এখানে আমরা- সুস্থ ছাগল চেনার উপায় অর্থ্যাৎ সুস্থ ছাগলের বৈশিষ্টগুলো কি কি তা জনব এবং ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছু গরুত্বপূর্ণ তথ্য জানব।
(১) সুস্থ ছাগল চেনার উপায়
ছাগলের বৈশিষ্ট্যগুলো দেখে সুস্থ ছাগল চেনার উপায় হলো-
- সুস্থ ছাগলের নাড়ীর স্পন্দন প্রতি মিনিটে ৭০-৯০ বার,
- শ্বাস প্রশ্বাস প্রতি মিনিটে ২৫-৪০ বার,
- তাপমাত্রা ৩৯.৫০ সেঃ হওয়া উচিত,
- সুস্থ ছাগল দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করে,
- মাথা সবসময় উঁচু থাকে,
- নাসারন্ধ্র থাকবে পরিস্কার,
- চামড়া নরম,
- পশম মসৃণ ও চকচকে দেখাবে এবং
- পায়ু অঞ্চল থাকবে পরিচ্ছন্ন।
(২) ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা
একথা মনে রাখা প্রয়োজন যে মুক্তভাবে ছাগল প্রতিপালনের তুলনায় আবদ্ধ অবস্থায় ছাগল পালন অনেক বেশি ঝুকিপূর্ণ। এ ব্যবস্থায় বৈজ্ঞানিক চিন্তা ভাবনা ও প্রযুক্তির সমন্নয় না ঘটালে খামারীকে বিস্তর সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এটা একটি বাস্তব উপলব্ধি। ছাগলের সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যর প্রতি খামারীকে স্বতন্ত্র ভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। নিম্নে আমরা ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কি কিছু বিষয় তুলে ধরব।
ক) ছাগলের সুখ-সাচ্ছন্দ্য ও স্বাস্থ্যর প্রতি লক্ষ্য রাখা
- ছাগলের খামারে রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটলে মারাত্মক ক্ষতি হয়ে থাকে। তাই বিভিন্ন রোগ দমনের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া অত্যন্ত জরুরি। তা না হলে খামার থেকে লাভের আশা করা যায় না।
- খামারে ছাগল আনার পর থেকে প্রতিদিনই প্রতিটি ছাগলের স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হবে। প্রথম পাঁচ দিন সকাল ও বিকালে দুবার থার্মোমিটার দিয়ে ছাগলের দেহের তাপমাত্রা পরীক্ষা করতে হবে।
- হঠাৎ কোনো রোগ দেখা মাত্রই গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে।
- তীব্র শীতের সময় ছাগী বা বাচ্চাদের গায়ে চট পেঁচিয়ে দেয়া যেতে পারে।
- মাচার নিচ এবং ঘর প্রতিদিন সকালে পরিস্কার করতে হবে এবং কর্মসূচি অনুযায়ী জীবাণুনাশের ব্যবস্থা নিতে হবে।
খ) ছাগল সুস্থ রাখতে করণীয়
ছাগল সুস্থ রাখতে যেসব ব্যবস্থাদি গ্রহণ করা আবশ্যক সেগুলোর মধ্যে রয়েছে-
- কর্মসূচি অনুযায়ী টিকা প্রদান: ভাইরাসজনিত রোগ যেমন এনথ্রাক্স ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি খুবই মারাত্মক বলে এগুলোর বিরুদ্ধে যথারীতি টিকা প্রদান করতে হবে। যেসব ছাগীকে পূর্বের পিপিআর, গোটপক্স, একথাইমা, ব্রুসেলোসিস ইত্যাদি টিকা দেয়া হয়নি তাদেরকে গভের্ র ৫ম মাসে উক্ত ভ্যাকসিনগুলি দিতে হবে। বাচ্চার বয়স যখন ৫ মাস তখন তাকে পিপিআর ভ্যাকসিন ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় ভ্যাকসিন দিতে হবে।
- কৃমিনাশক ঔষধ প্রয়োগ: সকল ছালকে নির্ধারিত মাত্রায় বছরে দুইবার কৃমিনাশক ঔষধ প্রদান করতে হবে। কৃমিনাশক কর্মসূচি অনুসরণের জন্য গবাদি প্রাণি চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।
গ) ছাগল সুস্থ রাখতে খামারের জৈব নিরাপত্তা
- খামার এলাকায় বেড়া বা নিরাপত্তা বেস্টনী এমনভাবে নির্মাণ করতে হবে যাতে সেখানে অনাকাঙ্খিত ব্যক্তি, শেয়াল- কুকুর ও অন্যান্য বন্যপ্রাণী প্রবেশ করতে না পারে।
- প্রবেশপথে ফুটপাতে বা পা ধোয়ার জন্য ছোট চৌবাচ্চায় জীবাণুনাশক মেশানো পানি রাখতে হবে। খামারে প্রবেশের আগে খামারে গমনকারী তার জুতা/পা ডুবিয়ে জীবাণু মুক্ত করবেন।
- প্রদিদিন সকাল এবং বিকালে ছাগলের ঘর পরিষ্কার করতে হবে।
- খামারের জন্য সংগৃহিত নূতন ছাগল সরাসরি খামারে পূর্বের বিদ্যমান ছাগলের সাথে রাখা যাবে না। নতুন আনীত ছাগলদের স্বতন্ত্র ঘরে সাময়িক ভাবে পালনের ব্যবস্থা করতে হবে। এ ধরনের ঘরকে পৃথকীকরণ ঘর বা আইসোলেশন শেড বলে। অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহ এই শেডে রাখা বিশেষ জরুরি।
- খামারে আনা নতুন ছাগলের জন্য প্রথমে এদেরকে কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে। এজন্য বহিঃপরজিবী এবং আন্তঃপরজিবীর জন্য কার্যকর কৃমিনাশক প্রয়োগ করতে হবে। চর্মরোগ প্রতিরোধের জন্য প্রতিটি ছাগলকে ০.৫% ম্যালাথিয়ন দ্রবণে গোসল করাতে হবে।
- খামারে আনা নতুন ছাগল আইসোলেশন শেডে ছাগল রাখার পর ১৫ দিনের মধ্যে যদি কোনো রোগ না দেখা দেয় তাহলে প্রথম পিপিআর রোগের এবং সাত দিন পর গোটপক্সের ভ্যাকসিন প্রয়োগ করতে হবে। শেষ টিকা প্রদানের সাত দিন পর এসব ছাগলকে মূল খামারে নেয়া যেতে পারে।
- কোনো ছাগল যদি অসুস্থ হয় তাহলে তাকে আলাদা করে আইসোলেশন শেডে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
- যদি কোনো ছাগল মারা যায় তবে অবশ্যই তার কারণ শনাক্ত করতে হবে। ল্যাবরেটরিতে রোগ নির্ণয়ের পর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
- মৃত ছাগলকে খামার থেকে দূরে নিয়ে মাটির গভীরে পুঁতে বা আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
- রোগাক্রান্ত ছাগলের ব্যবহার্য সকল সরঞ্জামাদি ও দ্রব্যাদি সঠিকভাবে জীবানু মুক্ত করতে হবে।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা সুস্থ ছাগল চেনার উপায় ও ছাগলের রোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানলাম।
ছাগল পরিষ্কার পরিছন্ন পরিবেশে থাকতে পছন্দ করে। এদের বাসস্থানে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হয়। ছাগল সবসময় শুকনো ও উঁচুস্থান পছন্দ করে। ছাগলের যাতে ঠান্ডা না লাগে সেদিকে খেয়াল লাখতে হবে। কারণ ঠান্ডায় এরা নিউমোনিয়াসহ অন্যান্য জটিল রোগে আক্রান্ত হয়। তাই শীতের সময় মেঝেতে ধানের খড় অথবা নাড়া বিছিয়ে দিতে হয়। শীতের সময় ছাগলকে ঠান্ডা থেকে রক্ষার জন্য এদের ঘরের দেয়ালে প্রয়োজনে চটের বস্তা টেনে দিতে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।