(১) গাভী পালন
কৃষির অগ্রগতি ও বিকাশের সাথে পশু ও গাভী পালন অঙ্গাঅঙ্গি ভাবে জড়িত। বলা হয়ে থাকে একটি জাতির মেধার বিকাশ নির্ভর করে মূলত ঐ জাতি কতটুকু দুধ পান করে তার উপর।
আজকের বিশ্বে যেখানেই কৃষি বিকাশ লাভ করেছে গাভীর দুধ উৎপাদন ও ব্যবহার সেখানে শিল্প হিসাবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। আমাদের বাংলাদেশেও মোটামুটিভাবে বলা যায় যে গাভী পালন একটি শিল্প হিসাবে গড়ে উঠছে।
আমাদের বাংলাদেশে পাঁচ ধরনের উন্নত জাতের গাভী দেখা যায় সেগুলো হলো- হলস্টেইন, ফ্রিজিয়ান, জার্সি, শাহিওয়াল, সিন্ধি, রেড চিটাগাং প্রভৃতি।
এই সমস্ত জাতের গাভীর দুধ উৎপাদনক্ষমতা মোটামুটি ভালো। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে লালনপালন ও প্রজনন করালে এদের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে।
(২) গাভীর বাসস্থান
পশুর আবাসন: সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য এবং অধিক উৎপাদনের জন্য অধিকতর আরামদায়ক পরিবেশে পশুর আশ্রয় প্রদানকে গৃহপালিত পশুর আবাসন বলা হয়।
গোয়াল ঘর: পশুকে থাকা, খাওয়া ও বিশ্রামের জন্য যে আরামদায়ক ঘর তৈরি করে দেওয়া হয় তাকে বাসস্থান বা গোয়াল ঘর বলে।
পশুর বাসস্থান বা গোয়াল ঘরের অনেক সুবিধা রয়েছে। গোয়াল ঘরে একক বা দলগতভাবে পশু পালন করলে ব্যবস্থাপনা অনেক সহজ হয় ও উৎপাদন খরচ কমে আসে।
গোয়াল ঘরে সবসময় পশুকে আবদ্ধ না রেখে মাঝে মধ্যে বাইরে ঘুরিয়ে আনা পশুর স্বাস্থ্যের জন্য উত্তম।
বাসস্থানের গঠন-
- গাভীর ঘর বা বাসস্থানের জনপ্রিয় পদ্ধতি হলো গোশালা বা গোয়াল ঘরে বেঁধে পশু পালন করা।
- গোয়াল ঘরের আকার পশুর সংখ্যার উপর নির্ভর করে।
- পশুর সংখ্যা ১০ এর কম হলে ১ সারি বিশিষ্ট ঘর এবং ১০ বা তার অধিক হলে ২ সারি বিশিষ্ট ঘর তৈরি করতে হবে।
বাসস্থানের উদ্দেশ্য-
- আরামদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা।
- পশুকে আশ্রয় ও বিশ্রাম দেওয়া।
- খারাপ আবহাওয়া থেকে রক্ষা করা।
- পোকান্ডমাকড় ও বন্য পশুপাখি থেকে রক্ষা করা।
- চোরের হাত থেকে রক্ষা করা।
- পশুকে শান্ত করা।
- গর্ভবতী, প্রসূতি ও বাচ্চার সঠিক পরিচর্যা করা।
- পশু থেকে অধিক দুধ ও মাংস উৎপাদন করা।
- দক্ষতার সাথে দুগ্ধ দোহন করা।
- খাদ্য ও পানি সরবরাহ সঠিক ও সহজ করা।
- পশুর একক ও নিবিড় যত্ন নেওয়া।
- সময়মতো চিকিৎসা সেবা দেওয়া।
- সহজে গোয়াল ঘর পরিষ্কার করা।
- রোগ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ করা।
- গোবর ও অন্যান্য বর্জ্য সংরক্ষণ করা।
- উৎপাদন খরচ কমানো ইত্যাদি।
গাভীর বাসস্থানের স্থান নির্বাচন করা-
গাভীর আবাসনের জন্য স্থান নির্বাচন করা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। স্থান নির্বাচন সঠিক না হলে খামার লাভজনক করা যায় না।
গাভীর আবাসন মূলধন ও গাভীর সংখ্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। তাই নিম্নলিখিত সুবিধাগুলোর জন্য গাভীর বাসস্থান তৈরি করতে হবে।
- উঁচু, শুকনো ও বন্যামুক্ত এলাকা।
- বাজার, মহাসড়ক ও বসতি থেকে একটু দূরে।
- দুধ ও মাংস বাজারজাত করার সুবিধা।
- ভালো যাতায়াত ব্যবস্থা।
- বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহের সুবিধা।
- গোয়াল ঘর বা খামার এলাকা থেকে সহজে পানি নিষ্কাশন।
- গোয়াল ঘরে যেন সূর্যালোক পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখা।
- গোয়াল ঘরের চার পাশ পরিষ্কার রাখা।
- গাভীর জন্য খাদ্য ও পানি সরবরাহের বিষয়টি মনে রাখা।
- ভবিষ্যতে খামার বড় করার সুযোগ থাকা ইত্যাদি।
(৩) গাভীর পরিচর্যা
- গাভীর পরিচর্যার লক্ষ্য হলো গাভী যাতে অধিক কর্মক্ষম থাকে। গাভীর গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও দুগ্ধদোহন কালের পরিচর্যার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে।
- গাভীকে নিয়মিত গোসল করানো, শিং কাটা, খুর কাটা ইত্যাদির দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। এসব পরিচর্যায় গাভীর স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং উৎপাদনে ভালো প্রভাব পড়ে।
- গর্ভকালীন সময়ে গাভীর দিকে বিশেষ যত্নবান হওয়া উচিত কারণ এই সময়ে গাভীর ভিতরের বাচ্চা বড় হয়ে উঠতে থাকে। এই সময়ে গাভীকে প্রচুর পরিমাণে দানাদার জাতীয় খাদ্য দিতে হবে।
- প্রসবকালীন সময়ে এবং প্রসবের কয়েক দিন আগে গাভীকে আলাদা জায়গায় রেখে পর্যবেক্ষণ করতে হবে। এই গাভীকে সমতল জায়গায় রাখতে হবে।
- গর্ভধারণ ও প্রসবকালে গাভীকে সঠিকভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করতে হবে। গর্ভকালীন অবহেলা করলে বাচ্চা নষ্ট হয়ে যেতে পারে। তাছাড়া গাভী প্রজনন ও গর্ভধারণ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।
- প্রসবের লক্ষণ দেখা দিলেই গাভীকে শান্ত পরিবেশে রেখে ২-৩ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। প্রসব অগ্রসর না হলে ভেটেরিনারি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে।
- প্রসবের পর বাছুরকে অবশ্যই শাল দুধ খাওয়াতে হবে, কারণ এই শাল দুধ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সঠিক ভাবে বেড়ে উঠতে সহায়তা করে।
- বাচ্চা প্রসবের পর ফুল পড়ে গেলে তা সাথে সাথে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে।
- গাভী প্রসবের ৫-৭ দিন পর্যন্ত শাল দুধ দেয় এর পরে স্বাভাবিক দুধ পাওয়া যায়।
- দুধ দোহনের সময় গাভীকে উত্তেজিত করা থেকে বিরত থাকতে হবে এবং দ্রুততার সাথে দোহনের কাজ শেষ করতে হবে।
- গাভীর বাচ্চা প্রসবের ৯০ দিনের মধ্যে গাভী গরম না হলে ডাক্তারি পরীক্ষা করে গরম করতে হবে।
- গাভী পরিচর্যার আরও একটি লক্ষ্য হচ্ছে, গাভীকে পোকামাকড় ও মশামাছি থেকে নিরাপদ দূরত্বে রাখা ৷
(৪) গাভীর খাদ্য
গাভীর শারীরিক বৃদ্ধি ও কোষকলার বিকাশ ও ক্ষয়পূরণ, তাপ ও শক্তি উৎপাদন, স্নেহ পদার্থ সংরক্ষণ, দুধ ও মাংস উৎপাদন, প্রজননের সক্ষমতা অর্জন, গর্ভাবস্থায় বাচ্চার বিকাশ সাধন প্রভৃতি কাজের জন্য উপযুক্ত খাদ্যের প্রয়োজন।
খাদ্য পরিবেশনে শর্করা আমিষ ও চর্বিজাতীয় খাদ্যের প্রতুলতার দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে। কারণ গাভীর শারীরিক বিকাশের জন্য সব ধরনের খাদ্য উপাদানের গুরুত্ব অপরিসীম।
এসব খাদ্য মিশ্রণে গাভীর দৈহিক প্রয়োজন মিটানোর জন্য উপযুক্ত পরিমাণ ও অনুপাতে সব রকম পুষ্টি উপাদান খাকতে হবে।
গাভীর পরিপূর্ণ বিকাশ ও উৎপাদনের জন্য তাই সুষম খাদ্যের প্রয়োজন।
গাভীর খাদ্যদ্রব্য সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- আঁশযুক্ত খাদ্য: আঁশযুক্ত খাদ্যের মধ্যে খড়বিচালি, কাঁচাঘাস, লতাপাতা, হে, সাইলেজ ইত্যাদি প্রধান।
- দানাদার খাদ্য: দানাদার খাদ্যের মধ্যে শস্যদানা, গমের ভুসি, চালের কুঁড়া, খৈল ইত্যাদি প্রধান।
- ফিউ অ্যাডিটিভস: খনিজ ও ভিটামিন এর মধ্যে হাড়ের গুঁড়া, বিভিন্ন ভিটামিন – খনিজ প্রিমিক্স পদার্থ রয়েছে।
এসব পশু খাদ্য প্রয়োজন মতো সংগ্রহ করে গাভীকে পরিবেশন করতে হবে।
গাভীকে যে পরিমাণ খাদ্য পরিবেশন করতে হয় তা একধরনের থাম্বরুল পদ্ধতির মাধ্যমে নিরুপণ করা যায়। যেমন-
- প্রতিদিন একটি গাভী যে পরিমাণ মোটা আঁশযুক্ত খড় ও সবুজ ঘাস খেতে পারে তা তাকে খেতে দিতে হবে।
- গাভীর শরীর রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ১.৫ কেজি দানাদার এবং প্রতি ১.০ লিটার দুধ উৎপাদনের জন্য গাভীকে খড় ও সবুজ ঘাসের সাথে প্রতিদিন ০.৫ কেজি দানাদার খাদ্য দিতে হবে।
- গাভীকে ৪০-৫০ গ্রাম হাড়ের গুঁড়া ও ১০০-১২০ গ্রাম খাদ্য লবণ সরবরাহ করতে হবে।
- তাছাড়া দুগ্ধবতী গাভীকে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিষ্কার জীবাণুমুক্ত খাবার পানি সরবরাহ করতে হবে।
(৫) গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত লালন-পালন ও রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা
স্বাস্থ্যসম্মত লালনপালন বলতে এমন কতগুলো স্বাস্থ্যগত বিধিব্যবস্থাকে বোঝায় যা এ যাবতকাল পশুসম্পদ উৎপাদনে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে।
গাভীর স্বাস্থ্যসম্মত পালন-
- বাসস্থান নির্মাণে আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ও দুর্যোগ নিবারণ করা।
- খাদ্য ও পানির পাত্র পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
- পচা, বাসি ও ময়লাযুক্ত খাদ্য ও পানি পরিহার করা।
- সর্বদা তাজা খাদ্য ও পানি সরবরাহ করা।
- প্রজনন ও প্রসবে নির্জীবাণু পদ্ধতি অবলম্বন করা।
- দ্রুত মলমূত্র নিষ্কাশন করা।
- অসুস্থ গাভীর পৃথকীকরণ ও মৃত গাভীর সৎকার করা।
- নিয়মিত কৃমিনাশক ব্যবহার করা।
- সংক্রামক ব্যাধির প্রতিষেধক টিকা প্রয়োগ করা ইত্যাদি।
গাভীকে প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগ চিকিৎসা-
- নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করে অসুস্থ গাভী শনাক্ত করা যায়। গাভীর বিভিন্ন রোগবালাই যেন না হয় সেই জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে।
- গাভী তড়কা, বাদলা, ক্ষুরা রোগ, গলাফোলা, রিভারপেস্ট, ম্যাস্টাইটিস, পরজীবী ইত্যাদি রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
- গাভীর যেকোনো রোগ দেখা দিলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
(৬) গাভীর বাছুর পালন
গরু মহিষের শৈশবকালকে বাছুর বলে। সাধারণত জন্মের পর থেকে এক বছরের বেশি বয়সের গরু মহিষের বাচ্চাই বাছুর নামে পরিচিত।
গাভীর খামারের ভবিষ্যত বাছুরের সন্তোষজনক অবস্থার উপর নির্ভর করে।
কারণ আজকের বাছুরই ভবিষ্যতের দুধ উৎপাদনশীল গাভী, উন্নত মানের প্রজনন উপযোগী ষাঁড় বা মাংস উৎপাদনকারী গরু। তাই পশুপালন বিজ্ঞানে বাছুর পালন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
অল্প বয়সের এই গরু বা মহিষের বাচ্চা অত্যন্ত রোগ সংবেদনশীল হয়। আমাদের বাংলাদেশে যে সংখ্যক গবাদিপশু পালিত হয় তার মধ্যে শতকরা ২৪ ভাগেরও বেশি বাছুর।
তাই সুস্থ সবল বাছুর পেতে হলে একদিকে যেমন- গর্ভাবস্থায় গাভীর সুষ্ঠু ও পর্যাপ্ত সুষম খাদ্যের প্রয়োজন তেমনি প্রয়োজন প্রসবকালীন ও নবজাত বাছুরের সঠিক যত্ন।
(৭) গাভীর বাছুরের বাসস্থান
- দেশীয় জাতের একটি বাছুরের জন্মকালীন গড় ওজন সাধারণত ১৫-২০ কেজি হয়। অবশ্য উন্নত ও সংকর জাতের বাছুরের জন্মকালীন ওজন প্রায় ২৫-৩০ কেজি হয়।
- একটি বাছুরের বাসস্থানের জায়গা কতটুকু হয় বাছুরের আকারের উপর তা মূলত নির্ভর করে। প্রতিটি বড় বাছুরের জন্য ৩৫ বর্গফুট (৩.২৫ ব.মি.) জায়গার ভিত্তিতে বাছুরের বাসস্থান তৈরি করা হয়।
- বাছুরের বাসস্থানের জায়গা এমন হতে হবে যেন ঘরে প্রচুর পরিমাণ আলো ও বাতাস প্রবেশ করে। বাছুরের বাসস্থান কাঁচা বা পাকা হতে পারে, তবে এতে মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
- একটি ছোট বাছুরের জন্য ১২ বর্গফুট (১.১১ ব.মি.) জায়গার প্রয়োজন।
- বাছুরের খোপে খড় বিচালি দিয়ে বিছানা তৈরি করতে হবে। মেঝে পাকা হলে তা যেন কর্দমাক্ত ও সেঁতসেঁতে না হয় সে দিকে বিশেষ নজর দিতে হবে।
(৮) গাভীর বাছুরের পরিচর্যা
বাছুরের পরিচর্যা বলতে এদের খাদ্য পরিবেশন, রোগবালাই মুক্ত রাখা, দেখাশোনা করা ইত্যাদি বোঝায়।
আমাদের বাংলাদেশে বাছুরের আলাদা যত্ন নেওয়ার তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই। তবে এটি একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
বাছুর জন্মের পর থেকে দৈহিক পরিপক্বতা অর্জন না করা পর্যন্ত এদের পালন করা বা এদের দিকে বিশেষ যত্নবান হওয়া অত্যন্ত জরুরি।
ক) গাভীর বাছুর জন্মের পরবর্তী করণীয়
- বাছুর জন্মের পর পরই বস্তার উপর রেখে নাক মুখ পরিস্কার করার পর শরীর পরিষ্কার করার জন্য গাভীর সামনে দিতে হবে।
- বাছুরের নাভী রজ্জু ঝরে না গেলে নাভী থেকে ৫ সেমি দূরে ব্লেড দিয়ে কেটে স্যাভলন বা টিংচার আয়োডিন লাগাতে হবে।
খ) বাছুরকে গাভীর দুধ পান করা শেখানো
- জন্মের পর পরই বাছুরকে শাল দুধ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এসময়ে অনেক বাছুর মায়ের বাট থেকে দুধ চুষে খেতে পারে না। তাই বাছুরের মুখের ভিতর বাঁট দিয়ে দুধ খাওয়ার অভ্যাস করাতে হয়।
- গাভীর উৎপাদন ক্ষমতা কম হলে অনেক সময় অন্য গাভীর দুধ পান করানোর প্রয়োজন হতে পারে।
- শৈশবে বাছুরকে ৩৭.৫ ডিগ্রি সে. তাপমাত্রার দুধ পান করানো হয়। সাধারণত বোতলে বা বালতিতে করে বাছুরকে দুধ খাওয়ানো হয়।
- বিশুদ্ধ দুধ ও পানি ১ঃ২ অনুপাতে মিশিয়ে পাতলা করে পান করানো উত্তম।
- দুধ খাওয়ানোর পর বোতল অবশ্যই ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।
গ) গাভীর খামার পর্যায়ে বাছুর চিহ্নিতকরণ বা ট্যাগ নম্বর লাগানো
এটি ছোট খামারের জন্য তেমন প্রয়োজন না হলেও বড় খামারের জন্য জরুরি। গাভীর জাত উন্নয়ন ও তথ্য সংগ্রহের জন্য এর কোনো বিকল্প নেই।
সাধারণত কানে ট্যাগ নম্বর লাগিয়ে গাভী ও বাছুর চিহ্নিতকরণ করা হয়।
পরিমিত খাদ্য পরিবেশন, মলমূত্র ও বিছানা পরিষ্কার রাখা বাছুরের সঠিকভাবে বৃদ্ধির জন্য পরিমিত খাদ্য পরিবেশনের কোনো বিকল্প নেই। সাধারণত দৈহিক ওজন অনুসারে খাবার প্রদান করা হয়।
বর্ধিত বাছুরের চাহিদা অনুসারে জন্ম থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত খাদ্যতালিকা অনুসারে নিয়মিত খাদ্য সরবরাহ করতে হবে।
স্বাস্থ্যসম্মতভাবে প্রতিপালনের জন্য বাছুরের থাকার ঘরটিতে মলমূত্র নিষ্কাশনের যথাযথ ব্যবস্থা থাকতে হবে।
নিয়মিত বাছুরের থাকার ঘরের বিছানা পরিষ্কার রাখতে হবে। বাছুরের শোয়ার ঘর যথেষ্ট শুকনো রাখতে হবে।
গ) গাভীর বাছুর সময়মতো ঘরে তোলা ও বের করা
- বাছুরকে সময়মতো ঘরে তুলতে হয় এবং ঘর থেকে বের করতে হয়।
- বাছুরকে সারা দিন যেমন ঘরে আবদ্ধ রাখা ঠিক নয় এবং তেমনি দিনভর খোলা জায়গায় রাখাও ঠিক নয়।
- বৃষ্টিতে ভেজা বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডায় থাকলে বাছুরের ফুসফুস প্রদাহ রোগ হতে পারে।
ঘ) গাভীর বাছুরের প্রাত্যহিক পর্যবেক্ষণ ও রোগ চিকিৎসা
নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও রোগব্যাধিতে নিয়মিত ঔষধ সেবন বাচ্চুর পরিচর্যার অন্যতম করণীয়। এই সময়ে বাছুরের শারীরিক বৃদ্ধি ভালোভাবে না হলে পরবর্তীতে ভালো উৎপাদনশীল গরু হিসাবে গড়ে উঠতে পারে না।
- বাছুরের বিভিন্ন রোগবালাই যেন না হয় সেই জন্য সময়মতো টিকা দিতে হবে।
- বাছুরের স্কায়ার, নিউমোনিয়া, ছত্রাক, বাদলা রোগ, কৃমি ও আঁচিল রোগ দেখা যায়।
- বাছুরের যেকোনো রোগ দেখা দিলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।