Skip to content

 

হাঁস পালন পদ্ধতি

হাঁস পালন পদ্ধতি

বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এ দেশের আবহাওয়া এবং জলবায়ু হাঁস পালনের উপযোগী। এখানে অনেক খালবিল, ডোবানালা, হাওর-বাঁওড়, পুকুর ও নদী রয়েছে।

বাংলাদেশের সিলেট, ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ, যশোরসহ অনেক জেলায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে হাঁসের খামার গড়ে উঠেছে। গ্রামের হাঁসের খামারিরা প্রচলিত পদ্ধতিতে হাঁস পালন করে থাকে।

কিন্তু হাঁস পালনের বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে। যথা-

  1. উন্মুক্ত পদ্ধতি
  2. আবদ্ধ পদ্ধতি
  3. অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতি
  4. ভাসমান পদ্ধতি

(১) উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালন

  • হাঁস পালনের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হচ্ছে উন্মুক্ত পদ্ধতি। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন করা হয়ে থাকে।
  • এ পদ্ধতিতে সকাল বেলায় হাঁসগুলোকে বাসা থেকে ছেড়ে দেওয়া হয় এবং রাতে নির্দিষ্ট ঘরে আবদ্ধ থাকে।
  • এখানে হাঁসকে সাধারণত কোনো খাবার দেওয়া হয় না। কারণ, এরা সারাদিন প্রাকৃতিক উৎস থেকে বিভিন্ন ধরনের খাদ্য যেমন, ছোট মাছ, শামুক, জলজ উদ্ভিদসহ বিভিন্ন দানাশস্য ও কীটপতঙ্গ নিজেরাই সংগ্রহ করে খায়।
  • হাঁস সকাল বেলায় ডিম পাড়ে। তাই এই পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সময় ডিমপাড়া হাঁসকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ঘরে আবদ্ধ করে রাখতে হবে।
  • আমাদের বাংলাদেশের যেসব অঞ্চলে পতিত জমি, হাওর-বাঁওড় ও নদী রয়েছে সেখানে এ পদ্ধতি সবচেয়ে বেশি উত্তম ও লাভজনক।

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধা:

  • শ্রমিক কম লাগে
  • খাদ্য খরচ কম
  • বাসস্থান তৈরিতে খরচ কম হয়
  • পরিবেশের সাথে অভিযোজন ভালো হয়
  • এদের দৈহিক বৃদ্ধি ও উৎপাদন ভালো হয়

উন্মুক্ত পদ্ধতিতে হাঁস পালনের অসুবিধা:

  • অনেক পতিত জমি ও জলমহলের প্রয়োজন হয়
  • বন্য পশুপাখি দ্বারা হাঁসের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে অনেক সময় খারাপ আবহাওয়ায় হাঁসের ক্ষতি হয়ে থাকে
  • সবসময় পর্যবেক্ষণ করা যায় না
  • অনেক সময় জমির ফসল নষ্ট করে থাকে
See also  হাঁস পালন পদ্ধতি ও হাঁসের খাদ্য তালিকা

(২) আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন

এ পদ্ধতিতে হাঁসকে সব সময় আবদ্ধ অবস্থায় রাখা হয়। বাচ্চা হাঁস পালনের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী।

আবদ্ধ পদ্ধতি আবার দুই ধরনের হয়ে থাকে। যেমন-

  1. মেঝে পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা আবদ্ধ অবস্থায় মেঝেতে পালন করা হয়। এ ধরনের মেঝেতে বিছানা হিসাবে খড়ের লিটার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাবার এবং পানি দিয়ে বিছানা যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।
  2. খাঁচা পদ্ধতি বা ব্যাটারি পদ্ধতি: এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চাকে খাঁচায় পালন করা হয়ে থাকে। প্রতিটি বাচ্চার জন্য ০.০৭ বর্গমিটার জায়গার প্রয়োজন হয়। বাচ্চা পালনের জন্য এ পদ্ধতি খুবই উপযোগী।

আবদ্ধ পদ্ধতির সুবিধা:

  • খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয়
  • সহজে রোগ প্রতিরোধ করা যায়
  • শ্রমিক কম লাগে
  • বন্য পশুপাখি হাঁসের ক্ষতি করতে পারে না
  • প্রতিটি হাঁসের জায়গা কম লাগে

আবদ্ধ পদ্ধতির অসুবিধা:

  • বেশি পরিমাণ খাবার সরবরাহ করতে হয়
  • ঘর নির্মাণ খরচ বেশি হয়
  • হাঁসের মুক্ত আলোবাতাসের অভাব হয়
  • নিবিড় যত্ন নিতে হয়
  • এখানে হাঁস সাঁতার কাটার সুযোগ পায় না

(৩) অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালন

  • অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁসকে রাতে ঘরে রাখা হয় এবং দিনের বেলায় ঘরসংলগ্ন একটি নির্দিষ্ট জলাধার বা জায়গার মধ্যে বিচরণের জন্য ছেড়ে দেওয়া হয়।
  • এ নির্দিষ্ট জায়গার ভিতরে প্রতিটি হাঁসের জন্য প্রায় ০.৯৩ বর্গমিটার (প্রায় ১০ বর্গফুট) জায়গার প্রয়োজন হয়।
  • জায়গাটি জলাধার না হলে হাঁসকে সাঁতার কাটার জন্য কৃত্রিম জলাধার, নালা বা চৌবাচ্চা তৈরি করে দিতে হয়। এখানে হাঁসগুলো সাঁতার কাটতে পারে ও খাবার পানি খেতে পারে।

অর্ধ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের সুবিধা:

  • এখানে হাঁস সাঁতার কাটার সুযোগ পায়
  • দৈহিক বৃদ্ধি স্বাভাবিক থাকে
  • শ্রমিক কম লাগে
  • খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয়

অর্থ-আবদ্ধ পদ্ধতিতে হাঁস পালনের অসুবিধা:

  • হাঁস পালন খরচ বেশি
  • নিবিড় যত্ন নিতে হয়
  • খাদ্য খরচ বেশি
  • খাদ্য গ্রহণ সমভাবে হয় না
See also  হাঁস-মুরগির রোগ ও প্রতিকার

(৪) ভাসমান পদ্ধতিতে হাঁস পালন

  • এ পদ্ধতিতে হাঁসের জন্য ভাসমান ঘর তৈরি করা হয়। এ পদ্ধতি বাড়ন্ত ও বয়স্ক হাঁস পালনের উপযোগী।
  • বড় পুকুর, দিঘি বা নদীর কিনারায় পানির উপর হাঁসের সংখ্যা বিবেচনায় রেখে ঘর নির্মাণ করা হয়। এখানে নির্মাণ খরচ একটু বেশি হলেও খাদ্য খরচ কম।
  • ভাসমান ঘর তৈরির জন্য ড্রাম ব্যবহার করা হয়। হাঁসগুলো সারাদিন খাদ্যের সন্ধানে ঘুরে বেড়ায় এবং রাতে ঘরে আশ্রয় নেয়।
  • সাধারণত নিচু এলাকা যেখানে বন্যা বেশি হয়, সেখানে এ পদ্ধতিতে হাঁস পালন খুবই সুবিধাজনক।

হাঁসের রোগব্যাধি প্রতিরোধ ও দমন:

  • হাঁসকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। হাঁসকে সময়মতো টিকা দিতে হবে ও কৃমিনাশক খাওয়াতে হবে।
  • হাঁস ডাক প্লেগ, কলেরা ও পরজীবী ইত্যাদিতে বেশি আক্রান্ত হয়।
  • রোগাক্রান্ত হাঁসকে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক চিকিৎসা সেবা দিতে হবে।

[সূত্র: এনসিটিবি]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts

You cannot copy content of this page