আমাদের দেশে লালশাক একটি জনপ্রিয় শাক। বাংলাদেশের প্রায় সব এলাকায় কম বেশি লালশাকের চাষ হয়। এতে প্রচুর ভিটামিন আছে।
নিম্নে সহজভাবে লাল শাক চাষের পদ্ধতি বর্ণনা করা হলো-
মাটি: প্রায় সব ধরনের মাটিতেই সারা বছর লালশাক আবাদ করা যায়। তবে দোআঁশ ও বেলে-দোআঁশ মাটি চাষের জন্য উত্তম। আমাদের দেশে শীতের শুরুতে লালশাকের ফলন বেশি হয়। গরমকালে উঁচু জমিতে লালশাক চাষ করা যায়।
জাত: লালশাকের অনেক জাত রয়েছে। তবে উন্নত দুটি জাত হলো- বারি লালশাক ১ এবং আলতাপাটি। আলতাপাটি জাতটির পাতা ও কাত সিঁদুর লাল। বারি লালশাকের ১ পাতা ও কাণ্ড লাল হয়। এ শাকের ফুল লাল এবং বীজ গোলাকার হয়।
জমি তৈরি: লালশাকের বীজ খুব ছোট। তাই ৪-৫টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরা করে তৈরি করতে হবে।
সার প্রয়োগ: লালশাক একটি স্বল্পকালীন ফসল। তাই শেষ চাষের সময় প্রতি শতক জমিতে গোবর সার ৪০ কেজি ৪০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৩০০ গ্রাম টিএসপি এবং ২৫০ গ্রাম এমওপি সার প্রয়োগ করতে হবে। চারা গজানোর ৭ দিন পর শতকপ্রতি ৪০০ গ্রাম অতিরিক্ত ইউরিয়া সার উপরি প্রয়োগ করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
বীজ বপন: লালশাকের বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা যায়। সারিতে বপন করলে পরিচর্যা করা সুবিধাজনক এবং ফলনও বেশি হয়।
- বর্ষার সময় চাষ করলে এক মিটার চওড়া এবং ১৫ সেমি উঁচু বেড করে বীজ বপন করতে হয়। সেক্ষেত্রে দুটি বেডের মাঝে ৩০ সেমি সেচ নালা রাখতে হয়।
- বপনের সময় বালির সাথে মিশিয়ে বপন করলে বীজ সব জায়গায় সমভাবে পড়তে পারে।
- প্রতি শতক জমিতে ১০ গ্রাম বীজ হলেই চলে।
- সারিতে বপন করলে, ২০ সেমি দূরে দূরে কাঠির সাহায্যে ১.৫-২.০ সেমি গভীর করে লাইন টেনে লাইনে বীজ ছিটিয়ে মাটি সমান করে দিতে হবে।
আন্তঃপরিচর্যা: বীজ বপন বা চারা রোপণের পর থেকে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত যেসব পরিচর্যা করা হয়, তাকে আন্তঃপরিচর্যা বলে।
- বপনের সময় মাটিতে বীজ গজানোর মতো পর্যাপ্ত রস অর্থাৎ জো থাকলে সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে জো না থাকলে বপনের পর পর জমিতে সেচ দিতে হবে।
- বীজ গজানোর এক সপ্তাহ পর প্রত্যেক সারিতে ৫ সেমি অন্তর গাছ রেখে অন্যান্য গাছ তুলে পাতলা করতে হবে।
- নিড়ানি দিয়ে আগাছা পরিষ্কার করতে হবে এবং সেচের পর মাটির চটা ভেঙে নিতে হবে।
ফসল সংগ্রহ: বীজ বপনের ২০-২৫ দিনের মধ্যে লালশাক সংগ্রহ শুরু করা যায়। প্রথম দিকে বড় গাছগুলো তুলতে হবে। এভাবে দুই-তিন দিন পর পর শাক তোলা যেতে পারে। শিকড়সহ লালশাকের গাছ তোলা হয়। তোলার পর পানিতে ধুয়ে আটি বেঁধে বাজারজাত করা হয়। কাণ্ড শক্ত হওয়ার আগেই শাকের জন্য ফসল সংগ্রহ শেষ করতে হবে।
ফলন: উন্নত পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি শতক জমি থেকে ৪৫-৫৫ কেজি লালশাক পাওয়া যায়।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।