Skip to content

ফেলন চাষ পদ্ধতি, ফেলনের জাত ও এর রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ফেলন চাষ পদ্ধতি, ফেলনের জাত ও এর রোগ বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ফেলন বাংলাদেশের সকল অঞ্চলে জন্মানোর উপাযোগী তবে দাক্ষিণাঞ্চলে ধান ফসল ভিত্তিক শস্য বিন্যাসে ব্যাপকভাবে চাষাবাদ হয়। এছাড়াও পাহাড়ী অঞ্চলে ভালো জন্মে। ইহা তাপ, লবণাক্ততা ও খরা সহনশীল।

বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম, পটুয়াখালী, ভোলা, ফেনী অঞ্চলের মানুষের নিকট ফেলন ডাল অত্যন্ত সুপরিচিত।

সবুজ ফল তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট কর্তৃক এ পর্যন্ত ফেলনের একাধিক জাত উদ্ভাবন করা হয়েছে।

(১) ফেলনের জাত

ক) বারি ফেলন-১ (বোস্তামী)

চট্টগ্রাম এলাকার জার্মপ্লাজম থেকে বাছাই করে প্রাথমিক, অগ্রবর্তী এবং বহুস্থানিক ফলন পরীক্ষার মাধ্যমে জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। পরে দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে আবাদের জন্য ১৯৯৩ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক অনুমোদন করা হয়।

বারি ফেলন-১ (বোস্তামী)
বারি ফেলন-১ (বোস্তামী)
  • গাছের ডগা ও পাতা হালকা সবুজ। গাছ সাধারনত খাড়া থাকে তবে মাটির ঊর্বতা বেশি হলে লাতানো হয়ে যায়। শাখা প্রশাখা গুলো বেশ মোটা ও শক্ত।
  • প্রতি গাছে ১০-২০টি শুটি ধরে এবং প্রতিটি শুটিতে ১২-১৬টি বীজ থাকে।
  • বীজের উপরের আবরণ ছাই রং এর।
  • গাছের উচ্চতা ৪০-৭০ সেমি।
  • গোড়া পচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।
  • জীবন কাল ১২৫-১৩০ দিন।
  • ১০০০ বীজের ওজন ৯০-১০০ গ্রাম।
  • বীজ ও খোসার অনুপাত ৩ঃ১।
  • গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৬০০-১৭০০ কেজি।

খ) বারি ফেলন-২

আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইআইটিএ (IITA) হতে ফেলন শস্যের জার্মপ্লাজম সংগ্রহ করা হয়। সংগ্রহকৃত জাতগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা, রোগবালাই ও পোকামাকড়ের আক্রমণ,শস্য পাকার সময়কাল ইত্যাদি মূল্যায়ন করা হয়। জাত উদ্ভাবনের ধারাবাহিক এ প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ফেলনের উন্নত জাতটি আইআইটিএ থেকে সংগৃহীত লাইন থেকে পর্যায়ক্রমিক নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভাবন করা হয়েছে (Station No. HAF-14)।

পরবর্তীতে দেশের বিভিন্নস্থানে প্রাথমিক, অগ্রবর্তী এবং বহুস্থানিক ফলন পরীক্ষার মাধ্যমে এই জাতটিকে উচ্চ ফলনশীল জাত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। ১৯৯৬ সালে জতীয় বীজ বোর্ড এই জাতটিকে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে চাষাবাদের জন্য ‘বারি ফেলন-২’ নামে অনুমোদন দেয়।

বারি ফেলন-২
বারি ফেলন-২
  • গাছের ডগা ও পাতা সবুজ।
  • গাছ সাধারনত খাড়া থাকে তবে মাটির ঊর্বতা বেশি হলে লাতানো হয়ে যায়।
  • শাখা প্রশাখা গুলো বেশ মোটা ও শক্ত।
  • প্রতি গাছে ১০-২০টি শুটি ধরে এবং প্রতিটি শুটিতে ১২-১৬টি বীজ থাকে।
  • বীজের উপরের আবরণ ছাই রঙের।
  • গাছের উচ্চতা ৪০-৭০ সেমি।
  • গোড়া পচা ও পাতার দাগ রোগ সহনশীল।
  • জীবন কাল ১২০-১৩০ দিন।
  • ১০০০ বীজের ওজন ১০০-১২০ গ্রাম।
  • বীজ ও খোসার অনুপাত ৩ঃ১।
  • গড় ফলন হেক্টরপ্রতি ১৫০০ কেজি।
  • আমিষের পরিমাণ (%)- ২৩.১।

(২) ফেলন চাষ পদ্ধতি

ক) মাটি

বেলে দোআঁশ থেকে এঁটেল দোআঁশ মাটিতে ফেলনের চাষ করা যায়। জমি উঁচু ও মাঝারী উঁচু এবং সুনিষ্কাশিত হওয়া বাঞ্ছনীয়।

খ) জমি তৈরি

২-৩ টি চাষ ও মই দিয়ে জমি ঝুরঝুরা করতে হবে।

গ) বপন পদ্ধতি

বীজ ছিটিয়ে ও সারিতে বপন করা হয়। সারিতে বপন করলে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৪০ সেমি এবং গাছ থেকে গাছ ১০ সেমি রাখতে হবে।

ঘ) বপনের সময়

নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ হতে মধ্য-ডিসেম্বর পর্যন্ত।

ঙ) বীজের হার

৪০-৫০কেজি/হেক্টর।

চ) সারের পরিমাণ

জমিতে নিম্নরূপ সার ব্যবহার করতে হয়।

সারের নামসারের পরিমাণ/হেক্টর
ইউরিয়া৩০-৪০ কেজি
টিএসপি৮০-৯০ কেজি
এমপি৪০-৪৫ কেজি
অণুজীব সার৫০ গ্রাম/প্রতি কেজি বীজের জন্য

ছ) সার প্রয়োগ পদ্ধতি

শেষ চাষের সময় সমুদয় সার ব্যবহার করতে হবে।

জ) অন্তর্বর্তীকালীন পরিচর্যা

বপনের ৩০-৪০ দিনের মধ্যে একবার আগাছা দমন করা প্রয়োজন। সাধারণত ফেলনের জমিতে সেচের প্রয়োজন হয় না। তবে গাছে শিম আসার সময় একটি হালকা সেচ দিতে পারলে ভালো ফলন হয়। কিন্তু এসময় বৃষ্টি হলে সেচের প্রয়োজন নাই।

ঝ) ফসল সংগ্রহ

চৈত্র মাসের শেষ সপ্তাহ হতে বৈশাখ মাসের শুরু (এপ্রিলের প্রথম হতে দ্বিতীয় সপ্তাহ)।

(৩) ফেলন চাষে রোগ-বালাই দমন ব্যবস্থাপনা

ক) ফিউজিরিয়াম উইল্ট রোগ দমন

ফিউজেরিয়াম অক্সিসপোরাম নামক ছত্রাক দ্বারা এ রোগ হয়। সাধারণত মাটির তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে ও যথেষ্ট পরিমাণ আর্দ্রতা থাকলে এ রোগের ব্যাপকতা বৃদ্ধি পায়।

রোগের লক্ষণ:

  • চারা অবস্থায় এ রোগে আক্রান্ত গাছ মারা যায় এবং পাতার রঙের কোন পরিবর্তন হয় না।
  • আক্রান্ত গাছের পাতা হলুদ হয়ে যায়, ঢলে পড়ে ও শুকিয়ে এবং টান দিলে সহজেই উঠে আসে।
  • লম্বালম্বিভাবে কাটলে কান্ডের মাঝখানের অংশ কালো দেখা যায়।
  • ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে আক্রান্ত জমিতে পরবর্তী বৎসর ফেলন না বুনে দুই বা তিন বৎসরের জন্য শস্য পর্যায় অনুসরণ করা প্রয়োজন।

প্রতিকার:

  1. বীজ শোধক ঔষধ দিয়ে বীজ শোধন করলে ফেলনের উইল্ট রোগ দমন করা যায়, প্রোভেক্স ২০০ ডব্লিউ পি প্রতি কেজি বীজের জন্য ২.৫-৩.০ গ্রাম হারে মিশিয়ে বীজ শোধন করতে হবে।
  2. মাঠে ঢলে পড়া রোগ দেখা দিলে কার্বেন্ডাজিম (অটোস্টিন ডি এফ অথবা নোইন) এবং সাথে প্রোভেক্স-২০০ ডব্লিউ পি) ১ গ্রাম হারে প্রতি লিটার পানিতে মিশিয়ে বিকালে গাছের গোড়ায় ভালভাবে স্প্রে করতে হবে।
  3. ফসলের পরিত্যক্ত অংশ পুড়িয়ে ফেলতে হবে।
  4. পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার ব্যবহার করতে হবে।

খ) হলুদ মোজাইক

চারা অবস্থা থেকে শুরু করে পূর্ণ বয়স্ক গাছ পর্যন্ত ফসলের যেকোন অবস্থায়ই এ রোগের আক্রমণ হতে পারে। তবে আক্রমণ যত কম বয়সে হয় ক্ষতির পরিমাণ তত বেশি হয়। এই রোগের আক্রমণকারী ভাইরাস সাদা মাছি (ডযরঃব ঋষু) দ্বারা বিস্তার লাভ করে।

রোগের লক্ষণ:

  • আক্রান্ত পাতার উপর চমকা ও গাঢ় সবুজ এবং হলুদ রঙের মিশ্রণ যুক্ত নানা বর্ণের বিন্যাস এ রোগের প্রধান লক্ষণ।
  • জাত ভেদে এ রোগের লক্ষণের কিছুটা তারতম্য হলেও এরূপ হলুদ হয়ে যাওয়া সর্বাবস্থায় দেখা যায়। আক্রান্ত গাছ খর্বাকৃতির হয়।
  • আক্রমণের মাত্রা বেশি হলে পাতা ফুল ও ফল কুঁকড়ে যায় এবং ফলের আকার ছোট হয়। বীজ অপুষ্ট ও কুঁকড়ানো হয়। প্রতিটি ফলে বীজের সংখ্যা হ্রাস পায়।
  • মারাত্মকভাবে আক্রান্ত গাছে ফুল ফল মোটেই ধরে না বা খুবই কম ধরে থাকে।

ব্যবস্থাপনা:

  1. এ রোগটির ব্যবস্থাপনা খুবই কষ্টসাধ্য। এপর্যন্ত বাংলাদেশে এই রোগের সম্পূর্ণ প্রতিরোধী কোন জাতের সন্ধান পাওয়া যায় নাই। তবে ফসলের প্রাথমিক পর্যায়ে হলুদ মোজাইক আক্রান্ত গাছ মাঠে দেখার সাথে সাথে উপড়ে ফেলে দিতে হবে।
  2. তাছাড়া রোগ বিস্তারকারী সাদা মাছি কীটনাশকের মাধ্যমে দমন করেও রোগ বিস্তার রোধ করা যায়।

[সূত্র: বিএআরআই]

Leave a Reply

nv-author-image

inbangla.net/krisi

Everything related to animal and plants in the Bangla language!View Author posts