এ আলোচনাটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- সামাজিক বনায়ন কী তা জানতে পারবেন। সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য ও প্রয়োজনীয়তার বর্ণনা জানতে পারবেন। কৃষি বনায়নের কাকে বলে তা জানতে পারবেন। সামাজিক বনায়ন ও কৃষি বনায়নের পার্থক্যে জানতে পারবেন। রাস্তাঘাট ও খাস জমিতে সামাজিক বনায়ন পদ্ধতি বা কৌশল শিখতে পারবেন। সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের ধাপ ও শর্তসমূহ সম্পর্কে জানতে পারবেন।
(১) সামাজিক বনায়ন কাকে বলে?
সামাজিক বনায়ন কাকে বলে: বস্তুতপক্ষে বিশ্বব্যাপী বন ধ্বংসের প্রেক্ষাপটে সংরক্ষিত বনাঞ্চল উজাড় হয়ে যাচ্ছে তাই বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে সংরক্ষিত বনের ফাঁকা জায়গাসহ পতিত জমি, রাস্তার দু’ধারে, রেললাইনের উভয় পাশে, স্কুলকলেজের আঙ্গিনায়, বাঁধ ও সংযোগ সড়কে সাধারণ জনগণের সংঘবদ্ধ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে বন সৃজিত হয়েছে তাকে সামজিক বনায়ন বলে।
সামাজিক বনায়নের মূল উদ্দেশ্য হলো বনজ সম্পদের উৎপাদন বৃদ্ধি করে সংরক্ষিত বনের উপর চাপ কমানো এবং সংরক্ষিত বনের ধ্বংস রোধ করা। পাশাপাশি স্থানীয় জনগণের চাহিদানুযায়ী তাদের প্রয়োজনীয় কাঠ, জ্বালানি ও পশুখাদ্যের সরবরাহ বাড়ানো। ফলে সামাজিক বনায়ন আন্দোলন সরকারী বনভূমি ও কমিউনিটি স্থানের বাইরে কৃষে কর বসতবাড়ি, বাড়ির চারপাশে, ফসলের ক্ষেতে কৃষি ফসলের সাথে মিশ্রভাবে বনজ উদ্ভিদ চাষাবাদের ধারণা জনপ্রিয় হচ্ছে।
কৃষি বনায়ন কাকে বলে: কৃষক যখন তার ব্যক্তিগত জায়গায় যেমন বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত খামারে কৃষি ফসলের সাথে বনজ বৃক্ষ উৎপাদন করছে তখন তাকে কৃষি বনায়ন বলে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। ফলে সামজিক বনায়ন ও কৃষি বনায়ন এখন অনেক ক্ষেত্রে সমার্থক হয়ে উঠেছে।
সামাজিক বনায়ন ও কৃষি বনায়নের মূল উদ্দেশ্য বনজ সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি করা হলেও উভয় বনায়নের মধ্যে অনেক পার্থক্য আছে।
নিম্নে সামাজিক বনায়ন ও কৃষি বনায়নের পার্থক্যের উপর আলোকপাত করা হলো-
সামাজিক বনায়ন | কৃষি বনায়ন |
১। সামাজিক বনায়ন সরকারী, বেসরকারী ও আধাসরকারী প্রতিষ্ঠানের জায়গায় করা হয়। | ১। কৃষকের নিজস্ব জমিতে করা হয়। |
২। সামাজিক বনায়নে কৃষকেরা দলবদ্ধ ভাবে অংশগ্রহণ করে বৃক্ষ রোপণ ও উৎপাদন করে। | ২। কৃষক নিজের মতো করে কৃষি ফসলের সাথে বৃক্ষের মিশ্র চাষাবাদ করে। |
৩। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে অর্জিত সম্পদের ভাগাভাগির জন্য সরকারী বা বেসরকারী সংগঠনের সাথে উপকারভোগী কৃষকদের সুনির্দিষ্ট চুক্তিনামা থাকে। | ৩। এক্ষেত্রে অর্জিত সম্পদের ভাগাভাগির কোন প্রশ্ন নেই। সবটুকুই কৃষকের নিজস্ব। |
৪। সামাজিক বনায়নে বনজ বৃক্ষ, ফলদ বৃক্ষ ও ঔষধিগাছ লাগানো হয়। | ৪। কৃষি বনায়নে কৃষক তার কৃষি ফসলের সাথে উৎপাদনযোগ্য বৃক্ষের চাষাবাদ করে। |
(২) সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য
বাংলাদেশের সংরক্ষিত বনাঞ্চল ব্যাপকভাবে ধ্বংস হওয়ার প্রেক্ষাপটে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জ্বালানি, পশুখাদ্য ও কাঠের চাহিদা মেটানোর ক্ষেত্রে বনের উপর চাপ কমানোর কৌশল হিসাবেই সামাজিক বনায়নের ধারণা সৃষ্টি হয়েছে। সুতরাং সামাজিক বনায়নের মূখ্য উদ্দেশ্য হলো ক্ষয়িষ্ণু বন সম্পদ রক্ষা ও গাছপালার উৎপাদন বৃদ্ধি করে জনসাধারণের বনজ সম্পদের চাহিদা পূরণ করা।
বিস্তারিতভাবে সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য নিম্নরূপ-
- দরিদ্র জনসাধারণকে বৃক্ষ শূন্য বনভূমিসহ সমস্ত সরকারী ও বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের পতিত জায়গায় বনসৃজন কর্মসূচীর সাথে সম্পৃক্ত করে তাদের কাঠ, জ্বালানি ও পশুখাদ্যের চাহিদা মেটানো।
- স্থানীয়ভাবে দুঃস্থ, দরিদ্র ও কর্মহীন মানুষদের বনায়নে সম্পৃক্ত করে কর্মসংস্থান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়ন করা।
- ক্রমহ্রাসমান বনভূমি ও বনজ সম্পদ রক্ষা করা।
- কুটির শিল্পের কাচামালের সরবরাহ বাড়ানো।
- গ্রামীণ জনগণকে স্বনির্ভর হতে সহায়তা করা ও তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা।
- সামগ্রিকভাবে সবুজ গাছপালার পরিমাণ বাড়িয়ে প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখা।
- পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা।
- সংরক্ষিত বনে অবৈধভাবে বৃক্ষ কর্তন না করে স্থানীয়ভাবে বৃক্ষ উৎপাদন বাড়িয়ে নিজেদের প্রয়োজন মেটাতে উৎসাহিত করা।
- প্রাকৃতিক দূর্যোগের হাত থেকে ঘরবাড়ি, পশু পাখি ও ফসল রক্ষা করা।
- চিত্ত বিনোদনের পরিবেশ ও স্থান সৃষ্টি করা।
(৩) বাংলাদেশে সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা
বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্যতম ঘন বসতিপূর্ণ দেশ। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২% এর কাছাকাছি। ফলে বর্ধিত জনগোষ্ঠির প্রয়োজনীয় বাসস্থান, খাদ্য, জ্বালানি, যোগাযোগ ব্যবস্থার চাহিদা পূরণ করতে দেশের বনজ সম্পদের উপর প্রতিনিয়ত চাপ বাড়ছে। ফলে দেশের বনাঞ্চল ও বনজ সম্পদের পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে পরিবেশের উপর।
একটি দেশের আদর্শ বনভূমির পরিমাণ ন্যূনতম ২৫% হলেও বাংলাদেশে আছে মাত্র ১৭%। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে দেশের বনভূমির বিরাট অংশ বিরান হয়ে যাওয়ায় বর্তমানে বৃক্ষাচ্ছাদিত বনভূমির পরিমান মাত্র ৬.৮%। এই অল্প পরিমাণ বনভূমি ১৬ কোটির বেশী জনসংখ্যার দেশের মানুষের কাঠ, জ্বালানি কাঠ, ফলমূল ও পশুখাদ্য ইত্যাদির চাহিদা মেটানোর জন্য খুবই অপ্রতুল (সরকারি পরিসংখ্যান ২০১১)।
আবার দেশে যে অল্প পরিমাণ বনভূমি আছে তা সুষম ভাবে সারাদেশে বিস্তৃতি নয়। দেশের বনভূমির ৯০ ভাগ মাত্র ১২ টি জেলায় অবস্থিত, ২৮ টি জেলায় আদৌ কোন বন নেই। বাকী ২৪টি জেলাতে খুব সামান্য পরিমাণ বনভূমি আছে।
কাজেই মানুষের প্রতিদিনের জ্বালানি চাহিদাসহ বিভিন্ন বনজ দ্রব্যের চাহিদা মেটানোর জন্য সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে গ্রামের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অসংখ্য এলাকায়, পরিত্যক্ত ভূমিতে, রাস্তার পাশে, রেললাইন, বাঁধ, খালের পাড়, নদীর ধার, অফিস ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রাঙ্গনে বিভিন্ন ধরণের গাছ লাগিয়ে চাহিদা মিটানোর বিকল্প নেই।
তাই বাংলাদেশেদেশে সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
(৪) রাস্তাঘাট ও খাস জমিতে সামাজিক বনায়ন পদ্ধতি
বাংলাদেশে রাস্তাঘাট ও খাস জমিতে সামাজিক বনায়নের বিশাল সুযোগ রয়েছে। দেশে জাতীয় মহাসড়ক, আ লিক মহাসড়ক ও জেলাসড়ক মিলিয়ে ২০৯৪৮ কি.মি. সড়ক পথ, ২৮৩৫ কি.মি. রেললাইন ও ৫০০০ কি.মি. বাঁধের উভয় পার্শ্বে পতিত খাস জমিতে এক বা একাধিক লাইনে সারিবদ্ধভাবে বনায়ন করা সম্ভব। এ ধরণের সারিবদ্ধ বনায়নকে ষ্ট্রীপ বনায়নও বলে।
ষ্ট্রীপ বনায়ন সামাজিক বনায়নের একটি উল্লেখযোগ্য উৎপাদন কৌশল। সামাজিক বনায়নের এ কৌশল সাধারণত সরকার ও জনগনের যৌথ তদারকিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য চুক্তি সাপেক্ষে হয়ে থাকে। বিভিন্ন বেসরকারী সংস্থাও এ ধরণের বনায়ন কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য জনসাধারণকে কারিগরি ও আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে।
ক) রাস্তাঘাট ও খাস জমিতে সামাজিক বনায়নের সুবিধা
- সড়ক, বাঁধ ও রেললাইনের পাড় সংরক্ষণ।
- নির্মাণ কাঠ উৎপাদনের লক্ষ্যে বিশালাকার বড় বড় বৃক্ষ লাগানোর জন্য এ সমস্ত জায়গা উপযোগী।
- জ্বালানি ও পশুখাদ্যের চাহিদা পূরণ।
- কুটির শিল্পের জন্য কাঁচামালের সরবরাহ বৃদ্ধি।
- প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষার জন্য বৃক্ষাচ্ছাদিত জায়গায় পরিমাণ বাড়ানো।
সড়ক, রেলসড়ক ও খাস জমিতে সাধারণত সারিবদ্ধ বনায়ন করা হয় যাহা সড়ক, রেলসড়কের পাশের খালি জায়গার প্রশস্ততার উপর ভিত্তি করে এক সারি বা দুই সারিতে বৃক্ষ রোপণ করা হয়।
খ) সড়ক ও বাঁধের ধারে সারিবদ্ধ বন সৃজনের এক সারি নকশা
গাছ লাগানোর পদ্ধতি-
- সড়ক/বাঁধের কিনারা/প্রান্ত থেকে ৩০ সেমি: নীচে অড়হরের সারি।
- অড়হর সারির ৩০ সে.মি. নীচে বনজ বৃক্ষের সারি যেখানে ২ মি. অন্তর অন্তর গাছ লাগাতে হবে।
- সড়ক/বাঁধের নিম্ন প্রান্তে ধইঞ্চার সারি।
গ) সড়ক ও বাঁধের ধারে দু’সারিতে বনায়নের নকশা
গাছ লাগানোর পদ্ধতি-
সড়ক, রেলসড়ক ও বাঁধ এলাকায় লাগানোর জন্য উপযোগী উদ্ভিদসমূহঃ আকাশমনি, শিশু, ঝাউ, রেইন্ট্রি, কাঠবাদাম, নিম, বাবলা, ইউক্যালিপটাস, তেঁতুল, সাদা কড়ই, কালো কড়ই, তাল, খেঁজুর, অড়হর, ধইঞ্চা ইত্যাদি।
- সড়ক/ বাঁধের কিনারা থেকে ৩০ সে.মি. নীচে অড়হরের সারি
- অড়হর সারির ৩০ সে.মি. নীচে গাছের ১ম সারি
- প্রথম সারি হতে ১.৫-২.৫ মিটার দূরত্বে গাছের ২য় সারি
- সড়ক/ বাঁধের ঢালের একেবারে নিম্ন প্রান্তে ধইঞ্চার সারি
প্রজাতি নির্বাচন-
১ম সারি: শোভাবর্ধনকারী ও ছায়াপ্রদানকারী কাষ্টল গাছ যেমন- মেহগনি, রেইনট্রি, শিশু,সেগুন,কড়ই, মিনজিরি, খেজুর, তাল, কাঁঠাল ইত্যাদি।
২য় সারি: জ্বালানি ও খুটি প্রদানকারী দ্রুত বর্ধনশীল গাঁছ যেমন-আকাশমনি, বাবলা, কড়ই, শিশু, ইপিল ইপিল, মিনজিরি ইত্যাদি।
ঘ) সারিবদ্ধ বাগানের জন্য নির্বাচিত গাছের বৈশিষ্ট্য
