5. তরল অণুজীব কালচার ও পিট মাটি ভালভাবে মিশিয়ে কয়েকদিন রাখা হয় যা পরবর্তীতে বীজের সাথে মিশিয়ে ব্যবহারের জন্য বাজারজাত করা হয়।

(৩) অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার পদ্ধতি

অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার পদ্ধতি

নিচে অণুজীব সারের প্রয়োগ পদ্ধতি আলোচনা করা হলো-

  • অণুজীব সার বীজের সাথে মেশানোর সময় আঠালো বস্তু হিসাবে চিটাগুড়, ভাতের ঠান্ডা মাড় অথবা পানি ব্যবহার করতে হয়, তবে পানি ব্যবহার না করাই ভালো।
  • ব্যবহৃত বীজে যদি কোনরূপ কীটনাশক ব্যাবহার করা হয়ে থাকে তবে সেই বীজ পানিতে ভালভাবে ধুয়ে অণুজীব সার মেশাতে হবে।
  • উত্তম ও সুস্থ সবল বীজ পরিমাণমতো একটি পলিথিন ব্যাগ বা পাত্রে নিয়ে তাতে চিটাগুড় বা ভাতের মাড় মিশিয়ে এমনভাবে নাড়তে হবে যাতে প্রতিটি বীজের গায়ে প্রলেপ পড়ে।
  • এ প্রলেপযুক্ত বীজের সাথে অণুজীব সার এমনভাবে মেশাতে হবে যাতে প্রতিটি বীজে কালো বর্ণের প্রলেপ পড়ে।
  • অণুজীব সার মিশ্রিত বীজ সকাল ৯ টার মধ্যে বা বিকাল ৪ টার পর বপন করে যত দ্রুত সম্ভব মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • কোন নির্দিষ্ট ফসলের বীজ আধা ঘন্টা পানিতে ভিজিয়ে রেখে সেই পানি ফেলে দিতে হবে। অতঃপর রাইজোবিয়াম অণুজীব ঐ বীজের উপর ঢেলে দিয়ে তা ভালোভাবে ছিটিয়ে মাটি দিয়ে ঢেকে দিতে হবে।
  • বীজের গায়ে যাতে সূর্যের আলো না লাগে সেদিকে খেয়াল করতে হবে। সূর্যের আলো লাগলে অণুজীব মারা যাবে এবং অণুজীব সার প্রয়োগ ব্যর্থ হবে।
See also  এ্যাজোলা কি? জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি এবং এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও উৎপাদনের সিমাবদ্ধতা

প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা রাইজোবিয়াম কী/কাকে বলে? রাইজোবিয়াম অণুজীব সার তৈরীর পদ্ধতি এবং অণুজীব সার জমিতে ব্যবহার পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে পারলাম।

রাইজোবিয়াম বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংযোজন করে। শিম জাতীয় উদ্ভিদে রাইজোবিয়াম সার ব্যবহার করে ফসলের ফলন বাড়ানো সম্ভব হবে।

আর্টিকেলটি ভাল লাগলে অবশ্যই কমেন্ট করবেন ও বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts