Skip to content

প্রযুক্তি, অংশ প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত জাত ইত্যাদি কী, কাকে বলে?

প্রযুক্তি, অংশ প্রযুক্তি, কৃষি প্রযুক্তি ও উন্নত জাত ইত্যাদি কী, কাকে বলে

‘প্রযুক্তি’ শব্দটি অহরহ ব্যবহৃত হলেও এর সর্বজনস্বীকৃত কোন সংজ্ঞা এখনও তৈরি হয়নি। শিল্প বিপ্লবকে কেন্দ্র করে এ শব্দের উৎপত্তি হয়েছিল। প্রথম দিকে কেবল শিল্পজাত দ্রব্য উৎপাদনের কৌশলকে বোঝাতে প্রযুক্তি শব্দটি ব্যবহার করা হতো। কালক্রমে এর ধারণা ও ব্যবহারের ব্যাপ্তি ঘটেছে। বর্তমানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সকল ক্ষেত্রেই প্রযুক্তির ব্যবহার হয়ে থাকে।

ব্যাপক অর্থে, এখন আমরা প্রযুক্তি বলতে সেইসব কারিগরি বা বিজ্ঞানভিত্তিক কৌশল ও প্রক্রিয়াকে বুঝে থাকি যেগুলো ব্যবহার করে কোনো না কোনভাবে উপকৃত হওয়া যায়।

স্বাভাবিক কারণেই প্রযুক্তির মধ্যে বৈচিত্র খুব বেশি। ভাল বলে বিবেচিত হতে হলে প্রতিটি প্রযুক্তির নিম্নোক্ত বৈশিষ্ট্য থাকতে হয়-

  • বৈজ্ঞানিক তত্ত্বের উপর প্রতিষ্ঠিত।
  • স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে পরীক্ষিত।
  • ব্যবহার সর্বাবস্থায় লাভজনক এবং উপকারিতা মাপযোগ্য (গবধংঁৎধনষব)।
  • ব্যবহার পদ্ধতি সহজ, আংশিক সংশোধনযোগ্য ও কম ব্যয়বহুল।
  • স্থিতিশীল/স্থায়ীত্বসম্পন্ন এবং বৃহৎ এলাকার জনগোষ্ঠী দ্বারা ব্যবহারযোগ্য।

যে কোনো একটি ফসলের উৎপাদনের শুরু থেকে এর ব্যবহার পর্যন্ত অনেকগুলো কাজ করতে হয়, যথা- জমি তৈরি, বীজ বপন/রোপণ, সার প্রয়োগ, সেচ দেওয়া, অন্তর্বর্তী পরিচর্যা, পোকা ও রোগ দমন, ফসল সংগ্রহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ (মাড়াই, শুকানো, গ্রেডিং বা শ্রেণিবদ্ধকরণ, শোধন), সংরক্ষণ ইত্যাদি। এসব কাজের প্রতিটিই একাধিক পদ্ধতিতে করা যায়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে এগুলো করার উন্নত কৌশল/পদ্ধতি উদ্ভাবন ফসল গবেষণার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

যদি নিরীক্ষায় দেখা যায় যে, একটি বিশেষ সময়ে কোন ফসল বুনলে পূর্বে বা পরে বোনা অপেক্ষা বেশি ফলন পাওয়া যায় তাহলে এক্ষেত্রে এ তথ্যটিই একটি প্রযুক্তি। এভাবে ফসল উৎপাদন ও সংগ্রহোত্তর পর্যায়ের প্রতিটি কাজের জন্যই উন্নত পদ্ধতি বা প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা যেতে পারে। এগুলোকে বলা হয় ‘অংশ প্রযুক্তি’।

একই ফসলের প্রতিটি অংশ প্রযুক্তির সমন্বিত ব্যবহারের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব।

ফসল উৎপাদনে আরেক ধরনের প্রযুক্তি আছে যেগুলোকে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলে উল্লেখ করা যেতে পারে। ফসলের উন্নত জাত, যন্ত্রপাতি ইত্যাদি এ শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। এগুলো স্বয়ংসম্পূর্ণ এ অর্থে যে, এদের প্রয়োগের উপকারিতা সম্পূর্ণরূপে অন্যান্য প্রযুক্তির উপর সরাসরি নির্ভরশীল নয়। ক্ষেত্র বিশেষে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও অংশ প্রযুক্তির ব্যবধান সুস্পষ্ট নয়।

বাংলাদেশে একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, প্রযুক্তি হবে এমন যা ব্যবহার করলে বিদ্যমান অবস্থার দ্রুত ও নাটকীয় উন্নতি সাধিত হবে, যেমন হয়েছিল ধান, আলু, ভুট্টা ইত্যাদির উচ্চ ফলনশীল জাত প্রবর্তনের ফলে। বাস্তবে প্রতিটি প্রযুক্তি এরূপ হওয়া সম্ভব নয়, কারণ ফসলের ফলন ও মানের উৎকর্ষতা সীমাহীন নয়। কৃষির সার্বিক উন্নতির জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রযুক্তির উপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই।

কৃষি বিষয়ক প্রযুক্তি মূলত দু’রকমের, যথা- বস্তু এবং তথ্য। প্রযুক্তি স্থানীয় গবেষণার মাধ্যমে উদ্ভাবিত হতে পারে কিংবা সরাসরি বিদেশ থেকে আসতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে সাধারণ জ্ঞানের ভিত্তিতে প্রযুক্তি সুপারিশ করা সম্ভব।

উদাহরণস্বরূপ-

ফসলের উন্নত জাত: প্রতিটি ফসলেরই অনেক জাত আছে যেগুলোর মধ্যে ফলনশীলতা, পরিবেশগত উপযোগিতা, পোকা ও রোগ বালাই প্রতিরোধ ক্ষমতা, দৈহিক বৈশিষ্ট্য (আকার, আকৃতি ও বর্ণ), পুষ্টিমান, খাদ্যগুণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ যোগ্যতা ইত্যাদির দিক দিয়ে প্রচুর বিভিন্নতা বিদ্যমান। সাধারণভাবে, একই জাতে সকল বৈশিষ্ট্যের সর্বোৎকৃষ্ট সমাবেশ ঘটানো সম্ভব হয় না।

যদি কোন নতুন উদ্ভাবিত জাত এক বা একাধিক বৈশিষ্ট্যে প্রচলিত জাত অপেক্ষা উৎকৃষ্ট হয় তাহলে আমরা সেটাকে উন্নত জাত বলে থাকি।

ধরা যাক, সরিষার একটি নতুন জাতের বীজে প্রচলিত অন্যান্য জাতের তুলনায় শতকরা তিন ভাগ বেশি তেল আছে। ফলন বেশি না হলেও এ জাতের চাষ করে কৃষকরা লাভবান হবেন তা সহজেই অনুমেয়।

ফসল উৎপাদন ও ব্যবহারের নতুন/উন্নত পদ্ধতি বা কৌশল: ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ফসলের উৎপাদন ও ব্যবহারের প্রক্রিয়া কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কাজের মাধ্যমে সম্পূর্ণ হয় এবং কাজগুলো করার উন্নত পদ্ধতি/কৌশলকে আমরা ‘অংশ প্রযুক্তি’ বলে থাকি। একই ফসলে সবগুলো অংশ প্রযুক্তি মিলে সেই ফসল উৎপাদন ও ব্যবহারের সম্পূর্ণ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি তৈরি হয়। অংশ প্রযুক্তি সংখ্যায় ব্যাপক।

উন্নত ফসল বিন্যাস: বাংলাদেশের মোট চাষাধীন জমির শতকরা ৩৪ ভাগ এক ফসলি, ৫৩ ভাগ দু’ফসলি এবং ১৩ ভাগ তিন ফসলি। প্রথমোক্ত শ্রেণির জমিতে চাষযোগ্য ফসলের সংখ্যা সীমিত, কিন্তু অপর দু’টির বেলায় প্রত্যেক মৌসুমে বিভিন্ন প্রকার ফসল জন্মানো সম্ভব। একই জমিতে বছরের বিভিন্ন সময় কোন কোন ফসল কি ক্রম অনুযায়ী চাষ করলে কৃষক ও দেশের জন্য সবচেয়ে লাভজনক তা গবেষণার মাধ্যমে নির্ণয় করা সম্ভব। দেশের কয়েকটি এলাকার জন্য এটা নির্ণয় করা হয়েছে। জমির সর্বাধিক লাভজনক ও স্থিতিশীল ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য সাম্প্রতিক কালে একাধিক ফসল একই সময় সাথী ফসল হিসাবে চাষ করার পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে। উন্নত ফসল বিন্যাস তাই ফসল উৎপাদন প্রযুক্তির পর্যায়ভুক্ত।

যন্ত্রপাতি: ফসল উৎপাদন ও প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য বিভিন্ন প্রকার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়। যদি এমন কোনো নতুন যন্ত্র আবিষ্কার করা যায় যার দ্বারা কম খরচে অল্প সময়ে এবং অধিক দক্ষতার সাথে কাজ সমাধা হয় তাহলে তা অবশ্যই একটি প্রযুক্তি। প্রচলিত যন্ত্রপাতির উন্নত সংস্করণ উদ্ভাবনও নতুন প্রযুক্তি।

অন্যান্য প্রযুক্তি: এমন কিছু প্রযুক্তি আছে যেগুলো উপরে বর্ণিত কোন শ্রেণিতে পড়েনা, অথচ এগুলোর ব্যবহার দ্বারা কৃষকরা অনেক ভাবে উপকৃত হতে পারেন। ধরা যাক, একখন্ড জমিতে একটি বিশেষ সময়ে ‘ক, খ এবং গ’-এ তিনটি ফসলের যেকোনটির চাষ করা সম্ভব। গবেষণায় যদি দেখা যায়, ফসল ‘খ’ এর চাষ করলে কৃষক কম পুঁজি খরচ করে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন তাহলে এক্ষেত্রে এ তথ্যটিই একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি। এ ধরনের আরও গবেষণালব্ধ তথ্য আছে যেগুলোকে প্রযুক্তি হিসেবে গণ্য করা যায়।

তাই বলা যায়, গবেষণালব্ধ যে কোন বস্তু বা তথ্য যার দ্বারা কৃষি সংশ্লিষ্ট কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা কোনো না কোনভাবে উপকৃত হতে পারেন তাই কৃষি প্রযুক্তি।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts