Skip to content

সার কি? সার কত প্রকার কি কি? ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি

সার কি, সার কত প্রকার কি কি, ও সার প্রয়োগ পদ্ধতি

(১) সার কি?

ফসল উৎপাদনে বীজ, সার ও সেচ তিনটি মুখ্য কৃষি উপকরণ। তন্মধ্যে সার হলো অন্যতম কৃষি উপকরণ যা ফসল উৎপাদনে ব্যবহার হয়ে থাকে।

সার কি: গাছের খাদ্যই হলো সার। মাটিতে সার প্রয়োগে মাটির পুষ্টি উপাদান যোগ হয় এবং উর্বরতা বাড়ে।

চিত্র- ইউরিয়া সার
চিত্র- ইউরিয়া সার
চিত্র- টিএসপি সার
চিত্র- টিএসপি সার
চিত্র- এমপিও সার
চিত্র- এমপিও সার

(২) সুষম সার কাকে বলে?

সুষম সার কাকে বলে: ফসল উৎপাদনে যে পরিমান সার ব্যবহার করার ফলে মাটির পুষ্টি উপাদান ও উর্বরতা বাড়ে, পরিবেশ নষ্ট হয় না, উৎপাদন খরচ কম হয় এবং ফসলের ফলন যথেষ্ট পরিমাণ বৃদ্ধি হয় তাকে সুষম সার বলে।

(৩) সার কত প্রকার কি কি?

ক) সারের প্রকার

সার কত প্রকার: সার প্রধানত দুই প্রকার। যথা-

  1. জৈব সার ও
  2. অজৈব সার।

জৈব সার কাকে বলে: প্রাণিজ ও উদ্ভিদ থেকে যে সার তৈরি হয় তাকে জৈব সার বলা হয়। যেমন: কেঁচো সার (ভার্মি কম্পোস্ট), গোবর সার ও কম্পোস্ট সার।

অজৈব সার কাকে বলে: প্রাণিজ ও উদ্ভিদ ব্যতীত রাসায়নিক উপায়ে যে সার তৈরি হয় তাকে অজৈব সার বলে। অজৈব সারকে সিনথেটিক সার বলা হয়। কল-কারখানা হতে এ সার তৈরি করা হয়। যেমন: ইউরিয়া, টিএসপি ও এমওপি সার।

খ) সারের পরিচিতি

i) সরল সার (Straight Fertilizer): যে সারের মধ্যে উদ্ভিদের প্রধান ৩টি আবশ্যকীয় পুষ্টি উপাদান, যথা- নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়ামের যে কোনো একটি বিদ্যমান রয়েছে এরূপ সারকে সরল সার বলা হয়।

See also  সার কি? সার কত প্রকার ও কি কি?

ii) যৌগিক সার (Compound Fertilizer): যে অজৈব সারের মধ্যে কমপক্ষে ২টি আবশ্যকীয় উদ্ভিদ পুষ্টি উপাদান থাকে তাকে যৌগিক সার বলে।

iii) মিশ্র সার (Mixed Fertilizer): বিভিন্ন ধরনের রাসায়নিক সারের সঙ্গে রাসায়নিক অথবা জৈব বস্তুর মিশ্রণ হতে প্রস্তুতকৃত সার।

iv) তরল সার (Liquid Fertilizer): গাছের এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদান সমৃদ্ধ কোনো দ্রবণে দ্রবীভূত সার। যেমন-

  1. তরল অজৈব রাসায়নিক (Chemical) সার;
  2. জৈব তরল (Organic Liquid) সার;
  3. তরল জীবাণু (Liquid Bio Fertilizer) সার।

v) অনুপুষ্টি সার (Micronutrient Fertilizer): গাছের বৃদ্ধির জন্য অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য উপাদান প্রয়োজন। অল্প পরিমাণে জিংক, বোরন, আয়রন, ম্যাংগানিজ, কপার, মলিবডেনাম ও ক্লোরিন পুষ্টি উপাদান সংবলিত সারকে অণুপুষ্টি সার বলা হয়।

vi) জীবাণু সার (Bio Fertilizer): জীবাণু ভিত্তিক সার, যা বাতাসের নাইট্রোজেন সংবন্ধন বা মাটির অদ্রবণীয় ফসফরাস ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান দ্রবীভূতকরণপূর্বক উদ্ভিদে পুষ্টি উপাদান সরবরাহের মাধ্যমে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। যেমন: লিগিউম।

(৪) জৈব সার

ক) ভার্মিকম্পোষ্ট (Vermicompost)

উদ্ভিদ ও প্রাণিজ বিভিন্ন প্রকার জৈব বস্তুকে কিছু বিশেষ প্রজাতির কেঁচোর সাহায্যে কম সময়ে জমিতে প্রয়োগ উপযোগী উন্নত মানের জৈব সারে রূপান্তরিত সারকে ভার্মিকম্পোষ্ট বা কেঁচোসার বলা হয়। ভার্মিকম্পোষ্ট সব প্রকার ফসলে যেকোনো সময়ে ব্যবহার করা যায়। সবজি সফলে ৩-৪ মে.টন প্রতি হেক্টরে ও ফল গাছে প্রতি গাছে ৫-১০ কেজি ভার্মিকম্পোষ্ট ব্যবহার করা যায়। ফুল বাগানের জন্য ৫০০-৭০০ কেজি প্রতি হেক্টর জমিতে দিতে হবে। জমির স্বাস্থ্য ও উর্বরতা বজায় রাখার জন্য জৈব সার হিসেবে ভার্মিকম্পোষ্ট ব্যবহারের প্রবণতা ক্রমশ বাড়ছে।

