একই উদ্দেশ্যে এক জোট হয়ে কোনো কাজ করাই সমবায়।
কৃষিকাজের জন্য প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, ফসল উৎপাদন, সংগ্রহ, সংগ্রহ উত্তর ফসল পরিচর্যা, গুদামজাতকরণ, পরিবহন এবং বাজারজাতকরণ সকল কাজ সমবায়ের সদস্যরা সুচারুরূপে সম্পন্ন করার জন্য সীমিত সংখ্যক কৃষক একমত হয়ে নিজেদের পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে একটি কৃষি সমবায় গড়ে তুলতে পারেন।
সমবায় কৃষকদের নিজস্ব পেশাগত সংগঠন। এইরূপ সংগঠনকে রাষ্ট্র স্বীকৃতি দেয় এবং সহযোগিতা করে। এইরূপ সমবায় দেশে প্রচলিত সমবায় আইন অনুসারে গঠিত হলে সমবায় আইনের আওতায় নিবন্ধন লাভ করতে পারে।
এখানে আমরা কৃষি সমবায় সম্পর্কে আলোচনা করব।
(১) কৃষি সমবায়ের ধারণা ও গুরুত্ব
বিষয়টি বুঝতে খেলা দিয়েই শুরু করা যাক। পাড়ায় বা মহল্লায় কিশোর কিশোরীরা কোনো খেলা, ধরা যাক ক্রিকেট বা ব্যাডমিন্টন বা টেবিল টেনিস খেলতে চায়। কী করা যেতে পারে? প্রথম কাজ খেলার সাথি সংগ্রহ করা। খেলার স্থান নির্বাচন করে রেফারি ঠিক করা ও মুরুব্বিদের অনুমতি নেওয়া। এরপর খেলার সামগ্রী, ক্রিকেট হলে ব্যাট, বল, স্ট্যাম্প, ব্যাডমিন্টন হলে নেট, নেটের খুঁটি, কর্ক, ব্যাট, টেবিল টেনিস হলে টেবিল, ব্যাট, বল এগুলো কেনা। সাথিরা সবাই মিলে টাকা একত্র করে এগুলো কেনা। আবার তহবিলে কিছু অর্থ যেন থাকে যা থেকে খেলা চালিয়ে যাওয়ার জন্য ফুরিয়ে যাওয়া সামগ্রী কেনা যায়। আরেকটি অতি দরকারি কাজ হলো, তহবিলের আয় ব্যয়ের হিসাব নিয়মিত সংরক্ষণ করা। একে মোটামুটি বলা যায় যে, সমবায় পদ্ধতিতে খেলা।
কৃষিকাজ সম্পন্ন করতে এবং কৃষি থেকে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জনের লক্ষ্যেও সমবায় পদ্ধতি ব্যবহার করা যায়। একে আমরা বলব কৃষি সমবায়। কৃষি সমবায়গুলো সাধারণত এলাকাভিত্তিক বা আঞ্চলিক হয়।
আধুনিক কৃষিতে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি যুক্ত হওয়ায় কৃষি বেশ ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে। তাছাড়া কৃষক উৎপন্ন ফসল ধরে রাখতে পারেনা। বাম্পার ফলন হলে ফসলের দাম পড়ে যায়। কোনো কোনো সময় এতোটাই পড়ে যায় যে উৎপাদন ব্যয়ও উঠে আসে না। যদি এলাকায় তাঁদের নিজস্ব ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র ও বড় গুদাম থাকতো তাহলে এই আর্থিক ক্ষতি এড়ানো যেত। কোনো একজন কৃষকের পক্ষে (খুব বড় ও ধনী কৃষক না হলে) এই সুবিধাগুলো অর্জন সম্ভব না হলেও প্রত্যেক সমবায়ী কৃষক তার জমি ও পুঁজির আনুপাতিক হারে মুনাফার শরিকানা লাভ করবেন, সাধারণত এটাই সমবায়ের ভিত্তি।
গ্রাম বাংলায় একটা প্রবাদ আছে: ‘দশের লাঠি একের বোঝা’। অর্থাৎ একজনের পক্ষে যে কাজ অবহনযোগ্য বোঝা, দশজন একত্র হলে সেই বোঝা বরং সহজেই বহনযোগ্য হতে পারে।
কৃষি সমবায় আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সকল উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহারে কৃষকদের সক্ষম করে তুলতে পারে।
পরিবেশবান্ধব কৃষি প্রযুক্তিসমূহ যেমন শস্যপর্যায় অবলম্বন, নিবিড় ও সমন্বিত চাষাবাদ পদ্ধতি ব্যবহার, সমন্বিত বালাই দমন পদ্ধতি ব্যবহার করে ফসলের নিরাপত্তা বিধান, যান্ত্রিক উপায়ে ফসল সংগ্রহ ও সংগ্রহ উত্তর পরিচর্যা, পরিবহন, গুদামজাতকরণ এবং বিপণন সকল ক্ষেত্রেই কৃষি সমবায় উচ্চমাত্রার সক্ষমতা এনে দিতে পারে এবং এভাবে উচ্চ মুনাফা অর্জন নিশ্চিত করতে পারে।
তদুপরি কৃষি সমবায় কৃষককে হঠাৎ বিপর্যয় সহনশীলতাও জোগায়। ফলে “দশে মিলে করি কাজ, হারি জিতি নাহি লাজ” এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়।
এবার আমরা কৃষি সমবায়ের কিছু উপযোগিতা একটু বিস্তারিতভাবে আলোচনা করব।
(২) সমবায়ের প্রকার
উদ্দেশ্য অনুযায়ী কৃষকগণ নানা ধরনের সমবায় গড়ে তুলতে পারেন।
- কৃষি মূলধন সমবায় (সঞ্চয় সমবায়): সমবায়ের প্রয়োজনীয় মূলধন সংগ্রহ।
- কৃষি উপকরণ সমবায় : বীজ, সার, ঔষধ, যন্ত্রপাতি, পরিবহন, গুদাম ইত্যাদি সংগ্রহ ও ব্যবহার।
- কৃষি উৎপদান সমবায়: কৃষি উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার জন্য।
- কৃষি পণ্য বাজারজাতকরণ সমবায়: পণ্যমূল্য নির্ধারণ, ভর্তুকি গ্রহণ, কৃষিপণ্য বিক্রয় এবং এতদসংক্রান্ত হিসাব রক্ষার জন্য।
(৩) কৃষি সমবায়ের মাধ্যমে কৃষি উপকরণ সংগ্রহ ও ব্যবহার
কৃষি উপকরণগুলোকে মোটা দাগে আমরা কয়েকভাগে ভাগ করতে পারি। আমরা দেখব যে সমবায়ের মাধ্যমে এই সকল উপকরণ যেমন উপযুক্ত পরিমাণে সংগ্রহ করা যায় তেমনি এ সকল উপকরণের সর্বোচ্চ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
ক) কৃষি জমি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইন্সটিটিউট এই উভয় জাতীয় প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় দেখা যায় যে, সর্বনিম্ন এক হেক্টর (২৪৭ শতাংশ প্রায়) জমি না হলে একটি লাভজনক কৃষি খামার পরিচালনা করা যায় না। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশের অধিকাংশ কৃষক এর চাইতে ক্ষুদ্রতর কৃষি জমির মালিক।
এমন কী যাদের আড়াই একর বা তার কিছু বেশি পরিমাণ কৃষি জমি রয়েছে তাঁরাও তাঁদের কৃষিকাজের আধুনিকায়নের জন্য প্রয়োজনীয়, বিশেষ করে দামি যন্ত্রপাতি কিনতে সক্ষম নন। যদি কোনোভাবে কিনেও ফেলেন ঐ যন্ত্রপাতির সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে পারেন না। নিজের কাজ শেষে হয় যন্ত্রটি বসিয়ে রাখতে বা ভাড়ায় দিতে হয়।
সমবায়ের মাধ্যমে অনেক জমি একই ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা যায়। সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য সকল কৃষি উপকরণের সর্বোচ্চ পরিমাণ লাভজনক ব্যবহার নিশ্চিত করা যায়।
সমবায়ীগণ সম্মত হলে কিছু জমিকে জলাধারে রূপান্তরিত করে বর্ষার পানি ধরে রাখা যায়, যা থেকে প্রয়োজনের সময় সেচের পানি পাওয়ার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করা যায়। অর্থাৎ তুলনামূলক নিচু জমিও সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত করে নেওয়া যায়।
দক্ষ ও স্বচ্ছ ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে পারলে সমবায়ের আওতায় জমির পরিমাণ চার পাঁচশত হেক্টর পর্যন্ত বাড়ানো যেতে পারে। তবে জমির পরিমাণ বাড়ার পাশাপাশি জমি ব্যবহার পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো প্রয়োজন হবে।
খ) পানি
কৃষিকাজের জন্য পানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পানি ছাড়া কোনো ধরনের কৃষিকাজই চালানো সম্ভব নয়।
কয়েক দশক আগে আমাদের বাংলাদেশে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের সুপারিশ করা হতো। অভিজ্ঞতার মাধ্যমে আমরা জেনেছি যে গভীর নলকূপের অতি ব্যবহার পরিবেশ বান্ধব নয়। সবচাইতে নিরাপদ পানি হলো জলাধারে সঞ্চিত পানি।
জলাধারে পানি বর্ষাকালে সঞ্চয় করে সারা বছর সেই পানি ব্যবহার সর্বোত্তম।
জলাধার করা, সেখান থেকে পাম্পের সাহায্যে সেচ নালা বা পাইপে সমবায়ের আওতাধীন জমিগুলোতে, স্বল্প অপচয়ে, সেচের পানি ব্যবহার করা যায়।
ভূ-উপরিস্থ জলাধারে সঞ্চিত পানি দিয়ে সেচ দেওয়ার খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তা ছাড়া সেচ ছাড়াও এই জলাধারের পানি অন্যান্য আনুসঙ্গিক কাজে লাগে যা লাভজনক।
গ) কৃষি যন্ত্রপাতি
কৃষির আধুনিকায়নের জন্য কৃষি যান্ত্রিকীকরণ প্রয়োজন। পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর থেকে শুরু করে বহু ধরনের যন্ত্রপাতি ফসল উৎপাদন, পশুপাখি, মৎস্য পালন তথা সার্বিক কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়।
এ সকল যন্ত্রপাতি ক্রয়, পরিচালনা এবং রক্ষণাবেক্ষণ যত সহজে সমবায়ের মাধ্যমে করা সম্ভব তা ব্যক্তি মালিকানায় সম্ভব নয়।
সমবায় পদ্ধতিতে যে কোনো কৃষি যন্ত্রপাতি সংগ্রহ করে ব্যবহার করলে আমাদের কৃষির উৎপাদনশীলতা যে কোনো উন্নত দেশের মানকে ছাড়িয়ে যেতে পারবে।
ঘ) কৃষির জন্য সার, ঔষধ, বীজ, খাদ্য ইত্যাদি উপকরণ সংগ্রহ, উৎপাদন ও ব্যবহার
বীজ, সার, পালিত পশুপাখি মাছের খাদ্য এমনকি রোগবালাই নিবারক ঔষধেরও একটা বড় অংশ সমবায়ের ভিত্তিতে উৎপাদন করা যায়। সরকারের কৃষি সেবা সংস্থাগুলোও বীজ,সার,ঔষধ সরবরাহ করে।
সমবায় তার বাৎসরিক প্রয়োজন আগে থেকেই নির্ধারণ করতে পারে এবং সেবাদানকারী সংস্থাগুলোকে সেই তথ্য আগেভাগেই সরবরাহ করতে পারে। এতে জাতীয় কৃষি সেবাদানকারী সংস্থাগুলো সরবরাহযোগ্য উপকরণের মোট চাহিদা সম্পর্কে জেনে যথাসময়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
ঙ) কৃষি ঋণ
কৃষিতে প্রয়োজনীয় পরিমাণ কৃষি ঋণ যথাসময়ে নিরাপদে প্রাপ্তি কৃষির জন্য খুবই সহায়ক।
রেজিষ্ট্রিকৃত কৃষি সমবায় হলে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠান ঋণ দিতে স্বাচ্ছন্দবোধ করবে। প্রথমত ঋণ গ্রহীতার নিবন্ধনকৃত পরিচয় রয়েছে, দ্বিতীয়ত ঋণের অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের একটা নিশ্চয়তা রয়েছে এবং তৃতীয়ত যথাসময়ে ঋণ পরিশোধের নিশ্চয়তা সমবায় দিতে সক্ষম।
(৪) কৃষি সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি পণ্য উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন
ক) কৃষি পণ্য উৎপাদন
পণ্য শব্দটির ব্যবহার বলে দেয় যে উৎপাদিত দ্রব্যাদি বিপণনের জন্যই সমবায়ের ভিত্তিতে উৎপাদন করা হচ্ছে। তা সে উৎপাদিত দ্রব্য শস্য, ফুল, ফল, তন্তু, বীজ, বাঁশ, কাঠ, ডিম, দুধ, মাংস, চামড়া, মাছ যাই হোক না কেন। মূল উদ্দেশ্য লাভ বা মুনাফা অর্জন।
কৃষি পণ্য উৎপাদন উৎপাদক এবং ভোক্তা অর্থাৎ ব্যবহারকারীর স্বাস্থ্যহানিকর না হয় এবং সেই সঙ্গে যেন পরিবেশবান্ধব হয়, সেই দিকেও লক্ষ রেখে কৃষি পণ্য উৎপাদন জরুরি।
সমবায়টি কোন কৃষি পরিবেশ অঞ্চলে অবস্থিত, কৃষি সমবায়ের অন্তর্ভুক্ত জমি শ্রেণি, মাটির গুণাগুণ, সমবায়ী পরিবারগুলোর বাজারের চাহিদা ইত্যাদি ও পরিবেশবান্ধবতা বিবেচনায় নিয়ে উৎপাদনের উপযুক্ত কৃষিপণ্য এবং উৎপাদন পদ্ধতি পরিকল্পনা করে সেই অনুযায়ী উৎপাদন করা যুক্তিযুক্ত।
কৃষি ক্ষেত্রে এবং খামারে যাতে কোনো রোগবালাইয়ের উপদ্রব না হয়, হলেও যাতে তা কার্যকরভাবে নিরাপদ রাখা যায় তার জন্য যথাযথ ব্যবস্থাপনার প্রস্তুতি থাকা দরকার। উৎপাদিত দ্রব্য নিরাপদে সংগ্রহ করার বিষয়টিও জরুরি।
খ) কৃষি পণ্য সংরক্ষণ
সংগ্রহের পর সংরক্ষণ পরিবহনের জন্য কিছু কাজ, যেমন বাছাই-ছাটাই, শ্রেণি বিভাজন, প্যাকেটজাতকরণ বা যথাযথ পাত্রে স্থাপন ইত্যাদি কাজও পণ্যের মানোন্নয়ন ও সংরক্ষণে সহায়ক হয়।
উপযুক্ত সময়ে বিপণনের জন্য কম বেশি সময়ের জন্য পণ্য গুদামজাত করে রাখার প্রয়োজন।
কৃষি পণ্য গুদামজাত করতে উপযুক্ত এবং কার্যকর পাত্র যেমন প্রয়োজন, তেমনি গুদামের পরিবেশও সৃষ্টি করতে হয়।
ধান, গম, ভুট্টা বিভিন্ন প্রকার ডাল ইত্যাদি পণ্য একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ শুকানোর প্রয়োজন হয় এবং বায়ুরোধক পাত্রে রেখে পাকা গুদামে রাখতে হয়।
খুব ধনী কৃষক না হলে একজনের পক্ষে এই সকল সুবিধা সৃষ্টি সম্ভব নয়। সমবায় এই আয়োজন সহজেই করতে পারে।
গ) কৃষি পণ্য বিপণন
কৃষি পণ্য বিপণনে আরেকটি কার্যক্রম হলো নিরাপদ পরিবহন।
পরিবহনের পাত্র, খাঁচা, প্যাকিং ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্যাকিং নির্ভর করে পণ্যের উপর।
শস্য পরিবহনে চটের বস্তা উপযুক্ত হলেও সবজি, ফুল-ফলের জন্য কোনোক্রমেই উপযুক্ত নয়। এ সকল পণ্যের কোনোটার জন্য বাঁশের বিশেষ টুকরি কিংবা হার্ডবোর্ড কাগজের বাক্স দরকার।
আবার মাছ পরিবহনের জন্য বাঁশের বিশেষ টুকরি ব্যবহার করা নিরাপদ হলেও মাছের জ্যান্ত পোনা পরিবহনে পানি ভরা বড় পাত্র প্রয়োজন। পোনা এমনভাবে পরিবহন করতে হবে যাতে অক্সিজেনের অভাবে মারা না যায়।
ডিম পরিবহনের জন্য বিশেষ পাত্র ব্যবহার করা হয় যাতে ভাঁজ করে হাজার হাজার ডিম এক সাথে পরিবহন করা যায়।
আবার দুধ পরিবহনে প্রয়োজন বিশেষ পাত্র।
বিপণনের সুবিধার জন্য কৃষি সমবায়ের সঙ্গে নির্দিষ্ট বিপণন সংস্থার আগে থেকে চুক্তি সম্পন্ন থাকলে সবচাইতে ভালো হয়। এই আয়োজনও সমবায় ভালোভাবে করতে পারে।
(৫) সমবায় সংগঠনের প্রয়োজনীয়তা
কৃষি সমবায় সম্পর্কে এ পর্যন্ত যে আলোচনাগুলো হলো সেগুলো বিবেচনায় নিলে আমরা খুব সহজেই বুঝতে পারি যে, কৃষি সমবায় একটি সমন্বিত কার্যক্রম।
সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি উৎপাদনে সক্রিয় হওয়ার পূর্বে এ বিষয়ে আগ্রহী ব্যক্তিদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার সিদ্ধান্তের মধ্য দিয়ে এই মহৎ কর্মযজ্ঞের সূচনা হয় মাত্র।
দ্বিতীয় অতি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হলো জমি ও অর্থ সমবায়ে যুক্ত করা। তারও আগে দরকার সমবায়ের মূল শর্ত তথা বিধিগুলো আলোচনার মাধ্যমে চূড়ান্ত করা। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় সমবায় অধিদপ্তরের নিকটবর্তী দপ্তরের সহযোগিতাও চাওয়া যেতে পারে। পরামর্শ নেওয়া যেতে পারে উপজেলা কৃষি, পশুপালন ও মৎস্য কর্মকর্তাদের।
সমবায় অধিদপ্তর প্রণীত কৃষি সমবায়ের গঠন প্রণালি অনুসরণ করে সমবায় সংগঠন গড়ে তুলে তা যথানিয়মে নথিভুক্ত করা প্রয়োজন।
শুধু এক সাথে কৃষিকাজ করার জন্য একমত হয়ে, কোনো সংগঠন না গড়ে নিলে এইরূপ সমবায় বেশি দূর এগোতে পারে না। বরং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার অভাবে এর অকাল মৃত্যু ঘটাই স্বাভাবিক।
মোদ্দা কথা হলো, সমগ্র কৃষিকাজ, কৃষি পণ্য উৎপাদন ও বিপণনের জন্য একটি দক্ষ সংগঠন গড়ে তোলা প্রয়োজন।
প্রকৃতপক্ষে সমবায় সংগঠন-
- কৃষি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণন সকল হিসাব পাই পাই রক্ষা করবে এই সংগঠন।
- মুনাফা প্রত্যেক সমবায়ীর বিনিয়োগের পরিমাণ অনুযায়ী বণ্টনের দায়িত্বও এই সমবায় সংগঠন পালন করে।
- সরকারের বা সরকারি বে-সরকারি সেবা সংস্থাগুলোর অনুদান, ভর্তুকি, সেবা গ্রহণ করবে এবং হিসাব রাখবে।
- কৃষি পণ্য ক্রেতা সংস্থা, কোম্পানি বা ব্যক্তির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করবে এবং তদানুযায়ী ব্যবসা করবে।
- সমবায়ীদের সাধারণ সভার কাছে সমবায়ের কার্যনির্বাহী কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে এবং সমূহ হিসাব উপস্থাপন করবে।
তাই আমরা দেখতে পাচ্ছি সমবায় সংগঠন কৃষি সমবায়ের হৃৎপিণ্ড। এই সংগঠন যত দক্ষ, সৎ ও শক্তিশালী হবে সমবায়ীরা ততই লাভবান হবেন।
কৃষি সম্পর্কিত যে কোন বিষয়ে জানতে– ‘ইন বাংলা নেট কৃষি’ (inbangla.net/krisi) এর সাথেই থাকুন।