সারিবদ্ধ বাগানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো স্থানীয় জনগণের প্রয়োজনীয় জ্বালানি,পশু খাদ্য ও নির্মাণ কাঠের চাহিদা মেটানো। এর পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে সুষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তোলা, ছায়া প্রদান করা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি করাও এ বাগান সৃজে নর উদ্দেশ্য।
সারিবদ্ধ বাগান সৃজন সার্থক করতে হলে যে সমস্ত বৃক্ষ নির্বাচন করা হবে তার বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপ হবে-
- চিরহরিৎ বৃক্ষ হলে ভালো।
- গাছের মুকুট বড় আকৃতির হবে।
- পরিবেশের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হতে হবে।
- ঝড় বাতাসে ডাল পালা কম ভাঙ্গে এমন গাছ হলে ভালো।
- গাছের ফুল যেন আকর্ষনীয় হয়।
- একটু দীর্ঘ কান্ড বিশিষ্ট গাছ হলে ভালো, যাতে যানবাহন চলাচল নির্বিঘ্ন হয়।
- খরা, বন্যার মতো প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় গবাদির পশুর খাদ্যের সংস্থান হয় এমন গাছ হলে ভালো।
- শিকড় গভীরমূলী হতে হবে যাতে সড়ক বাঁধের ভূমি ক্ষয় কম হয়।
(৫) সামাজিক বনের উপকারভোগী
সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সব সময় একটি উপকারভোগী দল নির্বাচিত করতে হবে। সাধারণভাবে যে এলাকায় সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হয় তার আশেপাশে বসবাসকারী স্থানীয় অধিবাসিগণের মধ্য থেকে উপকারভোগী নির্বাচিত করা হয়।
উপকারভোগী নির্বাচনের সময় নিম্নের বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দিতে হবে-
- ভূমিহীন
- ৫০ শতাংশের কম ভূমি আছে এমন ব্যক্তি
- দুঃস্থ ও বিত্তহীন মহিলা
- অনগ্রসর গোষ্ঠীর সদস্যগণ
- দরিদ্র আদিবাসী
- নেতৃস্থানীয় যুব ও মহিলা সংগঠন।
উপকারভোগীদের গুণাবলি-
- কাজের প্রতি দায়িত্ববোধ
- দলবদ্বভাবে কাজ করার মন মানসিকতা
- উপদেশ গ্রহণের আগ্রহ ও মানসিকতা
- পরিকল্পনা প্রণয়নের অংশগ্রহণ এবং তা বাস্তবায়নে ভূমিকা পালন
- সামগ্রিক পরিকল্পনায় কোনরূপ পরিবর্তন হলে তা মানিয়ে নেওয়ার মানসিকতা
- নেতৃস্থানীয় যুব ও মহিলা সংগঠন।
সামাজিক বনায়নের উপকারভোগীদেরকে নিজস্ব কিছু দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করার প্রয়োজন হয়। তা হলো-
- সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী কর্তৃপক্ষের সাথে যৌথ পরিকল্পনা প্রণয়ন
- পরিকল্পনা বাস্তবায়নে উৎপ্রোতভাবে অংশগ্রহণ
- সৃজিত বাগান রক্ষণাবেক্ষন করা
- রোপণের জন্য চারা উৎপাদন, চারা রোপণ ও রক্ষণাবেক্ষন করা
- পরিকল্পনা মাফিক বৃক্ষ ছাঁটাই ও বৃক্ষ ঘনত্ব হ্রাসকরণ
- প্রতি মাসে দলীয় সভা করা ও বন রক্ষণাবেক্ষণের পরিকল্পনা তৈরী করা।
(৬) সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের ধাপসমূহ
সামাজিক বনায়ন সফলভাবে বাস্তবায়ন করতে হলে কিছু ধাপ অনুসরণ করা প্রয়োজন। নিম্নে যে সকল ধাপসমূহের আলোচনা করা হলো।
- দল গঠন: সামাজিক বনায়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য সবাইর আগে অংশগ্রহণকারী দল গঠনের প্রয়োজন। দল গঠনের প্রাসঙ্গিক শর্ত হলো দলের সদস্যরা সমাজের দরিদ্র শ্রেণির অন্তর্ভূক্ত হতে হবে। বিশেষভাবে বিধবা, স্বামী পরিত্যক্তা, ভূমিহীন কৃষকদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে দল গঠন করতে হবে।
- ঋণ সুবিধাদান: বনায়ন একটি দীর্ঘমেয়াদি কার্যক্রম। দরিদ্র জনগণের আয়ের অন্য কোন উৎস না থাকলে পরিবার প্রতিপালন অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাই সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের জন্য লগ্নীবিহীন ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে যাতে করে তার বিকল্প আয়ের সংস্থাপন করতে পারে। যেমন- ছোট আকারের নার্সারী, সব্জি উৎপাদন, মৌমাছি পালন, রেশমগুটি উৎপাদন ইত্যাদি।
- সঞ্চয়: সামাজিক বনায়ন কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারী সকল সদস্যদের বাধ্যতামূলক সঞ্চয়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মপ্রত্যেক সদস্য সাপ্তাহিক ভিত্তিতে সঞ্চয় গড়ে তুললে ভবিষ্যতে এ সঞ্চয় দ্বারা অন্যান্য গঠনমূলক আয়বর্ধক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের মাধ্যমে স্বাবলম্বী হওয়ার সুয়োগ সৃষ্টি হবে।
- অর্থ উপাজনের পন্থা: সামাজিক বনায়নে অংশগ্রহণের সাথে সাথে সব সদস্যদের কিছু কিছু বিকল্প আয়ের উৎস সৃষ্টি করতে হবে।
- সমাজের সকল স্তরের অংশগ্রহণ: সমাজ উন্নয়নের প্রত্যেকটি কার্যক্রমে সমাজের সকল স্তরের অংশগ্রহণ আবশ্যক। আর এই অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে প্রয়োজন রাজনৈতিক অঙ্গীকার।
(৭) সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নের শর্তসমূহ
সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নের কিছু শর্ত হলো-
- রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি/সরকারি সমর্থন।
- জনসাধারণের চাহিদা নির্ধারণ।
- সঠিক কলাকৌশল প্রয়োগ।
- সংগঠনের সকল সদস্যগণের প্রশিক্ষণ।
- গণমাধ্যম ও পত্র পত্রিকায় ব্যাপক প্রচার।
স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালতের আঙ্গিনাসহ পতিত জমি, রাস্তার দু’ধার, রেললাইনের উভয় পাশ, বাঁধ ও সংযোগ সড়ক ইত্যাদি জায়গায় জনগণের সংঘবদ্ধ অংশগ্রহণের মাধ্যমে যে বন সৃজন করা হয় তাকে সামাজিক বনায়ন বলে। অন্যদিকে কৃষক যখন তার ব্যক্তিগত জায়গায় যেমন বসতবাড়ি, ফসলের ক্ষেত ও খামারে কৃষি ফসলের সাথে বনজ বৃক্ষ উৎপাদন করে তখন তাকে কৃষি বনায়ন কলে।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা সামাজিক বনায়ন কাকে বলে, সামাজিক বনায়নের উদ্দেশ্য, বাংলাদেশে সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা, রাস্তাঘাট ও খাস জমিতে সামাজিক বনায়ন পদ্ধতি, সামাজিক বনের উপকারভোগী, সামাজিক বনায়নের কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়নের ধাপসমূহ, সামাজিক বনায়ন বাস্তবায়নের শর্তসমূহ প্রভৃতি বিষয় সম্পর্কে অবগত হলাম।
বাংলাদেশে সংরক্ষিত বনাঞ্চল ধ্বংস হওয়ার প্রেক্ষিতে কৃষি ও সামাজিক বনায়নের প্রয়োজনীয়তা গুরুত্ববহ হয়ে উঠছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে ভূমিহীন কৃষকদের প্রয়োজনীয় জ্বালানি, পশুখাদ্য ও ঘরবাড়ি নির্মাণের কাঠের চাদিহা পূরণ করা সম্ভব।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।