ঔষধি বা ভেষজ বৃক্ষ হলো এক প্রকার উদ্ভিদ যার যে কোনো অংশ রোগ নিরাময়ে বা উপশমে সক্ষম। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্র উন্নত থেকে উন্নততর হওয়ার পিছনে ঔষধি বৃক্ষের গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ লোকের নিকট ঔষধি বৃক্ষের মাধ্যমে রোগ নিরাময় অতি জনপ্রিয়। কারণ, ঔষধি উদ্ভিদের চিকিৎসা ব্যবস্থা সহজলভ্য, সস্তা ও তেমন কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
পৃথিবীর অনেক দেশে ঔষুধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু হয়েছে। বিজ্ঞানীদের ধারণা বর্তমান বিশ্বের মারাত্বক ব্যাধি ক্যান্সার নিরাময়ের উপকরণ ঔষধি উদ্ভিদে রয়েছে।
এছাড়াও আমরা দেখেছি বা শুনেছি বাড়িতে বিশেষ করে ছোট ছেলেমেয়েদের সর্দি-কাশি হলে তুলসি পাতার রসের সাথে কয়েক ফোঁটা মধু মিশিয়ে খাওয়ানো হয়। তুলসির মত আরও হরেক প্রজাতির উদ্ভিদ আছে যেগুলো বিভিন্ন রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়। এসব উদ্ভিদ ভেষজ বা ঔষধি উদ্ভিদ হিসেবে পরিচিত।
এসব অতি গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ বা ঔষধি উদ্ভিদও কৃষিজ দ্রব্যাদির অন্তর্ভুক্ত এবং শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহ করে থাকে। অতএব, আমাদের সবারই জানা থাকা দরকার গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ উদ্ভিদ সম্বন্ধে।
এই আর্টিকেলটি শেষ অবধি পড়লে আপনি- বাংলাদেশের ঔষধি গাছের নামের তালিকা পাবেন। বিভিন্ন ঔষধি গাছের ছবি ও নাম জানতে পারবেন। ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা সম্পর্কে অবগত হতে পারবেন।
(১) ঔষধি গাছের নামের তালিকা
নিচের সারণিতে ১৫টি বাংলাদেশের ঔষধি গাছের নামের তালিকা প্রদান করা হলো-
নং | সাধারন নাম | বৈজ্ঞানিক নাম | পরিবার |
১. | থানকুনি | Centella asiatica | Apiaceae |
২. | তুলসী | Ocimum sanctum | Lamiaceae |
৩. | কালোমেঘ | Andrographis paniculata | Acanthaceae |
৪. | বাসক | Adhatoda vasica | Acanthaceae |
৫. | সর্পগন্ধা | Rauwolfia serpentina | Apocynaceae |
৬. | অর্জুন | Terminalia arjuna | Combretaceae |
৭. | হরিতকি | Terminalia chebula | Combretaceae |
৮. | আমলকি | Phyllanthus officinalis | Euphorbiaceae |
৯. | বহেরা | Terminalia bellirica | Combretaceae |
১০. | ঘৃত কুমারী | Aloe-vera barbadensis | Xanthorrhoeaceae |
১১. | তেলাকুচা | Coccinia grandis | Cucurbitaceae |
১২. | নিম | Azadirachta indica | Meliaceae |
১৩. | বেল | Aegle marmelos | Rutaceae |
১৪. | উলঠকম্বল | Abroma augusta | Solanaceae |
১৫. | মেহেদি | Lawsonia inermis | Lythraceae |
(২) ঔষধি গাছের ছবি, নাম ও উপকারিতা
রোগ নিরাময়ে সক্ষম এমন কিছু উদ্ভিদ মানুষ সদূর অতীত কাল থেকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে আসছে। এ সমস্ত উদ্ভিদকে ভেষজ উদ্ভিদ বলে।
রোগ নিরাময়ে এসব উদ্ভিদের উপকারিতা অনস্বীকার্য। তবে এসব গুরুত্বপূর্ণ উদ্ভিদসমূহের বিলুপ্তির প্রধান কারন সমূহের অন্যতম কারণ হচ্ছে সাধারণ মানুষের অজ্ঞতা।
ভেষজ উদ্ভিদ বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। সুতরাং আমদের এসব ভেষজ উদ্ভিদ সম্পর্কে জানা, চেনা এবং সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা উচিত।
নিম্নে ১৫টি ঔষধি গাছের ছবি, নাম ও উপকারিতা উপস্থাপন করা হলো-
১.
‘থানকুনি’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘থানকুনি’: থানকুনি একটি ছোট লতানো বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এর প্রতি পর্ব থেকে নিচে মূল এবং উপরে শাখা ও পাতা গজায়। পাতা সরল বৃক্কের মতো, একান্তর। পাতা ক্ষুদ্রগোলাকৃতি। বসন্তকালে থানকুনির ফুল আসে ও গ্রীষ্মকালে ফল পাকে। থানকুনির সমস্ত উদ্ভিদটিই ব্যবহৃত হয়।
‘থানকুনি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- ছেলেমেয়েদের পেটের অসুখ, বিশেষ করে বদহজম ও আমাশয় রোগ নিরাময়ে থানকুনি খুব বেশি ব্যবহৃত হয়।
- মুখে ঘা, ক্ষত, সর্দির জন্য উপকারি, হজম শক্তি বাড়ায় ও লিভারের সমস্যা দূর করে।
- এছাড়া থানকুনি আয়ুবর্ধক, স্মৃতিবর্ধক, আমরক্ত নাশক ও চর্মরোগনাশক।
২.
‘তুলসী’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘তুলসী’: তুলসী অতিপরিচিত বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। এটি সাধারণত ৩০ সে.মি. হতে ১ মিটার পর্যন্ত উঁচু হয়ে থাকে। পাতা সরল, প্রতিমুখ, ডিম্বাকার, সুগন্ধযুক্ত। পাতা ২-৪ ইি লম্বা। পাতা, ফুল ও ফলের একটি ঝাঁঝাল গন্ধ আছে। শীতকালে ফুল ও ফল হয়। এর ব্যবহৃত অংশ হচ্ছে পাতা।
‘তুলসি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- সাধারণ সর্দি কাশিতে তুলসি পাতার রস বেশ উপকারি, তুলসী পাতার রসের সাথে আদার রস ও মধু মিশিয়ে ছোট ছেলেমেয়েদের খাওয়ানো হয়।
- এছাড়াও তুলসি গাছের রস কৃমি ও বায়ুনাশক।
৩.
‘কালোমেঘ’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘কালোমেঘ’: এটি একটি ছোট বীরুৎ জাতীয় উদ্ভিদ। সাধারণত ২০ সে.মি. থেকে ১ মিটার উঁচু হয়। পাতা সরল, প্রতিমুখ কিছুটা লম্বা ধরনের। পাতা তিতা। বর্ষার শেষ হতে শীতকাল পর্যন্ত ফুল ও ফল হয়। এর সমস্ত গাছটিই বিশেষ করে পাতা ব্যবহৃত হয়।
‘তুলসি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা: ছোট ছেলে মেয়েদের জ্বর, অজীর্ণ ও লিভার দোষে এর রস একটি অত্যন্ত ভালো ঔষধ।
৪.
‘বাসক’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘বাসক’: বাসক ১-২ মি. উঁচু গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ। পাতা সরল প্রতিমুখ, লম্বাকৃতি, বল্লমাকার, বেশ বড়, ফুল ঘন, ছোট স্পাইকের উপরে ফুটে, ফল সাদা। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, শিকড়, ফুল, বাকল।
‘বাসক’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- কাশি নিরাময়ে অধিক ব্যবহৃত হয়। সমপরিমান আদার রস ও মধুসহ বাসক পাতার রস খেলে কার্যকরী হয়।
- বাসক জ্বর, দাদ, চুলকানি, জন্ডিস ও পাইরিয়া রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়।
৫.
‘সর্পগন্ধা’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘সর্পগন্ধা’: সর্পগন্ধা ৩০-৭৫ সে.মি. উচ্চতাবিশিষ্ঠ একটি বহুবর্ষজীবী বিরুৎ। প্রতিপর্বে সাধারণত ৩টি পাতা থাকে। বর্ষায় ফুল ও ফল হয়। ফুল গুচ্ছাকারে ফুটতে দেখা যায়। ফল পাকলে কালো হয়। সর্পগন্ধার মূলের বা ফলের রস ব্যবহৃত হয়।
‘সর্পগন্ধা’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- সর্পগন্ধার মূলের বা ফলের রস উচ্চ রক্তচাপে ব্যবহৃত হয়।
- জ্বর, হাপানি, গ্যাস্টিকে উপকারি।
- পাগলের চিকিৎসায়ও এটি ব্যবহৃত হয়।
- এছাড়াও সর্পগন্ধার অন্যতম একটি ব্যবহার এটি বাড়িতে থাকলে সাপ আসে না।
৬.
‘অর্জুন’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘অর্জুন’: অর্জুন মাঝারি থেকে বৃহদাকার বৃক্ষ। কান্ড সরল উন্নত, মসৃণ এবং আকর্ষনীয় হয়ে থাকে। গাছ থেকে সহজে ছাল উঠানো যায়। পাতা সরল, লম্বা, ডিম্বাকৃতির। ফুল হলুদ ক্ষুদ্রাকৃতির, উগ্র গন্ধবিশিষ্ট। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, বাকল, ফুল, ফল ও কাঠ।
‘অর্জুন’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- কাঁচা পাতার রস আমাশয় রোগ উপশমে ব্যবহৃত হয়।
- অর্জুনের ছাল ভালোভাবে বেটে তার রস চিনি ও দুধের সাথে প্রত্যহ সকালে সেবনে যাবতীয় হৃদরোগ আরোগ্য হয়।
- অর্জুন ছালের রস সেবনে উদারময় ও অর্শ্ব রোগের উপশম হয়।
- রক্ত আমাশয়ে অর্জুনের ছালের চূর্ণ দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে নিরাময় হয়।
- অর্জুনের ছালের মিহি গুড়া মধুর সাথে মিশিয়ে মুখে লাগালে মেচতার দাগ মিলিয়ে যায়।
৭.
‘হরিতকি’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘হরিতকি’: হরিতকি মাঝারি থেকে বৃহদাকার পত্রঝরা উদ্ভিদ ও প্রায় ১৫-২০ মি. উঁচু হয়। পাতা সরল একান্তর, উপবৃত্তাকার, সবৃন্তক। ফুল উভলিঙ্গ, শ্বেতবর্ণ ও ছোট হয়। ফল ড্রুপ, কমবেশি ৫টি হালকা খাঁজ থাকে। পাকলে হলুদাভ সবুজ হয়। এর ব্যবহার্য অংশ ফল ও কাঠ।
‘হরিতকি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- আয়ুর্বেদিক ঔষধ ত্রিফলার অন্যতম ফল হরিতকি। হরিতকি ফল চূর্ণ করে একটু লবণ মিশিয়ে সেবন করলে অর্শ্বরোগ নিরাময় হয়।
- হরিতকি চূর্ণ পাইপে ভরে ধূমপান করলে হাঁপানি উপশম হয়।
- রক্ত দূষিত বা পিত্তরোগজনিত চর্মরোগে নিসিন্দা পাতার রসের সঙ্গে হরিতকি চূর্ণ করে খেলে উপকার হয়।
- চিনি ও পানির সাথে হরিতকি চূর্ণ করে ব্যবহার করলে চোখ উঠা ভালো হয়।
- হরিতকি বলকারক, জীবনীশক্তি বৃদ্ধিকারক ও বার্ধক্য নিবারক।
- হরিতকি ফল থেকে ট্যানিন, লেখার কালি ও রঙ পাওয়া যায়।
- কাচাঁ ফল আমাশয় এবং পাকা ফল রক্তশূণ্যতা, পিত্তরোগ, হৃদরোগ, গেটেবাত ও গলা ক্ষতে ব্যবহার্য।
- ফলচূর্ণ জ্বালানি, আসবাবপত্র, কৃষি যন্ত্রপাতি ও অন্যান্য কাজে ব্যবহার করা হয়।
৮.
‘আমলকি’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘আমলকি’: মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। পাতা হালকা সুবজ, যৌগিক, উপপত্র বিপরীতভাবে বিন্যস্ত, ফুল ছোট সবুজ, গোলাকৃতি, মুখরোচক ও উপাদেয়। মার্চ থেকে মে মাসে ফুল আসে। ৪-৫ বছর বয়সে ফল দেয় এবং আগষ্ট নভেম্বর পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়।
‘আমলকি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- আমলকির ফল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এবং ত্রিফলার একটি ফল।
- আমলকির ফল ও পাতার রস আমাশয় প্রতিষেধক একটি টনিক।
- ফলের রস যকৃত, পেটের পীড়া, অজীর্ণতা, হজমী ও কাশিতে বিশেষ উপকারি, আমলকির ফল ত্রিফলার সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করলে রক্তহীনতা, জন্ডিস, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, গানোরিয়া, চুল উঠা, জ্বর,হিক্কা প্রভৃতি রোগেরও উপশম করে।
- আমলকি ফল থেকে লেখার কালি, শ্যাম্পু ও চুলের কলপ তৈরি হয়।
- আমলকির ফুল, শিকড় ও বাকল থেকেও ঔষধ তৈরি করা যায়।
- আমলকির পাতা থেকে প্রাপ্ত রঙ সিল্কের শাড়ি রাঙ্গানোর কাজে ব্যবহৃত হয়।
- আমলকি ফল চল্লিশদিন ভক্ষণ করলে পূর্ণ যৌবন প্রাপ্তি হয় বলে কথিত আছে।
- ভেষজ ব্যবহার ছাড়াও আমলকির কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
৯.
‘বহেরা’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘বহেরা’: এটি একটি বৃহদাকার, পত্রঝরা শাখা প্রশাখাযুক্ত বৃক্ষজাতীয় উদ্ভিদ। পাতা একক, বোটা লম্বা ডালের শীর্ষে জড়োভাবে থাকে। ফুল সবুজ ও সাদা ডিম্বাকৃতির। ডিসেম্বর থেকে মার্চ মাসে বহেরা গাছে ফুল আসতে দেখা যায়। ফল কিছুটা গোলাকৃতির বা ঈষৎ লম্বাটে। ফল পাকলে হালকাবাদামি হয়। একটি ফলে একটি বীজ থাকে। এর ব্যবহৃত অংশ ফল ও বীজ।
‘বহেরা’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- ত্রিফলার অন্যতম বহেরা। বীজের শাঁস দুই একটি করে দুঘন্টা অন্তর এবং দিনে দুইটি করে চিবিয়ে খেলে হাঁপানি রোগ আরোগ্য হয়।
- বহেরা চূর্ণ সকাল বিকাল পানিসহ খেলে উপকার হয়।
- বহেরা ফল পেটের পীড়া, অর্শ্ব, কোষ্ঠকাঠিন্য, ডায়রিয়া ও জ্বরে ব্যবহার্য।
- বহেরা ফল হৃদপিন্ড, ফুসফুস, নাসিকা, গলার রোগ ও অজীর্ণতার ভালো ঔষধ।
- বহেরা এর বীজ থেকে প্রাপ্ত তেল মাথা ঠান্ডা রাখে এবং চুল পড়া বন্ধ করে।
- চোখ উঠলে বহেরা চূর্ণ ঘষে লাগালে উপকার হয়।
১০.
‘ঘৃত কুমারী’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘ঘৃত কুমারী’: ঘৃত কুমারী বীরুৎ জাতীয় গাছ। দেখতে অনেকটা আনারস গাছের মত। পাতা পুরু লম্বা কিনারা করাতের মত খাজ কাটা, রসাল। ভেতরে লালার মত পিচ্ছিল শাসঁ থাকে। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা থেকে নির্গত ঘন পিচ্ছিল রস।
‘ঘৃত কুমারী’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- পাতা থেকে নির্গত ঘন পিচ্ছিল রস কোষ্ঠকাঠিন্য রোগের ফলপ্রসূ ঔষধ।
- এটি ক্ষুধামন্দা, জন্ডিস, লিউকোমিয়া, অর্শ্বরোগ, কাটা, পোড়া ও ক্ষতের চিকিৎসায় ফলপ্রসূ অবদান রাখে।
- ঘৃতকুমারীর রস শরীরে শক্তি যোগায়।
- প্রসাধন দ্রব্যে ঘৃত কুমারী এর মিশ্রণে প্রসাধনের মান উন্নত হয়।
১১.
‘তেলাকুচা’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘তেলাকুচা’: তেলাকুচা গাঢ় সুবজ রঙের নরম পাতা ও কান্ডবিশিষ্ট একটি লতাজাতীয় বহুবর্ষজীবী বিরুৎ উদ্ভিদ। বনেবাদাড়ে আপনা আপনি এ গাছ জন্মাতে দেখা যায়। পাতা পঞ্চভুজ আকৃতির সব মৌসুমেই তেলাকুচার ফুল ও ফল হয়ে থাকে। এর ব্যবহার্য অংশ কান্ড ও পাতা।
‘তেলাকুচা’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- তেলাকুচা উদ্ভিদের কান্ড ও পাতার নির্যাস কুষ্ঠ, জ্বর, ডায়াবেটিস, হাঁপানি ও ব্রঙ্কাইটিস রোগের চিকিৎসায় ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয়।
- তেলাকুচার নির্যাস সর্দি, জ্বর, হাঁপানি ও মূর্ছারোগ চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়।
- চর্মরোগে তেলাকুচা এর পাতা বাটার প্রলেপ বেশ উপকারি।
১২.
‘নিম’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘নিম’: নিম মাঝারি থেকে বড় আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ এবং প্রায় ২০ মি. পর্যন্ত লম্বা হয়। অল্প সময়ের জন্য পত্রঝরা থাকে, মার্চ- এপ্রিল মাসে নতুন পাতা গজায়। বাকল খয়েরি বা কালো ও অমসৃণ। পত্র যৌগিক পক্ষল, লম্বাটে, তির্যক ও বর্শাকৃতির হয়। ফুল যৌগিক, সাদা সুগন্ধিযুক্ত। ফল ড্রুপ, ডিম্বাকৃতির, এককোষী এবং একটি বা কখনও কখনও দুটি বীজ থাকে। ফল পাকলে সুবজ ও হলুদ হয়। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা, মূল কান্ড, বাকল, ফুল, ফল ও কাঠ।
‘নিম’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- কচি নিম পাতার সাথে গোলমরিচের পাতা মিশিয়ে অন্ত্রের কৃমির নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
- নিম পাতা পিষে মলম তৈরি করে বসন্তের সৃষ্ট ক্ষত নিরাময়ে ব্যবহার করা যায়।
- নিমপাতার রস ম্যালেরিয়াসহ সকল প্রকার জ্বরের প্রতিষেধক হিসাবে একজিমা, দাঁতে রক্ত ও পুজঁ পড়া, জন্ডিস রোগ নিরাময়ে ব্যবহৃত হয়।
১৩.
‘বেল’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘বেল’: বেল লেবু পরিবারের সদস্য। বেল মাঝারি আকারের বৃক্ষ। গাছের উচ্চতা ২০-২৫ ফুট। গাছের বাকল পুরু, নরম ধূসর বর্ণের, পাতা যৌগিক ও তিনটি করে থাকে। ফাল্গুন-চৈত্র মাসে পাতা ঝরে যায় ও বৈশাখে নতুন পাতা ও ফুল আসে। ফুল লালচে ও মিষ্টি গন্ধযুক্ত। ফল বড়, গোলাকার, ত্বক খুব শক্ত। কাচাঁ ফলের রং সবুজ, পাকলে হলদে হয়ে যায়। এর ব্যবহার্য অংশ পাতা ও ফল।
‘বেল’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- বেল কোষ্ঠকাঠিন্য ও আমাশয় উপশমে ব্যবহৃত হয়। বেলের শরবত হজম শক্তি বাড়ায় ও বলবর্ধক।
- বেল পাতার রস মধুর সাথে মিশিয়ে পান করলে চোখের ছানি ও জ্বালা উপশম হয়।
- বেলে প্রচুর ভিটামিন সি আছে। এই ভিটামিন সি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
- বেল নিয়মিত খেলে কোলন ক্যান্সারের আশংকা কমে।
- শিশুর স্মরণশক্তি বাড়াতে বেল উপকারি।
১৪.
‘উলটকম্বল’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘উলটকম্বল’: এশিয়ার প্রধান অঞ্চল এর আদি নিবাস। ২-৩ মি. উচ্চতা বিশিষ্ট গুল্মজাতীয় চিরহরিৎ গাছ। গাছের শাখার গোড়ার পাতা হৃদপিন্ডের মত, তবে পাতার সামনের দিকটা সরু উজ্জ্বল সবুজ রঙের, গাছের বাকল আশঁযুক্ত।
ফুল খয়েরি রঙের, ৫টি পাঁপড়ি, গ্রীষ্ম থেকে শরৎকাল পর্যন্ত ফুল কোনাকৃতি, প্রথমে সবুজ, পরিপক্ক হলে কালো রং ধারণ করে। ফল পাঁচটি প্রকোষ্ঠে বিভক্ত। ভিতরে কালিজিরার মত ছোট ছোট বীজ থাকে। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, ডাল, মূল, বাকল।
‘উলটকম্বল’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- উলটকম্বল গাছের বাকল ও ডাঁটা পানিতে ভিজালে আঠালো পদার্থ বের হয় যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।
- উলটকম্বল গাছের পাতার ডাঁটা প্রসাবের জ্বালাপোড়া উপশম, আমাশয় রোগের জন্য উপকারি।
- উলটকম্বল গাছের পাতা ও কান্ডের রস গনোরিয়া, ফোড়া ও স্ত্রীরোগে উপকারি।
১৫.
‘মেহেদি’ ঔষধি গাছের ছবি:
ঔষধি গাছের নাম ‘মেহেদি’: মেহেদি এক ধরনের গ্রীষ্মমন্ডলীয় গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ। এর লতাঙ্কুর বা পাতা থেকে তৈরি লালচে রং ব্যবহৃত হয়। গাছ উচ্চতায় ৮ মিটার পর্যন্ত হতে পারে। বাকল লালচে বাদামি। ফুল গোলাপী, লাল ও সাদা রঙের হতে পারে। এর ব্যবহৃত অংশ পাতা, বাকল, ফুল ও বীজ।
‘মেহেদি’ ঔষধি গাছের উপকারিতা:
- মেহেদি এন্টিফাঙ্গাল, এন্টি ইনফ্লেমেটরী, কুলিং, হিলিং ও সিডেটিভ গুণাগুণ সমৃদ্ধ। স্কেবিস, চর্মের চুলকানি, নখ ফাটার চিকিৎসায় পাতার পেস্ট ব্যবহৃত হয়।
- খুশকি দূর করতে মেহেদি কার্যকরী।
- মেহেদি মাথার টাকের চিকিৎসায় সহায়ক।
- লিভারের জটিলতা ও জন্ডিসের চিকিৎসায় মেহেদির বাকল ব্যবহৃত হয়।
- মেহেদির বীজের রস আমাশয় দুর করে।
প্রিয় পাঠক বন্ধু, উপরোক্ত আলেচনার মাধ্যমে আমরা ১৫টি ঔষধি গাছের নামের তালিকা, ঔষধি গাছের ছবি ও নাম এবং ঔষধি গাছের নাম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানতে পারলাম।
অতি প্রাচীনকাল থেকে ঔষধি গুনসম্পন্ন বিভিন্ন প্রকার উদ্ভিদ রোগ নিরাময়ে কার্যকরি ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা শাস্ত্রের ব্যাপক উন্নতিতে ঔষধি উদ্ভিদ অনবদ্য ভূমিকা পালন করে আসছে। আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থার উৎকর্ষ চরমে পৌছালেও মানুষ আবার সেই প্রাচীন ঔষধি গুণসম্পূর্ণ উদ্ভিদের ঔষধ দ্বারা চিকিৎসা পদ্ধতির প্রয়োজনীতা উপলব্ধি করছে। পৃথিবীর বহুদেশ ভেষজ ঔষধের উৎকর্ষ সাধনের জন্য ব্যাপক গবেষণা শুরু করেছে। বাংলাদেশে ভেষজ উদ্ভিদের ব্যাপক চাষাবাদ ও যত্নের মাধ্যমে ঔষধশিল্পের ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনের সম্ভবনা খুবই উজ্জ্বল।
[সূত্র: ওপেন স্কুল]