খ) কচুরিপানা ও কিচেন বর্জ্য থেকে জৈব সার উৎপাদন

মাটির গঠন ও গুনাগুন ঠিক রাখতে হলে জৈব সার ব্যবহারের কোনো বিকল্প নেই। তাই প্রত্যেক কৃষক জৈব সার তৈরি ও সংরক্ষণের ব্যাপারে অধিকতর সচেতন ও যত্নশীল হলে সামান্য উদ্যোগে নিজস্ব সম্পদ কাজে লাগিয়ে অল্প খরচে জৈব সার উৎপাদন করতে পারে। এক্ষেত্রে নিজস্ব শ্রম ও গৃহস্থালি থেকে প্রাপ্ত খড়কুটা, লতা-পাতা, ছাই, হাঁস-মুরগির বিষ্ঠা, গোবর, গো-চনা, বাড়ির ঝাড়ু দেওয়া আবর্জনা ও কচুরিপানা ইত্যাদি পচিয়ে বা সংরক্ষণ করে প্রত্যেক কৃষক জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার করে জমির উর্বরতা বাড়াতে পারে। তাহলে রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমিয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারবে।

See also  এ্যাজোলা কি? জৈব সার এ্যাজোলা চাষ পদ্ধতি এবং এ্যাজোলা ব্যবহারের উপকারিতা ও উৎপাদনের সিমাবদ্ধতা

(৫) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

কৃষক ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ক্ষেতে বিভিন্ন উপায়ে সার প্রয়োগ করে থাকে। সঠিক মাত্রায় সার প্রয়োগ না করলে খরচ বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের ক্ষতি হতে পারে। কাজেই গাছের বৃদ্ধি, ফুল-ফল ধারণ ও মাটিকে উর্বর রাখতে হলে মাটি পরীক্ষা করে সঠিক মাত্রায় সুষম সার ব্যবহার করতে হবে।

সুষম সার প্রয়োগে মাটিতে পুষ্টি উপাদান বাড়ে ও মাটি উর্বর হয়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অল্প জমিতে বেশি ফলন পাওয়ার জন্য অধিক পরিমান রাসায়নিক সার ব্যবহার করা হয়।

সার প্রয়োগের সময় ও পদ্ধতির ওপরই প্রয়োগকৃত সারের কার্যকারিতা বাড়ে। সার মাটিতে সরাসরি ব্যবহার এবং ফসলে উপরি প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়।

ক) মাটিতে সার ব্যবহারের আগে করণীয়

  1. মাটিতে কোন পুষ্টি উপাদান কী পরিমাণ আছে তা জানার জন্য মাটি পরীক্ষা করে মাটির গুণাগুণ জানতে হবে।
  2. পরীক্ষিত মাটিতে কোন ফসল চাষ করা যাবে তা জানতে হবে।
  3. ফসল ভিত্তিক সারের চাহিদা জানতে হবে।
  4. যে জমিতে ফসল চাষ করা হবে সে জমিতে পূর্বে কী ফসল চাষ করা হয়েছে এবং সে জমিতে কী কী সার ব্যবহার করা হয়েছে তা জানতে হবে।

খ) সার প্রয়োগে সতর্কতা

রাসায়নিক সারের মধ্যে ইউরিয়া সার সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়ে থাকে। এটা নাইট্রোজেন সারের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইউরিয়া সার মাটিতে অত্যন্ত ক্ষণস্থায়ী এবং মৌসুম শেষে মাটিতে তা একবারেই অবশিষ্ট থাকে না। কাজেই ইউরিয়া সার ফসলের চাহিদামাফিক পাছের অঙ্গজ বৃদ্ধির ধাপে ধাপে উপরিপ্রয়োগ করতে হয়।

  1. ইউরিয়া সার গুটি আকারে ফসলের জমিতে প্রয়োগ করলে ২৫% ইউরিয়া সাশ্রয় হয়।
  2. রাসায়নিক সার যে কোনো বীজ, গাছের গোড়ার কাছাকাছি কিংবা কোনো ভেজা কচিপাতার ওপর ব্যবহার করা যাবে না।
  3. ধান ফসলের কাদাময় জমিতে ইউরিয়া প্রয়োগ করতে হয়, তবে শুকনো জমিতে প্রয়োগের পর নিড়ানি বা আঁচড়া দিয়ে ইউরিয়া সার মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে হবে।
  4. টিএসপি, এমওপি ও জৈব সার বীজ বপন বা চারা রোপনের আগে জমিতে প্রয়োগ করতে হবে। 
  5. বেলে মাটিতে ইউরিয়া ও এমওপি সার কয়েক বার উপরি প্রয়োগ করলে সারের কার্যকারিতা বৃদ্ধি পায়।
  6. জমি তৈরির শেষ চাষে পটাশ, গন্ধক ও দস্তা সার প্রাথমিকভাবে একবারে প্রয়োগ করা যায়।
  7. ধান গাছে প্রথম কুশি বের হওয়ার সময়, কাইচ থোড় জন্মের কয়েকদিন আগে এবং গমে মুকুট শিকড় বের হলে, ভুট্টার চারাগাছ যখন হাঁটু সমান উঁচু হয় এবং স্ত্রী ফুল বের হওয়ার এক সপ্তাহ আগে সার উপরিপ্রয়োগ করা দরকার।
See also  জৈব সার বানানোর পদ্ধতি ও জৈব সারের উপকারিতা

কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts